মাশরুম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''মাশরুম''' সাধারণভাবে ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত | '''মাশরুম''' সাধারণভাবে ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত Agaricaceae ছত্রাকের মাংসল কোমল ও ভঙ্গুর বীজাধার (fruit body)। মাশরুমের প্রকৃত দেহ mycellium নামের আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম সুতার মতো একটি কাঠামো, যা কোন ভিতবস্ত্তর উপর বা মাটির নিচে জন্মায়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় অনেকগুলি mycellium একত্রে একটি নিরেট কাঠামো গড়ে তোলে এবং মাটির উপরিভাগে উঠে ছাতার আকৃতি ধারণ করে। | ||
[[Image:Mushroom1.jpg|thumb|right|মাশরুম]] | [[Image:Mushroom1.jpg|thumb|right|মাশরুম]] | ||
[[Image:Mushroom2.jpg|thumb|right|মাশরুম]] | [[Image:Mushroom2.jpg|thumb|right|মাশরুম]] | ||
অধিকাংশ ব্যাঙের ছাতা Basidiomycetes শ্রেণীর অন্তর্গত, যাদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছাতা আকৃতির কাঠামোর নিচে স্পোর-রেণুধর ফুলকার (gill) অবস্থান। বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতাকে টোড স্টুল (toadstool) বলে। কোন কোন প্রজাতি কচি অবস্থায় খাদ্যযোগ্য থাকলেও পরিণত বয়সে বা পচতে শুরু করলে বিষাক্ত বা খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সাধারণ খাবার উপযোগী মাশরুম Agaricus ও Pleurotis গণের প্রজাতি। সচরাচর দৃষ্ট বিষাক্ত প্রজাতি Lepiota ও Amanita গণভুক্ত। ভক্ষ্য ব্যাঙের ছাতা সুখাদ্য, আমিষ ও নিরামিষের মাঝামাঝি; এতে থাকে প্রোটিন, শর্করা, মূল্যবান লবণ ও নানা ভিটামিন। এসব উপাদান থাকায় ও কম ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় ব্যাঙের ছাতা হূদরোগীদের চমৎকার পথ্য। বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রায় ২০ প্রজাতির ব্যাঙের ছাতার মধ্যে ৫-৬টি বিষাক্ত। বনজ কিছু ব্যাঙের ছাতা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা খায়। অতি সম্প্রতি কয়েকটি ছোট খামারে মাশরুমের চাষ চলছে। | |||
মাশরুম চাষ প্রাচীন গ্রিক, রোম ও ভারতীয় সাহিত্যে ব্যাঙের ছাতা রাজন্যবর্গের একটি লোভনীয় খাদ্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বিশ শতকের শুরুতে ইউরোপেই প্রথম মাশরুমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু, আর বাংলাদেশে হয়েছে অতি সম্প্রতি। বিগত শতকে আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উদ্যোগে মাশরুমের চাষ শুরু হয়, এরপর সাভারে ‘মাশরুম চাষ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। চাষের জন্য অনুমোদিত প্রজাতিগুলি White button mushroom (Agaricus bisporus) এবং Oyster mushroom/Wood fungus (Pleurotis sajor-caju, P. flabellatus, P. ostreatus) বাংলাদেশে অয়েস্টার জাত সহজলভ্য ও অধিক জনপ্রিয়। চাষের প্রধান উপকরণ ধানের খড়, তুষ, করাতের গুঁড়া, তুলার বর্জ্য ও অন্যান্য কৃষিজ উপজাতের মিশ্রণ। পাকাঘর বা কুঁড়েঘরে পলিথিনে চাষ করা যায়। পুরো প্রস্ত্ততিতে লাগে ৩৫দিন। বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। সারাবছর জুড়ে চাষ করা যায়, তবে অয়েস্টার জাত কেবল শীতকালে চাষযোগ্য। | মাশরুম চাষ প্রাচীন গ্রিক, রোম ও ভারতীয় সাহিত্যে ব্যাঙের ছাতা রাজন্যবর্গের একটি লোভনীয় খাদ্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বিশ শতকের শুরুতে ইউরোপেই প্রথম মাশরুমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু, আর বাংলাদেশে হয়েছে অতি সম্প্রতি। বিগত শতকে আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উদ্যোগে মাশরুমের চাষ শুরু হয়, এরপর সাভারে ‘মাশরুম চাষ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। চাষের জন্য অনুমোদিত প্রজাতিগুলি White button mushroom (Agaricus bisporus) এবং Oyster mushroom/Wood fungus (Pleurotis sajor-caju, P. flabellatus, P. ostreatus) বাংলাদেশে অয়েস্টার জাত সহজলভ্য ও অধিক জনপ্রিয়। চাষের প্রধান উপকরণ ধানের খড়, তুষ, করাতের গুঁড়া, তুলার বর্জ্য ও অন্যান্য কৃষিজ উপজাতের মিশ্রণ। পাকাঘর বা কুঁড়েঘরে পলিথিনে চাষ করা যায়। পুরো প্রস্ত্ততিতে লাগে ৩৫দিন। বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। সারাবছর জুড়ে চাষ করা যায়, তবে অয়েস্টার জাত কেবল শীতকালে চাষযোগ্য। | ||
১৪ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
নির্ভুল প্রজাতি চাষের জন্য রেণুবীজ (spore) অত্যাবশ্যক। তাপমাত্রা গোড়ার দিকে ২০°-২৫°সে ও ছাতা ওঠার সময় ১০°-১৮°সে হলে ভালো হয়। ছাতাটি ছড়ানোর আগে আগেই ফসল তোলা যায়। একটি চাষ থেকে অবিরাম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। চাষকৃত ক্ষেত কিছুটা পুনরাবর্তন করা চলে। ব্যাঙের ছাতা তাজা রান্না করা কিংবা শুকিয়ে সংরক্ষিত রাখা যায়। | নির্ভুল প্রজাতি চাষের জন্য রেণুবীজ (spore) অত্যাবশ্যক। তাপমাত্রা গোড়ার দিকে ২০°-২৫°সে ও ছাতা ওঠার সময় ১০°-১৮°সে হলে ভালো হয়। ছাতাটি ছড়ানোর আগে আগেই ফসল তোলা যায়। একটি চাষ থেকে অবিরাম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। চাষকৃত ক্ষেত কিছুটা পুনরাবর্তন করা চলে। ব্যাঙের ছাতা তাজা রান্না করা কিংবা শুকিয়ে সংরক্ষিত রাখা যায়। | ||
ধানের খড়ে চাষ করা মাশরুম (Volvariella diplasia, V. ualvacea, V. esculanta) গ্রীষ্মকালীন প্রজাতি। চাষপদ্ধতি অয়েস্টার প্রজাতির মতোই, তবে তাপমাত্রার চাহিদা ভিন্নতর; শুরুতে ৩৫°-৪০°সে, ছাতা গঠনের সময় ৩০°-৩৫°সে। | ধানের খড়ে চাষ করা মাশরুম (Volvariella diplasia, V. ualvacea, V. esculanta) গ্রীষ্মকালীন প্রজাতি। চাষপদ্ধতি অয়েস্টার প্রজাতির মতোই, তবে তাপমাত্রার চাহিদা ভিন্নতর; শুরুতে ৩৫°-৪০°সে, ছাতা গঠনের সময় ৩০°-৩৫°সে। [মোস্তফা কামাল পাশা] | ||
[মোস্তফা কামাল পাশা] | |||
[[en:Mushroom]] | [[en:Mushroom]] |
০৫:২৩, ৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মাশরুম সাধারণভাবে ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত Agaricaceae ছত্রাকের মাংসল কোমল ও ভঙ্গুর বীজাধার (fruit body)। মাশরুমের প্রকৃত দেহ mycellium নামের আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম সুতার মতো একটি কাঠামো, যা কোন ভিতবস্ত্তর উপর বা মাটির নিচে জন্মায়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় অনেকগুলি mycellium একত্রে একটি নিরেট কাঠামো গড়ে তোলে এবং মাটির উপরিভাগে উঠে ছাতার আকৃতি ধারণ করে।
অধিকাংশ ব্যাঙের ছাতা Basidiomycetes শ্রেণীর অন্তর্গত, যাদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছাতা আকৃতির কাঠামোর নিচে স্পোর-রেণুধর ফুলকার (gill) অবস্থান। বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতাকে টোড স্টুল (toadstool) বলে। কোন কোন প্রজাতি কচি অবস্থায় খাদ্যযোগ্য থাকলেও পরিণত বয়সে বা পচতে শুরু করলে বিষাক্ত বা খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সাধারণ খাবার উপযোগী মাশরুম Agaricus ও Pleurotis গণের প্রজাতি। সচরাচর দৃষ্ট বিষাক্ত প্রজাতি Lepiota ও Amanita গণভুক্ত। ভক্ষ্য ব্যাঙের ছাতা সুখাদ্য, আমিষ ও নিরামিষের মাঝামাঝি; এতে থাকে প্রোটিন, শর্করা, মূল্যবান লবণ ও নানা ভিটামিন। এসব উপাদান থাকায় ও কম ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় ব্যাঙের ছাতা হূদরোগীদের চমৎকার পথ্য। বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রায় ২০ প্রজাতির ব্যাঙের ছাতার মধ্যে ৫-৬টি বিষাক্ত। বনজ কিছু ব্যাঙের ছাতা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা খায়। অতি সম্প্রতি কয়েকটি ছোট খামারে মাশরুমের চাষ চলছে।
মাশরুম চাষ প্রাচীন গ্রিক, রোম ও ভারতীয় সাহিত্যে ব্যাঙের ছাতা রাজন্যবর্গের একটি লোভনীয় খাদ্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বিশ শতকের শুরুতে ইউরোপেই প্রথম মাশরুমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু, আর বাংলাদেশে হয়েছে অতি সম্প্রতি। বিগত শতকে আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উদ্যোগে মাশরুমের চাষ শুরু হয়, এরপর সাভারে ‘মাশরুম চাষ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। চাষের জন্য অনুমোদিত প্রজাতিগুলি White button mushroom (Agaricus bisporus) এবং Oyster mushroom/Wood fungus (Pleurotis sajor-caju, P. flabellatus, P. ostreatus) বাংলাদেশে অয়েস্টার জাত সহজলভ্য ও অধিক জনপ্রিয়। চাষের প্রধান উপকরণ ধানের খড়, তুষ, করাতের গুঁড়া, তুলার বর্জ্য ও অন্যান্য কৃষিজ উপজাতের মিশ্রণ। পাকাঘর বা কুঁড়েঘরে পলিথিনে চাষ করা যায়। পুরো প্রস্ত্ততিতে লাগে ৩৫দিন। বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। সারাবছর জুড়ে চাষ করা যায়, তবে অয়েস্টার জাত কেবল শীতকালে চাষযোগ্য।
নির্ভুল প্রজাতি চাষের জন্য রেণুবীজ (spore) অত্যাবশ্যক। তাপমাত্রা গোড়ার দিকে ২০°-২৫°সে ও ছাতা ওঠার সময় ১০°-১৮°সে হলে ভালো হয়। ছাতাটি ছড়ানোর আগে আগেই ফসল তোলা যায়। একটি চাষ থেকে অবিরাম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। চাষকৃত ক্ষেত কিছুটা পুনরাবর্তন করা চলে। ব্যাঙের ছাতা তাজা রান্না করা কিংবা শুকিয়ে সংরক্ষিত রাখা যায়।
ধানের খড়ে চাষ করা মাশরুম (Volvariella diplasia, V. ualvacea, V. esculanta) গ্রীষ্মকালীন প্রজাতি। চাষপদ্ধতি অয়েস্টার প্রজাতির মতোই, তবে তাপমাত্রার চাহিদা ভিন্নতর; শুরুতে ৩৫°-৪০°সে, ছাতা গঠনের সময় ৩০°-৩৫°সে। [মোস্তফা কামাল পাশা]