সার্কাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১৯ নং লাইন: | ১৯ নং লাইন: | ||
এদেশের সার্কাসশিল্পের উন্নয়ন ও তার সংকট সমস্যা হতে উত্তরণের সাংগঠনিক চিন্তায় ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সার্কাস মালিক সমিতি গঠিত হয়। সব মিলিয়ে মোট বারোটির মতো সার্কাস দল মালিক সমিতির সদস্য। বর্তমানে সার্কাস শিল্পটি এমন পর্যায়ে রয়েছে যা পরিবারসহ একসঙ্গে দেখার উপযোগী। কিন্তু পরিতাপের বিষয় টিভি ও ফিল্মের চিত্তাকর্ষক প্রচার প্রসারের কারণে এদেশের সার্কাস-প্রদর্শনী হতে দর্শক সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। [সাইমন জাকারিয়া] | এদেশের সার্কাসশিল্পের উন্নয়ন ও তার সংকট সমস্যা হতে উত্তরণের সাংগঠনিক চিন্তায় ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সার্কাস মালিক সমিতি গঠিত হয়। সব মিলিয়ে মোট বারোটির মতো সার্কাস দল মালিক সমিতির সদস্য। বর্তমানে সার্কাস শিল্পটি এমন পর্যায়ে রয়েছে যা পরিবারসহ একসঙ্গে দেখার উপযোগী। কিন্তু পরিতাপের বিষয় টিভি ও ফিল্মের চিত্তাকর্ষক প্রচার প্রসারের কারণে এদেশের সার্কাস-প্রদর্শনী হতে দর্শক সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। [সাইমন জাকারিয়া] | ||
[[en:Circus]] | [[en:Circus]] |
০৪:২০, ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
সার্কাস পশুপাখিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নানা ধরণের আমোদী খেলা পৃথিবীর সবদেশেই বিদ্যমান। খাবারকে মাধ্যম করে পশুপাখীকে বশে এনে নিজের মতো করে খেলা শিখিয়ে আনন্দ ভোগ করা একটি প্রাচীন কৌশল। যুদ্ধক্ষেত্রে হাতি ঘোড়ার ব্যবহার অতি প্রাচীন। পাখীর মাধ্যমে চিঠিপত্র আদানপ্রদান প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়। পশুপাখীর ওপর মানুষের এ নিয়ন্ত্রণকে নির্ভর করে আধুনিক ইউরোপে সার্কাস শিল্পের বিকাশ ঘটে। বাংলাদেশে ১৯০৫ সালে ‘দি লায়ন সার্কাস’ নামে প্রথম একটি সার্কাস দল গঠিত হয়। দলটি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে নাম পরিবর্তন করে এবং ‘দি সাধনা লায়ন সার্কাস’ নাম গ্রহণ করে। বর্তমানে দলটি পুনরায় ‘দি লায়ন সার্কাস’ নামে তাদের প্রদর্শনী অব্যাহত রেখেছে, দলটির সাম্প্রতিক সত্ত্বাধিকারী নিরঞ্জন দাস। স্বাধীনতা পূর্বকালে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সালে পর্যন্ত এদেশে বেশকিছু দল প্রায় নিয়মিতভাবে সার্কাস প্রদর্শনী করতো। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রাধিকা মোহন মোদকের ‘দি বেবি সার্কাস’, সাতক্ষীরার জুড়ান কর্মকারের ‘দি আজাদ সার্কাস’, ১৯৪৭ সালে গঠিত বরিশালের লক্ষ্মণদাসের ‘দি রয়েল পাকিস্তান সার্কাস’, বনমালি মোদকের ‘দি ইস্ট পাকিস্তান সার্কাস’, নারায়ণগঞ্জে রাধানাথ সরকারের ‘দি আর এন ডল ড্যান্স সার্কাস’, নবাবগঞ্জে কার্তিক সরকারের ‘লক্ষ্মীনারায়ণ সার্কাস’ ও সাধুদাসের ‘দি লায়ন সার্কাস’, ১৯৬৫ সালে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এমএ সামাদের ‘দি সেভেন স্টার সার্কাস’ ও ‘দি নিউ স্টার সার্কাস’ এবং ১৯৬৮ সালে গঠিত রংপুরে আলী আকবরের ‘দি রওশন সার্কাস’।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশে যে সকল সার্কাস দল গঠিত হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বগুড়া-মহাস্থানগড়ের আব্দুস সাত্তারের দি বুলবুল সার্কাস, বরিশালের বীরেনচন্দ্র দাসের দি রয়েল সার্কাস, ফেনির সুনীল চন্দ্র পালের দি সবুজ বাংলা সার্কাস, সাতক্ষীরার দি সুন্দরবন সার্কাস, নারায়ণগঞ্জের মুকুলের দি কাঞ্চন সার্কাস, চট্টগ্রামের আনোয়ার খানের দি কোহিনূর সার্কাস, সৈয়দপুরের আকবর শেখের দি রওশন সার্কাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমএ সামাদের দি নিউ স্টার সার্কাস, আব্দুল বশিরের দি ন্যাশনাল সার্কাস, ঢাকা-নবাবগঞ্জের নিরঞ্জন সরকারের দি লায়ন সার্কাস, ঢাকা-বর্ধনপাড়ার রতন সরকারের দি লক্ষ্মীনারায়ণ সার্কাস, দি রাজমহল সার্কাস, শৈলেন বাবুর নিউ সবুজ বাংলা সার্কাস এবং ঢয়াকার কেরানীগঞ্জের বসন্তকুমার মোদকের দি সোনার বাংলা সার্কাস।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে সার্কাস প্রদর্শনীর চল অনেকটাই কমে গেছে। এখন এদেশে মাত্র দশ থেকে বারোটির মতো প্রধানতম সার্কাস দলের অস্তিত্ব রয়েছে। এ সকল সার্কাস দলের প্রত্যেকটিতে জীবজন্তু হিসেবে হুনুমান, থেকে শুরু করে কুকুর, সজারু, ছাগল হাতি, ঘোড়া ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বড় বড় সার্কাস দলের বাইরে এদেশে কিছু ছোট ছোট সার্কাস দলের অস্তিত্বও আছে। ছোট সার্কাস দলে হাতি, বাঘ, ভালুক ইত্যাদি না থাকলেও ছাগল ও ঘোড়ার খেলার প্রদর্শনী থাকে।
বড় ও মাঝারী গোছের পেশাদারী সার্কাস দলের পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্রামীণ হাট-বাজারে কিছু স্বাধীনপেশার সার্কাসজীবীদের দেখা যায়। যাদের সার্কাস প্রদর্শনীর জন্যে কোনো প্যান্ডেল, টিকেট কাউন্টার বা মূল্যবান ও ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না, তারা দু’তিন জন বা চার/পাঁচ জনের ছোট দলে সার্কাসের কিছু খেলা বা কসরত দেখিয়ে উপস্থিত জটলা পাকানো পথচারি দর্শকের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে কিছু পারিশ্রমিক নিয়ে থাকে।
প্রথম দিকে এদেশের সার্কাসে নারীদের অংশগ্রহণ খুব একটা ছিল না। তখন নারীর ভূমিকায় পুরুষেরাই সার্কাস প্রদর্শন করতো। তবে, সাম্প্রতিকালে এদেশের সার্কাসে নারীর অংশগ্রহণ লক্ষ করার মতো। পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে এদেশের দি রয়েল বেঙ্গল সার্কাস দলে নারীদের উপস্থিতি মোট সদস্যের ৮০ ভাগ এবং দলের ৯০ ভাগ খেলা দেখিয়ে থাকে নারীশিল্পী, দি নিউ স্টার সার্কাস দলে নারীর উপস্থিতি মোট সদস্যের ৭০ ভাগ এবং দলের মোট খেলার ৭৫ ভাগ খেলা প্রদর্শন করেন দলের নারী সদস্যরা।
এছাড়া, বহুসংখ্যক শিশুশিল্পী এদেশের সার্কাস প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত এবং তারা সার্কাসের অধিকাংশ বিপদজনক খেলা প্রদর্শন করে থাকে। সাধারণত পরিবার-পরিজনহীন এতিম শিশুদেরকে সার্কাস মালিকরা খাদ্য ও আশ্রয়ের নিরাপত্তার বিনিময়ে সার্কাসের দলে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন।
এদেশের সার্কাস দলে হাস্যরসাত্মক অভিনয় ও খেলা প্রদর্শনীতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকৃতিক মানুষ বা বামনপীর। অসহায় শিশু ও নারীদের মতো সার্কাস দলগুলো তাদেরকেও নির্ভরতা দিয়ে থাকে।
এদেশের সার্কাসশিল্পের উন্নয়ন ও তার সংকট সমস্যা হতে উত্তরণের সাংগঠনিক চিন্তায় ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সার্কাস মালিক সমিতি গঠিত হয়। সব মিলিয়ে মোট বারোটির মতো সার্কাস দল মালিক সমিতির সদস্য। বর্তমানে সার্কাস শিল্পটি এমন পর্যায়ে রয়েছে যা পরিবারসহ একসঙ্গে দেখার উপযোগী। কিন্তু পরিতাপের বিষয় টিভি ও ফিল্মের চিত্তাকর্ষক প্রচার প্রসারের কারণে এদেশের সার্কাস-প্রদর্শনী হতে দর্শক সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। [সাইমন জাকারিয়া]