মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১০ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
তিনি সংস্কৃত পন্ডিত ছিলেন বলে অনেকেই তাঁকে সামাজিক বিষয়ে রক্ষণশীল বলে বিবেচনা করতেন। কিন্তু কোনো কোনো বিষয়ে তিনি ছিলেন পুরোপুরি আধুনিক। যেমন, সতীদাহ প্রথার পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে [[রাজা রামমোহন রায়|রামমোহন রায়]] যেসব শাস্ত্রীয় অনুমোদনের কথা উল্লেখ করেন, সেগুলি আগেই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার লিখেছিলেন। | তিনি সংস্কৃত পন্ডিত ছিলেন বলে অনেকেই তাঁকে সামাজিক বিষয়ে রক্ষণশীল বলে বিবেচনা করতেন। কিন্তু কোনো কোনো বিষয়ে তিনি ছিলেন পুরোপুরি আধুনিক। যেমন, সতীদাহ প্রথার পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে [[রাজা রামমোহন রায়|রামমোহন রায়]] যেসব শাস্ত্রীয় অনুমোদনের কথা উল্লেখ করেন, সেগুলি আগেই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার লিখেছিলেন। | ||
গয়া, বৃন্দাবন ইত্যাদি হিন্দু তীর্থস্থান ভ্রমণ করে ফেরার সময়ে মৃত্যুঞ্জয় ১৮১৯ সালের জুন মাসে মুরশিদাবাদের কাছে মারা যান। | গয়া, বৃন্দাবন ইত্যাদি হিন্দু তীর্থস্থান ভ্রমণ করে ফেরার সময়ে মৃত্যুঞ্জয় ১৮১৯ সালের জুন মাসে মুরশিদাবাদের কাছে মারা যান। | ||
[গোলাম মুরশিদ] | [গোলাম মুরশিদ] | ||
০৫:৩৪, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার (আনু. ১৭৬২-১৮১৯) সংস্কৃত পন্ডিত, ভাষাবিদ, লেখক। তৎকালীন ওড়িষা প্রদেশের মেদিনীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। নাটোর-রাজের দরবারে লেখাপড়া শিখে তিনি সংস্কৃত পন্ডিতে পরিণত হন। তিনি উনিশ শতকের প্রথম ভালো বাংলা গদ্য লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
উইলিয়াম কেরীর সুপারিশে তিনি ১৮০১ সালের ৪ মে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজএর বাংলা বিভাগের হেড-পন্ডিত নিযুক্ত হন। পরে ১৮০৫ সালে আবার কেরীর সুপারিশে তিনি বাংলার সঙ্গে সংস্কৃত বিভাগেরও হেড পন্ডিতের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৮১৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি এ কলেজে কাজ করেন। পরে কাজ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির জজ-পন্ডিত হিসেবে।
তিনি তাঁর অন্য বাঙালি সহকর্মীদের তুলনায় বেশি সংখ্যক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলে লেখক হিসেবে সুনাম অর্জন করেননি, বরং তা অর্জন করেছিলেন তাঁর উন্নত রচনা-রীতির কারণে। অনেকের মতে, তিনি ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আগেকার সবচেয়ে ভালো বাংলা গদ্য লেখক। তাঁর রচনা-রীতি খুব সংস্কৃত-ঘেঁষা হলেও, তিনি বাংলা ভাষার স্বাভাবিক পদক্রম, শব্দাবলীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং অন্বয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে সঠিক এবং সাবলীল বাক্য-কাঠামোর দিক নির্দেশ করেন। সেই গড়ে-ওঠার যুগে তিনি বাংলা গদ্যের এমন একটি পুস্তকী রীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যা মৌখিক বাংলা থেকে অনেক দূরত্ব রচনা করে। পরে তা পরিচিত হয় সাধু রীতি বলে। তাছাড়া, তিনি কেরী এবং তাঁর বাঙালি সহকর্মীদের আররি-ফারসি শব্দ যতদূর সম্ভব বর্জন করে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করতে রাজি করান; যদিও সেকালে বাংলা গদ্যে আরবি-ফারসি শব্দের বহুল ব্যবহার ছিল। এভাবে তিনি শতাব্দীর বাকি সময়ে বাংলা গদ্য কোন্ খাতে প্রবাহিত হবে, তার পথ নির্দেশ করেন।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে থাকার সময়ে তিনি যেসব গ্রন্থ রচনা করেন, সেগুলি: বত্রিশ সিংহাসন (১৮০২), হিতোপদেশ (১৮০৮), রাজাবলী (১৮০৮) এবং প্রবোধচন্দ্রিকা (১৮১৩ সালে লিখিত, কিন্তু ১৮৩৩ সালে প্রকাশিত)। এছাড়া পরে ১৮১৭ সালে তিনি লেখেন বেদান্তচন্দ্রিকা। এসব গদ্য প্রায় সবই অনুবাদমূলক। তা সত্ত্বেও তাঁর রচনা-রীতির কারণে অনেকটা মৌলিক রূপ লাভ করেছে।
তিনি সংস্কৃত পন্ডিত ছিলেন বলে অনেকেই তাঁকে সামাজিক বিষয়ে রক্ষণশীল বলে বিবেচনা করতেন। কিন্তু কোনো কোনো বিষয়ে তিনি ছিলেন পুরোপুরি আধুনিক। যেমন, সতীদাহ প্রথার পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে রামমোহন রায় যেসব শাস্ত্রীয় অনুমোদনের কথা উল্লেখ করেন, সেগুলি আগেই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার লিখেছিলেন।
গয়া, বৃন্দাবন ইত্যাদি হিন্দু তীর্থস্থান ভ্রমণ করে ফেরার সময়ে মৃত্যুঞ্জয় ১৮১৯ সালের জুন মাসে মুরশিদাবাদের কাছে মারা যান। [গোলাম মুরশিদ]