বাঁশ শিল্প: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:Handicrafts.jpg|thumb|400px|right|বাঁশের ঝুড়ি]] | |||
'''বাঁশ শিল্প''' একটি লোকশিল্প। এর প্রধান মাধ্যম বাঁশ। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং বেশির ভাগ তারাই এসব ব্যবহার করে। বাঁশের ব্যবহার বিবিধ। ঘর, মাচা, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্প ইত্যাদি ছাড়াও মৃতদেহ সৎকার ও দাফনের কাজেও বাঁশ ব্যবহূত হয়। বাঁশকে দরিদ্র মানুষের দারুও বলা হয়। নিত্য ব্যবহার্য এই [[বাঁশ|বাঁশ]] কালক্রমে [[লোকসংস্কৃতি|লোকসংস্কৃতি]] ও কারুশিল্পের প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে। | '''বাঁশ শিল্প''' একটি লোকশিল্প। এর প্রধান মাধ্যম বাঁশ। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং বেশির ভাগ তারাই এসব ব্যবহার করে। বাঁশের ব্যবহার বিবিধ। ঘর, মাচা, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্প ইত্যাদি ছাড়াও মৃতদেহ সৎকার ও দাফনের কাজেও বাঁশ ব্যবহূত হয়। বাঁশকে দরিদ্র মানুষের দারুও বলা হয়। নিত্য ব্যবহার্য এই [[বাঁশ|বাঁশ]] কালক্রমে [[লোকসংস্কৃতি|লোকসংস্কৃতি]] ও কারুশিল্পের প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে। | ||
বাংলাদেশে এই তৃণ গোত্রের ২৬ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। তারমধ্যে মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ দিয়ে শিল্পকর্ম করা সহজ। বাঁশের তৈরি এই শিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও লোকজীবনে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা ও প্রয়োজনের কারণে এই শিল্পকর্ম বংশপরম্পরায় চলে আসছে। এর কিছু কিছু শিল্পকৌশল হাজার বছর ধরে অবিকৃত আছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় বাঁশের মোড়ায়। [[বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর|বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর]]এ দিনাজপুর থেকে সংগৃহীত আনুমানিক দশম শতাব্দীর বুদ্ধমূর্তি সিতাতপত্রা (সংগ্রহ নং ১১১৫) পদ্মের পরিবর্তে বাঁশ ও বেতের তৈরি মোড়া সদৃশ একটি আসনে উপবিষ্ট। কালো পাথর খোদাই করে মোড়াটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই মোড়ায় গ্রামবাংলার কেচকি বেড়ার কৌশল অনুসৃত হয়েছে এবং এ ধরনের মোড়া আজও এদেশে তৈরি হয়। | বাংলাদেশে এই তৃণ গোত্রের ২৬ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। তারমধ্যে মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ দিয়ে শিল্পকর্ম করা সহজ। বাঁশের তৈরি এই শিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও লোকজীবনে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা ও প্রয়োজনের কারণে এই শিল্পকর্ম বংশপরম্পরায় চলে আসছে। এর কিছু কিছু শিল্পকৌশল হাজার বছর ধরে অবিকৃত আছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় বাঁশের মোড়ায়। [[বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর|বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর]]এ দিনাজপুর থেকে সংগৃহীত আনুমানিক দশম শতাব্দীর বুদ্ধমূর্তি সিতাতপত্রা (সংগ্রহ নং ১১১৫) পদ্মের পরিবর্তে বাঁশ ও বেতের তৈরি মোড়া সদৃশ একটি আসনে উপবিষ্ট। কালো পাথর খোদাই করে মোড়াটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই মোড়ায় গ্রামবাংলার কেচকি বেড়ার কৌশল অনুসৃত হয়েছে এবং এ ধরনের মোড়া আজও এদেশে তৈরি হয়। | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | |||
|- | |||
| [[Image:NakshiPatiShitalPati.jpg|thumb|400px|left|বাঁশের মাদুর]] || [[Image:BammboCarfts3.jpg|thumb|400px|right|বিয়ের ডালি]] | |||
[[Image:NakshiPatiShitalPati.jpg|thumb|400px| | |- | ||
| [[Image:BambooCrafts1.jpg|thumb|400px|right|অলংকৃত দেয়াল সজ্জা]] || [[Image:BambooCrafts2.jpg|thumb|400px|right|বাঁশের হাতপাখা]] | |||
|} | |||
[[Image:BammboCarfts3.jpg|thumb|400px|right|বিয়ের ডালি]] | |||
[[Image:BambooCrafts1.jpg|thumb|400px|right|অলংকৃত দেয়াল সজ্জা]] | |||
[[Image:BambooCrafts2.jpg|thumb|400px|right|বাঁশের হাতপাখা]] | |||
বাংলাদেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহূত হয় না। বাঁশের তৈরি মাথাল, ওরা, ভার ইত্যাদি কৃষিকাজে ব্যবহূত হয়। মাছ ধরার চাই, খালুই, জুইতা ইত্যাদি মৎস্যজীবীদের হাতিয়ার। বাঁশের দোচালা, চারচালা ও আটচালা ঘর; বাঁশের বেড়া, ঝাপ, বেলকি, দরমা বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহূত বর্শা, ঢাল, লাঠি, তীর, ধনুক ও বল্লম হিসেবে বাঁশের ব্যবহার লক্ষণীয়। পাল তোলা নৌকা এবং গরুর গাড়ির ছাদ বা ছই নির্মাণের উপাদান হিসেবে বাঁশের বিকল্প নেই। [[বাঁশি|বাঁশি]] বিশেষকরে অলঙ্কৃত বাঁশি লোকবাদ্যযন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান। বিভিন্ন লোকজ বিশ্বাস থেকে এদেশের মানুষ তৈরি করে বাঁশের খেলনা ও [[পুতুল|পুতুল]]। আসবাব হিসেবে মোড়া, চাটাই বহুল প্রচলিত। ইদানীং নগরজীবনে বাঁশের তৈরি আসবাব, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, কলম ইত্যাদিও লক্ষ করা যায়। চা বাগানে চায়ের পাতা তোলার ঝুড়ি, খাসিয়াদের পান রাখার ঝুড়ি এবং বিভিন্ন উপজাতীয়দের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি পাত্রসমূহ খুবই আকর্ষণীয়। এসব পাত্র বা ঝুড়িতে বুননের মাধ্যমে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে, বাঁশ তাদের অন্যতম। [জিনাত মাহরুখ বানু] | বাংলাদেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহূত হয় না। বাঁশের তৈরি মাথাল, ওরা, ভার ইত্যাদি কৃষিকাজে ব্যবহূত হয়। মাছ ধরার চাই, খালুই, জুইতা ইত্যাদি মৎস্যজীবীদের হাতিয়ার। বাঁশের দোচালা, চারচালা ও আটচালা ঘর; বাঁশের বেড়া, ঝাপ, বেলকি, দরমা বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহূত বর্শা, ঢাল, লাঠি, তীর, ধনুক ও বল্লম হিসেবে বাঁশের ব্যবহার লক্ষণীয়। পাল তোলা নৌকা এবং গরুর গাড়ির ছাদ বা ছই নির্মাণের উপাদান হিসেবে বাঁশের বিকল্প নেই। [[বাঁশি|বাঁশি]] বিশেষকরে অলঙ্কৃত বাঁশি লোকবাদ্যযন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান। বিভিন্ন লোকজ বিশ্বাস থেকে এদেশের মানুষ তৈরি করে বাঁশের খেলনা ও [[পুতুল|পুতুল]]। আসবাব হিসেবে মোড়া, চাটাই বহুল প্রচলিত। ইদানীং নগরজীবনে বাঁশের তৈরি আসবাব, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, কলম ইত্যাদিও লক্ষ করা যায়। চা বাগানে চায়ের পাতা তোলার ঝুড়ি, খাসিয়াদের পান রাখার ঝুড়ি এবং বিভিন্ন উপজাতীয়দের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি পাত্রসমূহ খুবই আকর্ষণীয়। এসব পাত্র বা ঝুড়িতে বুননের মাধ্যমে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে, বাঁশ তাদের অন্যতম। [জিনাত মাহরুখ বানু] | ||
''আরও দেখুন'' চারু ও কারু | ''আরও দেখুন'' [[চারু ও কারু লোকশিল্প|চারু ও কারু লোকশিল্প]]। | ||
[[en:Bamboo Craft]] | [[en:Bamboo Craft]] |
০৯:৪০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
বাঁশ শিল্প একটি লোকশিল্প। এর প্রধান মাধ্যম বাঁশ। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং বেশির ভাগ তারাই এসব ব্যবহার করে। বাঁশের ব্যবহার বিবিধ। ঘর, মাচা, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্প ইত্যাদি ছাড়াও মৃতদেহ সৎকার ও দাফনের কাজেও বাঁশ ব্যবহূত হয়। বাঁশকে দরিদ্র মানুষের দারুও বলা হয়। নিত্য ব্যবহার্য এই বাঁশ কালক্রমে লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্পের প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে এই তৃণ গোত্রের ২৬ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। তারমধ্যে মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ দিয়ে শিল্পকর্ম করা সহজ। বাঁশের তৈরি এই শিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও লোকজীবনে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা ও প্রয়োজনের কারণে এই শিল্পকর্ম বংশপরম্পরায় চলে আসছে। এর কিছু কিছু শিল্পকৌশল হাজার বছর ধরে অবিকৃত আছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় বাঁশের মোড়ায়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরএ দিনাজপুর থেকে সংগৃহীত আনুমানিক দশম শতাব্দীর বুদ্ধমূর্তি সিতাতপত্রা (সংগ্রহ নং ১১১৫) পদ্মের পরিবর্তে বাঁশ ও বেতের তৈরি মোড়া সদৃশ একটি আসনে উপবিষ্ট। কালো পাথর খোদাই করে মোড়াটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই মোড়ায় গ্রামবাংলার কেচকি বেড়ার কৌশল অনুসৃত হয়েছে এবং এ ধরনের মোড়া আজও এদেশে তৈরি হয়।
বাংলাদেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহূত হয় না। বাঁশের তৈরি মাথাল, ওরা, ভার ইত্যাদি কৃষিকাজে ব্যবহূত হয়। মাছ ধরার চাই, খালুই, জুইতা ইত্যাদি মৎস্যজীবীদের হাতিয়ার। বাঁশের দোচালা, চারচালা ও আটচালা ঘর; বাঁশের বেড়া, ঝাপ, বেলকি, দরমা বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহূত বর্শা, ঢাল, লাঠি, তীর, ধনুক ও বল্লম হিসেবে বাঁশের ব্যবহার লক্ষণীয়। পাল তোলা নৌকা এবং গরুর গাড়ির ছাদ বা ছই নির্মাণের উপাদান হিসেবে বাঁশের বিকল্প নেই। বাঁশি বিশেষকরে অলঙ্কৃত বাঁশি লোকবাদ্যযন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান। বিভিন্ন লোকজ বিশ্বাস থেকে এদেশের মানুষ তৈরি করে বাঁশের খেলনা ও পুতুল। আসবাব হিসেবে মোড়া, চাটাই বহুল প্রচলিত। ইদানীং নগরজীবনে বাঁশের তৈরি আসবাব, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, কলম ইত্যাদিও লক্ষ করা যায়। চা বাগানে চায়ের পাতা তোলার ঝুড়ি, খাসিয়াদের পান রাখার ঝুড়ি এবং বিভিন্ন উপজাতীয়দের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি পাত্রসমূহ খুবই আকর্ষণীয়। এসব পাত্র বা ঝুড়িতে বুননের মাধ্যমে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে, বাঁশ তাদের অন্যতম। [জিনাত মাহরুখ বানু]
আরও দেখুন চারু ও কারু লোকশিল্প।