বাকরখানি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''বাখরখানি ''' মুগল আমলের ঐতিহ্যবাহী একটি রুটি। অতি সম্প্রতি পর্যন্ত ঢাকা শহরে এটি একটি বিচিত্র খাদ্য পণ্য ছিল। মুগল আমলের খাদ্য পণ্যের মধ্য এটি বর্তমান সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও দেখা যায়। মানুষজন তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে কোর্মা, শিখ কাবাব এবং মিষ্টির সাথে বাখরখানি খায়। এ রুটি বা বিস্কুটের  উৎপত্তি আফগানিস্তান বা এর বাহিরে। আফগানিস্তানে এটি এখনও পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে নবাবী আমলের শেষের দিকে প্রভাবশালী জমিদার আগা বাখর খানের নামনুসারে বাখরখানি নামটির উৎপত্তি। এটি একটি গোলাকৃতির রুটি যা তৈরি করা হয় প্রধানত গম, দুধ, লবণ, ডালডা, ঘি, পনির এবং খামির দিয়ে।
[[Image:Bagorkhani01.jpg|thumb|400px|right|বাকরখানি প্রস্তুতপ্রণালী]]
 
'''বাখরখানি''' মুগল আমলের ঐতিহ্যবাহী একটি রুটি। অতি সম্প্রতি পর্যন্ত ঢাকা শহরে এটি একটি বিচিত্র খাদ্য পণ্য ছিল। মুগল আমলের খাদ্য পণ্যের মধ্য এটি বর্তমান সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও দেখা যায়। মানুষজন তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে কোর্মা, শিখ কাবাব এবং মিষ্টির সাথে বাখরখানি খায়। এ রুটি বা বিস্কুটের  উৎপত্তি আফগানিস্তান বা এর বাহিরে। আফগানিস্তানে এটি এখনও পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে নবাবী আমলের শেষের দিকে প্রভাবশালী জমিদার আগা বাখর খানের নামনুসারে বাখরখানি নামটির উৎপত্তি। এটি একটি গোলাকৃতির রুটি যা তৈরি করা হয় প্রধানত গম, দুধ, লবণ, ডালডা, ঘি, পনির এবং খামির দিয়ে।
[[Image:Bagorkhani01.jpg|thumb|400px|right|বাকরখানি
]]
 
[[Image:Bagorkhani02.jpg|thumb|400px|right|বাকরখানি
]]
 


[[Image:Bagorkhani02.jpg|thumb|400px|left|বাকরখানি]]
রুটিটি তাওয়া বা তন্দুরে দেয়ার পূর্বে নানা উপকরণের সাহায্যে বেলন দিয়ে প্রসারিত করা হয়। বাখরখানি বিশেষত তীক্ষ্ণ স্বাদযুক্ত উপাদান, পনির, রোস্ট করা গরুর মাংস এবং মশলাযুক্ত পানীয় বিশেষ দ্বারা তৈরি করা হয় যা এখনও ঢাকার পুরনো অংশে দেখা যায়। আগেরকার দিনে দুই ঈদ উৎসবে বাখরখানির চাহিদা ছিল খুব বেশি। উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে প্রকাশিত [[রহমান, হাকিম হাবিবুর|হাকিম হাবিবুর]] রহমান তাঁর Dhaka Pachash Barash Pahley গ্রন্থে ঢাকার বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের তৈরি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি প্রধানত গও জোবান, শুকি এবং নিমশুকি তিন ধরনের বাখরখানির কথা বলেন। চিনশুখা রুটিও একপ্রকার বাখরখানি যা বিশেষত চিনি দ্বারা তৈরি করা হয়, যখন নিমশুখা রুটি ভাজা বাখরখানি। কাইচারুটি এবং মুলামও বাখরখানির অন্য প্রকারভেদ। পনির বাখরখানি হলো আরেকটি সুস্বাদু খাবার। এর প্রতিটি ভাঁজে ঘি ও গম বা সুজির পরিবর্তে হালুওয়া ব্যবহূত হয়। বৈবাহিক সংক্রান্ত উৎসবে প্রথার অংশ হিসেবে কনের বাড়ি থেকে বর এর বাড়ি কিচমিচ, কাঠবাদামের সাথে ক্রিম দুধ দিয়ে ডালায় করে পাঠানো হয় যা ভিগারুটি নামেও পরিচিতি। এটি একটি পুরানো ঢাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রাচীন খাদ্য। এখন ঢাকার প্রতিটি অভিজাত কনফেকশনারিতে বাখরখানি নতুন রূপে (পলিথিনে মোড়ানো) পাওয়া যায়।  [মো. ফারুক হোসেন]
রুটিটি তাওয়া বা তন্দুরে দেয়ার পূর্বে নানা উপকরণের সাহায্যে বেলন দিয়ে প্রসারিত করা হয়। বাখরখানি বিশেষত তীক্ষ্ণ স্বাদযুক্ত উপাদান, পনির, রোস্ট করা গরুর মাংস এবং মশলাযুক্ত পানীয় বিশেষ দ্বারা তৈরি করা হয় যা এখনও ঢাকার পুরনো অংশে দেখা যায়। আগেরকার দিনে দুই ঈদ উৎসবে বাখরখানির চাহিদা ছিল খুব বেশি। উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে প্রকাশিত [[রহমান, হাকিম হাবিবুর|হাকিম হাবিবুর]] রহমান তাঁর Dhaka Pachash Barash Pahley গ্রন্থে ঢাকার বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের তৈরি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি প্রধানত গও জোবান, শুকি এবং নিমশুকি তিন ধরনের বাখরখানির কথা বলেন। চিনশুখা রুটিও একপ্রকার বাখরখানি যা বিশেষত চিনি দ্বারা তৈরি করা হয়, যখন নিমশুখা রুটি ভাজা বাখরখানি। কাইচারুটি এবং মুলামও বাখরখানির অন্য প্রকারভেদ। পনির বাখরখানি হলো আরেকটি সুস্বাদু খাবার। এর প্রতিটি ভাঁজে ঘি ও গম বা সুজির পরিবর্তে হালুওয়া ব্যবহূত হয়। বৈবাহিক সংক্রান্ত উৎসবে প্রথার অংশ হিসেবে কনের বাড়ি থেকে বর এর বাড়ি কিচমিচ, কাঠবাদামের সাথে ক্রিম দুধ দিয়ে ডালায় করে পাঠানো হয় যা ভিগারুটি নামেও পরিচিতি। এটি একটি পুরানো ঢাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রাচীন খাদ্য। এখন ঢাকার প্রতিটি অভিজাত কনফেকশনারিতে বাখরখানি নতুন রূপে (পলিথিনে মোড়ানো) পাওয়া যায়।  [মো. ফারুক হোসেন]



০৫:৪৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাকরখানি প্রস্তুতপ্রণালী

বাখরখানি মুগল আমলের ঐতিহ্যবাহী একটি রুটি। অতি সম্প্রতি পর্যন্ত ঢাকা শহরে এটি একটি বিচিত্র খাদ্য পণ্য ছিল। মুগল আমলের খাদ্য পণ্যের মধ্য এটি বর্তমান সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও দেখা যায়। মানুষজন তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে কোর্মা, শিখ কাবাব এবং মিষ্টির সাথে বাখরখানি খায়। এ রুটি বা বিস্কুটের  উৎপত্তি আফগানিস্তান বা এর বাহিরে। আফগানিস্তানে এটি এখনও পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে নবাবী আমলের শেষের দিকে প্রভাবশালী জমিদার আগা বাখর খানের নামনুসারে বাখরখানি নামটির উৎপত্তি। এটি একটি গোলাকৃতির রুটি যা তৈরি করা হয় প্রধানত গম, দুধ, লবণ, ডালডা, ঘি, পনির এবং খামির দিয়ে।

বাকরখানি

রুটিটি তাওয়া বা তন্দুরে দেয়ার পূর্বে নানা উপকরণের সাহায্যে বেলন দিয়ে প্রসারিত করা হয়। বাখরখানি বিশেষত তীক্ষ্ণ স্বাদযুক্ত উপাদান, পনির, রোস্ট করা গরুর মাংস এবং মশলাযুক্ত পানীয় বিশেষ দ্বারা তৈরি করা হয় যা এখনও ঢাকার পুরনো অংশে দেখা যায়। আগেরকার দিনে দুই ঈদ উৎসবে বাখরখানির চাহিদা ছিল খুব বেশি। উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে প্রকাশিত হাকিম হাবিবুর রহমান তাঁর Dhaka Pachash Barash Pahley গ্রন্থে ঢাকার বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের তৈরি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি প্রধানত গও জোবান, শুকি এবং নিমশুকি তিন ধরনের বাখরখানির কথা বলেন। চিনশুখা রুটিও একপ্রকার বাখরখানি যা বিশেষত চিনি দ্বারা তৈরি করা হয়, যখন নিমশুখা রুটি ভাজা বাখরখানি। কাইচারুটি এবং মুলামও বাখরখানির অন্য প্রকারভেদ। পনির বাখরখানি হলো আরেকটি সুস্বাদু খাবার। এর প্রতিটি ভাঁজে ঘি ও গম বা সুজির পরিবর্তে হালুওয়া ব্যবহূত হয়। বৈবাহিক সংক্রান্ত উৎসবে প্রথার অংশ হিসেবে কনের বাড়ি থেকে বর এর বাড়ি কিচমিচ, কাঠবাদামের সাথে ক্রিম দুধ দিয়ে ডালায় করে পাঠানো হয় যা ভিগারুটি নামেও পরিচিতি। এটি একটি পুরানো ঢাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রাচীন খাদ্য। এখন ঢাকার প্রতিটি অভিজাত কনফেকশনারিতে বাখরখানি নতুন রূপে (পলিথিনে মোড়ানো) পাওয়া যায়।  [মো. ফারুক হোসেন]