রহিম, স্যার আব্দুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''রহিম, স্যার আব্দুর '''(১৮৬৭-১৯৫২) আইনশাস্ত্রজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ। স্যার আব্দুর রহিম মেদিনীপুর জেলার এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি লন্ডন গমন করেন এবং বার-এট-ল অধ্যয়নের জন্য মিড্ল টেম্পলে ভর্তি হন। ১৮৯০ সালে তিনি আইন পেশা শুরু করেন। আব্দুর রহিম খুব দ্রুত মুসলিম আইন ও ফৌজদারি আইনে দক্ষ আইনজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ডেপুটি দলিলরক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং পরে তিন বছর (১৯০০-১৯০৩) প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্তব্য পালন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। | [[Image:RahimSirAbdur.jpg|thumb|right|400px|স্যার আব্দুর রহিম]] | ||
'''রহিম, স্যার আব্দুর''' (১৮৬৭-১৯৫২) আইনশাস্ত্রজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ। স্যার আব্দুর রহিম মেদিনীপুর জেলার এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি লন্ডন গমন করেন এবং বার-এট-ল অধ্যয়নের জন্য মিড্ল টেম্পলে ভর্তি হন। ১৮৯০ সালে তিনি আইন পেশা শুরু করেন। আব্দুর রহিম খুব দ্রুত মুসলিম আইন ও ফৌজদারি আইনে দক্ষ আইনজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ডেপুটি দলিলরক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং পরে তিন বছর (১৯০০-১৯০৩) প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্তব্য পালন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। | |||
আব্দুর রহিম শরিয়া আইনের মূল উৎসের ভিত্তিতে মুসলিম ব্যবহারশাস্ত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং মুসলিম আইন ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। মুসলিম ব্যবহারশাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্যের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঠাকুর ল লেকচার’- প্রদান করার সম্মান অর্জন করেন। ঠাকুর আইন বক্তা হিসেবে তাঁর বক্তৃতার প্রগাঢ়তা ও মৌলিকত্ব তাঁকে পন্ডিত ও আইনশাস্ত্রজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম করে তোলে। তাঁর বক্তৃতাবলি ১৯১১ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। | আব্দুর রহিম শরিয়া আইনের মূল উৎসের ভিত্তিতে মুসলিম ব্যবহারশাস্ত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং মুসলিম আইন ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। মুসলিম ব্যবহারশাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্যের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঠাকুর ল লেকচার’- প্রদান করার সম্মান অর্জন করেন। ঠাকুর আইন বক্তা হিসেবে তাঁর বক্তৃতার প্রগাঢ়তা ও মৌলিকত্ব তাঁকে পন্ডিত ও আইনশাস্ত্রজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম করে তোলে। তাঁর বক্তৃতাবলি ১৯১১ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। | ||
৭ নং লাইন: | ৮ নং লাইন: | ||
আব্দুর রহিম ১৯২০ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। তিনি হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেন এবং [[বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯২৩|বেঙ্গল প্যাক্ট]] (১৯২৩) বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি সরকার পক্ষীয় রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। | আব্দুর রহিম ১৯২০ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। তিনি হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেন এবং [[বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯২৩|বেঙ্গল প্যাক্ট]] (১৯২৩) বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি সরকার পক্ষীয় রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। | ||
তাঁকে গভর্নরের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য করা হয় (১৯২৪-১৯২৫)। ১৯২৪ সাল থেকে রহিম ক্রমশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু বিপুল পান্ডিত্য ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন মুসলিম নেতা হয়েও তিনি সম্ভবত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। | তাঁকে গভর্নরের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য করা হয় (১৯২৪-১৯২৫)। ১৯২৪ সাল থেকে রহিম ক্রমশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু বিপুল পান্ডিত্য ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন মুসলিম নেতা হয়েও তিনি সম্ভবত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। |
০৯:১০, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
রহিম, স্যার আব্দুর (১৮৬৭-১৯৫২) আইনশাস্ত্রজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ। স্যার আব্দুর রহিম মেদিনীপুর জেলার এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি লন্ডন গমন করেন এবং বার-এট-ল অধ্যয়নের জন্য মিড্ল টেম্পলে ভর্তি হন। ১৮৯০ সালে তিনি আইন পেশা শুরু করেন। আব্দুর রহিম খুব দ্রুত মুসলিম আইন ও ফৌজদারি আইনে দক্ষ আইনজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ডেপুটি দলিলরক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং পরে তিন বছর (১৯০০-১৯০৩) প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্তব্য পালন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন।
আব্দুর রহিম শরিয়া আইনের মূল উৎসের ভিত্তিতে মুসলিম ব্যবহারশাস্ত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং মুসলিম আইন ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। মুসলিম ব্যবহারশাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্যের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঠাকুর ল লেকচার’- প্রদান করার সম্মান অর্জন করেন। ঠাকুর আইন বক্তা হিসেবে তাঁর বক্তৃতার প্রগাঢ়তা ও মৌলিকত্ব তাঁকে পন্ডিত ও আইনশাস্ত্রজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম করে তোলে। তাঁর বক্তৃতাবলি ১৯১১ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯০৮ সালে তাঁকে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি আব্দুর রহিম একবার ১৯১৬ সালে এবং পুনরায় ১৯১৯ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন। মাদ্রাজে অবস্থানকালে তিনি দীর্ঘকাল মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো’ মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (১৯১০) ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন। ১৯১৯ সালে তিনি মহিশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং ‘মাদ্রাজ মোহামেডান এডুকেশনাল অ্যাসোসিয়েশনে’র পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সম্মানিত হন। আব্দুর রহিম ১৯১৯ সালে ‘নাইট’ উপাধি এবং ১৯২৫ সালে কে.সি.এস.আই উপাধিতে ভূষিত হন।
আব্দুর রহিম ১৯২০ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। তিনি হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেন এবং বেঙ্গল প্যাক্ট (১৯২৩) বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি সরকার পক্ষীয় রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন।
তাঁকে গভর্নরের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য করা হয় (১৯২৪-১৯২৫)। ১৯২৪ সাল থেকে রহিম ক্রমশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু বিপুল পান্ডিত্য ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন মুসলিম নেতা হয়েও তিনি সম্ভবত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
বিশ শতকের বিশের দশক ও ত্রিশের দশকের প্রথম দিকে বিভেদের রাজনীতিতে মুসলিম নেতৃত্বে বেশ কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক উপদলের উদ্ভব লক্ষ করা যায়। প্রত্যেক বড় নেতা তার নিজস্ব দল গঠন করতে থাকেন এবং তাদের মূল লক্ষ হয়ে দাঁড়ায় মন্ত্রিসভা গঠন। আব্দুর রহিমেরও ’বেঙ্গল মুসলিম পার্টি’ নামে একটি দল ছিল। ১৯২৬ সালের কাউন্সিল নির্বাচনে তাঁর দল সবচেয়ে শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থান লাভ করে। ফলে ১৯২৭ সালে আব্দুর রহিম মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। কিন্তু কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন লাভে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে পদত্যাগ করতে হয়। ১৯২৮ সালে সকল মুসলিম দলের সমন্বয়ে তিনি মুসলিম ইউনাইটেড পার্টি নামে একটি জোট গঠন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সাইমন কমিশনে সম্মিলিতভাবে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। ১৯২৯ সালে আব্দুর রহিম নিখিল বাংলা প্রজা সমিতি নামে একটি কৃষক পার্টি গঠন করেন এবং এর প্রথম সভাপতি হন। এ সমিতি ছিল কৃষক প্রজা পার্টির পূর্বসূরি। ১৯৩৪ সালে তিনি ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সভাপতি হন এবং রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহন করেন। [সিরাজুল ইসলাম]