টেকনাফ উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''টেকনাফ উপজেলা''' ([[কক্সবাজার জেলা|কক্সবাজার জেলা]])  আয়তন: ৩৮৮.৬৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২০°২৩´ থেকে ২১°০৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৫´ থেকে ৯২°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উখিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজার জেলা সদর হতে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে টেকনাফ উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে সবুজ বৃক্ষরাজি শোভিত সুউচ্চ পাহাড় ও উখিয়া উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নাফ নদী ও মায়ানমার।  
'''টেকনাফ উপজেলা''' ([[কক্সবাজার জেলা|কক্সবাজার জেলা]])  আয়তন: ৩৮৮.৬৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২০°২৩´ থেকে ২১°০৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৫´ থেকে ৯২°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উখিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজার জেলা সদর হতে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে টেকনাফ উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে সবুজ বৃক্ষরাজি শোভিত সুউচ্চ পাহাড় ও উখিয়া উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নাফ নদী ও মায়ানমার।  


''জনসংখ্যা'' ২০০৬০৭; পুরুষ ১০৫০৯৬, মহিলা ৯৫৫১১। মুসলিম ১৯৫০৪০, হিন্দু ২৬৭৫, বৌদ্ধ ৩৭, খ্রিস্টান ২৮৩৬ এবং অন্যান্য ১৯।
''জনসংখ্যা'' ২৬৪৩৮৯; পুরুষ ১৩৩১০৬, মহিলা ১৩১২৮৩। মুসলিম ২৫৮২৪৫, হিন্দু ২৯৬৭, বৌদ্ধ ৩০৮৯, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ৭৯।


''প্রশাসন'' টেকনাফ থানা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
''প্রশাসন'' টেকনাফ থানা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম || শহর  || গ্রাম
| শহর  || গ্রাম || শহর  || গ্রাম
|-
|-
| ১ || ৬ || ১৩  || ১৩১  || ৩৬১৯২  || ১৬৪৪১৫  || ৫১৬  || ২৯.৯৩ || ২৩.১৪
| ১ || ৬ || ১২ || ১৪৬ || ৫১৪৪০ || ২১২৯৪৯ || ৬৮০ || ২৯.৯৩ (২০০১) || ২৩.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
২২ নং লাইন: ২২ নং লাইন:
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার(%)  
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার(%)  
|-
|-
| ৪.০৫ || ৯ || ৯  || ১৭৫৬৯  || ৪৩৩৮ || ৪০.৪৪
| ৪.০৫ (২০০১) || ৯ || ১৬ || ২৫০৫৬ || ৪৩৩৮ (২০০১) || ৪০.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
৩০ নং লাইন: ৩০ নং লাইন:
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || মৌজা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)  
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || মৌজা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)  
|-
|-
| ৩১.৫৩ || ১ || ১৮৬২৩  || ৫৯১ || ১৯.৫৩
| ৩১.৫৩ (২০০১) || ১ || ২৬৩৮৪ || ৫৯১ (২০০১) || ৩৪.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
৪০ নং লাইন: ৪০ নং লাইন:
| পুরুষ  || মহিলা
| পুরুষ  || মহিলা
|-
|-
| টেকনাফ ৬৩ || ২৬২৩৩  || ১৮১৬০ || ১৬৩৭৭  || ২২.৫৪
| টেকনাফ ৬৩ || ২৫০১৮ || ২৪০৭৬ || ২৩৬৩২ || ৩১.
|-
|-
| বাহারছড়া ১৫ || ৩৭৮২  || ১০২৯১ || ৯৩৯১  || ১৩.৪৫
| বাহারছড়া ১৫ || ৩৭৮৩ || ১৪৪৮১ || ১৪৩২৪ || ২২.
|-
|-
| সাবরাং ৪৭ || ১৫৫৮২  || ২৪০৯২ || ২২৪২০  || ১৯.৫৪
| সাবরাং ৪৭ || ১৬৪৮৬ || ২৯১২৬ || ২৯২৩২ || ১৬.
|-
|-
| হোয়াইক্যং  ৭৯ || ২৭৮৫৯  || ২০৮৭২ || ১৯০০২  || ২১.১৪
| হোয়াইক্যং ৭৯ || ৩১৫৮২ || ২৫২৯৬ || ২৫৫৬৭ || ২৮.
|-
|-
| নীলা ৩১ || ১৬৪৮৬  || ১৯৬৯৩ || ১৮২০৯  || ৩৪.০২
| নীলা ৩১ || ১৭১২৫ || ২৩৩৬০ || ২৩৫৩৬ || ২৮.
|-
|-
| সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ৩৯ || ৮২৪  || ২৪০১ || ২১৩০  || ১৫.১৩
| সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ৩৯ || ৮৩৫ || ৩৪৭১ || ৩২৩২ || ১৮.
|}
|}


''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
[[Image:TeknafUpazila.jpg|thumb|400px|right]]


''উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ''  বৌদ্ধ মন্দির (নাইট্যং পাহাড়), ম্যাথিনের কুপ (১৮৫৪), কানা রাজার সুড়ং।  
''উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ''  বৌদ্ধ মন্দির (নাইট্যং পাহাড়), ম্যাথিনের কুপ (১৮৫৪), কানা রাজার সুড়ং।  


''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি'' ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা টেকনাফে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। টেকনাফ ডাকবাংলোতে পাকবাহিনী তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে লোকজন ধরে এনে এখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। এ ক্যাম্পে ২৫০ জন বাঙালিকে হত্যা করা হয়।  
''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা টেকনাফে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। টেকনাফ ডাকবাংলোতে পাকবাহিনী তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। রামু, উখিয়া, ও টেকনাফ থেকে লোকজন ধরে এনে এখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। এ ক্যাম্পে ২৫০ জন বাঙালিকে হত্যা করা হয়। উপজেলার নাইট্যংপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।
 
[[Image:TeknafUpazila.jpg|thumb|400px|right]]


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' নাইট্যংপাড়া বধ্যভূমি।
''বিস্তারিত দেখুন'' টেকনাফ উপজেলা, ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।


''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ১৮৩, মন্দির ৭, বৌদ্ধ কেয়াং ১১। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: টেকনাফ বড় মসজিদ, অলিয়াবাদ জামে মসজিদ, টেকনাফ বিষ্ণু মন্দির, টেকনাফ বৌদ্ধ বিহার, চৌধুরীপাড়া বৌদ্ধ বিহার (কীলা)।
''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ১৮৩, মন্দির ৭, বৌদ্ধ কেয়াং ১১। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: টেকনাফ বড় মসজিদ, অলিয়াবাদ জামে মসজিদ, টেকনাফ বিষ্ণু মন্দির, টেকনাফ বৌদ্ধ বিহার, চৌধুরীপাড়া বৌদ্ধ বিহার (কীলা)।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান''  গড় হার ২৪.%; পুরুষ ২৯.%, মহিলা ১৯.%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: টেকনাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ২৬.%; পুরুষ ২৯.%, মহিলা ২৩.%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: টেকনাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫)।


''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  নাফকণ্ঠ (অবলুপ্ত)।
''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  নাফকণ্ঠ (অবলুপ্ত)।
৮৫ নং লাইন: ৮৪ নং লাইন:
''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' চিংড়ি ঘের ২৫৫, প্রদর্শনী চিংড়ি খামার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, শুটকি খামার ৬, হাঁস-মুরগি ৮, হ্যাচারি ৭।  
''মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার'' চিংড়ি ঘের ২৫৫, প্রদর্শনী চিংড়ি খামার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, শুটকি খামার ৬, হাঁস-মুরগি ৮, হ্যাচারি ৭।  


''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকারাস্তা ৪৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৪.৫০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭২.৫০ কিমি।
''যোগাযোগ বিশেষত্ব'' পাকারাস্তা ৮০.৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭৪.৩৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৮.২৬ কিমি; নৌপথ ২৮ কিমি।


''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' পাল্কি ও গরুর গাড়ি।
''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' পাল্কি ও গরুর গাড়ি।
৯৭ নং লাইন: ৯৬ নং লাইন:
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  সুপারি, পান, মৎস্য, লবণ।
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  সুপারি, পান, মৎস্য, লবণ।


''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৭.৯১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।  
''বিদ্যুৎ ব্যবহার'' উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৫.% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
 
''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৮১.৭৮%, পুকুর ৯.৬১%, ট্যাপ ০.৯৬% এবং অন্যান্য ৭.৬৫%।


''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার ৩৬.১৫% (গ্রামে ২৯.২০% এবং শহরে ৬৬.৪৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৮.৯৫% (গ্রামে ৪৩.৮৩% এবং শহরে ১৭.৬৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৪.৯০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৭৮.%, ট্যাপ ১.% এবং অন্যান্য ২০.২%।
''স্যানিটেশন ব্যবস্থা''  এ উপজেলার ৪৪.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং ৪২.% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।


''স্বাস্থ্যকেন্দ্র''  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, কলেরা হাসপাতাল ১।
''স্বাস্থ্যকেন্দ্র''  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, কলেরা হাসপাতাল ১।
১০৯ নং লাইন: ১০৮ নং লাইন:
''এনজিও'' ব্র্যাক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি উল্লেখযোগ্য।  [মো. মঈন উদ্দীন]
''এনজিও'' ব্র্যাক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি উল্লেখযোগ্য।  [মো. মঈন উদ্দীন]


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১; টেকনাফ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, টেকনাফ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।




[[en:Teknaf Upazila]]
[[en:Teknaf Upazila]]

১৩:৪৭, ৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

টেকনাফ উপজেলা (কক্সবাজার জেলা)  আয়তন: ৩৮৮.৬৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২০°২৩´ থেকে ২১°০৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৫´ থেকে ৯২°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উখিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজার জেলা সদর হতে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে টেকনাফ উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে সবুজ বৃক্ষরাজি শোভিত সুউচ্চ পাহাড় ও উখিয়া উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নাফ নদী ও মায়ানমার।

জনসংখ্যা ২৬৪৩৮৯; পুরুষ ১৩৩১০৬, মহিলা ১৩১২৮৩। মুসলিম ২৫৮২৪৫, হিন্দু ২৯৬৭, বৌদ্ধ ৩০৮৯, খ্রিস্টান ৯ এবং অন্যান্য ৭৯।

প্রশাসন টেকনাফ থানা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ১৪৬ ৫১৪৪০ ২১২৯৪৯ ৬৮০ ২৯.৯৩ (২০০১) ২৩.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
৪.০৫ (২০০১) ১৬ ২৫০৫৬ ৪৩৩৮ (২০০১) ৪০.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩১.৫৩ (২০০১) ২৬৩৮৪ ৫৯১ (২০০১) ৩৪.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
টেকনাফ ৬৩ ২৫০১৮ ২৪০৭৬ ২৩৬৩২ ৩১.১
বাহারছড়া ১৫ ৩৭৮৩ ১৪৪৮১ ১৪৩২৪ ২২.৬
সাবরাং ৪৭ ১৬৪৮৬ ২৯১২৬ ২৯২৩২ ১৬.৯
হোয়াইক্যং ৭৯ ৩১৫৮২ ২৫২৯৬ ২৫৫৬৭ ২৮.০
নীলা ৩১ ১৭১২৫ ২৩৩৬০ ২৩৫৩৬ ২৮.৫
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ৩৯ ৮৩৫ ৩৪৭১ ৩২৩২ ১৮.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বৌদ্ধ মন্দির (নাইট্যং পাহাড়), ম্যাথিনের কুপ (১৮৫৪), কানা রাজার সুড়ং।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা টেকনাফে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। টেকনাফ ডাকবাংলোতে পাকবাহিনী তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। রামু, উখিয়া, ও টেকনাফ থেকে লোকজন ধরে এনে এখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। এ ক্যাম্পে ২৫০ জন বাঙালিকে হত্যা করা হয়। উপজেলার নাইট্যংপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন টেকনাফ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৮৩, মন্দির ৭, বৌদ্ধ কেয়াং ১১। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: টেকনাফ বড় মসজিদ, অলিয়াবাদ জামে মসজিদ, টেকনাফ বিষ্ণু মন্দির, টেকনাফ বৌদ্ধ বিহার, চৌধুরীপাড়া বৌদ্ধ বিহার (কীলা)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৬.৭%; পুরুষ ২৯.৭%, মহিলা ২৩.৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: টেকনাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  নাফকণ্ঠ (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫০, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ১১।

দর্শনীয় স্থান সেন্টমার্টিন; বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। মূল ভূ-খন্ড হতে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জিনজিরা, দক্ষিণ পাড়া, ছালছিরা ও বেছাদিয়া এ চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ গঠিত। দ্বীপের আয়তন ৪.৮ কিলোমিটার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৪.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৫১%, ব্যবসা ২১.৮৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯৬%, চাকরি ৪.২৭%, নির্মাণ ০.৭৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৪৬% এবং অন্যান্য ১৬.৮২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ২৭.৩৪%, ভূমিহীন ৭২.৬৬%। শহরে ১৮.৮৬% এবং গ্রামে ২৯.২৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পান, আলু।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি অড়হর, পিঁয়াজ, সরিষা, গম।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, সুপারি, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার চিংড়ি ঘের ২৫৫, প্রদর্শনী চিংড়ি খামার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, শুটকি খামার ৬, হাঁস-মুরগি ৮, হ্যাচারি ৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮০.৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭৪.৩৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৮.২৬ কিমি; নৌপথ ২৮ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা লবণ কারখানা ১, বরফকল ৩।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ১৫৩, লৌহশিল্প ৫০, মৃৎশিল্প ১৫০, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ  ৫২৫, সেলাই কাজ ২৫০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৩, মেলা ১। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার: সাবরাং হাট, শাহ পরীর দ্বীপ হাট, হোয়াইক্যং বাজার, কীলা বাজার।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য সুপারি, পান, মৎস্য, লবণ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৫.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৮.৭%, ট্যাপ ১.১% এবং অন্যান্য ২০.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৪.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং ৪২.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, কলেরা হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এবং ১৯৯৭ সালের ৩০ মে’র ঘুর্ণিঝড়ে এ এলাকার বহু লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি উল্লেখযোগ্য।  [মো. মঈন উদ্দীন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, টেকনাফ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।