রায়চৌধুরী, দেবীপ্রসাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''রায়চৌধুরী, দেবীপ্রসাদ'''  (১৮৯৯-১৯৭৫)  চিত্রশিল্পী। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর রংপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ের অভিজাত পরিবারের প্রথা অনুযায়ী তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেন। প্রথম জীবনে তিনি ইতালীয় শিল্পী বোইএস (Boiess)-এর কাছে চিত্রবিদ্যার শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইউরোপীয় শৈলী ও পদ্ধতি ত্যাগ করে ভারতীয় পদ্ধতিতে চিত্রবিদ্যা শিক্ষার জন্য শিল্পগুরু  [[ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]]এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ব্যতীত ভারতীয় চিত্রকরদের মধ্যে জলরং-এ ওয়াশ (wash) পদ্ধতির চিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
'''রায়চৌধুরী, দেবীপ্রসাদ'''  (১৮৯৯-১৯৭৫)  চিত্রশিল্পী। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর রংপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ের অভিজাত পরিবারের প্রথা অনুযায়ী তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেন। প্রথম জীবনে তিনি ইতালীয় শিল্পী বোইএস (Boiess)-এর কাছে চিত্রবিদ্যার শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইউরোপীয় শৈলী ও পদ্ধতি ত্যাগ করে ভারতীয় পদ্ধতিতে চিত্রবিদ্যা শিক্ষার জন্য শিল্পগুরু  [[ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]]এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ব্যতীত ভারতীয় চিত্রকরদের মধ্যে জলরং-এ ওয়াশ (wash) পদ্ধতির চিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।


[[Image:DeviprasadRoy.jpg|thumb|right|400px|বসতি, জলরং, ১৯৭০]]
শিল্পশিক্ষা সমাপ্তের পর দেবীপ্রসাদ কলকাতার ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটিতে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৯২৮ সালে তিনি মাদ্রাজ সরকারি চারু ও কারুশিল্প বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি সেখানে আটাশ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি ভারত সরকারের ললিতকলা অ্যাকাডেমির সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সাত বছর উক্ত অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।
শিল্পশিক্ষা সমাপ্তের পর দেবীপ্রসাদ কলকাতার ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটিতে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৯২৮ সালে তিনি মাদ্রাজ সরকারি চারু ও কারুশিল্প বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি সেখানে আটাশ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি ভারত সরকারের ললিতকলা অ্যাকাডেমির সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সাত বছর উক্ত অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।


দেবীপ্রসাদ চিত্রকলার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভাস্কর্যের চর্চাও করেছেন। শিল্পী হিরন্ময় রায়চৌধুরীর কাছে তিনি ভাস্কর্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন। দেবীপ্রসাদ পরে ইতালিতে গমন করে পাশ্চাত্য ভাস্কর্যের রীতিকৌশল দক্ষতার সাথে আত্মস্থ করেন। এ সময় তিনি বেঙ্গলস্কুলের প্রভাববলয় থেকে নিজেকে মুক্ত করেন এবং তাঁর শিল্পকর্মে, বিশেষ করে ভাস্কর্যে রিয়ালিজম বা বাস্তববাদ প্রয়োগ করেন। চিত্রশিল্পের চর্চা করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন ভাস্কর হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং ভাস্কর হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
দেবীপ্রসাদ চিত্রকলার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভাস্কর্যের চর্চাও করেছেন। শিল্পী হিরন্ময় রায়চৌধুরীর কাছে তিনি ভাস্কর্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন। দেবীপ্রসাদ পরে ইতালিতে গমন করে পাশ্চাত্য ভাস্কর্যের রীতিকৌশল দক্ষতার সাথে আত্মস্থ করেন। এ সময় তিনি বেঙ্গলস্কুলের প্রভাববলয় থেকে নিজেকে মুক্ত করেন এবং তাঁর শিল্পকর্মে, বিশেষ করে ভাস্কর্যে রিয়ালিজম বা বাস্তববাদ প্রয়োগ করেন। চিত্রশিল্পের চর্চা করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন ভাস্কর হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং ভাস্কর হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধারা আত্মস্থকৃত দেবীপ্রসাদের অংকিত চিত্ররাজির মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে ‘মা’, ‘শারদ প্রতিমা’, ‘জীবন সন্ধ্যা’, ‘সুরের নেশা’ ও ‘গাড়ি’।  
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধারা আত্মস্থকৃত দেবীপ্রসাদের অংকিত চিত্ররাজির মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে ‘মা’, ‘শারদ প্রতিমা’, ‘জীবন সন্ধ্যা’, ‘সুরের নেশা’ ও ‘গাড়ি’। পাশ্চাত্যের পরিপ্রেক্ষিত ও প্রাচ্যের ড্রইং-এর সম্মিলন উপরিউক্ত চিত্ররাজিতে প্রাণ, রূপ, রস ও ছন্দের সঞ্চার করেছে।
 
[[Image:DeviprasadRoy.jpg|thumb|right|বসতি, জলরং, ১৯৭০]]
 
 
পাশ্চাত্যের পরিপ্রেক্ষিত ও প্রাচ্যের ড্রইং-এর সম্মিলন উপরিউক্ত চিত্ররাজিতে প্রাণ, রূপ, রস ও ছন্দের সঞ্চার করেছে।


দেবীপ্রসাদ অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। ভারতের আধুনিক শিল্পীদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রোঞ্জ মূর্তি নির্মাণ করেন। তিনি এমন বিরাট কম্পোজিশন (monumental composition) ও প্রামাণিক (লাইফ সাইজ) ভাস্কর্য তৈরি করেছেন যাতে অন্তর্নিহিত শক্তি, গতিময়তা ও গভীর ভাবাবেগ বিদ্যমান। দিলি­তে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘ট্রায়াম্ফ অব লেবার’, বিহার সেক্রেটারিয়েটের সম্মুখে নির্মিত ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, ত্রিবান্দমে স্থাপিত ‘টেম্পল এনট্রি প্রোক্লামেশন’, কলকাতায় স্থাপিত ‘গান্ধিজীর ডান্ডি অভিযান’, ‘স্যার আশুতোষ’ ইত্যাদি ভাস্কর্য তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি শিল্পকৃতি। দেবীপ্রসাদের আরও দুটি বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো অ্যানি বেসান্ত ও বিশপ লিউবিটারের প্রস্তর নির্মিত আবক্ষ প্রতিকৃতি।
দেবীপ্রসাদ অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। ভারতের আধুনিক শিল্পীদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রোঞ্জ মূর্তি নির্মাণ করেন। তিনি এমন বিরাট কম্পোজিশন (monumental composition) ও প্রামাণিক (লাইফ সাইজ) ভাস্কর্য তৈরি করেছেন যাতে অন্তর্নিহিত শক্তি, গতিময়তা ও গভীর ভাবাবেগ বিদ্যমান। দিলি­তে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘ট্রায়াম্ফ অব লেবার’, বিহার সেক্রেটারিয়েটের সম্মুখে নির্মিত ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, ত্রিবান্দমে স্থাপিত ‘টেম্পল এনট্রি প্রোক্লামেশন’, কলকাতায় স্থাপিত ‘গান্ধিজীর ডান্ডি অভিযান’, ‘স্যার আশুতোষ’ ইত্যাদি ভাস্কর্য তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি শিল্পকৃতি। দেবীপ্রসাদের আরও দুটি বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো অ্যানি বেসান্ত ও বিশপ লিউবিটারের প্রস্তর নির্মিত আবক্ষ প্রতিকৃতি।

০৭:১৮, ৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রায়চৌধুরী, দেবীপ্রসাদ  (১৮৯৯-১৯৭৫)  চিত্রশিল্পী। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর রংপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ের অভিজাত পরিবারের প্রথা অনুযায়ী তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেন। প্রথম জীবনে তিনি ইতালীয় শিল্পী বোইএস (Boiess)-এর কাছে চিত্রবিদ্যার শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইউরোপীয় শৈলী ও পদ্ধতি ত্যাগ করে ভারতীয় পদ্ধতিতে চিত্রবিদ্যা শিক্ষার জন্য শিল্পগুরু  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরএর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ব্যতীত ভারতীয় চিত্রকরদের মধ্যে জলরং-এ ওয়াশ (wash) পদ্ধতির চিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

বসতি, জলরং, ১৯৭০

শিল্পশিক্ষা সমাপ্তের পর দেবীপ্রসাদ কলকাতার ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটিতে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৯২৮ সালে তিনি মাদ্রাজ সরকারি চারু ও কারুশিল্প বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি সেখানে আটাশ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি ভারত সরকারের ললিতকলা অ্যাকাডেমির সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সাত বছর উক্ত অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।

দেবীপ্রসাদ চিত্রকলার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভাস্কর্যের চর্চাও করেছেন। শিল্পী হিরন্ময় রায়চৌধুরীর কাছে তিনি ভাস্কর্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন। দেবীপ্রসাদ পরে ইতালিতে গমন করে পাশ্চাত্য ভাস্কর্যের রীতিকৌশল দক্ষতার সাথে আত্মস্থ করেন। এ সময় তিনি বেঙ্গলস্কুলের প্রভাববলয় থেকে নিজেকে মুক্ত করেন এবং তাঁর শিল্পকর্মে, বিশেষ করে ভাস্কর্যে রিয়ালিজম বা বাস্তববাদ প্রয়োগ করেন। চিত্রশিল্পের চর্চা করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন ভাস্কর হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং ভাস্কর হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধারা আত্মস্থকৃত দেবীপ্রসাদের অংকিত চিত্ররাজির মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে ‘মা’, ‘শারদ প্রতিমা’, ‘জীবন সন্ধ্যা’, ‘সুরের নেশা’ ও ‘গাড়ি’। পাশ্চাত্যের পরিপ্রেক্ষিত ও প্রাচ্যের ড্রইং-এর সম্মিলন উপরিউক্ত চিত্ররাজিতে প্রাণ, রূপ, রস ও ছন্দের সঞ্চার করেছে।

দেবীপ্রসাদ অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। ভারতের আধুনিক শিল্পীদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রোঞ্জ মূর্তি নির্মাণ করেন। তিনি এমন বিরাট কম্পোজিশন (monumental composition) ও প্রামাণিক (লাইফ সাইজ) ভাস্কর্য তৈরি করেছেন যাতে অন্তর্নিহিত শক্তি, গতিময়তা ও গভীর ভাবাবেগ বিদ্যমান। দিলি­তে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘ট্রায়াম্ফ অব লেবার’, বিহার সেক্রেটারিয়েটের সম্মুখে নির্মিত ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, ত্রিবান্দমে স্থাপিত ‘টেম্পল এনট্রি প্রোক্লামেশন’, কলকাতায় স্থাপিত ‘গান্ধিজীর ডান্ডি অভিযান’, ‘স্যার আশুতোষ’ ইত্যাদি ভাস্কর্য তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি শিল্পকৃতি। দেবীপ্রসাদের আরও দুটি বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো অ্যানি বেসান্ত ও বিশপ লিউবিটারের প্রস্তর নির্মিত আবক্ষ প্রতিকৃতি।

চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ব্যতীত সাহিত্যের ক্ষেত্রে শিল্পী দেবীপ্রসাদের অবাধ বিচরণ তাঁকে আরও খ্যাতিমান করে তোলে। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে গোপাল সেন ও পরিতোষ ঘোষ তাঁরই মতো আর্ন্তজাতিক খ্যতি অর্জন করেছেন। দেবীপ্রসাদ ১৯৭৫ সালের ১৪ অক্টোবর পরলোকগমন করেন।  [নাজমা খান মজলিস]