ময়ূর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ময়ূর'''  Phasianidae গোত্রের বড়, চমৎকার ও আকর্ষণীয় রঙের কয়েক প্রজাতির পাখি। এ উপমহাদেশের নীল ময়ূর বা Indian Peafowl নামে পরিচিত ''Pavo cristatus'' সহজেই মানুষের সাহচর্যে বাস করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দেশের স্থানীয় পাখি হলেও এ ময়ূর ইউরোপের সব পার্কেই দেখা যায়। সবুজ ময়ূর, P. muticus দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অন্যতম বিপন্ন এক পাখি। ১৯৩৬ সালে জে. পি চ্যাপিন মধ্য আফ্রিকার জায়ারের নিরক্ষীয় মৌসুমি বনাঞ্চল থেকে প্রথম কঙ্গোময়ূর (Congo Peafowl) বর্ণনা করেন। ময়ূরজাতীয় সব পাখির নিবাস এশিয়ায় হলেও এ ময়ূর কিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকায় বসবাস শুরু করেছে তা এখনও রহস্যময়।
'''ময়ূর'''  Phasianidae গোত্রের বড়, চমৎকার ও আকর্ষণীয় রঙের কয়েক প্রজাতির পাখি। এ উপমহাদেশের নীল ময়ূর বা Indian Peafowl নামে পরিচিত ''Pavo cristatus'' সহজেই মানুষের সাহচর্যে বাস করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দেশের স্থানীয় পাখি হলেও এ ময়ূর ইউরোপের সব পার্কেই দেখা যায়। সবুজ ময়ূর, P. muticus দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অন্যতম বিপন্ন এক পাখি। ১৯৩৬ সালে জে. পি চ্যাপিন মধ্য আফ্রিকার জায়ারের নিরক্ষীয় মৌসুমি বনাঞ্চল থেকে প্রথম কঙ্গোময়ূর (Congo Peafowl) বর্ণনা করেন। ময়ূরজাতীয় সব পাখির নিবাস এশিয়ায় হলেও এ ময়ূর কিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকায় বসবাস শুরু করেছে তা এখনও রহস্যময়।
ইংরেজিতে পুরুষ ময়ূরকে Peacock এবং স্ত্রী ময়ূরকে Peahen বলা হলেও উভয়েই সাধারণভাবে Peafowl নামে পরিচিত। পুরুষ ময়ূরের মাথায় থাকে একটি মুকুট, মাথার দুপাশ সাদাটে, পালকবিহীন। ময়ূরের পালক অসাধারণ উজ্জ্বল, ধাতব আভাযুক্ত সবুজ ও নীল রঙের। লেজের উপরিভাগের পালকগুলি অতিশয় লম্বা; পেখম মেললে এর দের্ঘ্য হয় এক মিটারের বেশি। তামাটে-সবুজ ও নীল রঙের সংমিশ্রণে সজ্জিত চওড়া পালকে অলঙ্কৃত থাকে রঙিন চোখের মতো বড় বড় ফোটা দাগ। স্ত্রী ও পুরুষের প্রণয় লীলার সময় মেলানো পেখমের আন্দোলন অতি বৈশিষ্ট্যময়।


[[Image:Peacock2.jpg|thumb|right|ময়ূর স্ত্রী]]
[[Image:Peacock2.jpg|thumb|right|ময়ূর স্ত্রী]]
[[Image:PeacockFemale.jpg|thumb|right|ময়ূর পুরুষ]]
[[Image:PeacockFemale.jpg|thumb|right|ময়ূর পুরুষ]]
ইংরেজিতে পুরুষ ময়ূরকে Peacock এবং স্ত্রী ময়ূরকে Peahen বলা হলেও উভয়েই সাধারণভাবে Peafowl নামে পরিচিত। পুরুষ ময়ূরের মাথায় থাকে একটি মুকুট, মাথার দুপাশ সাদাটে, পালকবিহীন। ময়ূরের পালক অসাধারণ উজ্জ্বল, ধাতব আভাযুক্ত সবুজ ও নীল রঙের। লেজের উপরিভাগের পালকগুলি অতিশয় লম্বা; পেখম মেললে এর দের্ঘ্য হয় এক মিটারের বেশি। তামাটে-সবুজ ও নীল রঙের সংমিশ্রণে সজ্জিত চওড়া পালকে অলঙ্কৃত থাকে রঙিন চোখের মতো বড় বড় ফোটা দাগ। স্ত্রী ও পুরুষের প্রণয় লীলার সময় মেলানো পেখমের আন্দোলন অতি বৈশিষ্ট্যময়।


খাঁচায় বদ্ধ ময়ূর এমনিতেও অনেক সময় পেখম মেলে, সম্ভবত তা মানুষজনকে দেখাবার জন্য। লেজের পালকসহ পুরুষ ময়ূরের  দৈর্ঘ্য হতে পারে ২-২.২৫ মিটার, স্ত্রী পাখি লম্বায় হয় প্রায় ৮৬ সেমি। স্ত্রী ময়ূরেরও মাথায় মুকুট থাকে, তবে পেখম মেলার মতো লেজে উজ্জ্বল লম্বা পালক নেই। এদের মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি, দেহের উপরের অংশ বাদামি। ঘাড়ের নিচের অংশ নীল রঙের নয়, উজ্জ্বল সবুজ। পেট সাদা, কিছুটা হলুদ আভাযুক্ত। অপরিণত বয়সের পুরুষ দেখতে অনেকটা পরিণত বয়সের স্ত্রী ময়ূরের মতো, তবে পালক বহুলাংশে লালচে-ধূসর। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ ময়ূর বিশেষ ধরনের কর্কশ সুরে ডাকে। পুরুষ ময়ূর বহুগামী, প্রতিটি পুরুষ চার-পাঁচটি স্ত্রী পাখি একসঙ্গে নিজের অধিকারে রাখতে চায়। সাধারণত জানুয়ারি-এপ্রিল এদের প্রজনন কাল, তবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরেও এদের প্রজনন ঘটে। স্ত্রী ময়ূর সাধারণত ফোটা দাগবিশিষ্ট ৪-৬টি ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর পূর্বেও গাজীপুর এলাকার বনে ময়ূর বাস করতো বলে জানা যায়। আশঙ্কা করা হয় এখন এ দেশ থেকে ময়ূর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
খাঁচায় বদ্ধ ময়ূর এমনিতেও অনেক সময় পেখম মেলে, সম্ভবত তা মানুষজনকে দেখাবার জন্য। লেজের পালকসহ পুরুষ ময়ূরের  দৈর্ঘ্য হতে পারে ২-২.২৫ মিটার, স্ত্রী পাখি লম্বায় হয় প্রায় ৮৬ সেমি। স্ত্রী ময়ূরেরও মাথায় মুকুট থাকে, তবে পেখম মেলার মতো লেজে উজ্জ্বল লম্বা পালক নেই। এদের মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি, দেহের উপরের অংশ বাদামি। ঘাড়ের নিচের অংশ নীল রঙের নয়, উজ্জ্বল সবুজ। পেট সাদা, কিছুটা হলুদ আভাযুক্ত। অপরিণত বয়সের পুরুষ দেখতে অনেকটা পরিণত বয়সের স্ত্রী ময়ূরের মতো, তবে পালক বহুলাংশে লালচে-ধূসর। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ ময়ূর বিশেষ ধরনের কর্কশ সুরে ডাকে। পুরুষ ময়ূর বহুগামী, প্রতিটি পুরুষ চার-পাঁচটি স্ত্রী পাখি একসঙ্গে নিজের অধিকারে রাখতে চায়। সাধারণত জানুয়ারি-এপ্রিল এদের প্রজনন কাল, তবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরেও এদের প্রজনন ঘটে। স্ত্রী ময়ূর সাধারণত ফোটা দাগবিশিষ্ট ৪-৬টি ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর পূর্বেও গাজীপুর এলাকার বনে ময়ূর বাস করতো বলে জানা যায়। আশঙ্কা করা হয় এখন এ দেশ থেকে ময়ূর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
১১ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
সাধারণ ময়ূরের আরেক জ্ঞাতি সবুজ ময়ূর, ''P. muticus'' বাস করে সিলেট এলাকার বনে। এর আকার India peafowl-এর মতোই। এদের পুরুষ ময়ূর বহুলাংশে সবুজ রঙের; মাথার মুকুট খাঁড়া, পাখার মতো ছড়ানো নয়। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে কমবেশি একই রকম। এদের স্বভাব-প্রকৃতি ও প্রজনন আচরণ ''P. cristatus''-এর প্রায় অনুরূপ।
সাধারণ ময়ূরের আরেক জ্ঞাতি সবুজ ময়ূর, ''P. muticus'' বাস করে সিলেট এলাকার বনে। এর আকার India peafowl-এর মতোই। এদের পুরুষ ময়ূর বহুলাংশে সবুজ রঙের; মাথার মুকুট খাঁড়া, পাখার মতো ছড়ানো নয়। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে কমবেশি একই রকম। এদের স্বভাব-প্রকৃতি ও প্রজনন আচরণ ''P. cristatus''-এর প্রায় অনুরূপ।


হিন্দু পুরাণ-শাস্ত্রে ময়ূরকে এক পবিত্র পাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৬৩ সালে ময়ূরকে ভারতের জাতীয় পাখি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এক সময় সাজ-সজ্জা ও অলঙ্করণের কাজে প্রচুর পরিমাণ ময়ূরের পালক এ উপমহাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। রোম এবং পরবর্তীতে মধ্যযুগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে মাংসের জন্য ময়ূর প্রতিপালন করা হতো।
হিন্দু পুরাণ-শাস্ত্রে ময়ূরকে এক পবিত্র পাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৬৩ সালে ময়ূরকে ভারতের জাতীয় পাখি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এক সময় সাজ-সজ্জা ও অলঙ্করণের কাজে প্রচুর পরিমাণ ময়ূরের পালক এ উপমহাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। রোম এবং পরবর্তীতে মধ্যযুগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে মাংসের জন্য ময়ূর প্রতিপালন করা হতো। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]
 
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]


[[en:Peafowl]]
[[en:Peafowl]]

০৪:৪৮, ৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ময়ূর  Phasianidae গোত্রের বড়, চমৎকার ও আকর্ষণীয় রঙের কয়েক প্রজাতির পাখি। এ উপমহাদেশের নীল ময়ূর বা Indian Peafowl নামে পরিচিত Pavo cristatus সহজেই মানুষের সাহচর্যে বাস করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দেশের স্থানীয় পাখি হলেও এ ময়ূর ইউরোপের সব পার্কেই দেখা যায়। সবুজ ময়ূর, P. muticus দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অন্যতম বিপন্ন এক পাখি। ১৯৩৬ সালে জে. পি চ্যাপিন মধ্য আফ্রিকার জায়ারের নিরক্ষীয় মৌসুমি বনাঞ্চল থেকে প্রথম কঙ্গোময়ূর (Congo Peafowl) বর্ণনা করেন। ময়ূরজাতীয় সব পাখির নিবাস এশিয়ায় হলেও এ ময়ূর কিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকায় বসবাস শুরু করেছে তা এখনও রহস্যময়।

ময়ূর স্ত্রী
ময়ূর পুরুষ

ইংরেজিতে পুরুষ ময়ূরকে Peacock এবং স্ত্রী ময়ূরকে Peahen বলা হলেও উভয়েই সাধারণভাবে Peafowl নামে পরিচিত। পুরুষ ময়ূরের মাথায় থাকে একটি মুকুট, মাথার দুপাশ সাদাটে, পালকবিহীন। ময়ূরের পালক অসাধারণ উজ্জ্বল, ধাতব আভাযুক্ত সবুজ ও নীল রঙের। লেজের উপরিভাগের পালকগুলি অতিশয় লম্বা; পেখম মেললে এর দের্ঘ্য হয় এক মিটারের বেশি। তামাটে-সবুজ ও নীল রঙের সংমিশ্রণে সজ্জিত চওড়া পালকে অলঙ্কৃত থাকে রঙিন চোখের মতো বড় বড় ফোটা দাগ। স্ত্রী ও পুরুষের প্রণয় লীলার সময় মেলানো পেখমের আন্দোলন অতি বৈশিষ্ট্যময়।

খাঁচায় বদ্ধ ময়ূর এমনিতেও অনেক সময় পেখম মেলে, সম্ভবত তা মানুষজনকে দেখাবার জন্য। লেজের পালকসহ পুরুষ ময়ূরের  দৈর্ঘ্য হতে পারে ২-২.২৫ মিটার, স্ত্রী পাখি লম্বায় হয় প্রায় ৮৬ সেমি। স্ত্রী ময়ূরেরও মাথায় মুকুট থাকে, তবে পেখম মেলার মতো লেজে উজ্জ্বল লম্বা পালক নেই। এদের মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি, দেহের উপরের অংশ বাদামি। ঘাড়ের নিচের অংশ নীল রঙের নয়, উজ্জ্বল সবুজ। পেট সাদা, কিছুটা হলুদ আভাযুক্ত। অপরিণত বয়সের পুরুষ দেখতে অনেকটা পরিণত বয়সের স্ত্রী ময়ূরের মতো, তবে পালক বহুলাংশে লালচে-ধূসর। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ ময়ূর বিশেষ ধরনের কর্কশ সুরে ডাকে। পুরুষ ময়ূর বহুগামী, প্রতিটি পুরুষ চার-পাঁচটি স্ত্রী পাখি একসঙ্গে নিজের অধিকারে রাখতে চায়। সাধারণত জানুয়ারি-এপ্রিল এদের প্রজনন কাল, তবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরেও এদের প্রজনন ঘটে। স্ত্রী ময়ূর সাধারণত ফোটা দাগবিশিষ্ট ৪-৬টি ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর পূর্বেও গাজীপুর এলাকার বনে ময়ূর বাস করতো বলে জানা যায়। আশঙ্কা করা হয় এখন এ দেশ থেকে ময়ূর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সাধারণ ময়ূরের আরেক জ্ঞাতি সবুজ ময়ূর, P. muticus বাস করে সিলেট এলাকার বনে। এর আকার India peafowl-এর মতোই। এদের পুরুষ ময়ূর বহুলাংশে সবুজ রঙের; মাথার মুকুট খাঁড়া, পাখার মতো ছড়ানো নয়। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে কমবেশি একই রকম। এদের স্বভাব-প্রকৃতি ও প্রজনন আচরণ P. cristatus-এর প্রায় অনুরূপ।

হিন্দু পুরাণ-শাস্ত্রে ময়ূরকে এক পবিত্র পাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৬৩ সালে ময়ূরকে ভারতের জাতীয় পাখি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এক সময় সাজ-সজ্জা ও অলঙ্করণের কাজে প্রচুর পরিমাণ ময়ূরের পালক এ উপমহাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। রোম এবং পরবর্তীতে মধ্যযুগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে মাংসের জন্য ময়ূর প্রতিপালন করা হতো। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]