মতিন, আবদুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
আবদুল মতিনের স্ত্রীর নাম গুলবদন নেসা মনিকা। এ দম্পত্তির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।  [হারুন-অর-রশিদ]
আবদুল মতিনের স্ত্রীর নাম গুলবদন নেসা মনিকা। এ দম্পত্তির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।  [হারুন-অর-রশিদ]


'''তথ্যসূত্র''' হারুন-অর-রশিদ, ''বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ'', (ইউপিএল ২০১৩), হারুন-অর-রশিদ, ''ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা'', (অন্য প্রকাশ ২০২০); হারুন-অর-রশিদ (সম্পাদিত) ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', ৩য় খণ্ড, (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ২০২০); এম আর মাহবুব, ''যারা অমর ভাষা সংগ্রামে'', (অনিন্দ্য প্রকাশ ২০১২)
'''তথ্যসূত্র''' হারুন-অর-রশিদ, ''বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ'', (ইউপিএল ২০১৩), হারুন-অর-রশিদ, ''ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা'', (অন্য প্রকাশ ২০২০); হারুন-অর-রশিদ (সম্পাদিত) ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', ৩য় খণ্ড, (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ২০২০); এম আর মাহবুব, ''যারা অমর ভাষা সংগ্রামে'', (অনিন্দ্য প্রকাশ ২০১২)


[[en: Matin, Abdul]]
[[en: Matin, Abdul]]

১৪:০৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আবদুল মতিন

মতিন, আবদুল (১৯২৬-২০১৪) ভাষা সৈনিক, বামপন্থী রাজনীতিক, ‘ভাষা মতিন’ নামে সর্বমহলে পরিচিত। আবদুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ মহাকুমা (বর্তমান জেলা)-র চৌহালি উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে এক স্বচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল জলিল এবং মাতার নাম আমেনা খাতুন। গ্রামের বাড়ি যমুনার গর্ভে বিলীন হলে তাঁর পিতা পরিবার-পরিজন নিয়ে দার্জিলিং চলে যান। সেখানে তার ছোটখাটো একটি কর্মসংস্থান হয়। সেখানে মহারাণী বিদ্যালয়ে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। ঐ স্কুলে প্রাইমারি শিক্ষা সম্পন্ন করা শেষে তাঁকে দার্জিলিং গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ১৯৪৩ সালে এ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (বর্তমানে এস.এস.সি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি রাজশাহী কলেজে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ইন্টারমেডিয়েট পাস করে একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ (পাস) কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে তিনি বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালে আবদুল মতিন রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বিরোধী ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কনভেনিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং বৃহত্তর পাবনা জেলার দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত হয়। তিনি ১৯৪৮-১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারিদের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। শাস্তিস্বরূপ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে এম এ ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গঠিত হলে তিনি এর অন্যতম যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আবদুল মতিনের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য অধ্যায় হচ্ছে ভাষা আন্দোলনে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’-এ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের মধ্য থেকে যাদের কণ্ঠে ‘না না’ প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে আবদুল মতিন ছিলেন অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর পূর্বে ১৯৫১ সালের ১১ই মার্চ তাঁর নেতৃত্বে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি আওয়ামী মুসলিম লীগ (১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ) সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এক প্রতিনিধি সভায় ছাত্রলীগ নেতা কাজী গোলাম মাহবুবকে আহবায়ক করে ২৮ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে, আবদুল মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে (তিনি ছিলেন আহবায়ক) এর অন্যতম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা সংগ্রাম পরিষদের যে কজন নেতা সরকারের ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে বেরিয়ে এসে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালনের পক্ষে অবস্থান করেছিলেন, মতিন ছিলেন তাদের অন্যতম। ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর ভাষা আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে আসে সরকারি অত্যাচার, নির্যাতন, হুলিয়া, গ্রেপ্তার। ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে আবদুল মতিন গ্রেপ্তার হন এবং এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন।

আবদুল মতিন ক্রমান্বয়ে বামপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৫২ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগী ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের তিনি ১৯৫৪-১৯৫৬ সময়ে সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গিয়ে বামপন্থী সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করলে মতিন তাতে যোগ দেন। তিনি গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলে পার্টি গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেন। কমিউনিস্ট পার্টির ভেতর তিনি গোপনে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিট-লেনিনিস্ট) নামে একটি উপদল সৃষ্টি করে তার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি ও তাঁর অনুসারিরা ভারতের পশ্চিম বাংলার উগ্র চীনপন্থী নকসাল বাড়ি আন্দোলনের নেতা চারু মজুমদার দ্বারা খুুবই প্রভাবন্বিত হন। স্বাধীনাত্তোর মতিন ও তাঁর দল মাও সে-তুং-এর রাজনৈতিক লাইন ‘গ্রাম শত্রুমুক্ত করে শহর দখল’ অনুসরণে উগ্রপন্থা অবলম্বন এবং সে অনুযায়ী তৎপরতা শুরু করে। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন মতিন কারাগারে কাটান। মুক্তিলাভের পর তিনি বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ ইত্যাদি পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

তিনি কয়েকটি বই রচনা করেন, যার মধ্যে গণচীনের উৎপাদন ব্যবস্থা (ঢাকা, ১৯৮৫), ভাষা ও একুশের আন্দোলন (ঢাকা, ১৯৮৬), ভাষা আন্দোলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য (যৌথভাবে; ঢাকা ১৯৯১) এবং নিজ জীবনী গ্রন্থ জীবন পথের বাঁকে বাঁকে (ঢাকা ২০০৪) উল্লেখযোগ্য। একুশে পদকসহ তিনি একাধিক সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৪ সালের ৮ই অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মরণোত্তর তাঁর চক্ষু ও দেহ দান করে যান।

আবদুল মতিনের স্ত্রীর নাম গুলবদন নেসা মনিকা। এ দম্পত্তির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]

তথ্যসূত্র হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ, (ইউপিএল ২০১৩), হারুন-অর-রশিদ, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, (অন্য প্রকাশ ২০২০); হারুন-অর-রশিদ (সম্পাদিত) বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ৩য় খণ্ড, (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ২০২০); এম আর মাহবুব, যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, (অনিন্দ্য প্রকাশ ২০১২)।