মান্নান, জি.এ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''মান্নান, জি.এ '''(১৯৩০-১৯৯০) নৃত্যশিল্পী। | '''মান্নান, জি.এ '''(১৯৩০-১৯৯০) নৃত্যশিল্পী। বাংলাদেশের নৃত্য জগতে বুলবুল চৌধুরীর পরেই জি.এ মান্নানের স্থান। তাঁর প্রকৃত নাম গাজী আলিমুদ্দিন মান্নান; কুমিল্লায় তাঁর জন্ম। কুমিল্লার অপর কৃতী সন্তান বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক শান্তিবর্ধনের আহবানে তিনি মুম্বাই যান এবং সেখানে দীর্ঘদিন তাঁর সান্নিধ্যে প্রশিক্ষিত হয়ে নৃত্যকলায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। মুম্বাই থাকাকালে তিনি ‘মনীষকুমার’ নামে পরিচিত ছিলেন। শান্তিবর্ধনের লিটল ব্যালে গ্রুপের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি ভারতীয় জাতীয় সাংস্কৃতিক দলের হয়ে বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেন। যদিও উচ্চাঙ্গনৃত্যে, বিশেষত মণিপুরী নৃত্যে জি.এ মান্নানের পারদর্শিতা ছিল, কিন্তু তিনি আত্মনিয়োগ করেন [[লোকনৃত্য|লোকনৃত্য]] চর্চায়। পঞ্চাশের দশকের শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি ছদ্মনাম পরিত্যাগ করে স্বনামে আত্মপ্রকাশ করেন। সে সময়ে তিনি শুধু একজন পারফর্মারই নন, একজন কোরিওগ্রাফার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। | ||
[[Image:MannanGA.jpg|thumb|right|400px|জি.এ মান্নান]] | |||
জি.এ মান্নান লোকনৃত্যের সঙ্গে উচ্চাঙ্গনৃত্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নৃত্যনাট্যে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে তিনি কতগুলি খন্ডনৃত্য রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে ময়ূর, বসন্ত, জেলে, ধানকাটা, সাঁওতাল, চা-বাগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জি.এ মান্নান তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় দেন এবং একজন সৃষ্টিশীল নৃত্য পরিচালক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর সহযোগিতায় তিনি নবীন শিল্পীদের নিয়ে জসীমউদ্দীনের অমর কাব্য নকসীকাঁথার মাঠ অবলম্বনে একটি ব্যালে নির্মাণ করেন। এতে নৃত্যক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছিল। অনন্যসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে নৃত্যটি আজও ইতিহাস হয়ে আছে। পরবর্তীকালে তিনি রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণ গল্পেরও নৃত্যরূপ দেন। | জি.এ মান্নান লোকনৃত্যের সঙ্গে উচ্চাঙ্গনৃত্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নৃত্যনাট্যে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে তিনি কতগুলি খন্ডনৃত্য রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে ময়ূর, বসন্ত, জেলে, ধানকাটা, সাঁওতাল, চা-বাগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জি.এ মান্নান তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় দেন এবং একজন সৃষ্টিশীল নৃত্য পরিচালক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর সহযোগিতায় তিনি নবীন শিল্পীদের নিয়ে জসীমউদ্দীনের অমর কাব্য নকসীকাঁথার মাঠ অবলম্বনে একটি ব্যালে নির্মাণ করেন। এতে নৃত্যক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছিল। অনন্যসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে নৃত্যটি আজও ইতিহাস হয়ে আছে। পরবর্তীকালে তিনি রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণ গল্পেরও নৃত্যরূপ দেন। | ||
জি.এ মান্নানের খ্যাতি যখন সর্বত্র বিস্তৃত, তখন তিনি [[বুলবুল ললিতকলা একাডেমী|বুলবুল ললিতকলা একাডেমী]] ছেড়ে নিজে ‘নিক্বণ ললিতকলা একাডেমী’ নামে একটি নৃত্যপ্রতিষ্ঠান গঠন করেন। এখান থেকে আবহমান বাংলার অন্যতম লোকগাথাভিত্তিক মহুয়া, সমসাময়িক কাহিনীভিত্তিক কাশ্মীর, অধিক খাদ্য ফলাও ইত্যাদি নৃত্যনাট্য তৈরি করেন। পরে তিনি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পি.আই.এ)-এর পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে নৃত্য পরিচালক পদে যোগ দেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে তিনি বাংলাদেশ পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে এবং তারপর শিল্পকলা একাডেমীতে নৃত্য পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালের ১ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়। [আমানুল হক] | জি.এ মান্নানের খ্যাতি যখন সর্বত্র বিস্তৃত, তখন তিনি [[বুলবুল ললিতকলা একাডেমী|বুলবুল ললিতকলা একাডেমী]] ছেড়ে নিজে ‘নিক্বণ ললিতকলা একাডেমী’ নামে একটি নৃত্যপ্রতিষ্ঠান গঠন করেন। এখান থেকে আবহমান বাংলার অন্যতম লোকগাথাভিত্তিক মহুয়া, সমসাময়িক কাহিনীভিত্তিক কাশ্মীর, অধিক খাদ্য ফলাও ইত্যাদি নৃত্যনাট্য তৈরি করেন। পরে তিনি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পি.আই.এ)-এর পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে নৃত্য পরিচালক পদে যোগ দেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে তিনি বাংলাদেশ পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে এবং তারপর শিল্পকলা একাডেমীতে নৃত্য পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালের ১ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়। [আমানুল হক] |
০৪:৩৮, ৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মান্নান, জি.এ (১৯৩০-১৯৯০) নৃত্যশিল্পী। বাংলাদেশের নৃত্য জগতে বুলবুল চৌধুরীর পরেই জি.এ মান্নানের স্থান। তাঁর প্রকৃত নাম গাজী আলিমুদ্দিন মান্নান; কুমিল্লায় তাঁর জন্ম। কুমিল্লার অপর কৃতী সন্তান বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক শান্তিবর্ধনের আহবানে তিনি মুম্বাই যান এবং সেখানে দীর্ঘদিন তাঁর সান্নিধ্যে প্রশিক্ষিত হয়ে নৃত্যকলায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। মুম্বাই থাকাকালে তিনি ‘মনীষকুমার’ নামে পরিচিত ছিলেন। শান্তিবর্ধনের লিটল ব্যালে গ্রুপের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি ভারতীয় জাতীয় সাংস্কৃতিক দলের হয়ে বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেন। যদিও উচ্চাঙ্গনৃত্যে, বিশেষত মণিপুরী নৃত্যে জি.এ মান্নানের পারদর্শিতা ছিল, কিন্তু তিনি আত্মনিয়োগ করেন লোকনৃত্য চর্চায়। পঞ্চাশের দশকের শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি ছদ্মনাম পরিত্যাগ করে স্বনামে আত্মপ্রকাশ করেন। সে সময়ে তিনি শুধু একজন পারফর্মারই নন, একজন কোরিওগ্রাফার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
জি.এ মান্নান লোকনৃত্যের সঙ্গে উচ্চাঙ্গনৃত্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নৃত্যনাট্যে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে তিনি কতগুলি খন্ডনৃত্য রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে ময়ূর, বসন্ত, জেলে, ধানকাটা, সাঁওতাল, চা-বাগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জি.এ মান্নান তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় দেন এবং একজন সৃষ্টিশীল নৃত্য পরিচালক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর সহযোগিতায় তিনি নবীন শিল্পীদের নিয়ে জসীমউদ্দীনের অমর কাব্য নকসীকাঁথার মাঠ অবলম্বনে একটি ব্যালে নির্মাণ করেন। এতে নৃত্যক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছিল। অনন্যসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে নৃত্যটি আজও ইতিহাস হয়ে আছে। পরবর্তীকালে তিনি রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণ গল্পেরও নৃত্যরূপ দেন।
জি.এ মান্নানের খ্যাতি যখন সর্বত্র বিস্তৃত, তখন তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ছেড়ে নিজে ‘নিক্বণ ললিতকলা একাডেমী’ নামে একটি নৃত্যপ্রতিষ্ঠান গঠন করেন। এখান থেকে আবহমান বাংলার অন্যতম লোকগাথাভিত্তিক মহুয়া, সমসাময়িক কাহিনীভিত্তিক কাশ্মীর, অধিক খাদ্য ফলাও ইত্যাদি নৃত্যনাট্য তৈরি করেন। পরে তিনি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পি.আই.এ)-এর পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে নৃত্য পরিচালক পদে যোগ দেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে তিনি বাংলাদেশ পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে এবং তারপর শিল্পকলা একাডেমীতে নৃত্য পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালের ১ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়। [আমানুল হক]