মজিদ, খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল
মজিদ, খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল (১৮৭২-১৯২২) আইনজীবী, রাজনীতিক, চা শিল্পের দেশীয় উদ্যেক্তা। সিলেট শহরের কাজী ইলিয়াস মহল্লায় ১৮৭২ সালে তাঁর জন্ম। ডাকনাম কাপ্তান মিয়া। পিতা সৈয়দ আবদুল জলিল ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম এবং হযরত শাহজালালের (র.) সঙ্গী সৈয়দ শাহ মোস্তফা বাগদাদীর বংশধর।
সৈয়দ আবদুল মজিদ নবাব তালাব বঙ্গ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং ১৮৮৭ সালে সিলেট জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনা করেন এবং ১৮৯২ সালে বি.এ ও ১৮৯৪ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন।
সৈয়দ আবদুল মজিদ ১৮৯৪ সালে সিলেটে আইন ব্যবসায়ে যোগ দেন। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পূর্বে মুসলমানদের একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন ছিল আঞ্জুমানে ইসলামিয়া। ১৯০২ সালে আবদুল মজিদ জেলা আঞ্জুমানে ইসলামিয়ার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং পরে সভাপতি হন। ১৯০৬ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি সিলেট লোকাল বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি নিখিল ভারত মোহামেডান কনফারেন্সের এবং বঙ্গভঙ্গকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে সৃষ্ট নতুন প্রদেশের আইন কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন। ১৯১১ সালে সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতবর্ষ সফরকালে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দিল্লি দরবার-১৯১১ এ যোগ দেন। ১৯১২ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় সিলেটে আঞ্জুমানে ইসলামিয়ার জন্য মুসলিম হল গড়ে উঠে (বর্তমান শহীদ সোলেমান হল)। ১৯১৯ সালে তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে সিলেটে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯১৮ সালে সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ ও পরে CIE (Companion of the Order of Indian Empire) খেতাব প্রদান করে।
সৈয়দ আবদুল মজিদ ১৯২১ সালে সিলেট সদর নির্বাচনী এলাকা থেকে আসাম আইন পরিষদের সদস্য (এম.এল.এ) নির্বাচিত হন এবং আসাম প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯১৬ সালে সিলেটের এমসি কলেজ প্রথম-গ্রেড ডিগ্রি কলেজে উন্নীত হয়। তিনি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
সৈয়দ আবদুল মজিদ চা-শিল্পের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি নিজ উদ্যোগে সিলেটে পরপর তিনটি চা বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। বস্ত্তত চা-শিল্পের বিকাশে দেশীয়দের মধ্যে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তিনি নিখিল ভারত টি অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানির ডাইরেক্টর ছিলেন। ১৯২২ সালের ২৯ জুলাই তিনি শিলং শহরে মৃত্যুবরণ করেন। [এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরী]