পুতুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
চার চাকাওয়ালা কাঠের ঘোড়া এবং হাতি পুতুলও বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত এক টুকরা কাঠ খোদাই করে ঘোড়া বা হাতির অবয়ব তৈরি করা হয় এবং উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে সেসবের অঙ্গসজ্জা করা হয়। পরে চারটি চাকা লাগানো হয়। এ ধরণের পুতুল তৈরিতে সোনারগাঁওয়ের শাহ্পুর গ্রাম প্রসিদ্ধ। এ গ্রামের জনৈক সূত্রধর বর্তমানে এককাঠের তিনকোণা মেয়ে ও ছেলে পুতুলও তৈরি করছেন।  
চার চাকাওয়ালা কাঠের ঘোড়া এবং হাতি পুতুলও বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত এক টুকরা কাঠ খোদাই করে ঘোড়া বা হাতির অবয়ব তৈরি করা হয় এবং উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে সেসবের অঙ্গসজ্জা করা হয়। পরে চারটি চাকা লাগানো হয়। এ ধরণের পুতুল তৈরিতে সোনারগাঁওয়ের শাহ্পুর গ্রাম প্রসিদ্ধ। এ গ্রামের জনৈক সূত্রধর বর্তমানে এককাঠের তিনকোণা মেয়ে ও ছেলে পুতুলও তৈরি করছেন।  


[[Image:Pottery.jpg|thumb|400px|right|মা ওশিশু]]
[[Image:Dolls1.jpg|thumb|400px|right|মা ওশিশু]]




২৩ নং লাইন: ২৩ নং লাইন:
[[Image:DollAmanulHuq.jpg|thumb|400px|right|কাপড়ের তৈরি পুতুল]]
[[Image:DollAmanulHuq.jpg|thumb|400px|right|কাপড়ের তৈরি পুতুল]]


#কাপড়ের পুতুল শিশুদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। এধরণের পুতুল তৈরি হয় হাতে। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা গৃহসজ্জার জন্য নানা ধরণের কাপড়ের পুতুল তৈরি করছে। পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারে বৈচিত্র্য থাকায় এসব পুতুল শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদর লাভ করছে। এগুলির মধ্যে বর-কনে, বেদেনি, উপজাতীয় ও মণিপুরী নাচের পুতুল উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে পাটের তৈরি পুতুল গৃহসজ্জার নিদর্শন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এগুলি প্রায় প্রতি জেলায় পাওয়া যায়। কাগজের মন্ড দিয়েও পুতুল তৈরি হয়। কাগজ ভিজিয়ে মন্ড তৈরি করে ছাঁচের সাহায্যে এধরণের পুতুল তৈরি করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সিরামিক প্রতিষ্ঠান চীনামাটির পুতুল তৈরি করছে।এসব পুতুল প্রধানত গৃহসজ্জার কাজেই ব্যবহূত হয়।ঢাকার লালবাগ, ধামরাই ও সাভারে ধাতু
#কাপড়ের পুতুল শিশুদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। এধরণের পুতুল তৈরি হয় হাতে। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা গৃহসজ্জার জন্য নানা ধরণের কাপড়ের পুতুল তৈরি করছে। পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারে বৈচিত্র্য থাকায় এসব পুতুল শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদর লাভ করছে। এগুলির মধ্যে বর-কনে, বেদেনি, উপজাতীয় ও মণিপুরী নাচের পুতুল উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে পাটের তৈরি পুতুল গৃহসজ্জার নিদর্শন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এগুলি প্রায় প্রতি জেলায় পাওয়া যায়। কাগজের মন্ড দিয়েও পুতুল তৈরি হয়। কাগজ ভিজিয়ে মন্ড তৈরি করে ছাঁচের সাহায্যে এধরণের পুতুল তৈরি করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সিরামিক প্রতিষ্ঠান চীনামাটির পুতুল তৈরি করছে।এসব পুতুল প্রধানত গৃহসজ্জার কাজেই ব্যবহূত হয়।ঢাকার লালবাগ, ধামরাই ও সাভারে ধাতু দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পুতুল ও দেবদেবীর মূর্তি তৈরি হচ্ছে। এক সময় এগুলির প্রধান কারিগররা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের, বর্তমানে অনেক মুসলমান কারিগরও এধরণের ধাতব পুতুল তৈরি করছে।
 
 
দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পুতুল ও দেবদেবীর মূর্তি তৈরি হচ্ছে। এক সময় এগুলির প্রধান কারিগররা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের, বর্তমানে অনেক মুসলমান কারিগরও এধরণের ধাতব পুতুল তৈরি করছে।


[[Image:PutulNach1|thumb|400px|right|পুতুল নাচ]]
বর্তমানে মাটি ও কাঠের পুতুলের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমাররা বিভিন্ন আঙ্গিকে পুতুল তৈরি করছে। বাজারজাত করনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।   [জিনাত মাহরুখ বানু]
বর্তমানে মাটি ও কাঠের পুতুলের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমাররা বিভিন্ন আঙ্গিকে পুতুল তৈরি করছে। বাজারজাত করনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।   [জিনাত মাহরুখ বানু]



০৬:৩৩, ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পুতুল একটি লোকজ শিল্প। দেবদেবীর প্রতিকৃতি ও খেলনা হিসেবে পুতুল এদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সাধারণত মাটি, কাঠ, শোলা, কাপড়, বেত, কাগজের মন্ড, গাছের পাতা, পাট ও চীনামাটি দিয়ে পুতুল তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে মাটি ও কাঠের পুতুলের প্রচলনই সর্বাধিক।

কবে থেকে পুতুল তৈরি শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া দুষ্কর। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় যে, মহেঞ্জোদারোসহ ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য স্থানেও পুতুল তৈরি হতো। বাংলাদেশের সাভার, ময়নামতী, মহাস্থানগড় ও দিনাজপুরে প্রত্নস্থলে স্থাপত্যকর্মে পুতুলের বিভিন্ন কারুকাজ লক্ষ করা যায়। সেসব কাজের মধ্যে দেবদেবীর মূর্তি, সিংহ, মহিষ, বাঘ, হরিণ, শেয়াল, হাতি, ভল্লুক, বানর, মাছ ও হাঁস উল্লেখযোগ্য।

খেলনার উদ্দেশে নির্মিত পুতুলগুলি পরবর্তীকালের ধারণাপ্রসূত। কুমাররা আরাধ্য দেবদেবীর মূর্তি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের খেলনা পুতুলও তৈরি করেছে। বাংলাদেশে মূলত মেয়েরাই পুতুল তৈরির কারিগর। তবে বর্তমানে পুরুষরাও এ কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

পুতুল দুভাবে তৈরি হয়- হাতে ও ছাঁচে। ছাঁচে পুতুল তৈরির কাজ সহজতর। হাতে তৈরি পুতুলে কারিগরকে নিজস্ব মেধা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে হয়। এধরণের পুতুলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাতের সাহায্যেই গড়ে তোলা হয়। মাটির বুটি দিয়ে বা কাঠির রেখা টেনে পুতুলের  অলঙ্কার ও পোশাকের আভাস ফুটিয়ে তোলা হয়। হাতে তৈরি পুতুলে রঙের ব্যবহার হয় না; রোদে শুকিয়ে অল্প আগুনে পোড়ানো হয় মাত্র।

পুতুল তৈরির ছাঁচ কুমাররা নিজেরাই তৈরি করে বংশপরম্পরায় ব্যবহার করে আসছে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে ছাঁচের নতুন নতুন আঙ্গিক তৈরি হচ্ছে। কাঁচামাটি দিয়ে তৈরি ছাঁচের পুতুল প্রথমে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। পরে বিভিন্ন রঙের মাধ্যমে পুতুলের পোশাক-পরিচ্ছদ ও চোখ-মুখের ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়। রঙের মধ্যে সাদা, নীল, হলুদ, গোলাপী, সবুজ ও কালো রং প্রাধান্য পায়। পূর্বে গুড়া রং কিনে তেঁতুলের বিচির আঠার সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারোপযোগী রং তৈরি করা হতো। বর্তমানে বাজারের রং ব্যবহার করা হয়। মাটির পুতুল তৈরিতে ময়মনসিংহ অঞ্চল প্রসিদ্ধ, তবে ঢাকার সাভার, ধামরাই ও রায়ের বাজারেও বিভিন্ন ধরণের পুতুল তৈরি হয়। এসব পুতুলের মধ্যে দেবদেবী ও খেলনা পুতুল ছাড়াও গৃহসজ্জার পুতুলও রয়েছে।

এককাঠের পুতুল বাংলাদেশের অপর ঐতিহ্য। এধরণের পুতুল তৈরিতে কদম, আমড়া, জিওল, শ্যাওড়া, ছাতিম, শিমুল প্রভৃতি কাঠ ব্যবহূত হয়। কারিগররা প্রথমে মাপমতো কাঠ কেটে ত্রিকোণাকৃতি বা অর্ধগোলাকার নারীমূর্তি তৈরি করে এবং পরে তাতে উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে অলঙ্কার, পোশাক, হাত, পা, চোখ ও মুখ অঙ্কন করে। রঙের মধ্যে এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় হলুদ, লাল, সবুজ ও কালো রং। এধরণের খেলনা পুতুলের নির্মাণপদ্ধতি ও রঙের ব্যবহার একান্তই সহজ-সরল, কিন্তু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কাঠের তৈরি এই তিনকোণা মেয়ে পুতুল মিশরের মমির মতো দেখতে বলে এগুলিকে ‘মমি পুতুল’ও বলা হয়।

চার চাকাওয়ালা কাঠের ঘোড়া এবং হাতি পুতুলও বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত এক টুকরা কাঠ খোদাই করে ঘোড়া বা হাতির অবয়ব তৈরি করা হয় এবং উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে সেসবের অঙ্গসজ্জা করা হয়। পরে চারটি চাকা লাগানো হয়। এ ধরণের পুতুল তৈরিতে সোনারগাঁওয়ের শাহ্পুর গ্রাম প্রসিদ্ধ। এ গ্রামের জনৈক সূত্রধর বর্তমানে এককাঠের তিনকোণা মেয়ে ও ছেলে পুতুলও তৈরি করছেন।

মা ওশিশু


নাচের পুতুল মাটি ও কাঠের তৈরি। এসব পুতুলের ওপরের অর্ধাংশে রঙের সাহায্যে চোখ, নাক, মুখ ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় এবং নিচের অংশে কাপড়ের পোশাক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পাট বা কৃত্রিম অাঁশ দিয়ে চুল বানানো হয়। নাচের পুতুলের পোশাক-পরিচ্ছদ দৃশ্য অনুযায়ী তৈরি করা হয়। এধরণের পুতুল তৈরির প্রধান উপকরণ ভাঁটশোলা, ন্যাকড়া, কাদামাটি, লোহার তার, কাঠ, রং ইত্যাদি। নাচের পুতুল তৈরিতে এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কান্দিপাড়া গ্রাম প্রসিদ্ধ ছিল। সেখানকার কারিগরেরা প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও বর্তমানে কিছু কিছু মুসলমানও এধরণের পুতুল তৈরি করে।

শোলার খেলনা পুতুল ফরিদপুর ও রাজশাহী অঞ্চল এবং ঢাকার শাঁখারি বাজারে তৈরি হয়। কারিগররা শোলা কেটে বা জোড়া দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির পুতুল তৈরি করে। পুতুল তৈরি হওয়ার পর রঙের সাহায্যে সেগুলিকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। এসব পুতুল দীর্ঘস্থায়ী হয় না বলে এগুলির ব্যবহারও কম। সাধারণত বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন গ্রাম্যমেলা উপলক্ষে শোলার পুতুল তৈরি ও বেচাকেনা হয়।

কাপড়ের তৈরি পুতুল
  1. কাপড়ের পুতুল শিশুদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। এধরণের পুতুল তৈরি হয় হাতে। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা গৃহসজ্জার জন্য নানা ধরণের কাপড়ের পুতুল তৈরি করছে। পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারে বৈচিত্র্য থাকায় এসব পুতুল শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদর লাভ করছে। এগুলির মধ্যে বর-কনে, বেদেনি, উপজাতীয় ও মণিপুরী নাচের পুতুল উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে পাটের তৈরি পুতুল গৃহসজ্জার নিদর্শন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এগুলি প্রায় প্রতি জেলায় পাওয়া যায়। কাগজের মন্ড দিয়েও পুতুল তৈরি হয়। কাগজ ভিজিয়ে মন্ড তৈরি করে ছাঁচের সাহায্যে এধরণের পুতুল তৈরি করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সিরামিক প্রতিষ্ঠান চীনামাটির পুতুল তৈরি করছে।এসব পুতুল প্রধানত গৃহসজ্জার কাজেই ব্যবহূত হয়।ঢাকার লালবাগ, ধামরাই ও সাভারে ধাতু দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পুতুল ও দেবদেবীর মূর্তি তৈরি হচ্ছে। এক সময় এগুলির প্রধান কারিগররা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের, বর্তমানে অনেক মুসলমান কারিগরও এধরণের ধাতব পুতুল তৈরি করছে।
চিত্র:PutulNach1
পুতুল নাচ

বর্তমানে মাটি ও কাঠের পুতুলের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমাররা বিভিন্ন আঙ্গিকে পুতুল তৈরি করছে। বাজারজাত করনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।   [জিনাত মাহরুখ বানু]