মেয়ো, লর্ড: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''মেয়ো, লর্ড''' (১৮২২-১৮৭২) ১৮৬৯ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল। তিনি মেয়ো-র পঞ্চম আর্ল-এর পুত্র। জন্ম ১৮২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তাঁর নাম রাখা হয় রির্চাড সাউথওয়েল বুর্ক। ডাবলিন-এর ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ডিজর্যালি কর্তৃক লর্ড লরেন্স-এর উত্তরসূরি হিসেবে ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি আয়ারল্যান্ড বিষয়ক দপ্তরের মুখ্যসচিব (chief secretary) ছিলেন। | '''মেয়ো, লর্ড''' (১৮২২-১৮৭২) ১৮৬৯ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল। তিনি মেয়ো-র পঞ্চম আর্ল-এর পুত্র। জন্ম ১৮২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তাঁর নাম রাখা হয় রির্চাড সাউথওয়েল বুর্ক। ডাবলিন-এর ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ডিজর্যালি কর্তৃক লর্ড লরেন্স-এর উত্তরসূরি হিসেবে ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি আয়ারল্যান্ড বিষয়ক দপ্তরের মুখ্যসচিব (chief secretary) ছিলেন। | ||
[[Image:MayoLord.jpg|thumb|right|400px|লর্ড মেয়ো]] | |||
পিতার উত্তরাধিকারী ষষ্ঠ আর্ল ভারতে আসেন লর্ড মেয়ো হিসেবে এবং তাঁর অব্যবহিত পূর্বসূরিদের অনুসৃত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অব্যাহত রাখেন। কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি আফগানিস্তানের আমীর শের আলীর সৌহার্দ্য অর্জন করেন। শের আলী ১৮৬৯ সালে ভাইসরয়ের সঙ্গে আম্বালায় সাক্ষাৎ করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানের উত্তর সীমান্তরেখা হিসেবে অক্সাস নদীকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয়। সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার। তিনি লবণ কর ও আয়কর বৃদ্ধি করেছিলেন। তিনি প্রশাসনে ব্যয় সংকোচন ঘটান এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থবরাদ্দ করার ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেন। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়। ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারই সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করত এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট খাত চিহ্নিত করে আবেদন করতে হতো। কেন্দ্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থই শুধু তারা খরচ করতে পারত। | পিতার উত্তরাধিকারী ষষ্ঠ আর্ল ভারতে আসেন লর্ড মেয়ো হিসেবে এবং তাঁর অব্যবহিত পূর্বসূরিদের অনুসৃত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অব্যাহত রাখেন। কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি আফগানিস্তানের আমীর শের আলীর সৌহার্দ্য অর্জন করেন। শের আলী ১৮৬৯ সালে ভাইসরয়ের সঙ্গে আম্বালায় সাক্ষাৎ করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানের উত্তর সীমান্তরেখা হিসেবে অক্সাস নদীকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয়। সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার। তিনি লবণ কর ও আয়কর বৃদ্ধি করেছিলেন। তিনি প্রশাসনে ব্যয় সংকোচন ঘটান এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থবরাদ্দ করার ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেন। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়। ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারই সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করত এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট খাত চিহ্নিত করে আবেদন করতে হতো। কেন্দ্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থই শুধু তারা খরচ করতে পারত। | ||
তাঁর শাসনামলেই ভারতবর্ষের প্রথম আদমশুমারি (১৮৭০) শুরু হয়। তিনি দেশে পরিসংখ্যান জরিপের ব্যবস্থা করেন এবং কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগ সৃষ্টি করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মারাত্মক অর্থনৈতিক ঘাটতি, বিশ্বাসের অযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব, অনিষ্পত্তিকৃত হিসাব-নিকাশ এবং অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যানের পরিবর্তে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উদ্বৃত্ত, বিশ্বাসযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব, চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ এবং সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান রেখে যান। দেশীয় রাজন্যবর্গ ও প্রধানদের সন্তান-সন্ততির লেখাপড়ার জন্য তিনি আজমীরে মেয়ো কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আন্দামান সফরে গিয়ে তিনি জনৈক পাঠান কয়েদির ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ পরে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। [কে.এম মোহসীন] | তাঁর শাসনামলেই ভারতবর্ষের প্রথম আদমশুমারি (১৮৭০) শুরু হয়। তিনি দেশে পরিসংখ্যান জরিপের ব্যবস্থা করেন এবং কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগ সৃষ্টি করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মারাত্মক অর্থনৈতিক ঘাটতি, বিশ্বাসের অযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব, অনিষ্পত্তিকৃত হিসাব-নিকাশ এবং অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যানের পরিবর্তে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উদ্বৃত্ত, বিশ্বাসযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব, চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ এবং সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান রেখে যান। দেশীয় রাজন্যবর্গ ও প্রধানদের সন্তান-সন্ততির লেখাপড়ার জন্য তিনি আজমীরে মেয়ো কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আন্দামান সফরে গিয়ে তিনি জনৈক পাঠান কয়েদির ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ পরে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। [কে.এম মোহসীন] |
০৬:২৪, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মেয়ো, লর্ড (১৮২২-১৮৭২) ১৮৬৯ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল। তিনি মেয়ো-র পঞ্চম আর্ল-এর পুত্র। জন্ম ১৮২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তাঁর নাম রাখা হয় রির্চাড সাউথওয়েল বুর্ক। ডাবলিন-এর ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ডিজর্যালি কর্তৃক লর্ড লরেন্স-এর উত্তরসূরি হিসেবে ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি আয়ারল্যান্ড বিষয়ক দপ্তরের মুখ্যসচিব (chief secretary) ছিলেন।
পিতার উত্তরাধিকারী ষষ্ঠ আর্ল ভারতে আসেন লর্ড মেয়ো হিসেবে এবং তাঁর অব্যবহিত পূর্বসূরিদের অনুসৃত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অব্যাহত রাখেন। কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি আফগানিস্তানের আমীর শের আলীর সৌহার্দ্য অর্জন করেন। শের আলী ১৮৬৯ সালে ভাইসরয়ের সঙ্গে আম্বালায় সাক্ষাৎ করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানের উত্তর সীমান্তরেখা হিসেবে অক্সাস নদীকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয়। সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার। তিনি লবণ কর ও আয়কর বৃদ্ধি করেছিলেন। তিনি প্রশাসনে ব্যয় সংকোচন ঘটান এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থবরাদ্দ করার ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেন। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়। ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারই সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করত এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট খাত চিহ্নিত করে আবেদন করতে হতো। কেন্দ্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থই শুধু তারা খরচ করতে পারত।
তাঁর শাসনামলেই ভারতবর্ষের প্রথম আদমশুমারি (১৮৭০) শুরু হয়। তিনি দেশে পরিসংখ্যান জরিপের ব্যবস্থা করেন এবং কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগ সৃষ্টি করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মারাত্মক অর্থনৈতিক ঘাটতি, বিশ্বাসের অযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব, অনিষ্পত্তিকৃত হিসাব-নিকাশ এবং অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যানের পরিবর্তে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উদ্বৃত্ত, বিশ্বাসযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব, চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ এবং সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান রেখে যান। দেশীয় রাজন্যবর্গ ও প্রধানদের সন্তান-সন্ততির লেখাপড়ার জন্য তিনি আজমীরে মেয়ো কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আন্দামান সফরে গিয়ে তিনি জনৈক পাঠান কয়েদির ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ পরে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। [কে.এম মোহসীন]