রহমান, মশিউর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''রহমান, মশিউর '''(১৯২০-১৯৭১)'''  '''আইনজীবী, রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯২০ সালে যশোর জেলার চৌগাছা থানার সিংহঝুলি গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি যশোর জেলা স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।
[[Image:RahmanMoshiur.jpg|thumb|right|মশিউর রহমান]]
'''রহমান, মশিউর''' (১৯২০-১৯৭১) আইনজীবী, রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯২০ সালে যশোর জেলার চৌগাছা থানার সিংহঝুলি গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি যশোর জেলা স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।


মশিউর রহমান ১৯৪৪ সালে যশোরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। একই সঙ্গে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৪৮ সালে যশোর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু মুসলিম লীগের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত নীতির প্রতিবাদে তিনি ১৯৪৮ সালে জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং যশোরে দলটির সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালে তিনি যশোর জেলা আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
মশিউর রহমান ১৯৪৪ সালে যশোরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। একই সঙ্গে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৪৮ সালে যশোর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু মুসলিম লীগের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত নীতির প্রতিবাদে তিনি ১৯৪৮ সালে জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং যশোরে দলটির সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালে তিনি যশোর জেলা আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
৭ নং লাইন: ৮ নং লাইন:


মশিউর রহমান ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান গণতান্ত্রিক মোর্চা (পিডিএম) পন্থি আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৬৮ সালে তিনি পুনরায় মূল ধারার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন।
মশিউর রহমান ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান গণতান্ত্রিক মোর্চা (পিডিএম) পন্থি আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৬৮ সালে তিনি পুনরায় মূল ধারার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন।
[[Image:RahmanMoshiur.jpg|thumb|right|মশিউর রহমান]]


আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনি সহায়তা দান করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মশিউর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে যশোর-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে তিনি যশোরে নেতৃত্ব দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়। সেখানে ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত হন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনি সহায়তা দান করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মশিউর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে যশোর-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে তিনি যশোরে নেতৃত্ব দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়। সেখানে ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত হন।

০৮:৪৯, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মশিউর রহমান

রহমান, মশিউর (১৯২০-১৯৭১) আইনজীবী, রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯২০ সালে যশোর জেলার চৌগাছা থানার সিংহঝুলি গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি যশোর জেলা স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।

মশিউর রহমান ১৯৪৪ সালে যশোরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। একই সঙ্গে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৪৮ সালে যশোর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু মুসলিম লীগের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত নীতির প্রতিবাদে তিনি ১৯৪৮ সালে জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং যশোরে দলটির সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালে তিনি যশোর জেলা আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

মশিউর রহমান ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে যশোরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে যশোর থেকে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৩-১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় তিনি প্রচার, সংসদ বিষয়ক এবং রাজস্ব ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে তিনি গ্রেফতার হন।

মশিউর রহমান ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান গণতান্ত্রিক মোর্চা (পিডিএম) পন্থি আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৬৮ সালে তিনি পুনরায় মূল ধারার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনি সহায়তা দান করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মশিউর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে যশোর-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে তিনি যশোরে নেতৃত্ব দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়। সেখানে ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর মশিউর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে যশোর পৌর পার্কে একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। যশোর বিমানবন্দর সড়কের নামকরণ হয় শহীদ মশিউর রহমান সড়ক।  [আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]