লাঙল১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
লাঙলে কয়েকটি অংশ রয়েছে যেমন: হাতের মুঠো, হাতল, প্রধান দÐ, ফলা, কীলক ইত্যাদি। লাঙল সামনের দিকে টেনে এর সরু ফলা মাটির কয়েক সেমি নিচে ভেদ করানো হয় এবং এর সাহায্যে মাটির উপরিভাগ ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার সময় মাটি ফলার উভয় দিকেই নিক্ষিপ্ত হয়। মাটির প্রকারের ওপর ভিত্তি করে মাটিকে ফসল বোনার উপযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কয়েকবার লাঙল দ্বারা চষা হয়। প্রয়োজনীয় মেরামতসহ একটি লাঙল ৪-৫ বছর টিকে থাকে। গুণাগুণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিকে ১৮ ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রতিটি লাঙল মাটির ধরনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাঙলের ধরন শুধু মাটির ভৌত গুণের দ্বারাই প্রভাবিত হয় নি, স্থানীয় ঐতিহ্যের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে। | লাঙলে কয়েকটি অংশ রয়েছে যেমন: হাতের মুঠো, হাতল, প্রধান দÐ, ফলা, কীলক ইত্যাদি। লাঙল সামনের দিকে টেনে এর সরু ফলা মাটির কয়েক সেমি নিচে ভেদ করানো হয় এবং এর সাহায্যে মাটির উপরিভাগ ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার সময় মাটি ফলার উভয় দিকেই নিক্ষিপ্ত হয়। মাটির প্রকারের ওপর ভিত্তি করে মাটিকে ফসল বোনার উপযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কয়েকবার লাঙল দ্বারা চষা হয়। প্রয়োজনীয় মেরামতসহ একটি লাঙল ৪-৫ বছর টিকে থাকে। গুণাগুণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিকে ১৮ ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রতিটি লাঙল মাটির ধরনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাঙলের ধরন শুধু মাটির ভৌত গুণের দ্বারাই প্রভাবিত হয় নি, স্থানীয় ঐতিহ্যের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে। | ||
[[Image:PloughArt2.jpg|thumb|right| | [[Image:PloughArt2.jpg|thumb|right|500px|বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবহুত লাঙল]] | ||
গবাদি পশুর উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য কলের লাঙলের মাধ্যমে চাষাবাদের তুলনায় লাঙল দ্বারা চাষাবাদ বর্তমানে ব্যয়বহুল। সে কারণে লাঙলকে এখন সেকেলে একটি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ লাঙলের পরিবর্তে কলের লাঙলের ব্যবহার এখন খুব দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম] | গবাদি পশুর উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য কলের লাঙলের মাধ্যমে চাষাবাদের তুলনায় লাঙল দ্বারা চাষাবাদ বর্তমানে ব্যয়বহুল। সে কারণে লাঙলকে এখন সেকেলে একটি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ লাঙলের পরিবর্তে কলের লাঙলের ব্যবহার এখন খুব দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম] | ||
'''''লাঙলস্তর (Ploughpan)''''' চাষকৃত স্তরের নিচে অবস্থিত গাঢ় ও শক্ত মাটির একটি স্তর। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকায় আর্দ্র বা সিক্ত অবস্থায় জমি লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া হলে লাঙলের তলার চাপে এ শক্ত স্তরের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর দেশী লাঙল ব্যবহার করে রোপা ধান চাষ করার ফলে প্রায় ৩-৫ সেমি শক্ত লাঙলস্তর বাংলাদেশে চাষকৃত প্রায় সকল মৃত্তিকায় কিছু পরিমাণ তৈরি হতে দেখা যায়। লাঙলস্তর চাষাবাদে দুটি প্রধান সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমত, শক্ত লাঙলস্তর মূলের বিস্তার এবং বাড়ন্ত ফসল কর্তৃক মাটির নিæস্তরের পুষ্টি উপাদান গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং দ্বিতীয়ত, লাঙলস্তর মাটির নিæস্তরে পানির চলাচলে বাঁধা দেয়। সেচ দেওয়া হলে বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে লাঙলস্তরের জন্য মৃত্তিকার উপরের স্তর পানিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এতে স্পর্শকাতর শুষ্কভূমির ফসলসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন বা একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বরেন্দ্র অঞ্চলসমূহে প্রায়ই লাঙলস্তর গঠিত হতে দেখা যায়। [সুলতানা রাজিয়া] | '''''লাঙলস্তর (Ploughpan)''''' চাষকৃত স্তরের নিচে অবস্থিত গাঢ় ও শক্ত মাটির একটি স্তর। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকায় আর্দ্র বা সিক্ত অবস্থায় জমি লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া হলে লাঙলের তলার চাপে এ শক্ত স্তরের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর দেশী লাঙল ব্যবহার করে রোপা ধান চাষ করার ফলে প্রায় ৩-৫ সেমি শক্ত লাঙলস্তর বাংলাদেশে চাষকৃত প্রায় সকল মৃত্তিকায় কিছু পরিমাণ তৈরি হতে দেখা যায়। লাঙলস্তর চাষাবাদে দুটি প্রধান সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমত, শক্ত লাঙলস্তর মূলের বিস্তার এবং বাড়ন্ত ফসল কর্তৃক মাটির নিæস্তরের পুষ্টি উপাদান গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং দ্বিতীয়ত, লাঙলস্তর মাটির নিæস্তরে পানির চলাচলে বাঁধা দেয়। সেচ দেওয়া হলে বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে লাঙলস্তরের জন্য মৃত্তিকার উপরের স্তর পানিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এতে স্পর্শকাতর শুষ্কভূমির ফসলসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন বা একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বরেন্দ্র অঞ্চলসমূহে প্রায়ই লাঙলস্তর গঠিত হতে দেখা যায়। [সুলতানা রাজিয়া] | ||
[[en:Plough]] | [[en:Plough]] |
০৫:০৬, ৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
লাঙল১ (Plough) ভূমি চাষে ব্যবহার্য অন্যতম দেশীয় সরঞ্জাম। বহুকাল আগে থেকেই লাঙল সনাতনী কৃষি উৎপাদনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। সাধারণত দুটি শক্ত-সমর্থ গরু দ্বারা এটিকে টানা হয়, মাঝে মাঝে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষও এটিকে টেনে থাকে। এখনও বিদ্যমান পোড়ামাটির প্লেটে সপ্তম শতাব্দীর প্রথমদিকে বাংলায় লাঙল ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে এর ব্যবহার অনেক দিনের বলা যায়, লোহার ফলাসহ আধুনিক লাঙলের ব্যবহার লৌহ যুগের ঘটনা। লাঙলে লোহার ফলা ব্যবহারের পূর্বে লাঙল ছিল সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এবং ব্যবহারের দিক থেকে তেমন কার্যকর ছিল না।
লাঙলে কয়েকটি অংশ রয়েছে যেমন: হাতের মুঠো, হাতল, প্রধান দÐ, ফলা, কীলক ইত্যাদি। লাঙল সামনের দিকে টেনে এর সরু ফলা মাটির কয়েক সেমি নিচে ভেদ করানো হয় এবং এর সাহায্যে মাটির উপরিভাগ ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার সময় মাটি ফলার উভয় দিকেই নিক্ষিপ্ত হয়। মাটির প্রকারের ওপর ভিত্তি করে মাটিকে ফসল বোনার উপযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কয়েকবার লাঙল দ্বারা চষা হয়। প্রয়োজনীয় মেরামতসহ একটি লাঙল ৪-৫ বছর টিকে থাকে। গুণাগুণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিকে ১৮ ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রতিটি লাঙল মাটির ধরনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাঙলের ধরন শুধু মাটির ভৌত গুণের দ্বারাই প্রভাবিত হয় নি, স্থানীয় ঐতিহ্যের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে।
গবাদি পশুর উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য কলের লাঙলের মাধ্যমে চাষাবাদের তুলনায় লাঙল দ্বারা চাষাবাদ বর্তমানে ব্যয়বহুল। সে কারণে লাঙলকে এখন সেকেলে একটি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ লাঙলের পরিবর্তে কলের লাঙলের ব্যবহার এখন খুব দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম] লাঙলস্তর (Ploughpan) চাষকৃত স্তরের নিচে অবস্থিত গাঢ় ও শক্ত মাটির একটি স্তর। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকায় আর্দ্র বা সিক্ত অবস্থায় জমি লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া হলে লাঙলের তলার চাপে এ শক্ত স্তরের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর দেশী লাঙল ব্যবহার করে রোপা ধান চাষ করার ফলে প্রায় ৩-৫ সেমি শক্ত লাঙলস্তর বাংলাদেশে চাষকৃত প্রায় সকল মৃত্তিকায় কিছু পরিমাণ তৈরি হতে দেখা যায়। লাঙলস্তর চাষাবাদে দুটি প্রধান সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমত, শক্ত লাঙলস্তর মূলের বিস্তার এবং বাড়ন্ত ফসল কর্তৃক মাটির নিæস্তরের পুষ্টি উপাদান গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং দ্বিতীয়ত, লাঙলস্তর মাটির নিæস্তরে পানির চলাচলে বাঁধা দেয়। সেচ দেওয়া হলে বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে লাঙলস্তরের জন্য মৃত্তিকার উপরের স্তর পানিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এতে স্পর্শকাতর শুষ্কভূমির ফসলসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন বা একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বরেন্দ্র অঞ্চলসমূহে প্রায়ই লাঙলস্তর গঠিত হতে দেখা যায়। [সুলতানা রাজিয়া]