ফেনী জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
(হালনাগাদ) |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''ফেনী জেলা''' ([[চট্টগ্রাম বিভাগ|চট্টগ্রাম বিভাগ]]) আয়তন: | '''ফেনী জেলা''' ([[চট্টগ্রাম বিভাগ|চট্টগ্রাম বিভাগ]]) আয়তন: ৯৯০.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৪´ থেকে ২৩°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৫´ থেকে ৯১°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা জেলা এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা। | ||
''জনসংখ্যা'' | ''জনসংখ্যা'' ১৪৩৭৩৭১; পুরুষ ৬৯৪১২৮, মহিলা ৭৪৩২৪৩। মুসলিম ১৩৫২৮৬৬, হিন্দু ৮৩৭৭৩, বৌদ্ধ ৪০৮, খ্রিস্টান ১৮২ এবং অন্যান্য ১৪২। | ||
''জলাশয়'' ফেনী, ছোট ফেনী ও মুহুরী নদী উল্লেখযোগ্য। | ''জলাশয়'' ফেনী, ছোট ফেনী ও মুহুরী নদী উল্লেখযোগ্য। | ||
''প্রশাসন'' ১৯৭৬ সালে ফেনী মহকুমা গটিত হয় এবং মহকুমা জেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৪ সালে। চট্টগাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে ফেনী জেলার অবস্থান একাদশ এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এর অবস্থান ৬১ তম। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে সোনাগাজী উপজেলা সর্ববৃহৎ ( | ''প্রশাসন'' ১৯৭৬ সালে ফেনী মহকুমা গটিত হয় এবং মহকুমা জেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৪ সালে। চট্টগাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে ফেনী জেলার অবস্থান একাদশ এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এর অবস্থান ৬১ তম। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে সোনাগাজী উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৮৪.৮৯ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা পরশুরাম (৯৫.৭৬ বর্গ কিমি)। | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
১৬ নং লাইন: | ১৬ নং লাইন: | ||
| শহর || গ্রাম | | শহর || গ্রাম | ||
|- | |- | ||
| | | ৯৯০.৩৬ || ৬ || ৫ || ৪৩ || ৫০২ || ৫৫৩ || ২৯৩৭৪২ || ১১৪৩৬২৯ || ১৪১৫ || ৫৯.৬ | ||
|} | |} | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
২৪ নং লাইন: | ২৪ নং লাইন: | ||
| উপজেলার নাম || আয়তন (বর্গ কিমি) || পৌরসভা || ইউনিয়ন || মৌজা || গ্রাম || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || শিক্ষার হার (%) | | উপজেলার নাম || আয়তন (বর্গ কিমি) || পৌরসভা || ইউনিয়ন || মৌজা || গ্রাম || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) || শিক্ষার হার (%) | ||
|- | |- | ||
| ছাগলনাইয়া | | ছাগলনাইয়া || ১৩৯.৫৯ || ১ || ৫ || ৪৬ || ৫৮ || ১৮৭১৫৬ || ১৩৪১ || ৬৩.৪ | ||
|- | |- | ||
| দাগনভূঁইয়া | | দাগনভূঁইয়া || ১৪১ .৭০ || ১ || ৮ || ৯৩ || ১১৯ || ২৫৪৪০২ || ১৭৯৫ || ৫৮.৮ | ||
|- | |- | ||
| পরশুরাম | | পরশুরাম || ৯৫.৭৬ || ১ || ৩ || ৬৭ || ৭১ || ১০১০৬২ || ১০৫৫ || ৫৮.৮ | ||
|- | |- | ||
| ফুলগাজী | | ফুলগাজী || ১০২.১৯ || - || ৬ || ৭৭ || ৮৫ || ১১৯৫৫৮ || ১১৭০ || ৬০.০ | ||
|- | |- | ||
| ফেনী সদর | | ফেনী সদর || ২২৬.১৯ || ১ || ১২ || ১২৩ || ১২৫ || ৫১২৬৪৬ || ২২৬৬ || ৬২.৮ | ||
|- | |- | ||
| সোনাগাজী | | সোনাগাজী || ২৮৪.৮৯ || ১ || ৯ || ৯১ || ৯৫ || ২৬২৫৪৭ || ৯২২ || ৫১.৬ | ||
|} | |} | ||
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট | ''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। | ||
[[Image:FeniDistrict.jpg|thumb|400px|right]] | [[Image:FeniDistrict.jpg|thumb|400px|right]] | ||
'' | ''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে ছাগলনাইয়ার শুভপুর ব্রিজ পার হতে গিয়ে ২০ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হয়। ২৩ এপ্রিল ফেনী জেলার ওপর পাকসেনারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ছাগলনাইয়ার কালাপুলে (কালাব্রিজ) পাকসেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৯ মে এ উপজেলার গোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও সিংহনগরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০০ পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ১০ জুন ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া সেতু পার হতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুলাই মাসে শুভপুরে পাকসেনার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুলাই মাসে মধুগ্রাম এলাকায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৮ জুলাই সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াইয়ের পর পাককমান্ডার গুল মোহাম্মদের শিরচ্ছেদ করা হয়। ১৫ আগষ্ট সোনাগাজী উপজেলার সাতবাড়িয়া পুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ পাকসেনারা বক্স আলী, সুজাপুর দাসগ্রামে ৫ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং অগ্নিসংযোগ ও লুুটপাট করে। ৭ নভেম্বর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া বিওপিতে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নভেম্বরের শেষ দিকে শুভপুরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর ফেনী পাকসেনা মুক্ত হয়। ফেনী জেলার শুধু সদর উপজেলাতেই ৭টি স্থানে বধ্যভূমি ও ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; ছাগলনাইয়ায় ২টি এবং সোনাগাজীতে ৮টিসহ মোট ১০টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। | ||
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার | ''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৫৯.৬%; পুরুষ ৬১.১%, মহিলা ৫৮.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফেনী পিটিআই (১৯৫৭), ফেনী পলিটেকনিট ইনস্টিটিউট (১৯৬২), ফেনী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (১৯৬৩), ফেনী সরকারি কলেজ (১৯২২), ফেনী জি এ একাডেমী (১৯৪৩), সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ (১৯৭৯), ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজ (১৯৭২), ফুলগাজী সরকারি কলেজ (১৯৭২), সোনাগাজী সরকারি কলেজ (১৯৭২), পরশুরাম সরকারি কলেজ (১৯৭২), সরকারি কমার্স কলেজ (১৯৬৫), ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ (২০০৪), ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৬), মুন্সীরহাট আলী আজ্জম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), এসসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), মঙ্গলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), ছাগলনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), জয়পুর সরোজিনী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), আমিরাবাদ বি সি লাহা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল (১৯১৯), নবাবপুর হাইস্কুল (১৯২৩), বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), ফেনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), ছাগলনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০০), বক্তারমুন্সী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১০), সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৮), গোবিন্দপুর ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২০), ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা (১৯২৩)। | ||
''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৩১.৫১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৭%, শিল্প ০.৯৮%, ব্যবসা ১৫.৯৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬৬%, নির্মাণ ১.৮৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, চাকরি ১৮.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১১.৫৩% এবং অন্যান্য ১২.১৯%। | ''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৩১.৫১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৭%, শিল্প ০.৯৮%, ব্যবসা ১৫.৯৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬৬%, নির্মাণ ১.৮৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, চাকরি ১৮.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১১.৫৩% এবং অন্যান্য ১২.১৯%। | ||
৫৬ নং লাইন: | ৫৫ নং লাইন: | ||
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা। | ''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা। | ||
'''তথ্যসূত্র''' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফেনী জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ফেনী জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭। | '''তথ্যসূত্র''' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফেনী জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ফেনী জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭। | ||
[[en:Feni District]] | [[en:Feni District]] |
১৮:২৭, ২৮ মে ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ফেনী জেলা (চট্টগ্রাম বিভাগ) আয়তন: ৯৯০.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৪´ থেকে ২৩°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৫´ থেকে ৯১°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা জেলা এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা।
জনসংখ্যা ১৪৩৭৩৭১; পুরুষ ৬৯৪১২৮, মহিলা ৭৪৩২৪৩। মুসলিম ১৩৫২৮৬৬, হিন্দু ৮৩৭৭৩, বৌদ্ধ ৪০৮, খ্রিস্টান ১৮২ এবং অন্যান্য ১৪২।
জলাশয় ফেনী, ছোট ফেনী ও মুহুরী নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৯৭৬ সালে ফেনী মহকুমা গটিত হয় এবং মহকুমা জেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৪ সালে। চট্টগাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে ফেনী জেলার অবস্থান একাদশ এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এর অবস্থান ৬১ তম। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে সোনাগাজী উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৮৪.৮৯ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা পরশুরাম (৯৫.৭৬ বর্গ কিমি)।
জেলা | |||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
৯৯০.৩৬ | ৬ | ৫ | ৪৩ | ৫০২ | ৫৫৩ | ২৯৩৭৪২ | ১১৪৩৬২৯ | ১৪১৫ | ৫৯.৬ |
জেলার অন্যান্য তথ্য | |||||||||
উপজেলার নাম | আয়তন (বর্গ কিমি) | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
ছাগলনাইয়া | ১৩৯.৫৯ | ১ | ৫ | ৪৬ | ৫৮ | ১৮৭১৫৬ | ১৩৪১ | ৬৩.৪ | |
দাগনভূঁইয়া | ১৪১ .৭০ | ১ | ৮ | ৯৩ | ১১৯ | ২৫৪৪০২ | ১৭৯৫ | ৫৮.৮ | |
পরশুরাম | ৯৫.৭৬ | ১ | ৩ | ৬৭ | ৭১ | ১০১০৬২ | ১০৫৫ | ৫৮.৮ | |
ফুলগাজী | ১০২.১৯ | - | ৬ | ৭৭ | ৮৫ | ১১৯৫৫৮ | ১১৭০ | ৬০.০ | |
ফেনী সদর | ২২৬.১৯ | ১ | ১২ | ১২৩ | ১২৫ | ৫১২৬৪৬ | ২২৬৬ | ৬২.৮ | |
সোনাগাজী | ২৮৪.৮৯ | ১ | ৯ | ৯১ | ৯৫ | ২৬২৫৪৭ | ৯২২ | ৫১.৬ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে ছাগলনাইয়ার শুভপুর ব্রিজ পার হতে গিয়ে ২০ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হয়। ২৩ এপ্রিল ফেনী জেলার ওপর পাকসেনারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ছাগলনাইয়ার কালাপুলে (কালাব্রিজ) পাকসেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৯ মে এ উপজেলার গোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও সিংহনগরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০০ পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ১০ জুন ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া সেতু পার হতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুলাই মাসে শুভপুরে পাকসেনার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুলাই মাসে মধুগ্রাম এলাকায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৮ জুলাই সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াইয়ের পর পাককমান্ডার গুল মোহাম্মদের শিরচ্ছেদ করা হয়। ১৫ আগষ্ট সোনাগাজী উপজেলার সাতবাড়িয়া পুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ পাকসেনারা বক্স আলী, সুজাপুর দাসগ্রামে ৫ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং অগ্নিসংযোগ ও লুুটপাট করে। ৭ নভেম্বর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া বিওপিতে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নভেম্বরের শেষ দিকে শুভপুরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর ফেনী পাকসেনা মুক্ত হয়। ফেনী জেলার শুধু সদর উপজেলাতেই ৭টি স্থানে বধ্যভূমি ও ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; ছাগলনাইয়ায় ২টি এবং সোনাগাজীতে ৮টিসহ মোট ১০টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.৬%; পুরুষ ৬১.১%, মহিলা ৫৮.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফেনী পিটিআই (১৯৫৭), ফেনী পলিটেকনিট ইনস্টিটিউট (১৯৬২), ফেনী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (১৯৬৩), ফেনী সরকারি কলেজ (১৯২২), ফেনী জি এ একাডেমী (১৯৪৩), সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ (১৯৭৯), ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজ (১৯৭২), ফুলগাজী সরকারি কলেজ (১৯৭২), সোনাগাজী সরকারি কলেজ (১৯৭২), পরশুরাম সরকারি কলেজ (১৯৭২), সরকারি কমার্স কলেজ (১৯৬৫), ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ (২০০৪), ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৬), মুন্সীরহাট আলী আজ্জম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), এসসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), মঙ্গলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), ছাগলনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), জয়পুর সরোজিনী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), আমিরাবাদ বি সি লাহা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল (১৯১৯), নবাবপুর হাইস্কুল (১৯২৩), বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), ফেনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), ছাগলনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০০), বক্তারমুন্সী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১০), সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৮), গোবিন্দপুর ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২০), ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা (১৯২৩)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩১.৫১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৭%, শিল্প ০.৯৮%, ব্যবসা ১৫.৯৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬৬%, নির্মাণ ১.৮৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, চাকরি ১৮.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১১.৫৩% এবং অন্যান্য ১২.১৯%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: নয়াপয়গাম, আমার ফেনী; অর্ধ-সাপ্তাহিক: পথ, নবনূর; সাপ্তাহিক: গ্রামদেশ, হকার্স, মুহুরী, ফেনী বার্তা, পল্লীবার্তা, ফেনী প্রবাহ, ফেনী সংবাদ, ফেনী খবর, ফেনী দর্পণ, ফেনী টাইমস্, আনন্দ তারকা, গ্রামবার্তা, মিনার, স্বদেশকণ্ঠ, অতএব, বৈকালী, আমার দেশ, গণমানুষ, ফেনী কণ্ঠ, গণচেতনা, ফেনীর আলো, উন্মোচন, দৃষ্টিপথ, নবীন বাংলা, আলোকিত ফেনী, নবকিরণ, ফেনীর রবি, জহুর, কলকণ্ঠ, আনন্দ তারকা, বর্ণমালা, ফেনীর স্বাস্থ্যকথা, পূর্বদেশ, সংগ্রাম; পাক্ষিক: মসিমেলা, ফেনী চিত্র; মাসিক: আনন্দ ভৈরবী, সরাসরি, ঊর্মি, হায়দার; ত্রৈমাসিক: ধানসিঁড়ি; সাময়িকী: শুভেচ্ছা, বর্তমান দিশারী, উপকুল।
লোকসংস্কৃতি এ জেলায় ধাঁ-ধাঁ, কবিতা, গল্প, প্রবাদ, খনার বচন, লোককাহিনী, লোকবিশ্বাস, পালাগান, কবিয়ালী গান, যাত্রা, মন্ত্র-তন্ত্র ইত্যাদির প্রচলন রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় ভাটিয়ালী, রাখালী, মারফতী, মুর্শিদী গানের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া এ উপজেলায় নাট্যচর্চাও লক্ষ্য করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিলোনিয়া রেলস্টেশন, কাস্টমস হাউজ, বিলোনিয়া সীমান্ত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। [টিপু সুলতান]
আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফেনী জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ফেনী জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।