বাস্ত্তসঙ্কটাপন্ন এলাকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''বাস্ত্তসঙ্কটাপন্ন এলাকা '''(Ecologically critical area)  মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত বাস্ত্ততন্ত্র এলাকা। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (BECA), ১৯৯৫ অনুযায়ী কোন এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছার আশঙ্কা দেখা দিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন। পরিবেশের অবনতির কারণে কোন এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে অথবা সংকটাপন্ন হওয়ার সম্মুখীন হয়েছে মনে করলে সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে পারে। উল্লিখিত আইনের উপধারা (১) অথবা পৃথক ঘোষণার মাধ্যমে সরকার বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকায় কোন কোন কর্ম বা ক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাবে না তা নির্দিষ্ট করে দেবে। ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রায় ৪০,০০০ হেক্টর জায়গার সাতটি পৃথক জলাভূমিকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। সেগুলি হলো হাকালুকি হাওর, সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ উপদ্বীপ (কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত)। অবশ্য এসব এলাকা সংলগ্ন বাফার অঞ্চলকে (buffer zone) উক্ত ঘোষণার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর, ঝিনাইদহ জেলার মারজাত বাঁওড় এবং সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরের ১০ কিলোমিটার অবধি অঞ্চল সংকটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল। বাংলাদেশের অনেক এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র নিখুঁত বিচারে ‘আশঙ্কাজনক’ বিবেচ্য হলেও সরকারের পক্ষে এত অধিক সংখ্যক এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা এবং সেগুলির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার এলাকা শনাক্তির জন্য পূর্বোক্ত ‘জরুরি নিরিখ’ ছাড়াও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলিও বিবেচিত হয়েছে। ফলে দুটি অতিরিক্ত সঙ্কটাপন্ন অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর এবং ছোট কিন্তু জীববিদ্যাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মারজাত বাওড়। বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকাগুলিতে রয়েছে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির মিশ্রণ এবং উভয়ের জন্য প্রযোজ্য অভিন্ন নিষেধাজ্ঞা।
'''বাস্ত্তসঙ্কটাপন্ন এলাকা''' (Ecologically critical area)  মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত বাস্ত্ততন্ত্র এলাকা। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (BECA), ১৯৯৫ অনুযায়ী কোন এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছার আশঙ্কা দেখা দিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন। পরিবেশের অবনতির কারণে কোন এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে অথবা সংকটাপন্ন হওয়ার সম্মুখীন হয়েছে মনে করলে সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে পারে। উল্লিখিত আইনের উপধারা (১) অথবা পৃথক ঘোষণার মাধ্যমে সরকার বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকায় কোন কোন কর্ম বা ক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাবে না তা নির্দিষ্ট করে দেবে। ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রায় ৪০,০০০ হেক্টর জায়গার সাতটি পৃথক জলাভূমিকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। সেগুলি হলো হাকালুকি হাওর, সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ উপদ্বীপ (কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত)। অবশ্য এসব এলাকা সংলগ্ন বাফার অঞ্চলকে (buffer zone) উক্ত ঘোষণার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর, ঝিনাইদহ জেলার মারজাত বাঁওড় এবং সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরের ১০ কিলোমিটার অবধি অঞ্চল সংকটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল। বাংলাদেশের অনেক এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র নিখুঁত বিচারে ‘আশঙ্কাজনক’ বিবেচ্য হলেও সরকারের পক্ষে এত অধিক সংখ্যক এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা এবং সেগুলির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার এলাকা শনাক্তির জন্য পূর্বোক্ত ‘জরুরি নিরিখ’ ছাড়াও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলিও বিবেচিত হয়েছে। ফলে দুটি অতিরিক্ত সঙ্কটাপন্ন অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর এবং ছোট কিন্তু জীববিদ্যাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মারজাত বাওড়। বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকাগুলিতে রয়েছে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির মিশ্রণ এবং উভয়ের জন্য প্রযোজ্য অভিন্ন নিষেধাজ্ঞা।


'''কক্সবাজার বাস্ত্তসংস্থানিক সঙ্কটাপন্ন এলাকা'''  বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে মায়ানমার সীমান্তে কক্সবাজার এলাকা। এখানকার তিনটি এলাকা ১. পশ্চিম অংশে টেকনাফ উপদ্বীপের উপকূলীয় অঞ্চল (১০,৪৬৫ হেক্টর) দীর্ঘ সরু বনাচ্ছাদিত উপদ্বীপ যা বঙ্গোপসাগরকে নাফ নদীর মোহনা ও প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে পৃথক করছে; ২. সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ (৫৯০ হেক্টর) টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পলিগঠিত মহাদেশীয় দ্বীপ; এবং ৩. সোনাদিয়া দ্বীপ (৪,৯২৪ হেক্টর) টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত প্রতিবন্ধক (barrier) দ্বীপ। প্রায় ১৬,০০০ হেক্টর বিস্তৃত এই দ্বীপগুলি ও উপকূলীয় আবাসভূমি উক্ত এলাকার ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চল’। টেকনাফ উপদ্বীপের অবক্ষয়িত কিন্তু এখনও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ উচ্চভূমির বনাঞ্চলের অতিরিক্ত ৩০,০০০ হেক্টর ‘বাফার এলাকা’ হিসেবে বিবেচ্য। গৃহীত প্রকল্পে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলির’ জীববৈচিত্র্যের বিদ্যমান সকল আশঙ্কা মোকাবিলা ও দূরীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃততর ‘বাফার এলাকায়’ বিদ্যমান বিপদগুলিও দূর করা হবে, যাতে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলির’ বাড়তি সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়। কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দারা প্রধানত মাছ ধরা, সামুদ্রিক সামগ্রী এবং অংশত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাস্ত্তসংস্থানিক সংকটাপন্ন এই এলাকার জীববৈচিত্র্য বৈশ্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আট শতাধিক বন্যপ্রাণী প্রজাতি রয়েছে, যাদের অন্তত ২০টির বেশি আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন। জীববৈচিত্র্যের বিবেচনায় নিম্নে উল্লিখিত এলাকাগুলি গুরুত্বপূর্ণ।
'''''কক্সবাজার বাস্ত্তসংস্থানিক সঙ্কটাপন্ন এলাকা'''''  বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে মায়ানমার সীমান্তে কক্সবাজার এলাকা। এখানকার তিনটি এলাকা ১. পশ্চিম অংশে টেকনাফ উপদ্বীপের উপকূলীয় অঞ্চল (১০,৪৬৫ হেক্টর) দীর্ঘ সরু বনাচ্ছাদিত উপদ্বীপ যা বঙ্গোপসাগরকে নাফ নদীর মোহনা ও প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে পৃথক করছে; ২. সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ (৫৯০ হেক্টর) টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পলিগঠিত মহাদেশীয় দ্বীপ; এবং ৩. সোনাদিয়া দ্বীপ (৪,৯২৪ হেক্টর) টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত প্রতিবন্ধক (barrier) দ্বীপ। প্রায় ১৬,০০০ হেক্টর বিস্তৃত এই দ্বীপগুলি ও উপকূলীয় আবাসভূমি উক্ত এলাকার ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চল’। টেকনাফ উপদ্বীপের অবক্ষয়িত কিন্তু এখনও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ উচ্চভূমির বনাঞ্চলের অতিরিক্ত ৩০,০০০ হেক্টর ‘বাফার এলাকা’ হিসেবে বিবেচ্য। গৃহীত প্রকল্পে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলির’ জীববৈচিত্র্যের বিদ্যমান সকল আশঙ্কা মোকাবিলা ও দূরীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃততর ‘বাফার এলাকায়’ বিদ্যমান বিপদগুলিও দূর করা হবে, যাতে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলির’ বাড়তি সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়। কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দারা প্রধানত মাছ ধরা, সামুদ্রিক সামগ্রী এবং অংশত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাস্ত্তসংস্থানিক সংকটাপন্ন এই এলাকার জীববৈচিত্র্য বৈশ্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আট শতাধিক বন্যপ্রাণী প্রজাতি রয়েছে, যাদের অন্তত ২০টির বেশি আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন। জীববৈচিত্র্যের বিবেচনায় নিম্নে উল্লিখিত এলাকাগুলি গুরুত্বপূর্ণ।


'''টেকনাফ উপদ্বীপ'''  টেকনাফ উপদ্বীপ পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় উপকূলের (৮০ কিলোমিটার) একটি। এটি হলো ইন্দো-হিমালয়ান ও ইন্দো-মালয়ী বাস্ত্তসংস্থানিক উপঅঞ্চলের প্রাণিকুলের মিশ্রণক্ষেত্র। আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন চার প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র ও পরিযায়ী পাখিদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণপথের অন্তর্গত বিধায় এটি একটি পাখিবহুল এলাকা। এখানে প্রায় ৮১ প্রজাতির পাখি শনাক্ত করা হয়েছে। এই উপদ্বীপের উপকূলীয় জলাঞ্চলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের বাস।
'''''টেকনাফ উপদ্বীপ'''''  টেকনাফ উপদ্বীপ পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় উপকূলের (৮০ কিলোমিটার) একটি। এটি হলো ইন্দো-হিমালয়ান ও ইন্দো-মালয়ী বাস্ত্তসংস্থানিক উপঅঞ্চলের প্রাণিকুলের মিশ্রণক্ষেত্র। আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন চার প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র ও পরিযায়ী পাখিদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণপথের অন্তর্গত বিধায় এটি একটি পাখিবহুল এলাকা। এখানে প্রায় ৮১ প্রজাতির পাখি শনাক্ত করা হয়েছে। এই উপদ্বীপের উপকূলীয় জলাঞ্চলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের বাস।


'''সেন্ট মার্টিন দ্বীপ'''  সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম বিরল এলাকা যেখানে শিলাপ্রাচীরে সামুদ্রিক প্রবালনির্ভর শেওলার প্রাচুর্য চোখে পড়ে। জীব ও জড় জগতের সমন্বিত পরিবেশের এমন তুলনাহীন স্থান পৃথিবীতে বিরল। এখানে আছে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজাতির প্রজনন ক্ষেত্র এবং তদ্রূপ বিপন্ন পরিযায়ী জলচর পাখিদের যাত্রাভঙ্গের স্থান।
'''''সেন্ট মার্টিন দ্বীপ'''''  সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম বিরল এলাকা যেখানে শিলাপ্রাচীরে সামুদ্রিক প্রবালনির্ভর শেওলার প্রাচুর্য চোখে পড়ে। জীব ও জড় জগতের সমন্বিত পরিবেশের এমন তুলনাহীন স্থান পৃথিবীতে বিরল। এখানে আছে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজাতির প্রজনন ক্ষেত্র এবং তদ্রূপ বিপন্ন পরিযায়ী জলচর পাখিদের যাত্রাভঙ্গের স্থান।


'''সোনাদিয়া দ্বীপ'''  এই দ্বীপে দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের কিছু অবশিষ্ট এখনও টিকে আছে। এককালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল জুড়ে এই ম্যানগ্রোভ বন বিস্তৃত ছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিখ্যাত সুন্দরবনের তুলনায় সোনাদিয়ার ম্যানগ্রোভ বন পৃথক, কেননা বদ্বীপের বদলে এখানকার বন উপকূলীয় উপহ্রদে (lagoon) বেড়ে উঠেছে। এখানকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতিগুলি বেশি লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিধায় সুন্দরবনের তুলনায় এখানে ভিন্ন ধরনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আধিক্য দেখা যায়। এছাড়া এই দ্বীপে রয়েছে বিপুল সংখ্যক জলজ পাখি, ঝিনুক, সামুদ্রিক কচ্ছপ ও কণ্টকত্বকীদের (echinoderms) বসবাসের অনুকূল পরিবেশ।
'''''সোনাদিয়া দ্বীপ'''''  এই দ্বীপে দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের কিছু অবশিষ্ট এখনও টিকে আছে। এককালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল জুড়ে এই ম্যানগ্রোভ বন বিস্তৃত ছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিখ্যাত সুন্দরবনের তুলনায় সোনাদিয়ার ম্যানগ্রোভ বন পৃথক, কেননা বদ্বীপের বদলে এখানকার বন উপকূলীয় উপহ্রদে (lagoon) বেড়ে উঠেছে। এখানকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতিগুলি বেশি লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিধায় সুন্দরবনের তুলনায় এখানে ভিন্ন ধরনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আধিক্য দেখা যায়। এছাড়া এই দ্বীপে রয়েছে বিপুল সংখ্যক জলজ পাখি, ঝিনুক, সামুদ্রিক কচ্ছপ ও কণ্টকত্বকীদের (echinoderms) বসবাসের অনুকূল পরিবেশ।


'''হাকালুকি হাওর'''  এখানকার বাস্ত্ততন্ত্র পৃথক, তাই ব্যবস্থাপনাও ভিন্নতর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশের হাওর অববাহিকা পলিসমৃদ্ধ বিধায় সেখানে নানা ধরনের জলাভূমি রয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় ৪৭টি প্রধান হাওর ও ছয় হাজারের বেশি বিল বা পরিষ্কার পানির হ্রদ রয়েছে, যেগুলির প্রায় অর্ধেক মৌসুমি ধরনের। মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর ৮০টির বেশি পরস্পরযুক্ত বিলের সমাহার এবং শুকনো মৌসুমে এসব বিল প্রায় ৪,৪০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে ছড়ানো থাকে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে পুরো এলাকা ডুবে গেলে বিলগুলি একটি অভিন্ন হ্রদে বা হাওরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জায়গা দখল করে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ হাকালুকি এলাকায় বসবাস করে। এটি নানা ধরনের জলচর পাখির জন্য এবং শীতের অতিথি পাখিদের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি রামসার সাইটের (Ramsar Site) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: এটি জলাভূমির একটি উত্তম প্রতিনিধিত্বমূলক উদাহরণ যা কোন প্রধান নদীর অববাহিকার প্রাকৃতিক কর্মক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য জলতাত্ত্বিক, জীবতাত্ত্বিক অথবা বাস্ত্ততান্ত্রিক ভূমিকা পালন করে ... (রামসার সাইট মাপকাঠি 1c); এটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যার বিরল, নাজুক ও বিপন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির অথবা উল্লিখিত একটি বা একাধিক প্রজাতির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের অনুকূল আবাসভূমি (মাপকাঠি 2a); প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের বৈশিষ্ট্যের জন্য এদের বংশানুসৃত ও বাস্ত্ততান্ত্রিক বৈচিত্র্য রক্ষায় এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ (মাপকাঠি 2b); এটি প্রায় ২০,০০০ জলজ পাখির নিয়মিত আশ্রয়স্থল (মাপকাঠি 3a); জলাভূমির জন্য মূল্যমান, উৎপাদনশীলতা ও বৈচিত্র্যের সূচক স্বরূপ একটি নির্দিষ্ট দলের যথেষ্ট সংখ্যক জলচর পাখির নির্ভরযোগ্য আবাস (মাপকাঠি 3b)।  [এম আমিনুল ইসলাম]
'''''হাকালুকি হাওর'''''  এখানকার বাস্ত্ততন্ত্র পৃথক, তাই ব্যবস্থাপনাও ভিন্নতর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশের হাওর অববাহিকা পলিসমৃদ্ধ বিধায় সেখানে নানা ধরনের জলাভূমি রয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় ৪৭টি প্রধান হাওর ও ছয় হাজারের বেশি বিল বা পরিষ্কার পানির হ্রদ রয়েছে, যেগুলির প্রায় অর্ধেক মৌসুমি ধরনের। মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর ৮০টির বেশি পরস্পরযুক্ত বিলের সমাহার এবং শুকনো মৌসুমে এসব বিল প্রায় ৪,৪০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে ছড়ানো থাকে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে পুরো এলাকা ডুবে গেলে বিলগুলি একটি অভিন্ন হ্রদে বা হাওরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জায়গা দখল করে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ হাকালুকি এলাকায় বসবাস করে। এটি নানা ধরনের জলচর পাখির জন্য এবং শীতের অতিথি পাখিদের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি রামসার সাইটের (Ramsar Site) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: এটি জলাভূমির একটি উত্তম প্রতিনিধিত্বমূলক উদাহরণ যা কোন প্রধান নদীর অববাহিকার প্রাকৃতিক কর্মক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য জলতাত্ত্বিক, জীবতাত্ত্বিক অথবা বাস্ত্ততান্ত্রিক ভূমিকা পালন করে ... (রামসার সাইট মাপকাঠি 1c); এটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যার বিরল, নাজুক ও বিপন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির অথবা উল্লিখিত একটি বা একাধিক প্রজাতির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের অনুকূল আবাসভূমি (মাপকাঠি 2a); প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের বৈশিষ্ট্যের জন্য এদের বংশানুসৃত ও বাস্ত্ততান্ত্রিক বৈচিত্র্য রক্ষায় এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ (মাপকাঠি 2b); এটি প্রায় ২০,০০০ জলজ পাখির নিয়মিত আশ্রয়স্থল (মাপকাঠি 3a); জলাভূমির জন্য মূল্যমান, উৎপাদনশীলতা ও বৈচিত্র্যের সূচক স্বরূপ একটি নির্দিষ্ট দলের যথেষ্ট সংখ্যক জলচর পাখির নির্ভরযোগ্য আবাস (মাপকাঠি 3b)।  [এম আমিনুল ইসলাম]


''আরও দেখুন'' সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ।
''আরও দেখুন'' [[সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ|সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ]]।


[[en:Ecologically Critical Area]]
[[en:Ecologically Critical Area]]

০৪:৫০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাস্ত্তসঙ্কটাপন্ন এলাকা (Ecologically critical area)  মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত বাস্ত্ততন্ত্র এলাকা। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (BECA), ১৯৯৫ অনুযায়ী কোন এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছার আশঙ্কা দেখা দিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন। পরিবেশের অবনতির কারণে কোন এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে অথবা সংকটাপন্ন হওয়ার সম্মুখীন হয়েছে মনে করলে সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে পারে। উল্লিখিত আইনের উপধারা (১) অথবা পৃথক ঘোষণার মাধ্যমে সরকার বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকায় কোন কোন কর্ম বা ক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাবে না তা নির্দিষ্ট করে দেবে। ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রায় ৪০,০০০ হেক্টর জায়গার সাতটি পৃথক জলাভূমিকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। সেগুলি হলো হাকালুকি হাওর, সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ উপদ্বীপ (কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত)। অবশ্য এসব এলাকা সংলগ্ন বাফার অঞ্চলকে (buffer zone) উক্ত ঘোষণার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর, ঝিনাইদহ জেলার মারজাত বাঁওড় এবং সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরের ১০ কিলোমিটার অবধি অঞ্চল সংকটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল। বাংলাদেশের অনেক এলাকার বাস্ত্ততন্ত্র নিখুঁত বিচারে ‘আশঙ্কাজনক’ বিবেচ্য হলেও সরকারের পক্ষে এত অধিক সংখ্যক এলাকাকে বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা এবং সেগুলির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার এলাকা শনাক্তির জন্য পূর্বোক্ত ‘জরুরি নিরিখ’ ছাড়াও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলিও বিবেচিত হয়েছে। ফলে দুটি অতিরিক্ত সঙ্কটাপন্ন অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর এবং ছোট কিন্তু জীববিদ্যাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মারজাত বাওড়। বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে সঙ্কটাপন্ন এলাকাগুলিতে রয়েছে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির মিশ্রণ এবং উভয়ের জন্য প্রযোজ্য অভিন্ন নিষেধাজ্ঞা।

কক্সবাজার বাস্ত্তসংস্থানিক সঙ্কটাপন্ন এলাকা  বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে মায়ানমার সীমান্তে কক্সবাজার এলাকা। এখানকার তিনটি এলাকা ১. পশ্চিম অংশে টেকনাফ উপদ্বীপের উপকূলীয় অঞ্চল (১০,৪৬৫ হেক্টর) দীর্ঘ সরু বনাচ্ছাদিত উপদ্বীপ যা বঙ্গোপসাগরকে নাফ নদীর মোহনা ও প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে পৃথক করছে; ২. সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ (৫৯০ হেক্টর) টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পলিগঠিত মহাদেশীয় দ্বীপ; এবং ৩. সোনাদিয়া দ্বীপ (৪,৯২৪ হেক্টর) টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত প্রতিবন্ধক (barrier) দ্বীপ। প্রায় ১৬,০০০ হেক্টর বিস্তৃত এই দ্বীপগুলি ও উপকূলীয় আবাসভূমি উক্ত এলাকার ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চল’। টেকনাফ উপদ্বীপের অবক্ষয়িত কিন্তু এখনও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ উচ্চভূমির বনাঞ্চলের অতিরিক্ত ৩০,০০০ হেক্টর ‘বাফার এলাকা’ হিসেবে বিবেচ্য। গৃহীত প্রকল্পে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলির’ জীববৈচিত্র্যের বিদ্যমান সকল আশঙ্কা মোকাবিলা ও দূরীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃততর ‘বাফার এলাকায়’ বিদ্যমান বিপদগুলিও দূর করা হবে, যাতে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলির’ বাড়তি সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়। কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দারা প্রধানত মাছ ধরা, সামুদ্রিক সামগ্রী এবং অংশত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাস্ত্তসংস্থানিক সংকটাপন্ন এই এলাকার জীববৈচিত্র্য বৈশ্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আট শতাধিক বন্যপ্রাণী প্রজাতি রয়েছে, যাদের অন্তত ২০টির বেশি আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন। জীববৈচিত্র্যের বিবেচনায় নিম্নে উল্লিখিত এলাকাগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

টেকনাফ উপদ্বীপ  টেকনাফ উপদ্বীপ পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় উপকূলের (৮০ কিলোমিটার) একটি। এটি হলো ইন্দো-হিমালয়ান ও ইন্দো-মালয়ী বাস্ত্তসংস্থানিক উপঅঞ্চলের প্রাণিকুলের মিশ্রণক্ষেত্র। আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন চার প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র ও পরিযায়ী পাখিদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণপথের অন্তর্গত বিধায় এটি একটি পাখিবহুল এলাকা। এখানে প্রায় ৮১ প্রজাতির পাখি শনাক্ত করা হয়েছে। এই উপদ্বীপের উপকূলীয় জলাঞ্চলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের বাস।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ  সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম বিরল এলাকা যেখানে শিলাপ্রাচীরে সামুদ্রিক প্রবালনির্ভর শেওলার প্রাচুর্য চোখে পড়ে। জীব ও জড় জগতের সমন্বিত পরিবেশের এমন তুলনাহীন স্থান পৃথিবীতে বিরল। এখানে আছে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজাতির প্রজনন ক্ষেত্র এবং তদ্রূপ বিপন্ন পরিযায়ী জলচর পাখিদের যাত্রাভঙ্গের স্থান।

সোনাদিয়া দ্বীপ  এই দ্বীপে দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের কিছু অবশিষ্ট এখনও টিকে আছে। এককালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল জুড়ে এই ম্যানগ্রোভ বন বিস্তৃত ছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিখ্যাত সুন্দরবনের তুলনায় সোনাদিয়ার ম্যানগ্রোভ বন পৃথক, কেননা বদ্বীপের বদলে এখানকার বন উপকূলীয় উপহ্রদে (lagoon) বেড়ে উঠেছে। এখানকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতিগুলি বেশি লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিধায় সুন্দরবনের তুলনায় এখানে ভিন্ন ধরনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আধিক্য দেখা যায়। এছাড়া এই দ্বীপে রয়েছে বিপুল সংখ্যক জলজ পাখি, ঝিনুক, সামুদ্রিক কচ্ছপ ও কণ্টকত্বকীদের (echinoderms) বসবাসের অনুকূল পরিবেশ।

হাকালুকি হাওর  এখানকার বাস্ত্ততন্ত্র পৃথক, তাই ব্যবস্থাপনাও ভিন্নতর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশের হাওর অববাহিকা পলিসমৃদ্ধ বিধায় সেখানে নানা ধরনের জলাভূমি রয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় ৪৭টি প্রধান হাওর ও ছয় হাজারের বেশি বিল বা পরিষ্কার পানির হ্রদ রয়েছে, যেগুলির প্রায় অর্ধেক মৌসুমি ধরনের। মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর ৮০টির বেশি পরস্পরযুক্ত বিলের সমাহার এবং শুকনো মৌসুমে এসব বিল প্রায় ৪,৪০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে ছড়ানো থাকে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে পুরো এলাকা ডুবে গেলে বিলগুলি একটি অভিন্ন হ্রদে বা হাওরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জায়গা দখল করে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ হাকালুকি এলাকায় বসবাস করে। এটি নানা ধরনের জলচর পাখির জন্য এবং শীতের অতিথি পাখিদের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি রামসার সাইটের (Ramsar Site) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: এটি জলাভূমির একটি উত্তম প্রতিনিধিত্বমূলক উদাহরণ যা কোন প্রধান নদীর অববাহিকার প্রাকৃতিক কর্মক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য জলতাত্ত্বিক, জীবতাত্ত্বিক অথবা বাস্ত্ততান্ত্রিক ভূমিকা পালন করে ... (রামসার সাইট মাপকাঠি 1c); এটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যার বিরল, নাজুক ও বিপন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির অথবা উল্লিখিত একটি বা একাধিক প্রজাতির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের অনুকূল আবাসভূমি (মাপকাঠি 2a); প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের বৈশিষ্ট্যের জন্য এদের বংশানুসৃত ও বাস্ত্ততান্ত্রিক বৈচিত্র্য রক্ষায় এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ (মাপকাঠি 2b); এটি প্রায় ২০,০০০ জলজ পাখির নিয়মিত আশ্রয়স্থল (মাপকাঠি 3a); জলাভূমির জন্য মূল্যমান, উৎপাদনশীলতা ও বৈচিত্র্যের সূচক স্বরূপ একটি নির্দিষ্ট দলের যথেষ্ট সংখ্যক জলচর পাখির নির্ভরযোগ্য আবাস (মাপকাঠি 3b)।  [এম আমিনুল ইসলাম]

আরও দেখুন সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ