বয়াতী, আব্দুর রহমান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("'''বয়াতী, আব্দুর রহমান''' (১৯৩৯-২০১৩) আব্দুর রহমান বয়াতী ১৯৩৯ সালের ১লা জানুয়ারি পুরাতন ঢাকার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই মায়ের অনুপ্রেরণায় বাউল সঙ্গীতে..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Image:BoyatiAbdurRahman.jpg|right|thumbnail|200px|আব্দুর রহমান বয়াতী]]
'''বয়াতী, আব্দুর রহমান''' (১৯৩৯-২০১৩)  আব্দুর রহমান বয়াতী ১৯৩৯ সালের ১লা জানুয়ারি পুরাতন ঢাকার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই মায়ের অনুপ্রেরণায় বাউল সঙ্গীতের চর্চা শুর করেন। তাঁর পিতার নাম তোতা মিয়া এবং মাতার নাম মরিয়ম বেগম। তিনি খাতুন জারার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আধ্যাত্মিক শুরু আলাউদ্দিন বয়াতীর মাধ্যমে তিনি বাউল গানের দেহতত্ত্ব (মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্ব খোঁজা) ধারার সাথে পরিচিতি লাভ করেন। বাউল গানের পাশাপাশি তিনি একজন সুরকার, গীতিকার, পরিচালক এবং কবি ছিলেন। বয়াতী গানে খ্যাতি অর্জন করলেও বাউল গানের অন্যান্য ধারা যেমন জারী, পল্লীগীতি, মারফতি, মুশির্দি, দেহতত্ত্ব এমনকি কাওয়ালী গানেও তিনি পারদর্শী ছিলেন।
'''বয়াতী, আব্দুর রহমান''' (১৯৩৯-২০১৩)  আব্দুর রহমান বয়াতী ১৯৩৯ সালের ১লা জানুয়ারি পুরাতন ঢাকার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই মায়ের অনুপ্রেরণায় বাউল সঙ্গীতের চর্চা শুর করেন। তাঁর পিতার নাম তোতা মিয়া এবং মাতার নাম মরিয়ম বেগম। তিনি খাতুন জারার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আধ্যাত্মিক শুরু আলাউদ্দিন বয়াতীর মাধ্যমে তিনি বাউল গানের দেহতত্ত্ব (মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্ব খোঁজা) ধারার সাথে পরিচিতি লাভ করেন। বাউল গানের পাশাপাশি তিনি একজন সুরকার, গীতিকার, পরিচালক এবং কবি ছিলেন। বয়াতী গানে খ্যাতি অর্জন করলেও বাউল গানের অন্যান্য ধারা যেমন জারী, পল্লীগীতি, মারফতি, মুশির্দি, দেহতত্ত্ব এমনকি কাওয়ালী গানেও তিনি পারদর্শী ছিলেন।



১৫:৪৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আব্দুর রহমান বয়াতী

বয়াতী, আব্দুর রহমান (১৯৩৯-২০১৩) আব্দুর রহমান বয়াতী ১৯৩৯ সালের ১লা জানুয়ারি পুরাতন ঢাকার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই মায়ের অনুপ্রেরণায় বাউল সঙ্গীতের চর্চা শুর করেন। তাঁর পিতার নাম তোতা মিয়া এবং মাতার নাম মরিয়ম বেগম। তিনি খাতুন জারার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আধ্যাত্মিক শুরু আলাউদ্দিন বয়াতীর মাধ্যমে তিনি বাউল গানের দেহতত্ত্ব (মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্ব খোঁজা) ধারার সাথে পরিচিতি লাভ করেন। বাউল গানের পাশাপাশি তিনি একজন সুরকার, গীতিকার, পরিচালক এবং কবি ছিলেন। বয়াতী গানে খ্যাতি অর্জন করলেও বাউল গানের অন্যান্য ধারা যেমন জারী, পল্লীগীতি, মারফতি, মুশির্দি, দেহতত্ত্ব এমনকি কাওয়ালী গানেও তিনি পারদর্শী ছিলেন।

বাউল গানকে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করতে তিনি অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর গান ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি’ সারাবিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি তাঁর গান ‘এই পৃথিবী যেমন আছে ঠিক তেমনি রবে’, ‘দিন গেলে আর দিন পাবিনা’, ‘একদিন চিঠি দিয়ে হইবে ডাকাতি’, ‘দে দে পাল তুলে দে’, ‘পিরিতি কইরাছে কলংকিনী’, ‘মরণেরও কথা কেন স্মরণ করোনা’, ‘মা গো মা ঝি গো ঝি’ ইত্যাদির মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। দীর্ঘ গায়কী জীবনে আব্দুর রহমান বয়াতী পাঁচশত একক এলবাম এবং দুইশত মিক্সড এলবাম প্রকাশ করেন।

১৯৮২ সালে তিনি ‘আব্দুর রহমান বয়াতী দল’ নামে নিজস্ব গানের দল গঠন করেন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিশ্বের ৪০টি দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, জাপান, অস্ট্রিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত ভ্রমণ করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশী গায়ক যিনি ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে হোয়াইট হাউজে গান গাওয়ার দুর্লভ সুযোগ লাভ করেন।

তিনি বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে গান পরিবেশন করেছেন। আব্দুর রহমান বয়াতী তাঁর বিখ্যাত গান ‘মন আমার দেহ ঘড়ি’ নিয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘ফিডব্যাক’-এর সাথে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করেন। ঢালিউডের সিনেমা জগতের শতাধিক গানে তিনি কণ্ঠ দেন, তন্মধ্যে মাসুদ পারভেজ পরিচালিত ‘গুনাহগার’ ও মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘শঙ্খ নীল কারাগার’ অন্যতম। ১৯৮৯ সালে হাফিজ উদ্দিন পরিচালিত ‘অসতী’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন।

আব্দুর রহমান বয়াতীর কণ্ঠ ও সুর ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। ১৯৭৩ সালে বাউল গানের প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাথে আলোচনা করার সুযোগ লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় গান পরিবেশনের জন্য পাঠান। বাংলা গানে অনবদ্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে তিনি অর্জন করেন ‘একুশে পদক’ (বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক জাতীয় পদক)। এছাড়াও তিনি ‘প্রেসিডেন্সি পদক’, ‘নজরুল একাডেমী সম্মাননা’, ‘স্বদেশ ও সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই বাউল সঙ্গীতশিল্পী ২০১৩ সালের ১৯শে আগস্ট ঢাকার জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে ৭৪ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ পুত্র সন্তান, ৩ কন্যা সন্তান ও অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে যান। [মো. আবুল হোসেন]