প্রিয়ভাষিণী, ফেরদৌসী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
("right|thumbnail|200px|Ferdowsi Priyabhashini '''প্রিয়ভাষিণী, ফেরদৌসী''' (১৯৪৭-২০১০) একজন বাংলাদেশি খ্যাতিমান ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা। ফেলে দেয়া গাছের গুঁড়ি, গাছের শিকড়, শুকনো ডাল, গাছের..." দিয়ে পাতা তৈরি) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Image:PriyabhashiniFerdowsi.jpg|right|thumbnail|200px| | [[Image:PriyabhashiniFerdowsi.jpg|right|thumbnail|200px|ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী]] | ||
'''প্রিয়ভাষিণী, ফেরদৌসী''' (১৯৪৭-২০১০) একজন বাংলাদেশি খ্যাতিমান ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা। ফেলে দেয়া গাছের গুঁড়ি, গাছের শিকড়, শুকনো ডাল, গাছের নানা রকম উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য গড়েছেন ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। সহায়তা করেছেন ঘর সাজিয়ে রুচির পরিবর্তন আনতে। তিনি এই দেশে ফেলনা উপকরণ দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যের নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বশিক্ষিত ভাস্কর। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৪৭ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি খুলনা শহরে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মা রওশন হাসিনা ও বাবা সৈয়দ মাহবুবুল হক। তাঁর বাবা-মায়ের জীবনটা তেমন সুখের ছিল না। তাই তিনি নানা বাড়িতে থাকতেন। তাঁর শৈশব-কৈশর জীবন কেটেছে নানা বাড়িতেই। সেখানে ছিল একটা সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ। তিনি শৈশবে চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছেন বাড়িতে। নয় বছর বয়সে তিনি বাধ্য হয়ে চলে আসেন বাবার কাছে। তখন তাঁর বাবা ছিলেন খুলনা দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক। সৈয়দ বংশের গরিমা ছিল তাঁর ভেতর। বাহিরের মানুষের কাছে ভালো এবং জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও, ঘরের মানুষের কাছে ছিলেন তার উল্টো। সেই পরিবেশেই বেড়ে ওঠেছেন প্রিয়ভাষিণী। পারিবারিক নানা সমস্যার মধ্যেও তিনি এসএসসি পাশ করেন খুলনা পাইওনিয়র গার্লস স্কুল থেকে। এইচ.এস.সি এবং ডিগ্রি পাশ করেন খুলনা গার্লস কলেজ থেকে। | '''প্রিয়ভাষিণী, ফেরদৌসী''' (১৯৪৭-২০১০) একজন বাংলাদেশি খ্যাতিমান ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা। ফেলে দেয়া গাছের গুঁড়ি, গাছের শিকড়, শুকনো ডাল, গাছের নানা রকম উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য গড়েছেন ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। সহায়তা করেছেন ঘর সাজিয়ে রুচির পরিবর্তন আনতে। তিনি এই দেশে ফেলনা উপকরণ দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যের নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বশিক্ষিত ভাস্কর। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৪৭ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি খুলনা শহরে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মা রওশন হাসিনা ও বাবা সৈয়দ মাহবুবুল হক। তাঁর বাবা-মায়ের জীবনটা তেমন সুখের ছিল না। তাই তিনি নানা বাড়িতে থাকতেন। তাঁর শৈশব-কৈশর জীবন কেটেছে নানা বাড়িতেই। সেখানে ছিল একটা সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ। তিনি শৈশবে চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছেন বাড়িতে। নয় বছর বয়সে তিনি বাধ্য হয়ে চলে আসেন বাবার কাছে। তখন তাঁর বাবা ছিলেন খুলনা দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক। সৈয়দ বংশের গরিমা ছিল তাঁর ভেতর। বাহিরের মানুষের কাছে ভালো এবং জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও, ঘরের মানুষের কাছে ছিলেন তার উল্টো। সেই পরিবেশেই বেড়ে ওঠেছেন প্রিয়ভাষিণী। পারিবারিক নানা সমস্যার মধ্যেও তিনি এসএসসি পাশ করেন খুলনা পাইওনিয়র গার্লস স্কুল থেকে। এইচ.এস.সি এবং ডিগ্রি পাশ করেন খুলনা গার্লস কলেজ থেকে। | ||
০৮:৩৪, ২০ মে ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
প্রিয়ভাষিণী, ফেরদৌসী (১৯৪৭-২০১০) একজন বাংলাদেশি খ্যাতিমান ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা। ফেলে দেয়া গাছের গুঁড়ি, গাছের শিকড়, শুকনো ডাল, গাছের নানা রকম উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য গড়েছেন ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। সহায়তা করেছেন ঘর সাজিয়ে রুচির পরিবর্তন আনতে। তিনি এই দেশে ফেলনা উপকরণ দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যের নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বশিক্ষিত ভাস্কর। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৪৭ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি খুলনা শহরে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মা রওশন হাসিনা ও বাবা সৈয়দ মাহবুবুল হক। তাঁর বাবা-মায়ের জীবনটা তেমন সুখের ছিল না। তাই তিনি নানা বাড়িতে থাকতেন। তাঁর শৈশব-কৈশর জীবন কেটেছে নানা বাড়িতেই। সেখানে ছিল একটা সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ। তিনি শৈশবে চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছেন বাড়িতে। নয় বছর বয়সে তিনি বাধ্য হয়ে চলে আসেন বাবার কাছে। তখন তাঁর বাবা ছিলেন খুলনা দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক। সৈয়দ বংশের গরিমা ছিল তাঁর ভেতর। বাহিরের মানুষের কাছে ভালো এবং জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও, ঘরের মানুষের কাছে ছিলেন তার উল্টো। সেই পরিবেশেই বেড়ে ওঠেছেন প্রিয়ভাষিণী। পারিবারিক নানা সমস্যার মধ্যেও তিনি এসএসসি পাশ করেন খুলনা পাইওনিয়র গার্লস স্কুল থেকে। এইচ.এস.সি এবং ডিগ্রি পাশ করেন খুলনা গার্লস কলেজ থেকে।
বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সবার বড়। ছোট বেলায় তিনি সান্নিধ্য পেয়েছিলেন জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামাল, এস.এম সুলতান, খান সরওয়ার মুর্শিদ, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীসহ অনেকের। বাবার কাছে এসে বন্দি এক জীবন কাটে। সেই বন্দি জীবন থেকে বাঁচার জন্য ১৬ বছর বয়সে পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে বিপদে পড়েন। স্বামীর লেখাপড়া খরচ এবং সংসার চালাতে হয়েছে তাকেই। এর জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে খুলনা আগা খান স্কুলে চাকরি করেছেন ৬০ টাকা বেতনে। সঙ্গে চারটা টিউশনি করেছেন। এতে সংসার চলছিল না। সে চাকরি ছেড়ে চাকরি নেন একটি মিলের টেলিফোন অপারেটরের। দিন দিন সংসার বিষিয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর মুক্তিযুদ্ধের সেই কঠিন সময়ে একা একজন নরী সন্তানকে নিয়ে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই সময়ে তিনি লক্ষ লক্ষ মেয়ের মতো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। এটা তাঁর জীবনের একটা দুর্ঘটনা হিসেবেই নিয়েছিলেন। সেই দুঃখ তিনি নিজের মধ্যে চেপে রাখেন নি। অকপটে প্রকাশ্যে প্রকাশ করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। যার কারণে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল এই দেশের হাজারও নির্যাতিতা নারী। সব পিছে ফেলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছেন। এগিয়ে চলেছেন নিজেদের মতো করে।
প্রিয়ভাষিণী ১৯৭২ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে বরেন আহসান উল্লাহ আহমেদকে। তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। একাত্তরের সব ঘটনা জেনেই এই কর্মকর্তা তাঁকে রেখেছিলেন মর্যাদার সঙ্গে। স্বামীর কর্মসূত্রে বিভিন্ন জেলায় কাটিয়েছেন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত। তখন তিনি গৃহিনী হিসেবেই সময় পার করেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকাকালীন ঘর সাজাতেন প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া নানা উপকরণ দিয়ে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাসসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে। তাঁর জীবনের বড় একটি ঘটনা ঘটে ১৯৮৫ সালে। তখন তিনি যশোরে থাকতেন। শিল্পী এস.এম সুলতানের সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যায় ২৬ বছর পর। সুলতান তাঁর তৈরি শিল্পকর্ম দেখে প্রশংসা করেন। শুধু প্রশংসা করেই থেমে থাকেননি, তাঁর কাজের একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে দিয়েছিলেন বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতান। তখনই তাঁর কাজ দেখে শিল্পপ্রেমীরা মুগ্ধ হন। ঢাকায় আসার পর তাঁর কাজে আরও গতি আসে। তিনি ফেলে দেওয়া গাছের গুঁড়ি, ডালসহ নানা উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য গড়েছেন। শুরুতে তিনি প্রকৃতিদত্ত উপদানগুলো কেটে অবিকৃত অবস্থায় উপস্থাপন করেন। মূল বিষয়টিকে একটু নিজের মত উপস্থাপন করে তার মধ্যে থেকে খুঁজে বের করে এনেছেন পেঁচা, হাস, পাখি, মানুষের অবয়বসহ নানা কিছু। সেসব কাজে তাঁর শিল্পবোধই ছিল মুখ্য। দ্বিতীয় পর্বে, প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে আনা গাছের নানা উপকরণ তাঁর হাতের ছোঁয়ায় কিছুটা রূপান্তরিত হয়েছে। এই পর্বে তিনি সৃজনশীল চিন্তা দিয়ে প্রকৃতি থেকে পাওয়া উপকরণগুলোর নবরূপ দিয়েছেন। শেষ পর্বে তিনি নির্জীব কাজের মধ্যে দিয়েছেন জীবন্ত বৃক্ষ-লতা। দ্বিমাত্রিক সেই কাজগুলো ভাস্কর্য না বলে জীবন্ত চিত্রকর্ম বলাই শ্রেয় হবে। তবে তাঁর সকল কাজেই একটা ধারাবাহিকতা আছে। আছে নিজস্ব ঢং। প্রচুর কাজ করেছেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী। তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে ১২টি। বড় কিছু যৌথ প্রদর্শনীতেও অংশগ্রহণ করেছেন। শিল্প সৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক কাজে নিয়মিত ছিলেন। স্বাধীনতা ও দেশের পক্ষের সকল সংগ্রামে তিনি ছিলেন সবার আগে। জীবনের শেষ সময়েও তিনি অংশগ্রহণ করেছেন ধর্মান্ধ, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে। তাঁর কাজের অবদান হিসেবে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
২০১৮ সালের ৬ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [হামিদুজ্জামান খান]