রশিদ, এম হারুনুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''রশিদ, এম হারুনুর''' (১৯২৫-২০১০) প্রত্নতত্ত্ববিদ। এম হারুনুর রশিদ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার রসুল্লাবাদ গ্রামে ১৯২৫ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪০ সালে মেট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে আই.এ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৪৫ সালে সম্মানসহ বি.এ এবং ১৯৪৬ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে। কর্মজীবনের শুরুতে হারুনুর রশিদ ভৈরব কলেজে প্রভাষক পদে কিছুদিন কাজ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি পাকিস্তানের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেন। এ ছাড়াও তিনি লাহোর জাদুঘরের কিউরেটর পদে এবং পরে তক্ষশীলা জাদুঘরে কর্মরত ছিলেন। তক্ষশীলা জাদুঘরে কর্মরত অবস্থায় তিনি স্যার মর্টিমার হুইলারের সঙ্গে বেশ কয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন। | '''রশিদ, এম হারুনুর''' (১৯২৫-২০১০) প্রত্নতত্ত্ববিদ। এম হারুনুর রশিদ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার রসুল্লাবাদ গ্রামে ১৯২৫ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪০ সালে মেট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে আই.এ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৪৫ সালে সম্মানসহ বি.এ এবং ১৯৪৬ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে। কর্মজীবনের শুরুতে হারুনুর রশিদ ভৈরব কলেজে প্রভাষক পদে কিছুদিন কাজ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি পাকিস্তানের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেন। এ ছাড়াও তিনি লাহোর জাদুঘরের কিউরেটর পদে এবং পরে তক্ষশীলা জাদুঘরে কর্মরত ছিলেন। তক্ষশীলা জাদুঘরে কর্মরত অবস্থায় তিনি স্যার মর্টিমার হুইলারের সঙ্গে বেশ কয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন। | ||
তক্ষশীলা স্কুল অব আর্কিওলজির (School of Archaeology) ফেলো হিসেবে কর্মরত থাকাকালের অভিজ্ঞতাই তাঁকে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ের ওপর একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। তিনি বাম্ভোর, তক্ষশীলা, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো ও পাকিস্তানের অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রত্নস্থল খননে অংশগ্রহণ করেন। হারুনুর রশিদ ১৯৬৮ সালে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে তাঁর পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল- The Early History of South East Bengal in the light of Recent Archaeological Materials। পাকিস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের উপর তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তমগা-ই পাকিস্তান’ সম্মানে সম্মানিত করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ১৯৭১ সালে গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি তাঁর এ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ের পর থেকে ১৯৮২ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ড. হারুনুর রশিদ বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। | [[Image:RashidMHarunur.jpg|thumb|right|এম হারুনুর রশিদ]] | ||
তক্ষশীলা স্কুল অব আর্কিওলজির (School of Archaeology) ফেলো হিসেবে কর্মরত থাকাকালের অভিজ্ঞতাই তাঁকে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ের ওপর একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। তিনি বাম্ভোর, তক্ষশীলা, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো ও পাকিস্তানের অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রত্নস্থল খননে অংশগ্রহণ করেন। হারুনুর রশিদ ১৯৬৮ সালে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে তাঁর পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল- The Early History of South East Bengal in the light of Recent Archaeological Materials। পাকিস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের উপর তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তমগা-ই পাকিস্তান’ সম্মানে সম্মানিত করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ১৯৭১ সালে গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি তাঁর এ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ের পর থেকে ১৯৮২ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ড. হারুনুর রশিদ বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। Pakistan Archaeology শীর্ষক গ্রন্থমালায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের ওপর একাধিক রচনা তিনি সম্পাদনা করেছেন। তা ছাড়াও ১৯৭৯ সালে Bangladesh Archaeology- এর একাধিক সংখ্যার সম্পাদনার কাজ করেন। | |||
Pakistan Archaeology শীর্ষক গ্রন্থমালায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের ওপর একাধিক রচনা তিনি সম্পাদনা করেছেন। তা ছাড়াও ১৯৭৯ সালে Bangladesh Archaeology- এর একাধিক সংখ্যার সম্পাদনার কাজ করেন। | |||
ড. হারুনুর রশিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে তা থেকে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যিক মূল্যবান সম্পদ জনসমক্ষে বা প্রকাশ্যে তুলে আনতে কাজ করে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ময়নামতী-লালমাই, পাহাড়পুর-মহাস্থানসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রত্নস্থলের খনন কার্য পরিচালিত হয়েছে। তিনি ছিলেন ডাইরেক্টরেট অব আর্কিওলজির এক্সপোরেশন ও এক্সক্যাভেশন (Exploration & Excavation) বিভাগের প্রধান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অতিথি শিক্ষক হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছেন। সে সময়েই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ করার পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে তিনি প্রধান ভূমিকা রাখেন। ড. রশিদ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফাইন আর্টসেও (Institute of Fine Arts) শিক্ষকতা করেছেন। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর ড. হারুনুর রশিদের মৃত্যু হয়। [মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া] | ড. হারুনুর রশিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে তা থেকে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যিক মূল্যবান সম্পদ জনসমক্ষে বা প্রকাশ্যে তুলে আনতে কাজ করে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ময়নামতী-লালমাই, পাহাড়পুর-মহাস্থানসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রত্নস্থলের খনন কার্য পরিচালিত হয়েছে। তিনি ছিলেন ডাইরেক্টরেট অব আর্কিওলজির এক্সপোরেশন ও এক্সক্যাভেশন (Exploration & Excavation) বিভাগের প্রধান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অতিথি শিক্ষক হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছেন। সে সময়েই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ করার পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে তিনি প্রধান ভূমিকা রাখেন। ড. রশিদ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফাইন আর্টসেও (Institute of Fine Arts) শিক্ষকতা করেছেন। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর ড. হারুনুর রশিদের মৃত্যু হয়। [মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া] |
০৫:৩৯, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
রশিদ, এম হারুনুর (১৯২৫-২০১০) প্রত্নতত্ত্ববিদ। এম হারুনুর রশিদ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার রসুল্লাবাদ গ্রামে ১৯২৫ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪০ সালে মেট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে আই.এ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৪৫ সালে সম্মানসহ বি.এ এবং ১৯৪৬ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে। কর্মজীবনের শুরুতে হারুনুর রশিদ ভৈরব কলেজে প্রভাষক পদে কিছুদিন কাজ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি পাকিস্তানের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেন। এ ছাড়াও তিনি লাহোর জাদুঘরের কিউরেটর পদে এবং পরে তক্ষশীলা জাদুঘরে কর্মরত ছিলেন। তক্ষশীলা জাদুঘরে কর্মরত অবস্থায় তিনি স্যার মর্টিমার হুইলারের সঙ্গে বেশ কয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন।
তক্ষশীলা স্কুল অব আর্কিওলজির (School of Archaeology) ফেলো হিসেবে কর্মরত থাকাকালের অভিজ্ঞতাই তাঁকে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ের ওপর একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। তিনি বাম্ভোর, তক্ষশীলা, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো ও পাকিস্তানের অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রত্নস্থল খননে অংশগ্রহণ করেন। হারুনুর রশিদ ১৯৬৮ সালে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে তাঁর পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল- The Early History of South East Bengal in the light of Recent Archaeological Materials। পাকিস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের উপর তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তমগা-ই পাকিস্তান’ সম্মানে সম্মানিত করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ১৯৭১ সালে গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি তাঁর এ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ের পর থেকে ১৯৮২ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ড. হারুনুর রশিদ বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। Pakistan Archaeology শীর্ষক গ্রন্থমালায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের ওপর একাধিক রচনা তিনি সম্পাদনা করেছেন। তা ছাড়াও ১৯৭৯ সালে Bangladesh Archaeology- এর একাধিক সংখ্যার সম্পাদনার কাজ করেন।
ড. হারুনুর রশিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে তা থেকে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যিক মূল্যবান সম্পদ জনসমক্ষে বা প্রকাশ্যে তুলে আনতে কাজ করে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ময়নামতী-লালমাই, পাহাড়পুর-মহাস্থানসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রত্নস্থলের খনন কার্য পরিচালিত হয়েছে। তিনি ছিলেন ডাইরেক্টরেট অব আর্কিওলজির এক্সপোরেশন ও এক্সক্যাভেশন (Exploration & Excavation) বিভাগের প্রধান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অতিথি শিক্ষক হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছেন। সে সময়েই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ করার পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে তিনি প্রধান ভূমিকা রাখেন। ড. রশিদ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফাইন আর্টসেও (Institute of Fine Arts) শিক্ষকতা করেছেন। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর ড. হারুনুর রশিদের মৃত্যু হয়। [মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া]