সালাম, আবদুস২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:SalamAbdus.jpg|thumb|right|400px|আবদুস সালাম]] | |||
'''সালাম, আবদুস২''' (১৯২৫-১৯৫২) একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে একজন। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতুভূঁইয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালাম নগর) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া, মাতা দৌলতের নেছা। মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন এবং ইরাকের বসরায় কর্মরত ছিলেন। | '''সালাম, আবদুস২''' (১৯২৫-১৯৫২) একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে একজন। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতুভূঁইয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালাম নগর) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া, মাতা দৌলতের নেছা। মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন এবং ইরাকের বসরায় কর্মরত ছিলেন। | ||
৬ নং লাইন: | ৭ নং লাইন: | ||
দশম শ্রেণীতে ওঠার পর আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের দৈন্যদশা লাঘবের উদ্দেশে কলকাতায় মেটিয়াবুরুজে তাঁর জেঠাতো বোনের স্বামী আবদুল কাদেরের আশ্রয়ে আসেন। আবদুল কাদের কলকাতা বন্দরে কাজ করতেন। সেখানে তিনি সালামকে একটি কাজ জুটিয়ে দেন। ভারত বিভাগের পরপরই সালাম ঢাকায় আসেন এবং আজিমপুরে (পলাশী ব্যারাক) বসবাস শুরু করেন। | দশম শ্রেণীতে ওঠার পর আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের দৈন্যদশা লাঘবের উদ্দেশে কলকাতায় মেটিয়াবুরুজে তাঁর জেঠাতো বোনের স্বামী আবদুল কাদেরের আশ্রয়ে আসেন। আবদুল কাদের কলকাতা বন্দরে কাজ করতেন। সেখানে তিনি সালামকে একটি কাজ জুটিয়ে দেন। ভারত বিভাগের পরপরই সালাম ঢাকায় আসেন এবং আজিমপুরে (পলাশী ব্যারাক) বসবাস শুরু করেন। | ||
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনের রাস্তায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেই বিক্ষোভে আবদুস সালামও যোগ দেন। ওইদিন আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণ করলে বরকত, জববার, রফিক, শফিউরসহ অনেকের সঙ্গে সালামও গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৭ এপ্রিল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। | |||
১৯৫২ সালের | |||
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষাশহীদ আবদুস সালামকে সরকারিভাবে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ফলে বিশিষ্ট ভাস্কর রাসা ভাষাশহীদ সালামের প্রতিকৃতি তৈরির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এ পরিকল্পনার নাম দেন ‘অস্তিত্বের শেকড়ে আলো’। | ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষাশহীদ আবদুস সালামকে সরকারিভাবে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ফলে বিশিষ্ট ভাস্কর রাসা ভাষাশহীদ সালামের প্রতিকৃতি তৈরির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এ পরিকল্পনার নাম দেন ‘অস্তিত্বের শেকড়ে আলো’। | ||
১৪ নং লাইন: | ১৩ নং লাইন: | ||
সালামের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের উদ্যোগে ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদ’। এবছর থেকেই স্থানীয়ভাবে লক্ষ্মণপুর গ্রাম ‘সালাম নগর’ নামে পরিচিত হতে থাকে এবং ২০০৯ সালে এ নাম সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এসময় সালামের বাড়ির রাস্তাটি পাকা করা হয়। দাগনভূঁইয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নামকরণ হয় ‘ভাষাশহীদ সালাম মিলনায়তন’। তদুপরি স্থানীয়ভাবে ফেনী জেলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহীদ সালাম স্টেডিয়াম’ নামকরণ এবং জেলা পরিষদের উদ্যোগে ফেনী শহরের মিজান রোডে সালামের নামে একটি কম্যুনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। | সালামের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের উদ্যোগে ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদ’। এবছর থেকেই স্থানীয়ভাবে লক্ষ্মণপুর গ্রাম ‘সালাম নগর’ নামে পরিচিত হতে থাকে এবং ২০০৯ সালে এ নাম সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এসময় সালামের বাড়ির রাস্তাটি পাকা করা হয়। দাগনভূঁইয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নামকরণ হয় ‘ভাষাশহীদ সালাম মিলনায়তন’। তদুপরি স্থানীয়ভাবে ফেনী জেলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহীদ সালাম স্টেডিয়াম’ নামকরণ এবং জেলা পরিষদের উদ্যোগে ফেনী শহরের মিজান রোডে সালামের নামে একটি কম্যুনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। | ||
২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহযোগিতায় সালাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে ১৯৮৮ সালে লক্ষ্মণপুরে সালামের বাড়ির কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টির ‘লক্ষ্মণপুর কম্যুনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং ২০০৯ সালে ‘লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ হয়। | ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহযোগিতায় সালাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে ১৯৮৮ সালে লক্ষ্মণপুরে সালামের বাড়ির কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টির ‘লক্ষ্মণপুর কম্যুনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং ২০০৯ সালে ‘লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ হয়। [শাহীদা আখতার] | ||
[শাহীদা আখতার] | |||
[[en:Salam, Abdus2]] | [[en:Salam, Abdus2]] |
০৪:২৩, ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সালাম, আবদুস২ (১৯২৫-১৯৫২) একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে একজন। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতুভূঁইয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালাম নগর) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া, মাতা দৌলতের নেছা। মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন এবং ইরাকের বসরায় কর্মরত ছিলেন।
ভাষাশহীদ আবদুস সালামের শৈশব অতিবাহিত হয় লক্ষ্মণপুর গ্রামে। তাঁর শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয় কৃষ্ণরামপুর প্রাইমারী স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ভর্তি হন মাতুভূঁইয়া কলিমুলাহ মাইনর স্কুলে (বর্তমানে মাতুভূঁইয়া হাইস্কুল)। সালাম এ স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে ভর্তি হন দাগনভূঁইয়া আতাতুর্ক হাইস্কুলে।
দশম শ্রেণীতে ওঠার পর আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের দৈন্যদশা লাঘবের উদ্দেশে কলকাতায় মেটিয়াবুরুজে তাঁর জেঠাতো বোনের স্বামী আবদুল কাদেরের আশ্রয়ে আসেন। আবদুল কাদের কলকাতা বন্দরে কাজ করতেন। সেখানে তিনি সালামকে একটি কাজ জুটিয়ে দেন। ভারত বিভাগের পরপরই সালাম ঢাকায় আসেন এবং আজিমপুরে (পলাশী ব্যারাক) বসবাস শুরু করেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনের রাস্তায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেই বিক্ষোভে আবদুস সালামও যোগ দেন। ওইদিন আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণ করলে বরকত, জববার, রফিক, শফিউরসহ অনেকের সঙ্গে সালামও গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৭ এপ্রিল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষাশহীদ আবদুস সালামকে সরকারিভাবে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ফলে বিশিষ্ট ভাস্কর রাসা ভাষাশহীদ সালামের প্রতিকৃতি তৈরির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এ পরিকল্পনার নাম দেন ‘অস্তিত্বের শেকড়ে আলো’।
সালামের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের উদ্যোগে ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদ’। এবছর থেকেই স্থানীয়ভাবে লক্ষ্মণপুর গ্রাম ‘সালাম নগর’ নামে পরিচিত হতে থাকে এবং ২০০৯ সালে এ নাম সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এসময় সালামের বাড়ির রাস্তাটি পাকা করা হয়। দাগনভূঁইয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নামকরণ হয় ‘ভাষাশহীদ সালাম মিলনায়তন’। তদুপরি স্থানীয়ভাবে ফেনী জেলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহীদ সালাম স্টেডিয়াম’ নামকরণ এবং জেলা পরিষদের উদ্যোগে ফেনী শহরের মিজান রোডে সালামের নামে একটি কম্যুনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহযোগিতায় সালাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে ১৯৮৮ সালে লক্ষ্মণপুরে সালামের বাড়ির কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টির ‘লক্ষ্মণপুর কম্যুনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং ২০০৯ সালে ‘লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ হয়। [শাহীদা আখতার]