মৎস্যযান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''মৎস্যযান''' (Fishing Craft) মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত নৌকা, জাহাজ বা অন্যান্য নৌযান। বাংলাদেশের স্বাদুপানির জলাশয়, মোহনা ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার কাজে নানা ধরন, আকার ও নকশার নৌযান ব্যবহূত হয়। | '''মৎস্যযান''' (Fishing Craft) মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত নৌকা, জাহাজ বা অন্যান্য নৌযান। বাংলাদেশের স্বাদুপানির জলাশয়, মোহনা ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার কাজে নানা ধরন, আকার ও নকশার নৌযান ব্যবহূত হয়। | ||
[[Image:FishingCraft1.jpg|thumb|right|400px|মাছ ধরার নৌকা]] | |||
''ডিঙিনৌকা'' তলভাগ গোলাকৃতির ছোটখাটো নৌকা। সামনের ও পিছনের দিক পানির অনেকটা উপরে থাকে। সম্মুখপ্রান্ত ও পশ্চাৎপ্রান্ত লম্বা ও চোখা। এ ধরনের ছোট নৌকায় কোন পাটাতন থাকে না, বড় নৌকায় সাধারণত থাকে। সচরাচর ছই থাকে না, থাকলেও পেছনের দিকে। দাঁড় লম্বা ও চ্যাপ্টা। অনেক নৌকায় পাল নেওয়া হয় না, নিলেও তা পাতলা কাপড়ে তৈরি ও কোনাকুনিভাবে বাঁশের খুঁটিতে লাগানো থাকে। এগুলিকে জেলে ডিঙিও বলে। জাল অনুসারে ব্যবহূত এর ভিন্ন ভিন্ন নাম হলো ভেসাল ডিঙি, পাতাম ডিঙি, সংগলা ডিঙি, তালাল ডিঙি। | |||
''চান্দিনৌকা'' ঐতিহ্যিক মাছ ধরা নৌকা। আগা ও গোড়া সামান্য চোখা, ৮-১২ মি লম্বা, ১-৩ মি চওড়া, ৭৫-১২৫ সেমি গভীর। নৌকার পেট বাঁকা বা চ্যাপ্টা। নৌকার পিছনে দাঁড়ের মতো একটি হাল বাঁধা থাকে। ছই মাঝখানে। প্রায়শই পালহীন, থাকলে চৌকো ও সামনে। এ নৌকা চান্দি জালে ইলিশ ধরার জন্য ব্যবহূত হয়। | |||
''কোশানৌকা'' সম্মুখ ও পিছন প্রান্ত ভোঁতা; ৭-১০ মি লম্বা; তলা চ্যাপ্টা। বাঁশের লগি দিয়ে দাঁড় তৈরি হয়। পাটাতন গোটা বা ফাড়া বাঁশের টুকরার তৈরি। ছই থাকে না। পাল লাগালে সেটা ত্রিকোণ, নৌকার সামনের অর্ধেকে থাকে। এটি চালায় ১-৬ জন মাঝি। কোশানৌকা সাধারণত অগভীর জলাশয়ে মাছ ধরায় ব্যবহূত হয়। | |||
''সাম্পান'' প্রধানত চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের অন্যান্য উপকূলীয় জেলায় দেখা যায়। পিছনের অংশ দ্বিধাবিভক্ত ও চোখা। সামনের দিকও চোখা এবং অত্যধিক উঁচানো। উপকূলীয় অঞ্চলে সাধারণত ফেরি নৌকা হিসেবে এবং কখনও উপকূলে মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত হয়। | |||
[[Image:FishingCraft2.jpg|thumb|left|মাছ ধরার ট্রলার]] | |||
[[Image: | ''ভেলা'' অগভীর পানিতে মাছ ধরার জন্য বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ব্যবহূত হয়। এর অনেকগুলি স্থানীয় নাম আছে যেমন, ভেরা, ছালি, ভোরা ইত্যাদি। কয়েকটি কলাগাছ একত্রে বেঁধে ভেলা তৈরি করা হয়। লম্বা ২-৩ মি ও ১-১.৫ মি চওড়া। কখনও কখনও খেপলা জাল ও মই জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত হয়। | ||
সমুদ্রে মাছ ধরার জন্যও বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মিত হয়। মধ্য বিশ শতকের পূর্বে মাছ ধরার নৌকাগুলি ছিল প্রধানত স্থানীয় নকশার। বর্তমানে মাছ ধরার নৌকা নির্মাণ একটি আন্তর্জাতিক শিল্প এবং উৎসস্থলের বদলে এগুলির গড়ন মাছ ধরার ধরনের ওপরই অধিক নির্ভরশীল। এখনকার এসব নৌকা নির্মাণে লাগে ইস্পাত এবং ফেরোসিমেন্ট ও ফাইবার গ্লাস। বেশি পরিমাণ মাছ ধরা, কমসংখ্যক নাবিক ও চালানোর কম খরচ এই জাতীয় নৌযান নির্মাণে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ব্যবহূত সাজসরঞ্জামের ভিত্তিতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মাছ ধরার নৌযানগুলির নিম্নোক্ত শ্রেণীবিভাগ প্রবর্তন করেছে। | সমুদ্রে মাছ ধরার জন্যও বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মিত হয়। মধ্য বিশ শতকের পূর্বে মাছ ধরার নৌকাগুলি ছিল প্রধানত স্থানীয় নকশার। বর্তমানে মাছ ধরার নৌকা নির্মাণ একটি আন্তর্জাতিক শিল্প এবং উৎসস্থলের বদলে এগুলির গড়ন মাছ ধরার ধরনের ওপরই অধিক নির্ভরশীল। এখনকার এসব নৌকা নির্মাণে লাগে ইস্পাত এবং ফেরোসিমেন্ট ও ফাইবার গ্লাস। বেশি পরিমাণ মাছ ধরা, কমসংখ্যক নাবিক ও চালানোর কম খরচ এই জাতীয় নৌযান নির্মাণে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ব্যবহূত সাজসরঞ্জামের ভিত্তিতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মাছ ধরার নৌযানগুলির নিম্নোক্ত শ্রেণীবিভাগ প্রবর্তন করেছে। | ||
২১ নং লাইন: | ১৮ নং লাইন: | ||
ট্রলার ছাঁকি বা ট্রল জাল টানার মতো শক্তিশালী ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি সংযুক্ত নৌযান। | ট্রলার ছাঁকি বা ট্রল জাল টানার মতো শক্তিশালী ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি সংযুক্ত নৌযান। | ||
সাইড | ''সাইড ট্রলার'' এ ধরনের নৌযানে পাশ দিয়ে ছাঁকিজাল ফেলা ও টানা হয়। | ||
স্টার্ন | ''স্টার্ন ট্রলার'' সব আধুনিক ট্রলারই এই শ্রেণীর। এগুলিতে হালের দিক দিয়ে ছাঁকিজাল ফেলা ও টানা হয়। | ||
বিম | ''বিম ট্রলার'' এ ধরনের ট্রলারে একটি কেন্দ্রীয় মাস্ত্তল থেকে দুদিকে বাড়ানো বিমে দুপাশে ছাঁকিজাল বাঁধা থাকে। | ||
ওয়েট-ফিস | ''ওয়েট-ফিস ট্রলার'' মাছ ধরা ও মজুতের বিশেষ পদ্ধতিই এই ট্রলারের বৈশিষ্ট্য। | ||
ফ্রিজার | ''ফ্রিজার ট্রলার'' হিমায়নের সুবিধাযুক্ত ট্রলার। এতে এক বা একাধিক সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে মাছ ধরে তা হিমকক্ষে জমা রাখা যায়। | ||
বাংলাদেশে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারগুলির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত। ১৯৯২ সাল থেকেই কর্পোরেশন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। সংস্থার নৌবহরে ১৫টি মাঝারি আকারের ট্রলার আছে। অন্যান্য সমুদ্রগামী নৌযান হলো নানা আকারের নৌকা এবং অধিকাংশই কাঠের তৈরি। জেলেদের ব্যবহূত সাজসরঞ্জাম হলো নানা আয়তনের বেড়জাল ও থলেজাল। [এম.এস শাহ] | বাংলাদেশে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারগুলির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত। ১৯৯২ সাল থেকেই কর্পোরেশন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। সংস্থার নৌবহরে ১৫টি মাঝারি আকারের ট্রলার আছে। অন্যান্য সমুদ্রগামী নৌযান হলো নানা আকারের নৌকা এবং অধিকাংশই কাঠের তৈরি। জেলেদের ব্যবহূত সাজসরঞ্জাম হলো নানা আয়তনের বেড়জাল ও থলেজাল। [এম.এস শাহ] | ||
''আরও দেখুন'' বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন | ''আরও দেখুন'' [[বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন|বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন]]। | ||
[[en:Fishing Craft]] | [[en:Fishing Craft]] |
০৯:১৯, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মৎস্যযান (Fishing Craft) মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত নৌকা, জাহাজ বা অন্যান্য নৌযান। বাংলাদেশের স্বাদুপানির জলাশয়, মোহনা ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার কাজে নানা ধরন, আকার ও নকশার নৌযান ব্যবহূত হয়।
ডিঙিনৌকা তলভাগ গোলাকৃতির ছোটখাটো নৌকা। সামনের ও পিছনের দিক পানির অনেকটা উপরে থাকে। সম্মুখপ্রান্ত ও পশ্চাৎপ্রান্ত লম্বা ও চোখা। এ ধরনের ছোট নৌকায় কোন পাটাতন থাকে না, বড় নৌকায় সাধারণত থাকে। সচরাচর ছই থাকে না, থাকলেও পেছনের দিকে। দাঁড় লম্বা ও চ্যাপ্টা। অনেক নৌকায় পাল নেওয়া হয় না, নিলেও তা পাতলা কাপড়ে তৈরি ও কোনাকুনিভাবে বাঁশের খুঁটিতে লাগানো থাকে। এগুলিকে জেলে ডিঙিও বলে। জাল অনুসারে ব্যবহূত এর ভিন্ন ভিন্ন নাম হলো ভেসাল ডিঙি, পাতাম ডিঙি, সংগলা ডিঙি, তালাল ডিঙি।
চান্দিনৌকা ঐতিহ্যিক মাছ ধরা নৌকা। আগা ও গোড়া সামান্য চোখা, ৮-১২ মি লম্বা, ১-৩ মি চওড়া, ৭৫-১২৫ সেমি গভীর। নৌকার পেট বাঁকা বা চ্যাপ্টা। নৌকার পিছনে দাঁড়ের মতো একটি হাল বাঁধা থাকে। ছই মাঝখানে। প্রায়শই পালহীন, থাকলে চৌকো ও সামনে। এ নৌকা চান্দি জালে ইলিশ ধরার জন্য ব্যবহূত হয়।
কোশানৌকা সম্মুখ ও পিছন প্রান্ত ভোঁতা; ৭-১০ মি লম্বা; তলা চ্যাপ্টা। বাঁশের লগি দিয়ে দাঁড় তৈরি হয়। পাটাতন গোটা বা ফাড়া বাঁশের টুকরার তৈরি। ছই থাকে না। পাল লাগালে সেটা ত্রিকোণ, নৌকার সামনের অর্ধেকে থাকে। এটি চালায় ১-৬ জন মাঝি। কোশানৌকা সাধারণত অগভীর জলাশয়ে মাছ ধরায় ব্যবহূত হয়।
সাম্পান প্রধানত চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের অন্যান্য উপকূলীয় জেলায় দেখা যায়। পিছনের অংশ দ্বিধাবিভক্ত ও চোখা। সামনের দিকও চোখা এবং অত্যধিক উঁচানো। উপকূলীয় অঞ্চলে সাধারণত ফেরি নৌকা হিসেবে এবং কখনও উপকূলে মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত হয়।
ভেলা অগভীর পানিতে মাছ ধরার জন্য বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ব্যবহূত হয়। এর অনেকগুলি স্থানীয় নাম আছে যেমন, ভেরা, ছালি, ভোরা ইত্যাদি। কয়েকটি কলাগাছ একত্রে বেঁধে ভেলা তৈরি করা হয়। লম্বা ২-৩ মি ও ১-১.৫ মি চওড়া। কখনও কখনও খেপলা জাল ও মই জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য ব্যবহূত হয়।
সমুদ্রে মাছ ধরার জন্যও বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মিত হয়। মধ্য বিশ শতকের পূর্বে মাছ ধরার নৌকাগুলি ছিল প্রধানত স্থানীয় নকশার। বর্তমানে মাছ ধরার নৌকা নির্মাণ একটি আন্তর্জাতিক শিল্প এবং উৎসস্থলের বদলে এগুলির গড়ন মাছ ধরার ধরনের ওপরই অধিক নির্ভরশীল। এখনকার এসব নৌকা নির্মাণে লাগে ইস্পাত এবং ফেরোসিমেন্ট ও ফাইবার গ্লাস। বেশি পরিমাণ মাছ ধরা, কমসংখ্যক নাবিক ও চালানোর কম খরচ এই জাতীয় নৌযান নির্মাণে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ব্যবহূত সাজসরঞ্জামের ভিত্তিতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মাছ ধরার নৌযানগুলির নিম্নোক্ত শ্রেণীবিভাগ প্রবর্তন করেছে।
ট্রলার ছাঁকি বা ট্রল জাল টানার মতো শক্তিশালী ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি সংযুক্ত নৌযান।
সাইড ট্রলার এ ধরনের নৌযানে পাশ দিয়ে ছাঁকিজাল ফেলা ও টানা হয়।
স্টার্ন ট্রলার সব আধুনিক ট্রলারই এই শ্রেণীর। এগুলিতে হালের দিক দিয়ে ছাঁকিজাল ফেলা ও টানা হয়।
বিম ট্রলার এ ধরনের ট্রলারে একটি কেন্দ্রীয় মাস্ত্তল থেকে দুদিকে বাড়ানো বিমে দুপাশে ছাঁকিজাল বাঁধা থাকে।
ওয়েট-ফিস ট্রলার মাছ ধরা ও মজুতের বিশেষ পদ্ধতিই এই ট্রলারের বৈশিষ্ট্য।
ফ্রিজার ট্রলার হিমায়নের সুবিধাযুক্ত ট্রলার। এতে এক বা একাধিক সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে মাছ ধরে তা হিমকক্ষে জমা রাখা যায়।
বাংলাদেশে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারগুলির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত। ১৯৯২ সাল থেকেই কর্পোরেশন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। সংস্থার নৌবহরে ১৫টি মাঝারি আকারের ট্রলার আছে। অন্যান্য সমুদ্রগামী নৌযান হলো নানা আকারের নৌকা এবং অধিকাংশই কাঠের তৈরি। জেলেদের ব্যবহূত সাজসরঞ্জাম হলো নানা আয়তনের বেড়জাল ও থলেজাল। [এম.এস শাহ]
আরও দেখুন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন।