আহমদ, মোজাফ্ফর২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Image:AhmadMozaffar.jpg|right|thumbnail|200px|মোজাফ্ফর আহমদ]]
'''আহমদ, মোজাফ্ফর<sup></sup>''' (১৯৩৬-২০১২অর্থনীতিবিদ ও সংগঠক। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন। নাজির আহমেদ ও জাহানারা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। মোজাফ্ফর আহমদ ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে বি.এ (অনার্স) ও ১৯৫৬ সালে এম.এ পাশ করার পর ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে রওশন জাহানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
'''আহমদ, মোজাফ্ফর<sup></sup>''' (১৯২২-২০১৯রাজনীতিবিদ, ন্যাপ (মোজাফ্ফর)-এর সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশ সরকারের ([[মুজিবনগর সরকার|মুজিবনগর সরকার]]) উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কেয়াম উদ্দিন ভূঁইয়া। মাতার নাম আফজর নেসা। মোজাফ্ফর আহমদ দেবীদ্বারের হোসেনতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর কিছুদিন জাফরগঞ্জ রাজা ইনস্টিটিউশনে পড়ালেখা শেষে দেবীদ্বার রিয়াজ উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৩৯ সালে মেট্রিক পাস করেন। হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৪১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টামিডিয়েট পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সন্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। অতঃপর তিনি চট্টগ্রাম এবং ঢাকা কলেজে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা পেশায় যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করেন। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কুমিল্লার দেবীদ্বার আসন থেকে অংশ নেন এবং মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী মফিজ উদ্দিন আহমদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।  


১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ১৯৫৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এসময় তিনি আত্মগোপনে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের সামরিক সরকার হুলিয়া তুলে নিলে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। এসময় [[রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর|বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান]] কর্তৃক বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা ঘোষিত হলে তিনি তাতে সমর্থন দেন।
মোজাফ্ফর আহমদ হরগঙ্গা কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেও কিছুদিন পর স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করে করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে যোগ দেন। পরে ঢাকায় ফিরে East Pakistan Industrial Development Corporation (ইপিআইডিসি) এ যোগদান করেন। তিনি ১৯৭২-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে এমিরেটাস অধ্যাপক ছিলেন।


ষাটের দশকে বিশ্বসমাজতান্ত্রিক শিবিরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যকার নীতিগত বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নিলে ১৯৬৭ সালে [[ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি|ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি]] (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। পিকিংপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন [[ভাসানী, মওলানা আবদুল হামিদ খান|মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী]] এবং মস্কোপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন সীমান্ত প্রদেশের খান আবদুল ওয়ালী খান। মস্কোপন্থী পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি হন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। এসময় তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। আইয়ুব সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি ১৯৬৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি গ্রেফতার হন এবং কয়েকদিন পরেই মুক্তি লাভ করেন।
প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ বেশ কয়েকটি সামাজিক আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে পরিবেশ রক্ষায় ‘পরশ’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটির জম্ম তা ২০০০ সালে নতুন নাম দেয়া হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) । তিন মেয়াদের জন্য তিনি এর সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন।


১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান ষড়যন্ত্র করে ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। ঐ রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চলমান পরিস্থতির বিভিন্ন দিক ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন। গণআন্দোলনে নৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাপ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের প্রতি আহবান জানান। ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ নেওয়ার পর তিনি সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
তিনি দুর্নীতিকে সমাজের সর্বগ্রাসী ও সর্বব্যাপী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর মাধ্যমে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি সুজন-এরও সভাপতি ছিলেন। এ আন্দোলনের সাথে তরুণ সমাজকে সংযুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর মতে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনই রাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ, যোগ্য জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিদের তথা সজ্জনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক। এজন্য তিনি অসৎ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, কালোটাকার মালিক, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, পেশিশক্তির অধিকারি তথা দুর্বৃত্তদের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি সুজনে’র মাধ্যমে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ নামক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন যা বর্তমানে বাপা’র উদ্যোগে দেশব্যাপী সক্রিয় রয়েছে।


অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর আহবানে ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের অনেক নেতা-কর্মী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাঁর জন্মস্থান এলাহাবাদ গ্রামের বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ৮ সদস্যবিশিষ্ট যে উপদেষ্টা পরিষদ (Consultative Committee) গঠন করে, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ তার অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার কথা তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বিশে^র সমাজতান্ত্রিক দেশের সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় ও জনমত গঠনে বিশে^র বিভিন্ন দেশ সফর করেন। জাতিসংঘে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। অধ্যাপক মোজফ্ফর আহমদের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৯শে জুলাই থেকে ‘নতুন বাংলা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা হতো। পত্রিকাটিতে রণাঙ্গনের সংবাদের পাশাপাশি ন্যাপের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন থাকত। এভাবে জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মোজাফ্ফর আহমদ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত না হয়েও রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। আইয়ুব খানের আমল থেকে এরশাদের শাসনকাল পর্যন্ত স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তিনি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষায়, নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার  উন্নয়ন ও শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


১৯৭৯ সালে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে তিনি ‘কুঁড়েঘর’ প্রতীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পরবর্তীতে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন। দেশ গড়া প্রগতিশীল রাজনীতিতে দলীয় কর্মীদের দীক্ষিত করার লক্ষে শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকার মদনপুরে ‘সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ’ নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। অধ্যাপক মোজফ্ফর আহমদ একজন সুলেখক ছিলেন। তাঁর লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার কথা’ প্রথম খণ্ড (১৯৭৮) ও দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৮০), ‘কিছু কথা’ (১৯৯১), ‘মুক্তির পথ’ (২০০৭), ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’ (২০১৭) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেন নি। প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। এলাহাবাদ গ্রামের নিজ বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্ত্রী আমিনা আহমদ একজন নারীনেত্রী, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বর্তমানে ন্যাপের সভাপতি। এ দম্পতির একমাত্র কন্যা আইভি আহমদ। [শফিউদ্দিন তালুকদার]।
প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। যেমন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠায় যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করেন।  


'''তথ্যসূত্র''' হারুন-অর-রশিদ (সম্পা.), ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', ১ম, ৭ম ও ৮ম খণ্ড, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা, ২০২০; এইচ টি ইমাম, ''বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১'', বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১২; ''সাক্ষাৎকার'' পরিতোষ দেবনাথ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ন্যাপ।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সাথেও স¤পৃক্ত ছিলেন তিনি। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস্ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের বোর্ড অব গভর্নরস্ এর সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএন অর্গানাইজেশনস্, ইউনেস্কোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি হিউম্যান রিসোর্স ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমী, বারডেম, নজরুল একাডেমী, অর্থনীতি সমিতি ও অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির জীবন সদস্য ছিলেন।
তাঁর অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি র্জানালে প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ছিল শিক্ষা ও শিক্ষার উন্নয়ন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, শ্রম আইন, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শিল্পের বেসরকারিকরণ, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড, উন্নয়নে সরকারি খাতের ভূমিকা, এবং উন্নয়নশীল দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি প্রভৃতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো ''Political Economy of Public Enterprises'', Center for Asian Development Studies (CADS), Boston University, USA, 1980; ''Public Enterprises in an Intermediate Regime: A Study in the Political Economy of Bangladesh'', Bangladesh Institute of Development Studies (BIDS), 1980; ''State And Development'', University Press Limited, Dhaka, 1988; ''Cost Efficiency in Higher Education'', ROAP/UNESCO, 1988; ''Performance of SOE and Privatisation in Bangladesh'', Asian Development Bank, 1989 ইত্যাদি।


[[en: Ahmad, Mozaffar2]]
অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য মোজাফ্ফর আহমদ বিভিন্ন সম্মামনা পদক লাভ করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এম.এ হক এর স্মৃতিতে প্রদত্ত স্বর্ণপদক, অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, চন্দ্রাবতী একাডেমী পদক এবং একুশে পদক (২০০৮)।
 
মোজাফ্ফর আহমদ ২২ মে ২০১২ মৃত্যুবরণ করেন ।  [বিধান চন্দ্র পাল]

০৩:৫৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আহমদ, মোজাফ্ফর (১৯৩৬-২০১২) অর্থনীতিবিদ ও সংগঠক। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন। নাজির আহমেদ ও জাহানারা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। মোজাফ্ফর আহমদ ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে বি.এ (অনার্স) ও ১৯৫৬ সালে এম.এ পাশ করার পর ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে রওশন জাহানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

মোজাফ্ফর আহমদ হরগঙ্গা কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেও কিছুদিন পর স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করে করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে যোগ দেন। পরে ঢাকায় ফিরে East Pakistan Industrial Development Corporation (ইপিআইডিসি) এ যোগদান করেন। তিনি ১৯৭২-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে এমিরেটাস অধ্যাপক ছিলেন।

প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ বেশ কয়েকটি সামাজিক আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে পরিবেশ রক্ষায় ‘পরশ’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটির জম্ম তা ২০০০ সালে নতুন নাম দেয়া হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) । তিন মেয়াদের জন্য তিনি এর সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন।

তিনি দুর্নীতিকে সমাজের সর্বগ্রাসী ও সর্বব্যাপী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর মাধ্যমে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি সুজন-এরও সভাপতি ছিলেন। এ আন্দোলনের সাথে তরুণ সমাজকে সংযুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর মতে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনই রাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিদের তথা সজ্জনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক। এজন্য তিনি অসৎ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, কালোটাকার মালিক, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, পেশিশক্তির অধিকারি তথা দুর্বৃত্তদের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি সুজনে’র মাধ্যমে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ নামক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন যা বর্তমানে বাপা’র উদ্যোগে দেশব্যাপী সক্রিয় রয়েছে।

মোজাফ্ফর আহমদ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত না হয়েও রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। আইয়ুব খানের আমল থেকে এরশাদের শাসনকাল পর্যন্ত স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তিনি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষায়, নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। যেমন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠায় যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করেন।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সাথেও স¤পৃক্ত ছিলেন তিনি। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস্ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের বোর্ড অব গভর্নরস্ এর সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএন অর্গানাইজেশনস্, ইউনেস্কোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি হিউম্যান রিসোর্স ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমী, বারডেম, নজরুল একাডেমী, অর্থনীতি সমিতি ও অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির জীবন সদস্য ছিলেন।

তাঁর অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি র্জানালে প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ছিল শিক্ষা ও শিক্ষার উন্নয়ন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, শ্রম আইন, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শিল্পের বেসরকারিকরণ, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড, উন্নয়নে সরকারি খাতের ভূমিকা, এবং উন্নয়নশীল দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি প্রভৃতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো Political Economy of Public Enterprises, Center for Asian Development Studies (CADS), Boston University, USA, 1980; Public Enterprises in an Intermediate Regime: A Study in the Political Economy of Bangladesh, Bangladesh Institute of Development Studies (BIDS), 1980; State And Development, University Press Limited, Dhaka, 1988; Cost Efficiency in Higher Education, ROAP/UNESCO, 1988; Performance of SOE and Privatisation in Bangladesh, Asian Development Bank, 1989 ইত্যাদি।

অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য মোজাফ্ফর আহমদ বিভিন্ন সম্মামনা পদক লাভ করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এম.এ হক এর স্মৃতিতে প্রদত্ত স্বর্ণপদক, অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, চন্দ্রাবতী একাডেমী পদক এবং একুশে পদক (২০০৮)।

মোজাফ্ফর আহমদ ২২ মে ২০১২ মৃত্যুবরণ করেন । [বিধান চন্দ্র পাল]