সাদী মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''সাদী মসজিদ''' বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে [[এগারসিন্ধুর|এগারসিন্ধুর]] নামক গ্রামে অবস্থিত। এটি দেশের অন্যতম সু-সংরক্ষিত মসজিদ। কেন্দ্রীয় মিহরাবের গায়ে সংযুক্ত একটি ফারসি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মুগল সম্রাট [[শাহজাহান|শাহজাহান]]এর শাসনকালে জনৈক শাইখ শিরুর পুত্র সাদী ১০৬২ হিজরিতে (১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে) এই মসজিদ নির্মাণ করেন। | '''সাদী মসজিদ''' বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে [[এগারসিন্ধুর|এগারসিন্ধুর]] নামক গ্রামে অবস্থিত। এটি দেশের অন্যতম সু-সংরক্ষিত মসজিদ। কেন্দ্রীয় মিহরাবের গায়ে সংযুক্ত একটি ফারসি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মুগল সম্রাট [[শাহজাহান|শাহজাহান]]এর শাসনকালে জনৈক শাইখ শিরুর পুত্র সাদী ১০৬২ হিজরিতে (১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে) এই মসজিদ নির্মাণ করেন। | ||
[[Image:SadiMosquePlan.jpg|thumb|200px|ভূমি নকশা, সাদী মসজিদ]] | |||
প্রতি পার্শ্বে ৭.৬২ মিটার আয়তন বিশিষ্ট বর্গাকার এক গম্বুজ মসজিদটি একটি উঁচু ভূমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পূর্বদিকের প্রবেশপথে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে একটি করে খিলান রয়েছে। কেন্দ্রীয় খিলানপথটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং কিছুটা আয়তাকার কাঠামোর উপর দন্ডায়মান। পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট খিলানপথগুলিও সামান্য আয়তাকার। কিবলা দেওয়ালের তিনটি মিহরাব অনেকটা অষ্টকোণাকৃতির এবং পূর্ব দেওয়ালের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর নির্মিত। পাশেরগুলির চেয়ে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি আকৃতিতে বড়। বাইরে থেকে একে অষ্টকোণাকৃতি বলে মনে হবে। দরজাগুলির মতোই মিহরাবগুলিও সমান চতুষ্কেন্দ্রিক। শুধু কেন্দ্রীয় মিহরাব ও প্রধান দরজায় অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছে খাঁজকাটা খিলান ও অলঙ্কৃত পোস্তা (pilaster)। | প্রতি পার্শ্বে ৭.৬২ মিটার আয়তন বিশিষ্ট বর্গাকার এক গম্বুজ মসজিদটি একটি উঁচু ভূমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পূর্বদিকের প্রবেশপথে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে একটি করে খিলান রয়েছে। কেন্দ্রীয় খিলানপথটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং কিছুটা আয়তাকার কাঠামোর উপর দন্ডায়মান। পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট খিলানপথগুলিও সামান্য আয়তাকার। কিবলা দেওয়ালের তিনটি মিহরাব অনেকটা অষ্টকোণাকৃতির এবং পূর্ব দেওয়ালের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর নির্মিত। পাশেরগুলির চেয়ে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি আকৃতিতে বড়। বাইরে থেকে একে অষ্টকোণাকৃতি বলে মনে হবে। দরজাগুলির মতোই মিহরাবগুলিও সমান চতুষ্কেন্দ্রিক। শুধু কেন্দ্রীয় মিহরাব ও প্রধান দরজায় অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছে খাঁজকাটা খিলান ও অলঙ্কৃত পোস্তা (pilaster)। | ||
[[Image:SadiMosqueKishargonj.jpg|thumb|400px|সাদী মসজিদ, কিশোরগঞ্জ]] | [[Image:SadiMosqueKishargonj.jpg|thumb|400px|সাদী মসজিদ, কিশোরগঞ্জ]] | ||
বাংলার প্রচলিত রীতিতে কার্নিসগুলি যথেষ্ট বাঁকানো। মুগল যুগে বাংলায় প্রবর্তিত স্থাপত্যরীতিতে দেওয়াল চারটি কার্নিসের উপরে উঠে গেছে। সাদী মসজিদের পূর্বদিকের ফাসাদ বা বহির্ভাগে কেন্দ্রীয় খিলানপথের উপরের ত্রিকোণাকৃতি অংশে এখনও কারুকার্য দেখা যায়। এ ধরনের কারুকার্য ইতিপূর্বে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা গেছে। ইমারতটির বহির্ভাগের চারটি কোণ অষ্টকোণাকৃতি বুরুজ দিয়ে দৃঢ় করা হয়েছে। এগুলি ছাদের রেলিংয়ের চেয়ে কিছুটা উঁচু করে নির্মিত এবং বুরুজের চূড়ায় রয়েছে ছোট আকৃতির গম্বুজ। গম্বুজের শীর্ষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পদ্মের পাপড়ি। মূল নামায ঘরের ছাদের পুরো অংশ জুড়েই একটি বৃত্তাকার ড্রামের উপর গম্বুজটি বসানো হয়েছে। এটি সরাসরি দেওয়ালের উপর বসানো এবং এর চার কোণ সুলতানি বাংলার পরিচিত পেন্ডেন্টিভ নকশায় পূর্ণ। গম্বুজের চূড়ায় রয়েছে কলস ও পদ্ম। | বাংলার প্রচলিত রীতিতে কার্নিসগুলি যথেষ্ট বাঁকানো। মুগল যুগে বাংলায় প্রবর্তিত স্থাপত্যরীতিতে দেওয়াল চারটি কার্নিসের উপরে উঠে গেছে। সাদী মসজিদের পূর্বদিকের ফাসাদ বা বহির্ভাগে কেন্দ্রীয় খিলানপথের উপরের ত্রিকোণাকৃতি অংশে এখনও কারুকার্য দেখা যায়। এ ধরনের কারুকার্য ইতিপূর্বে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা গেছে। ইমারতটির বহির্ভাগের চারটি কোণ অষ্টকোণাকৃতি বুরুজ দিয়ে দৃঢ় করা হয়েছে। এগুলি ছাদের রেলিংয়ের চেয়ে কিছুটা উঁচু করে নির্মিত এবং বুরুজের চূড়ায় রয়েছে ছোট আকৃতির গম্বুজ। গম্বুজের শীর্ষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পদ্মের পাপড়ি। মূল নামায ঘরের ছাদের পুরো অংশ জুড়েই একটি বৃত্তাকার ড্রামের উপর গম্বুজটি বসানো হয়েছে। এটি সরাসরি দেওয়ালের উপর বসানো এবং এর চার কোণ সুলতানি বাংলার পরিচিত পেন্ডেন্টিভ নকশায় পূর্ণ। গম্বুজের চূড়ায় রয়েছে কলস ও পদ্ম। | ||
১০:০১, ১৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সাদী মসজিদ বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে এগারসিন্ধুর নামক গ্রামে অবস্থিত। এটি দেশের অন্যতম সু-সংরক্ষিত মসজিদ। কেন্দ্রীয় মিহরাবের গায়ে সংযুক্ত একটি ফারসি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মুগল সম্রাট শাহজাহানএর শাসনকালে জনৈক শাইখ শিরুর পুত্র সাদী ১০৬২ হিজরিতে (১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে) এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
প্রতি পার্শ্বে ৭.৬২ মিটার আয়তন বিশিষ্ট বর্গাকার এক গম্বুজ মসজিদটি একটি উঁচু ভূমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পূর্বদিকের প্রবেশপথে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে একটি করে খিলান রয়েছে। কেন্দ্রীয় খিলানপথটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং কিছুটা আয়তাকার কাঠামোর উপর দন্ডায়মান। পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট খিলানপথগুলিও সামান্য আয়তাকার। কিবলা দেওয়ালের তিনটি মিহরাব অনেকটা অষ্টকোণাকৃতির এবং পূর্ব দেওয়ালের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর নির্মিত। পাশেরগুলির চেয়ে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি আকৃতিতে বড়। বাইরে থেকে একে অষ্টকোণাকৃতি বলে মনে হবে। দরজাগুলির মতোই মিহরাবগুলিও সমান চতুষ্কেন্দ্রিক। শুধু কেন্দ্রীয় মিহরাব ও প্রধান দরজায় অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছে খাঁজকাটা খিলান ও অলঙ্কৃত পোস্তা (pilaster)।
বাংলার প্রচলিত রীতিতে কার্নিসগুলি যথেষ্ট বাঁকানো। মুগল যুগে বাংলায় প্রবর্তিত স্থাপত্যরীতিতে দেওয়াল চারটি কার্নিসের উপরে উঠে গেছে। সাদী মসজিদের পূর্বদিকের ফাসাদ বা বহির্ভাগে কেন্দ্রীয় খিলানপথের উপরের ত্রিকোণাকৃতি অংশে এখনও কারুকার্য দেখা যায়। এ ধরনের কারুকার্য ইতিপূর্বে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা গেছে। ইমারতটির বহির্ভাগের চারটি কোণ অষ্টকোণাকৃতি বুরুজ দিয়ে দৃঢ় করা হয়েছে। এগুলি ছাদের রেলিংয়ের চেয়ে কিছুটা উঁচু করে নির্মিত এবং বুরুজের চূড়ায় রয়েছে ছোট আকৃতির গম্বুজ। গম্বুজের শীর্ষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পদ্মের পাপড়ি। মূল নামায ঘরের ছাদের পুরো অংশ জুড়েই একটি বৃত্তাকার ড্রামের উপর গম্বুজটি বসানো হয়েছে। এটি সরাসরি দেওয়ালের উপর বসানো এবং এর চার কোণ সুলতানি বাংলার পরিচিত পেন্ডেন্টিভ নকশায় পূর্ণ। গম্বুজের চূড়ায় রয়েছে কলস ও পদ্ম।
দরজা ও মিহরাব ছাড়া পুরো ইমারতটি মসৃণভাবে পলেস্তারা করা হয়েছে, আর দরজা ও মিহরাবকে শোভিত করা হয়েছে অলঙ্কৃত পোড়ামাটির ফলকে। পূর্বদিকের ফাসাদের প্রধান খিলানপথের কাঠামোতে গোলাপসহ সর্পিল প্যাঁচানো নকশা রয়েছে। এর খাঁজকাটা খিলানে সাজানো রয়েছে বড় আকৃতির গোলাপ নকশা। পাশের ছোট খিলানের গায়েও একই রকম গোলাপ দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। পূর্বদিকে ফাসাদের শেষ প্রান্তদ্বয়ে তিনটি করে প্যানেল বসানো হয়েছে খাড়াভাবে। এর প্রত্যেকটিতেই ছিল একটি করে গোলাপ।
আয়তাকার কাঠামোসহ কেন্দ্রীয় মিহরাবটি সূক্ষ্ম কারুকাজ সমৃদ্ধ পোড়ামাটির অলংকরণে শোভিত। নকশায় আঙ্গুরলতা, গোলাপ ও প্রচলিত ঝুলন্ত ডিজাইন প্রভৃতি স্থান পেয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবে পোড়ামাটির অলঙ্করণের অনেক কিছু এখনও অক্ষত। চার কোণের বুরুজগুলি এবং কেন্দ্রীয় মিহরাবের খাঁজকাটা খিলান ও কেন্দ্রীয় দরজা যেসব অলঙ্কৃত পোস্তাকে ভর করে আছে, তাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে আলংকারিক বন্ধনী দ্বারা। বাংলার সুলতানি স্থাপত্য ধারার মধ্যে এই মসজিদে মুগল উপাদানের মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। [এম.এ বারি]