স্বর্ণকার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''স্বর্ণকার''' সোনা বা রূপার [[অলঙ্কার|অলঙ্কার]] তৈরি করে জীবিকা নির্বাহকারী পেশাজীবী গোষ্ঠী। স্বর্ণকার চুড়ি, বাজুবন্দ, হার, হাঁসুলি, সীতাপাট, দুল, কানপাশা, নোলক, নথ, নাকছাবি, মল ইত্যাদি অলঙ্কার তৈরি করে। এ শ্রেণীর কারিগররা স্বর্ণের সাথে খাদ মিশিয়ে নানা ডিজাইনের অলঙ্কার প্রস্ত্তত করে থাকে। | '''স্বর্ণকার''' সোনা বা রূপার [[অলঙ্কার|অলঙ্কার]] তৈরি করে জীবিকা নির্বাহকারী পেশাজীবী গোষ্ঠী। স্বর্ণকার চুড়ি, বাজুবন্দ, হার, হাঁসুলি, সীতাপাট, দুল, কানপাশা, নোলক, নথ, নাকছাবি, মল ইত্যাদি অলঙ্কার তৈরি করে। এ শ্রেণীর কারিগররা স্বর্ণের সাথে খাদ মিশিয়ে নানা ডিজাইনের অলঙ্কার প্রস্ত্তত করে থাকে। | ||
[[Image:Swarnakar.jpg|thumb|400px|স্বর্ণকারর]] | |||
এরা নিজেদের কাজে কামারদের চেয়ে ছোট আকারের চুল্লি ও হাঁপর ব্যবহার করে। তারা সোনা বা রুপার টুকরা একটি মাটির পাত্রে রেখে পিতলের ফুকনি দিয়ে অগ্নিশিখা প্রবাহিত করে হরেক রকমের ডিজাইনের অলঙ্কার তৈরি করে। ঐতিহাসিকভাবে ভারতে স্বর্ণকার সস্প্রদায় শাঁখরা বা স্যাকরা বা সাধু ভাষায় সুবর্ণকার নামে পরিচিত। বাংলায় তাদেরকে ব্রাহ্মণদেশী, দক্ষিণ রাঢ়ি, খলঙ্গি এবং উত্তর রাঢ়ি এই চারটি অনুসস্প্রদায়ে ভাগ করা হয়েছে। | এরা নিজেদের কাজে কামারদের চেয়ে ছোট আকারের চুল্লি ও হাঁপর ব্যবহার করে। তারা সোনা বা রুপার টুকরা একটি মাটির পাত্রে রেখে পিতলের ফুকনি দিয়ে অগ্নিশিখা প্রবাহিত করে হরেক রকমের ডিজাইনের অলঙ্কার তৈরি করে। ঐতিহাসিকভাবে ভারতে স্বর্ণকার সস্প্রদায় শাঁখরা বা স্যাকরা বা সাধু ভাষায় সুবর্ণকার নামে পরিচিত। বাংলায় তাদেরকে ব্রাহ্মণদেশী, দক্ষিণ রাঢ়ি, খলঙ্গি এবং উত্তর রাঢ়ি এই চারটি অনুসস্প্রদায়ে ভাগ করা হয়েছে। | ||
স্বর্ণকার সস্প্রদায়ে মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনে আজও অনেক প্রাচীন রীতি মান্য করা হয়। কনের পক্ষ থেকে বরকে উপহার দিতে হয় এবং বরকে তা গ্রহণ করতে হয়। স্বর্ণকারদের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন নেই। স্ত্রীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান আছে। ধর্ম বিচারে তারা মধ্যবিত্ত হিন্দু সস্প্রদায়ের অন্তর্গত শাক্ত অথবা বৈষ্ণব। বিশ্বকর্মা তাদের পূজনীয় পৃষ্ঠপোষক। স্বর্ণকার সস্প্রদায়ের মহিলাদের কুলাই নামে একটি বিশেষ উৎসব আছে। এটি কোন পুরোহিত ছাড়াই বৃষ্টির দিনে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় উৎসবাদিতে নিমন্ত্রণ করা হয়, কিন্তু তারা উচ্চ সস্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বিধায় নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী উক্ত উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকে। | স্বর্ণকার সস্প্রদায়ে মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনে আজও অনেক প্রাচীন রীতি মান্য করা হয়। কনের পক্ষ থেকে বরকে উপহার দিতে হয় এবং বরকে তা গ্রহণ করতে হয়। স্বর্ণকারদের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন নেই। স্ত্রীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান আছে। ধর্ম বিচারে তারা মধ্যবিত্ত হিন্দু সস্প্রদায়ের অন্তর্গত শাক্ত অথবা বৈষ্ণব। বিশ্বকর্মা তাদের পূজনীয় পৃষ্ঠপোষক। স্বর্ণকার সস্প্রদায়ের মহিলাদের কুলাই নামে একটি বিশেষ উৎসব আছে। এটি কোন পুরোহিত ছাড়াই বৃষ্টির দিনে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় উৎসবাদিতে নিমন্ত্রণ করা হয়, কিন্তু তারা উচ্চ সস্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বিধায় নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী উক্ত উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকে। | ||
আগেকার দিনে স্বর্ণকাররা শুধু নিজ নিজ পেশাতেই নিয়োজিত থাকত। এখন জীবন ধারণের নিমিত্তে অনেক স্বর্ণকার ছোটখাট নানা পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আয়-উপার্জন কম বলে স্বর্ণকার সস্প্রদায় সামাজিকভাবে নিম্নবৃত্তীয়। তবে কিছু কিছু স্বর্ণকার নিজেদেরকে স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীতে পরিণত করেছে এবং প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছে, সামাজিকভাবে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক জুয়েলারির উন্নয়ন, ইমিটেশন অলঙ্কারের আবির্ভাব এবং অলঙ্কার তৈরির আধুনিক প্রযুক্তিও স্বর্ণকারদের পেশাকে ক্রমাগত সঙ্কুচিত করছে। অধিকাংশ স্বর্ণকারই পুঁজির অভাব এবং নানা জটিলতার কারণে এখন বর্তমানের বাজার থেকে ছিটকে পড়ছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং স্বর্ণ পাচারকারীরা আজকাল এ ব্যবসায় প্রাধান্য বিস্তার করে চলছে এবং স্বর্ণকাররা তাদের অধীনে বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিক জুয়েলারি ব্যবসায় এখন আর হিন্দু সস্প্রদায়ের একচেটিয়া দখলে নেই। মুসলমানরাও আজকাল এ ব্যবসায় অংশগ্রহণ করছে। ফলে, মূল স্বর্ণকার সস্প্রদায় এখন নিজেদের পূর্বতন বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। [গোফরান ফারুকী] | আগেকার দিনে স্বর্ণকাররা শুধু নিজ নিজ পেশাতেই নিয়োজিত থাকত। এখন জীবন ধারণের নিমিত্তে অনেক স্বর্ণকার ছোটখাট নানা পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আয়-উপার্জন কম বলে স্বর্ণকার সস্প্রদায় সামাজিকভাবে নিম্নবৃত্তীয়। তবে কিছু কিছু স্বর্ণকার নিজেদেরকে স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীতে পরিণত করেছে এবং প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছে, সামাজিকভাবে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক জুয়েলারির উন্নয়ন, ইমিটেশন অলঙ্কারের আবির্ভাব এবং অলঙ্কার তৈরির আধুনিক প্রযুক্তিও স্বর্ণকারদের পেশাকে ক্রমাগত সঙ্কুচিত করছে। অধিকাংশ স্বর্ণকারই পুঁজির অভাব এবং নানা জটিলতার কারণে এখন বর্তমানের বাজার থেকে ছিটকে পড়ছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং স্বর্ণ পাচারকারীরা আজকাল এ ব্যবসায় প্রাধান্য বিস্তার করে চলছে এবং স্বর্ণকাররা তাদের অধীনে বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিক জুয়েলারি ব্যবসায় এখন আর হিন্দু সস্প্রদায়ের একচেটিয়া দখলে নেই। মুসলমানরাও আজকাল এ ব্যবসায় অংশগ্রহণ করছে। ফলে, মূল স্বর্ণকার সস্প্রদায় এখন নিজেদের পূর্বতন বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। [গোফরান ফারুকী] |
০৬:২৮, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
স্বর্ণকার সোনা বা রূপার অলঙ্কার তৈরি করে জীবিকা নির্বাহকারী পেশাজীবী গোষ্ঠী। স্বর্ণকার চুড়ি, বাজুবন্দ, হার, হাঁসুলি, সীতাপাট, দুল, কানপাশা, নোলক, নথ, নাকছাবি, মল ইত্যাদি অলঙ্কার তৈরি করে। এ শ্রেণীর কারিগররা স্বর্ণের সাথে খাদ মিশিয়ে নানা ডিজাইনের অলঙ্কার প্রস্ত্তত করে থাকে।
এরা নিজেদের কাজে কামারদের চেয়ে ছোট আকারের চুল্লি ও হাঁপর ব্যবহার করে। তারা সোনা বা রুপার টুকরা একটি মাটির পাত্রে রেখে পিতলের ফুকনি দিয়ে অগ্নিশিখা প্রবাহিত করে হরেক রকমের ডিজাইনের অলঙ্কার তৈরি করে। ঐতিহাসিকভাবে ভারতে স্বর্ণকার সস্প্রদায় শাঁখরা বা স্যাকরা বা সাধু ভাষায় সুবর্ণকার নামে পরিচিত। বাংলায় তাদেরকে ব্রাহ্মণদেশী, দক্ষিণ রাঢ়ি, খলঙ্গি এবং উত্তর রাঢ়ি এই চারটি অনুসস্প্রদায়ে ভাগ করা হয়েছে।
স্বর্ণকার সস্প্রদায়ে মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনে আজও অনেক প্রাচীন রীতি মান্য করা হয়। কনের পক্ষ থেকে বরকে উপহার দিতে হয় এবং বরকে তা গ্রহণ করতে হয়। স্বর্ণকারদের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন নেই। স্ত্রীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান আছে। ধর্ম বিচারে তারা মধ্যবিত্ত হিন্দু সস্প্রদায়ের অন্তর্গত শাক্ত অথবা বৈষ্ণব। বিশ্বকর্মা তাদের পূজনীয় পৃষ্ঠপোষক। স্বর্ণকার সস্প্রদায়ের মহিলাদের কুলাই নামে একটি বিশেষ উৎসব আছে। এটি কোন পুরোহিত ছাড়াই বৃষ্টির দিনে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় উৎসবাদিতে নিমন্ত্রণ করা হয়, কিন্তু তারা উচ্চ সস্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বিধায় নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী উক্ত উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকে।
আগেকার দিনে স্বর্ণকাররা শুধু নিজ নিজ পেশাতেই নিয়োজিত থাকত। এখন জীবন ধারণের নিমিত্তে অনেক স্বর্ণকার ছোটখাট নানা পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আয়-উপার্জন কম বলে স্বর্ণকার সস্প্রদায় সামাজিকভাবে নিম্নবৃত্তীয়। তবে কিছু কিছু স্বর্ণকার নিজেদেরকে স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীতে পরিণত করেছে এবং প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছে, সামাজিকভাবে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক জুয়েলারির উন্নয়ন, ইমিটেশন অলঙ্কারের আবির্ভাব এবং অলঙ্কার তৈরির আধুনিক প্রযুক্তিও স্বর্ণকারদের পেশাকে ক্রমাগত সঙ্কুচিত করছে। অধিকাংশ স্বর্ণকারই পুঁজির অভাব এবং নানা জটিলতার কারণে এখন বর্তমানের বাজার থেকে ছিটকে পড়ছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং স্বর্ণ পাচারকারীরা আজকাল এ ব্যবসায় প্রাধান্য বিস্তার করে চলছে এবং স্বর্ণকাররা তাদের অধীনে বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিক জুয়েলারি ব্যবসায় এখন আর হিন্দু সস্প্রদায়ের একচেটিয়া দখলে নেই। মুসলমানরাও আজকাল এ ব্যবসায় অংশগ্রহণ করছে। ফলে, মূল স্বর্ণকার সস্প্রদায় এখন নিজেদের পূর্বতন বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। [গোফরান ফারুকী]