ফৌজদারি দন্ডবিধি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''ফৌজদারি দন্ডবিধি''' যেসব আইন নির্দিষ্ট ধরনের আচরণের পর্যায়ে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদন ও পরিহার করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং এজন্য শাস্তির বিধান করেছে, সেসব আইনকে দন্ডবিধি বলা হয়। সাধারণ অর্থে, একটি সমাজের স্বাধীন জনগোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধসমূহকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই ফৌজদারি অপরাধসমূহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসকল ফৌজদারি দন্ডবিধি চালু আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: দন্ডবিধি ১৮৬০, গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ আইন ১৮৭১, অস্ত্র আইন ১৮৭৮, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭, দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, মাদক (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯০, নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫। | '''ফৌজদারি দন্ডবিধি''' যেসব আইন নির্দিষ্ট ধরনের আচরণের পর্যায়ে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদন ও পরিহার করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং এজন্য শাস্তির বিধান করেছে, সেসব আইনকে দন্ডবিধি বলা হয়। সাধারণ অর্থে, একটি সমাজের স্বাধীন জনগোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধসমূহকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই ফৌজদারি অপরাধসমূহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসকল ফৌজদারি দন্ডবিধি চালু আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: দন্ডবিধি ১৮৬০, গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ আইন ১৮৭১, অস্ত্র আইন ১৮৭৮, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭, দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, মাদক (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯০, নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫। | ||
'''দন্ডবিধি ১৮৬০ ''''' | '''''দন্ডবিধি ১৮৬০''''' দন্ডবিধিই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত প্রাচীনতম ও প্রধান আইনসংকলন। এ বিধির আওতাভুক্ত অপরাধসমূহ হচ্ছে: রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ; সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্পর্কিত অপরাধ; সর্বসাধারণের শান্তি বিনষ্টকারী অপরাধ; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা সংঘটিত অথবা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধ; নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ; সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের আইনগত কর্তৃত্বের অবমাননা জনিত অপরাধ; মিথ্যা সাক্ষ্যদান এবং সর্বজনীন সুবিচার বিরোধী অপরাধ; মুদ্রা ও সরকারি ডাকটিকিট সংক্রান্ত অপরাধ; ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অপরাধ; জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, এবং সর্বসাধারণের সুযোগ-সুবিধা, শালীনতা ও নৈতিকতা বিনষ্টকারী অপরাধ; ধর্ম সম্পর্কিত অপরাধ; মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অপরাধ, যথা, জীবননাশক অপরাধ, গর্ভপাত সংঘটন, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি ও বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধ, বিশ্বাস ভঙ্গজনিত ফৌজদারি অপরাধ ইত্যাদি। | ||
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রধানত: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা ঘোষণা দানের প্রচেষ্টা অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করতে অন্যকে প্ররোচিত করা; অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া; বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা; রাষ্ট্রদ্রোহ; বাংলাদেশের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা; এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা সরকারকে কোনো আইনসঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার অথবা এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করা। অন্যদিকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সংক্রান্ত অপরাধের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: সেনা বিদ্রোহে মদদ দান; একজন সৈনিক, নাবিক অথবা বিমানসেনাকে তার দায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে প্ররোচিত করা; সৈনিক, নাবিক কিংবা একজন বিমানসেনাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনকালে আঘাত করতে প্ররোচিত করা; একজন সৈনিক, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে তার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করা; দলত্যাগকারী সৈন্য, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে আশ্রয়দান এবং তাদের ব্যবহূত পোশাক পরিধান করা অথবা তাদের ব্যবহূত চিহ্ন ধারণ করা। ধর্ম সম্পৃক্ত অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে: কোনো উপাসনাস্থলের ক্ষতিসাধন অথবা তাকে কলুষিত করা; উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক আচরণের মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্বক তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা; ধর্মীয় সমাবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা; ব্যক্তিবিশেষের ধর্মকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, সমাধিক্ষেত্র অথবা শ্মশানালয়ে অনধিকার প্রবেশ এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ ধরনের কোনো শব্দ অথবা ধ্বনি উচ্চারণ করা। | রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রধানত: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা ঘোষণা দানের প্রচেষ্টা অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করতে অন্যকে প্ররোচিত করা; অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া; বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা; রাষ্ট্রদ্রোহ; বাংলাদেশের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা; এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা সরকারকে কোনো আইনসঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার অথবা এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করা। অন্যদিকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সংক্রান্ত অপরাধের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: সেনা বিদ্রোহে মদদ দান; একজন সৈনিক, নাবিক অথবা বিমানসেনাকে তার দায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে প্ররোচিত করা; সৈনিক, নাবিক কিংবা একজন বিমানসেনাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনকালে আঘাত করতে প্ররোচিত করা; একজন সৈনিক, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে তার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করা; দলত্যাগকারী সৈন্য, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে আশ্রয়দান এবং তাদের ব্যবহূত পোশাক পরিধান করা অথবা তাদের ব্যবহূত চিহ্ন ধারণ করা। ধর্ম সম্পৃক্ত অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে: কোনো উপাসনাস্থলের ক্ষতিসাধন অথবা তাকে কলুষিত করা; উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক আচরণের মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্বক তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা; ধর্মীয় সমাবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা; ব্যক্তিবিশেষের ধর্মকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, সমাধিক্ষেত্র অথবা শ্মশানালয়ে অনধিকার প্রবেশ এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ ধরনের কোনো শব্দ অথবা ধ্বনি উচ্চারণ করা। | ||
১০ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী একজন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, জরিমানা এবং বেত্রাঘাতের মত শাস্তি প্রদান করা হয়। দন্ডবিধির আওতায় মৃত্যুদন্ডই হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সেনাবিদ্রোহে মদদ দান, সজ্ঞানে মিথ্যা সাক্ষ্য দান, যার ফলে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত, নরহত্যা, শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ কোনো ব্যক্তি অথবা মাতাল কাউকে আত্মহননে প্ররোচিত করা, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত কোনো ব্যক্তির দ্বারা অন্য কাউকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো, দশ বছরের কম বয়স্ক কাউকে অপহরণ এবং ডাকাতি করতে গিয়ে নরহত্যার মতো অপরাধ সংঘটনকারীর উপর এ মৃত্যুদন্ড আরোপ করা হয়। তবে এসব অপরাধসহ অন্য কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও প্রদান করা হয়। বাদ বাকি অপরাধের জন্য সশ্রম অথবা বিনা শ্রমে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড আরোপ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত কারাদন্ডের পরিবর্তে কেবলমাত্র অর্থদন্ড প্রদান করতে পারেন। কোনো কোনো জঘন্য অপরাধের শাস্তিস্বরূপ আদালত কারাদন্ড সহ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতে পারেন। আবার এমন কিছু অপরাধ আছে, যার দন্ড হিসেবে আদালত দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কোনো আসামীর দন্ড লঘু করে কুড়ি বছরের কম যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে পুরোপুরি ক্ষমা, তার দন্ডাদেশের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত অথবা তাকে লঘুতর কোনো দন্ড প্রদান করতে পারেন। | অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী একজন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, জরিমানা এবং বেত্রাঘাতের মত শাস্তি প্রদান করা হয়। দন্ডবিধির আওতায় মৃত্যুদন্ডই হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সেনাবিদ্রোহে মদদ দান, সজ্ঞানে মিথ্যা সাক্ষ্য দান, যার ফলে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত, নরহত্যা, শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ কোনো ব্যক্তি অথবা মাতাল কাউকে আত্মহননে প্ররোচিত করা, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত কোনো ব্যক্তির দ্বারা অন্য কাউকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো, দশ বছরের কম বয়স্ক কাউকে অপহরণ এবং ডাকাতি করতে গিয়ে নরহত্যার মতো অপরাধ সংঘটনকারীর উপর এ মৃত্যুদন্ড আরোপ করা হয়। তবে এসব অপরাধসহ অন্য কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও প্রদান করা হয়। বাদ বাকি অপরাধের জন্য সশ্রম অথবা বিনা শ্রমে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড আরোপ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত কারাদন্ডের পরিবর্তে কেবলমাত্র অর্থদন্ড প্রদান করতে পারেন। কোনো কোনো জঘন্য অপরাধের শাস্তিস্বরূপ আদালত কারাদন্ড সহ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতে পারেন। আবার এমন কিছু অপরাধ আছে, যার দন্ড হিসেবে আদালত দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কোনো আসামীর দন্ড লঘু করে কুড়ি বছরের কম যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে পুরোপুরি ক্ষমা, তার দন্ডাদেশের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত অথবা তাকে লঘুতর কোনো দন্ড প্রদান করতে পারেন। | ||
'''গবাদি পশুর অনধিকারপ্রবেশ আইন ১৮৭১''' এ আইনে বেআইনিভাবে গবাদি পশু অপহরণের বিরুদ্ধে নালিশ দায়ের এবং নালিশ গঠন প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং পশু আটক রাখার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে গবাদি পশু বলপূর্বক প্রতিরোধ এবং আটককৃত পশু বলপূর্বক ছাড়িয়ে আনাও এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং এ অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। গৃহপালিত পশু যদি অন্যের জমি বা ফসল অথবা সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তার ক্ষতিসাধন করে তবে শাস্তি স্বরূপ সে পশুর মালিক অথবা রক্ষণাবেক্ষণকারীর উপর আর্থিক জরিমানা আরোপের ব্যবস্থা রয়েছে। খোয়াড়ের মালিক যদি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে এ আইনের আওতায় তাকেও অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। | '''''গবাদি পশুর অনধিকারপ্রবেশ আইন ১৮৭১''''' এ আইনে বেআইনিভাবে গবাদি পশু অপহরণের বিরুদ্ধে নালিশ দায়ের এবং নালিশ গঠন প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং পশু আটক রাখার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে গবাদি পশু বলপূর্বক প্রতিরোধ এবং আটককৃত পশু বলপূর্বক ছাড়িয়ে আনাও এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং এ অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। গৃহপালিত পশু যদি অন্যের জমি বা ফসল অথবা সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তার ক্ষতিসাধন করে তবে শাস্তি স্বরূপ সে পশুর মালিক অথবা রক্ষণাবেক্ষণকারীর উপর আর্থিক জরিমানা আরোপের ব্যবস্থা রয়েছে। খোয়াড়ের মালিক যদি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে এ আইনের আওতায় তাকেও অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। | ||
'''অস্ত্র আইন ১৮৭৮''' এ আইনে অননুমোদিতভাবে অস্ত্র নির্মাণ, এর আংশিক পরিবর্তন ও বেচাকেনা, অস্ত্র আমদানি ও রপ্তানি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেআইনি কোনো অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজের কাছে লাইসেন্সবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র রাখা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার কিংবা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে কাজকারবার করার জন্য লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থাও এ আইনে রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে থানায় অথবা লাইসেন্সধারী সরবরাহকারির নিকট কোনো কোনো অস্ত্র জমা দেওয়ার কথাও বলা আছে। এ আইন সরকারকে লাইসেন্স প্রদান, অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ আরোপ, লাইসেন্স বাতিল অথবা এর কার্যকারিতা স্থগিত করা সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরি করার মত ক্ষমতাও প্রদান করেছে। উল্লিখিত বিধিনিষেধসমূহ ভঙ্গ করা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তির পরিমাণ হচ্ছে যাবজ্জীবন অথবা কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড। এছাড়া জ্ঞাতসারে লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়, আইনত অস্ত্র রাখতে পারে না এমন ব্যক্তির নিকট অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ এবং আলোচ্য আইনের অন্য যেকোন ধারা ভঙ্গ করাও এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধের মাত্রাভেদে এ ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে ছয় মাস পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই। | '''''অস্ত্র আইন ১৮৭৮''''' এ আইনে অননুমোদিতভাবে অস্ত্র নির্মাণ, এর আংশিক পরিবর্তন ও বেচাকেনা, অস্ত্র আমদানি ও রপ্তানি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেআইনি কোনো অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজের কাছে লাইসেন্সবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র রাখা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার কিংবা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে কাজকারবার করার জন্য লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থাও এ আইনে রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে থানায় অথবা লাইসেন্সধারী সরবরাহকারির নিকট কোনো কোনো অস্ত্র জমা দেওয়ার কথাও বলা আছে। এ আইন সরকারকে লাইসেন্স প্রদান, অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ আরোপ, লাইসেন্স বাতিল অথবা এর কার্যকারিতা স্থগিত করা সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরি করার মত ক্ষমতাও প্রদান করেছে। উল্লিখিত বিধিনিষেধসমূহ ভঙ্গ করা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তির পরিমাণ হচ্ছে যাবজ্জীবন অথবা কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড। এছাড়া জ্ঞাতসারে লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়, আইনত অস্ত্র রাখতে পারে না এমন ব্যক্তির নিকট অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ এবং আলোচ্য আইনের অন্য যেকোন ধারা ভঙ্গ করাও এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধের মাত্রাভেদে এ ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে ছয় মাস পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই। | ||
'''বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮''' এ আইনের আওতায় বিস্ফোরক দ্রব্য বলতে বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোন ধরনের দ্রব্যকেই বুঝায়। এ ছাড়াও কোনো বিস্ফোরণ সংঘটন অথবা বিস্ফোরণ সংঘটনে সাহায্য করে এমন যেকোন ধরনের সামগ্রী, যন্ত্রপাতি অথবা যন্ত্রাংশও বিস্ফোরক দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যদি এমন বিস্ফোরণ ঘটানো হয় যা জীবনহানি ঘটায়, মানুষের জীবন অথবা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো অপরাধ সংঘটন কিংবা অপরাধ সংঘটনে অন্যকে সুযোগ করে দেয়, তবে তা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রেও অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কমপক্ষে ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রচেষ্টা অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি কিংবা তা নিজের কাছে রাখাও দন্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। এমনকি এ সমস্ত অপরাধ সংঘটনে অপরকে প্ররোচনা দানও এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে প্ররোচনা দানকারীকেও বিস্ফোরক সংঘটনজনিত অপরাধের শাস্তির অনুরূপ শাস্তিই প্রদান করার বিধান রয়েছে। | '''''বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮''''' এ আইনের আওতায় বিস্ফোরক দ্রব্য বলতে বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোন ধরনের দ্রব্যকেই বুঝায়। এ ছাড়াও কোনো বিস্ফোরণ সংঘটন অথবা বিস্ফোরণ সংঘটনে সাহায্য করে এমন যেকোন ধরনের সামগ্রী, যন্ত্রপাতি অথবা যন্ত্রাংশও বিস্ফোরক দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যদি এমন বিস্ফোরণ ঘটানো হয় যা জীবনহানি ঘটায়, মানুষের জীবন অথবা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো অপরাধ সংঘটন কিংবা অপরাধ সংঘটনে অন্যকে সুযোগ করে দেয়, তবে তা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রেও অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কমপক্ষে ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রচেষ্টা অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি কিংবা তা নিজের কাছে রাখাও দন্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। এমনকি এ সমস্ত অপরাধ সংঘটনে অপরকে প্ররোচনা দানও এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে প্ররোচনা দানকারীকেও বিস্ফোরক সংঘটনজনিত অপরাধের শাস্তির অনুরূপ শাস্তিই প্রদান করার বিধান রয়েছে। | ||
'''দুর্নীতি দমন আইন ১৯৪৭''' সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িত হতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি ফৌজদারি পর্যায়ের অসদুপায় অবলম্বন করে অথবা করার চেষ্টা করে, তবে এ আইনের আওতায় সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সাত বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা কারা ও অর্থ উভয় দন্ড। এ আইনে বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি অথবা তার নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির অধিকারে যদি এমন পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকে যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং তিনি যদি এ অর্থ ও সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে না পারেন অথবা অন্য কোনভাবে প্রমাণিত না হয় যে এগুলো বৈধভাবেই তার নিজস্ব, তবে সেক্ষেত্রে এ অর্থ ও সম্পদ রাখার দায়ে তিনি অভিযুক্ত এবং আদালতে ফৌজদারি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হবেন, এবং আদালত কেবল অনুমানের উপর নির্ভর করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এ যুক্তিতে তার শাস্তি বাতিলযোগ্য বিবেচিত হবে না। | '''''দুর্নীতি দমন আইন ১৯৪৭''''' সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িত হতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি ফৌজদারি পর্যায়ের অসদুপায় অবলম্বন করে অথবা করার চেষ্টা করে, তবে এ আইনের আওতায় সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সাত বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা কারা ও অর্থ উভয় দন্ড। এ আইনে বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি অথবা তার নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির অধিকারে যদি এমন পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকে যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং তিনি যদি এ অর্থ ও সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে না পারেন অথবা অন্য কোনভাবে প্রমাণিত না হয় যে এগুলো বৈধভাবেই তার নিজস্ব, তবে সেক্ষেত্রে এ অর্থ ও সম্পদ রাখার দায়ে তিনি অভিযুক্ত এবং আদালতে ফৌজদারি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হবেন, এবং আদালত কেবল অনুমানের উপর নির্ভর করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এ যুক্তিতে তার শাস্তি বাতিলযোগ্য বিবেচিত হবে না। | ||
'''দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭''' এ আইনে বিধান করা হয় যে সরকার যদি তথ্য প্রাপ্তির পর অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হন যে, কোনো ব্যক্তি অথবা তার নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির নিকট এমন পরিমাণ অর্থ কিংবা সম্পদ রয়েছে যা ঐ ব্যক্তির জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তবে সরকার ঐ ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তার সম্পত্তি, দায়দেনা এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ আকারে প্রেরণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। ঐ ব্যক্তি যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার বক্তব্য এবং তথ্যাদি প্রেরণে ব্যর্থ হন অথবা তিনি যদি মিথ্যা বক্তব্য কিংবা মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, তবে দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি কিংবা ঐ ব্যক্তির নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির নামে যদি এমন স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পতি থাকে যা অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় এবং ঐ ব্যক্তির জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে প্রমাণিত হয় এবং তিনি যদি এই মর্মে আদালতের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হন যে, ঐ সম্পত্তিসমূহের তিনিই বৈধ মালিক, তবে তার এ ব্যর্থতা উক্ত আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। | '''''দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭''''' এ আইনে বিধান করা হয় যে সরকার যদি তথ্য প্রাপ্তির পর অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হন যে, কোনো ব্যক্তি অথবা তার নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির নিকট এমন পরিমাণ অর্থ কিংবা সম্পদ রয়েছে যা ঐ ব্যক্তির জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তবে সরকার ঐ ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তার সম্পত্তি, দায়দেনা এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ আকারে প্রেরণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। ঐ ব্যক্তি যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার বক্তব্য এবং তথ্যাদি প্রেরণে ব্যর্থ হন অথবা তিনি যদি মিথ্যা বক্তব্য কিংবা মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, তবে দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি কিংবা ঐ ব্যক্তির নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির নামে যদি এমন স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পতি থাকে যা অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় এবং ঐ ব্যক্তির জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে প্রমাণিত হয় এবং তিনি যদি এই মর্মে আদালতের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হন যে, ঐ সম্পত্তিসমূহের তিনিই বৈধ মালিক, তবে তার এ ব্যর্থতা উক্ত আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। | ||
'''বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৪৭''' এ আইন মজুদদারি, চোরাকারবারি, ডাকটিকিট ও মুদ্রা জালকরণ, পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ অথবা ভেজালমিশ্রিত দুধ, পানীয়, ঔষধপত্র কিংবা প্রসাধন সামগ্রি বিক্রয় করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। এ আইনে আরো বলা আছে যে, উল্লিখিত অপরাধসমূহ সংঘটনকারী সংস্থা, কোম্পানি কিংবা যৌথ কারবারি অংশীদার, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব অথবা কোনো কর্মকর্তা কিংবা এজেন্টও দোষী এবং শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। শাস্তির মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কঠোর শাস্তিসহ ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। তবে এক্ষেত্রে ন্যূনতম শাস্তি হচ্ছে জরিমানা সহ এক থেকে দু’বছরের কারাদন্ড। | '''''বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৪৭''''' এ আইন মজুদদারি, চোরাকারবারি, ডাকটিকিট ও মুদ্রা জালকরণ, পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ অথবা ভেজালমিশ্রিত দুধ, পানীয়, ঔষধপত্র কিংবা প্রসাধন সামগ্রি বিক্রয় করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। এ আইনে আরো বলা আছে যে, উল্লিখিত অপরাধসমূহ সংঘটনকারী সংস্থা, কোম্পানি কিংবা যৌথ কারবারি অংশীদার, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব অথবা কোনো কর্মকর্তা কিংবা এজেন্টও দোষী এবং শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। শাস্তির মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কঠোর শাস্তিসহ ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। তবে এক্ষেত্রে ন্যূনতম শাস্তি হচ্ছে জরিমানা সহ এক থেকে দু’বছরের কারাদন্ড। | ||
'''যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০''' যৌতুক নিষিদ্ধ করার জন্য এ আইনটি প্রণীত হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে যে, পণ প্রদান অথবা গ্রহণ কিংবা দাবি করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে কারাদন্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয়ই। | '''''যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০''''' যৌতুক নিষিদ্ধ করার জন্য এ আইনটি প্রণীত হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে যে, পণ প্রদান অথবা গ্রহণ কিংবা দাবি করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে কারাদন্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয়ই। | ||
'''মাদক | '''''মাদক (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯০''''' এ আইনে অ্যালকোহল ব্যতীত যেকোন ধরনের মাদকদ্রব্যের চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, স্থানান্তর, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তগতকরণ, সংরক্ষণ, মজুতকরণ, প্রদর্শন এবং ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন মদ তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে এমন কোনো গাছগাছালি বা উপাদানের চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বহন, স্থানান্তর, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তগতকরণ, সংরক্ষণ মজুদকরণ এবং প্রদর্শনও নিষিদ্ধ করেছে। অবশ্য যেকোন ধরনের মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, বহন এবং স্থানান্তরের জন্য লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা ছাড়পত্রধারী ব্যক্তিদের বেলায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তবে বৈধ লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা পাশ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞাসমূহ ভঙ্গ করা দন্ডনীয় অপরাধ এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ও প্রকৃতি অনুসারে অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন অথবা অন্য যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করা হবে। আইনে আরো বলা আছে যে, মাদকদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহূত হয় এমন যন্ত্রপাতি বা বস্ত্ত নিজের কাছে রাখলেও তাকে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে। মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনে নিজের ঘরবাড়ি বা পরিবহণ অন্যকে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়াও এ আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া মাদকদ্রব্য আইনের আওতায় যেসব কাজ করার জন্য লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা পাশ প্রদানের ব্যবস্থা চালু আছে সেসব কাজ লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা পাশ ছাড়া করাও দন্ডনীয় অপরাধ। এমনকি লাইসেন্স বা অনুমতিপত্রে বর্ণিত কোনো শর্ত ভঙ্গ করাও দন্ডনীয় অপরাধ। তল্লাশি চালানো, জব্দ করা বা গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত মাদকদ্রব্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা যদি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কোনো স্থানে তল্লাশি চালায়, ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি জব্দ করে অথবা হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে, তবে সে কর্মকর্তাও এ আইনে দন্ডনীয় হবেন। | ||
'''নারী ও শিশু নির্যাতন | '''''নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫''''' কোনো ব্যক্তি যদি বিষাক্ত, দাহ্য বা দেহের ক্ষয়সাধনকারী কোনো বস্ত্ত দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটায়, তবে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে। উল্লিখিত বস্ত্ত দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর দেহে নিদারুণ আঘাত প্রদানের ফলে যদি কোনো নারী বা শিশু চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারায়, তার মাথা কিংবা মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে যায়, শ্রবণশক্তি চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায় অথবা দেহের কোনো অঙ্গ কিংবা গ্রন্থি স্থায়িভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তবে এ আইনে তা দন্ডনীয় অপরাধ। শাস্তিস্বরূপ এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ন্যূনতম ৭ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। | ||
এ আইনে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণের শাস্তিস্বরূপ অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। তবে ধর্ষণের কারণে যদি কোনো নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তবে সেক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। গণধর্ষণের কারণে কোনো নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু হলে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের মাধ্যমে কোনো নারী বা শিশুকে হত্যা কিংবা তার শারীরিক ক্ষতি সাধনের প্রচেষ্টা চালানোর শাস্তিও হচ্ছে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে বা বেআইনি কিংবা অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে নারী অপহরণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো মহিলাকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত বা পতিতালয়ে ব্যবহারের জন্য অপহরণ করা, কোনো মেয়েকে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য করা অথবা তাকে ভয়-ভীতি কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে বা ফুসলিয়ে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করার শাস্তি যাবজ্জীবন অথবা ন্যূনতম ৭ বছর থেকে ১০ বছরের কারাদন্ড। যৌতুকের কারণে কোনো নারীকে হত্যা করা হলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যৌতুকের জন্য কোনো নারীর উপর কঠোর দৈহিক নির্যাতন চালানোর শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১৪ বছরের কারাদন্ড। তবে কোনো অবস্থাতেই এ শাস্তির পরিমাণ ৫ বছরের কম হবে না। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের কারণে কোনো মহিলার জীবনহানির আশংকা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অবৈধভাবে শিশু পাচার কিংবা হাজতে অথবা কারো কাছে কোনো শিশুকে আটক রাখার শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। শিশু অপহরণ কিংবা অন্যায়ভাবে কোনো শিশুকে লুকিয়ে রাখার শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। [মমতাজউদ্দিন আহমদ] | এ আইনে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণের শাস্তিস্বরূপ অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। তবে ধর্ষণের কারণে যদি কোনো নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তবে সেক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। গণধর্ষণের কারণে কোনো নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু হলে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের মাধ্যমে কোনো নারী বা শিশুকে হত্যা কিংবা তার শারীরিক ক্ষতি সাধনের প্রচেষ্টা চালানোর শাস্তিও হচ্ছে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে বা বেআইনি কিংবা অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে নারী অপহরণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো মহিলাকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত বা পতিতালয়ে ব্যবহারের জন্য অপহরণ করা, কোনো মেয়েকে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য করা অথবা তাকে ভয়-ভীতি কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে বা ফুসলিয়ে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করার শাস্তি যাবজ্জীবন অথবা ন্যূনতম ৭ বছর থেকে ১০ বছরের কারাদন্ড। যৌতুকের কারণে কোনো নারীকে হত্যা করা হলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যৌতুকের জন্য কোনো নারীর উপর কঠোর দৈহিক নির্যাতন চালানোর শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১৪ বছরের কারাদন্ড। তবে কোনো অবস্থাতেই এ শাস্তির পরিমাণ ৫ বছরের কম হবে না। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের কারণে কোনো মহিলার জীবনহানির আশংকা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অবৈধভাবে শিশু পাচার কিংবা হাজতে অথবা কারো কাছে কোনো শিশুকে আটক রাখার শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। শিশু অপহরণ কিংবা অন্যায়ভাবে কোনো শিশুকে লুকিয়ে রাখার শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। [মমতাজউদ্দিন আহমদ] | ||
[[en:Penal Laws]] | [[en:Penal Laws]] |
০৫:২৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ফৌজদারি দন্ডবিধি যেসব আইন নির্দিষ্ট ধরনের আচরণের পর্যায়ে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদন ও পরিহার করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং এজন্য শাস্তির বিধান করেছে, সেসব আইনকে দন্ডবিধি বলা হয়। সাধারণ অর্থে, একটি সমাজের স্বাধীন জনগোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধসমূহকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই ফৌজদারি অপরাধসমূহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসকল ফৌজদারি দন্ডবিধি চালু আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: দন্ডবিধি ১৮৬০, গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ আইন ১৮৭১, অস্ত্র আইন ১৮৭৮, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭, দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, মাদক (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯০, নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫।
দন্ডবিধি ১৮৬০ দন্ডবিধিই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত প্রাচীনতম ও প্রধান আইনসংকলন। এ বিধির আওতাভুক্ত অপরাধসমূহ হচ্ছে: রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ; সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্পর্কিত অপরাধ; সর্বসাধারণের শান্তি বিনষ্টকারী অপরাধ; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা সংঘটিত অথবা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধ; নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ; সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের আইনগত কর্তৃত্বের অবমাননা জনিত অপরাধ; মিথ্যা সাক্ষ্যদান এবং সর্বজনীন সুবিচার বিরোধী অপরাধ; মুদ্রা ও সরকারি ডাকটিকিট সংক্রান্ত অপরাধ; ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অপরাধ; জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, এবং সর্বসাধারণের সুযোগ-সুবিধা, শালীনতা ও নৈতিকতা বিনষ্টকারী অপরাধ; ধর্ম সম্পর্কিত অপরাধ; মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অপরাধ, যথা, জীবননাশক অপরাধ, গর্ভপাত সংঘটন, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি ও বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধ, বিশ্বাস ভঙ্গজনিত ফৌজদারি অপরাধ ইত্যাদি।
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রধানত: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা ঘোষণা দানের প্রচেষ্টা অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করতে অন্যকে প্ররোচিত করা; অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া; বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা; রাষ্ট্রদ্রোহ; বাংলাদেশের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা; এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা সরকারকে কোনো আইনসঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার অথবা এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করা। অন্যদিকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সংক্রান্ত অপরাধের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: সেনা বিদ্রোহে মদদ দান; একজন সৈনিক, নাবিক অথবা বিমানসেনাকে তার দায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে প্ররোচিত করা; সৈনিক, নাবিক কিংবা একজন বিমানসেনাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনকালে আঘাত করতে প্ররোচিত করা; একজন সৈনিক, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে তার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করা; দলত্যাগকারী সৈন্য, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে আশ্রয়দান এবং তাদের ব্যবহূত পোশাক পরিধান করা অথবা তাদের ব্যবহূত চিহ্ন ধারণ করা। ধর্ম সম্পৃক্ত অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে: কোনো উপাসনাস্থলের ক্ষতিসাধন অথবা তাকে কলুষিত করা; উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক আচরণের মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্বক তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা; ধর্মীয় সমাবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা; ব্যক্তিবিশেষের ধর্মকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, সমাধিক্ষেত্র অথবা শ্মশানালয়ে অনধিকার প্রবেশ এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ ধরনের কোনো শব্দ অথবা ধ্বনি উচ্চারণ করা।
অপহরণ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, অসৎ ও বেআইনি ভাবে সম্পত্তি দখল, কোনো মহিলাকে ধর্ষণ, ফৌজদারি পর্যায়ের বিশ্বাস ভঙ্গ প্রভৃতি দন্ড বিধির আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সাথে নরহত্যা পর্যায়ের অন্যান্য অপরাধ, প্রতারণাপূর্ণ ভাবে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত হস্তান্তর দলিল সম্পাদন, গবাদিপশু হত্যা বা পঙ্গু করে দেয়া এবং অন্যের গৃহে অনধিকার প্রবেশের মত অপরাধও শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় পড়ে।
অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী একজন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, জরিমানা এবং বেত্রাঘাতের মত শাস্তি প্রদান করা হয়। দন্ডবিধির আওতায় মৃত্যুদন্ডই হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সেনাবিদ্রোহে মদদ দান, সজ্ঞানে মিথ্যা সাক্ষ্য দান, যার ফলে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত, নরহত্যা, শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ কোনো ব্যক্তি অথবা মাতাল কাউকে আত্মহননে প্ররোচিত করা, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত কোনো ব্যক্তির দ্বারা অন্য কাউকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো, দশ বছরের কম বয়স্ক কাউকে অপহরণ এবং ডাকাতি করতে গিয়ে নরহত্যার মতো অপরাধ সংঘটনকারীর উপর এ মৃত্যুদন্ড আরোপ করা হয়। তবে এসব অপরাধসহ অন্য কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও প্রদান করা হয়। বাদ বাকি অপরাধের জন্য সশ্রম অথবা বিনা শ্রমে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড আরোপ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত কারাদন্ডের পরিবর্তে কেবলমাত্র অর্থদন্ড প্রদান করতে পারেন। কোনো কোনো জঘন্য অপরাধের শাস্তিস্বরূপ আদালত কারাদন্ড সহ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতে পারেন। আবার এমন কিছু অপরাধ আছে, যার দন্ড হিসেবে আদালত দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কোনো আসামীর দন্ড লঘু করে কুড়ি বছরের কম যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে পুরোপুরি ক্ষমা, তার দন্ডাদেশের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত অথবা তাকে লঘুতর কোনো দন্ড প্রদান করতে পারেন।
গবাদি পশুর অনধিকারপ্রবেশ আইন ১৮৭১ এ আইনে বেআইনিভাবে গবাদি পশু অপহরণের বিরুদ্ধে নালিশ দায়ের এবং নালিশ গঠন প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং পশু আটক রাখার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে গবাদি পশু বলপূর্বক প্রতিরোধ এবং আটককৃত পশু বলপূর্বক ছাড়িয়ে আনাও এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং এ অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। গৃহপালিত পশু যদি অন্যের জমি বা ফসল অথবা সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তার ক্ষতিসাধন করে তবে শাস্তি স্বরূপ সে পশুর মালিক অথবা রক্ষণাবেক্ষণকারীর উপর আর্থিক জরিমানা আরোপের ব্যবস্থা রয়েছে। খোয়াড়ের মালিক যদি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে এ আইনের আওতায় তাকেও অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।
অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এ আইনে অননুমোদিতভাবে অস্ত্র নির্মাণ, এর আংশিক পরিবর্তন ও বেচাকেনা, অস্ত্র আমদানি ও রপ্তানি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেআইনি কোনো অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজের কাছে লাইসেন্সবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র রাখা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার কিংবা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে কাজকারবার করার জন্য লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থাও এ আইনে রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে থানায় অথবা লাইসেন্সধারী সরবরাহকারির নিকট কোনো কোনো অস্ত্র জমা দেওয়ার কথাও বলা আছে। এ আইন সরকারকে লাইসেন্স প্রদান, অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ আরোপ, লাইসেন্স বাতিল অথবা এর কার্যকারিতা স্থগিত করা সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরি করার মত ক্ষমতাও প্রদান করেছে। উল্লিখিত বিধিনিষেধসমূহ ভঙ্গ করা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তির পরিমাণ হচ্ছে যাবজ্জীবন অথবা কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড। এছাড়া জ্ঞাতসারে লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়, আইনত অস্ত্র রাখতে পারে না এমন ব্যক্তির নিকট অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ এবং আলোচ্য আইনের অন্য যেকোন ধারা ভঙ্গ করাও এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধের মাত্রাভেদে এ ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে ছয় মাস পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই।
বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮ এ আইনের আওতায় বিস্ফোরক দ্রব্য বলতে বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোন ধরনের দ্রব্যকেই বুঝায়। এ ছাড়াও কোনো বিস্ফোরণ সংঘটন অথবা বিস্ফোরণ সংঘটনে সাহায্য করে এমন যেকোন ধরনের সামগ্রী, যন্ত্রপাতি অথবা যন্ত্রাংশও বিস্ফোরক দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যদি এমন বিস্ফোরণ ঘটানো হয় যা জীবনহানি ঘটায়, মানুষের জীবন অথবা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো অপরাধ সংঘটন কিংবা অপরাধ সংঘটনে অন্যকে সুযোগ করে দেয়, তবে তা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রেও অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কমপক্ষে ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রচেষ্টা অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি কিংবা তা নিজের কাছে রাখাও দন্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। এমনকি এ সমস্ত অপরাধ সংঘটনে অপরকে প্ররোচনা দানও এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে প্ররোচনা দানকারীকেও বিস্ফোরক সংঘটনজনিত অপরাধের শাস্তির অনুরূপ শাস্তিই প্রদান করার বিধান রয়েছে।
দুর্নীতি দমন আইন ১৯৪৭ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িত হতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি ফৌজদারি পর্যায়ের অসদুপায় অবলম্বন করে অথবা করার চেষ্টা করে, তবে এ আইনের আওতায় সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সাত বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা কারা ও অর্থ উভয় দন্ড। এ আইনে বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি অথবা তার নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির অধিকারে যদি এমন পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকে যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং তিনি যদি এ অর্থ ও সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে না পারেন অথবা অন্য কোনভাবে প্রমাণিত না হয় যে এগুলো বৈধভাবেই তার নিজস্ব, তবে সেক্ষেত্রে এ অর্থ ও সম্পদ রাখার দায়ে তিনি অভিযুক্ত এবং আদালতে ফৌজদারি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হবেন, এবং আদালত কেবল অনুমানের উপর নির্ভর করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এ যুক্তিতে তার শাস্তি বাতিলযোগ্য বিবেচিত হবে না।
দুর্নীতি দমন আইন ১৯৫৭ এ আইনে বিধান করা হয় যে সরকার যদি তথ্য প্রাপ্তির পর অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হন যে, কোনো ব্যক্তি অথবা তার নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির নিকট এমন পরিমাণ অর্থ কিংবা সম্পদ রয়েছে যা ঐ ব্যক্তির জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তবে সরকার ঐ ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তার সম্পত্তি, দায়দেনা এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ আকারে প্রেরণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। ঐ ব্যক্তি যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার বক্তব্য এবং তথ্যাদি প্রেরণে ব্যর্থ হন অথবা তিনি যদি মিথ্যা বক্তব্য কিংবা মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, তবে দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি কিংবা ঐ ব্যক্তির নিজস্ব কোনো প্রতিনিধির নামে যদি এমন স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পতি থাকে যা অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় এবং ঐ ব্যক্তির জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে প্রমাণিত হয় এবং তিনি যদি এই মর্মে আদালতের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হন যে, ঐ সম্পত্তিসমূহের তিনিই বৈধ মালিক, তবে তার এ ব্যর্থতা উক্ত আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৪৭ এ আইন মজুদদারি, চোরাকারবারি, ডাকটিকিট ও মুদ্রা জালকরণ, পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ অথবা ভেজালমিশ্রিত দুধ, পানীয়, ঔষধপত্র কিংবা প্রসাধন সামগ্রি বিক্রয় করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। এ আইনে আরো বলা আছে যে, উল্লিখিত অপরাধসমূহ সংঘটনকারী সংস্থা, কোম্পানি কিংবা যৌথ কারবারি অংশীদার, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব অথবা কোনো কর্মকর্তা কিংবা এজেন্টও দোষী এবং শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। শাস্তির মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কঠোর শাস্তিসহ ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড। তবে এক্ষেত্রে ন্যূনতম শাস্তি হচ্ছে জরিমানা সহ এক থেকে দু’বছরের কারাদন্ড।
যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ যৌতুক নিষিদ্ধ করার জন্য এ আইনটি প্রণীত হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে যে, পণ প্রদান অথবা গ্রহণ কিংবা দাবি করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে কারাদন্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয়ই।
মাদক (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯০ এ আইনে অ্যালকোহল ব্যতীত যেকোন ধরনের মাদকদ্রব্যের চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, স্থানান্তর, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তগতকরণ, সংরক্ষণ, মজুতকরণ, প্রদর্শন এবং ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন মদ তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে এমন কোনো গাছগাছালি বা উপাদানের চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বহন, স্থানান্তর, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তগতকরণ, সংরক্ষণ মজুদকরণ এবং প্রদর্শনও নিষিদ্ধ করেছে। অবশ্য যেকোন ধরনের মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, বহন এবং স্থানান্তরের জন্য লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা ছাড়পত্রধারী ব্যক্তিদের বেলায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তবে বৈধ লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা পাশ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞাসমূহ ভঙ্গ করা দন্ডনীয় অপরাধ এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ও প্রকৃতি অনুসারে অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন অথবা অন্য যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করা হবে। আইনে আরো বলা আছে যে, মাদকদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহূত হয় এমন যন্ত্রপাতি বা বস্ত্ত নিজের কাছে রাখলেও তাকে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে। মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনে নিজের ঘরবাড়ি বা পরিবহণ অন্যকে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়াও এ আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া মাদকদ্রব্য আইনের আওতায় যেসব কাজ করার জন্য লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা পাশ প্রদানের ব্যবস্থা চালু আছে সেসব কাজ লাইসেন্স, অনুমতিপত্র বা পাশ ছাড়া করাও দন্ডনীয় অপরাধ। এমনকি লাইসেন্স বা অনুমতিপত্রে বর্ণিত কোনো শর্ত ভঙ্গ করাও দন্ডনীয় অপরাধ। তল্লাশি চালানো, জব্দ করা বা গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত মাদকদ্রব্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা যদি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কোনো স্থানে তল্লাশি চালায়, ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি জব্দ করে অথবা হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে, তবে সে কর্মকর্তাও এ আইনে দন্ডনীয় হবেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫ কোনো ব্যক্তি যদি বিষাক্ত, দাহ্য বা দেহের ক্ষয়সাধনকারী কোনো বস্ত্ত দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটায়, তবে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে। উল্লিখিত বস্ত্ত দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর দেহে নিদারুণ আঘাত প্রদানের ফলে যদি কোনো নারী বা শিশু চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারায়, তার মাথা কিংবা মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে যায়, শ্রবণশক্তি চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায় অথবা দেহের কোনো অঙ্গ কিংবা গ্রন্থি স্থায়িভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তবে এ আইনে তা দন্ডনীয় অপরাধ। শাস্তিস্বরূপ এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ন্যূনতম ৭ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
এ আইনে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণের শাস্তিস্বরূপ অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। তবে ধর্ষণের কারণে যদি কোনো নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তবে সেক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। গণধর্ষণের কারণে কোনো নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু হলে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের মাধ্যমে কোনো নারী বা শিশুকে হত্যা কিংবা তার শারীরিক ক্ষতি সাধনের প্রচেষ্টা চালানোর শাস্তিও হচ্ছে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে বা বেআইনি কিংবা অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে নারী অপহরণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো মহিলাকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত বা পতিতালয়ে ব্যবহারের জন্য অপহরণ করা, কোনো মেয়েকে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য করা অথবা তাকে ভয়-ভীতি কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে বা ফুসলিয়ে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করার শাস্তি যাবজ্জীবন অথবা ন্যূনতম ৭ বছর থেকে ১০ বছরের কারাদন্ড। যৌতুকের কারণে কোনো নারীকে হত্যা করা হলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যৌতুকের জন্য কোনো নারীর উপর কঠোর দৈহিক নির্যাতন চালানোর শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১৪ বছরের কারাদন্ড। তবে কোনো অবস্থাতেই এ শাস্তির পরিমাণ ৫ বছরের কম হবে না। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের কারণে কোনো মহিলার জীবনহানির আশংকা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অবৈধভাবে শিশু পাচার কিংবা হাজতে অথবা কারো কাছে কোনো শিশুকে আটক রাখার শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। শিশু অপহরণ কিংবা অন্যায়ভাবে কোনো শিশুকে লুকিয়ে রাখার শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। [মমতাজউদ্দিন আহমদ]