পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা''' (Water Resources Management) ব্যবহারযোগ্য পানি আহরণ ও পানি থেকে সমাজের জন্য আবশ্যকীয় পণ্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন ব্যবস্থা। এজন্য পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে ভৌত-কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, এতদ্সংক্রান্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং আইন ও নানারকম বিধিবিধান। | '''পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা''' (Water Resources Management) ব্যবহারযোগ্য পানি আহরণ ও পানি থেকে সমাজের জন্য আবশ্যকীয় পণ্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন ব্যবস্থা। এজন্য পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে ভৌত-কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, এতদ্সংক্রান্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং আইন ও নানারকম বিধিবিধান। | ||
''বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা'' প্রাকৃতিক কাঠামো এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার নির্মিত অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ বা উৎপাদন এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এসবের লভ্যতা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়ে গঠিত। কৃষি বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত এবং পানি সম্পদের প্রধান ব্যবহারকারী। কৃষিখাত ছাড়া পানির আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারও ব্যাপক। নদী-নালা এবং পুকুর-বিল-হাওর ইত্যাদি, মৎস্য, বন ও নৌ-পরিবহণ ইত্যাদি খাত ছাড়াও পানি সম্পদ পরিবেশ দূষণ রোধ, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বিনোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের পানি সম্পদের প্রাকৃতিক উৎসমূহ হচ্ছে: (ক) নদী-নালা ও খাল-বিল; (খ) প্লাবনভূমি; (গ) জলাভূমি; (ঘ) হাওর, বাঁওড় ও হ্রদ; (ঙ) পুকুর; (চ) জোয়ার প্লাবিত জমি এবং (ছ) ভূগর্ভস্থ জলস্তর। | |||
''পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার জটিল ক্ষেত্রসমূহ'' বাংলাদেশে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার কতকগুলি জটিল ও দুরূহ ক্ষেত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও শুষ্ক মৌসুমে খরার সমস্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমবর্ধমান পানি চাহিদার মোকাবিলা, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, আর্সেনিক, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং নদীভাঙন। এছাড়া পানি সম্পদকেন্দ্রিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা বিশেষ করে, মৎস্য সম্পদের এলাকাসমূহ এবং জলাভূমি এলাকার পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিভিন্ন বিষয় যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, বহির্দেশীয় নদী বা নদী-অববাহিকায় পরিবর্তন ইত্যাদি বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাজকে খুবই জটিল করে তুলছে। সর্বোপরি, পানির বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাহিদার বিষয়টি তো রয়েছেই। | |||
''পানি সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত সমীক্ষা'' সরকারের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমীক্ষা প্রতিবেদন হচ্ছে: ১. তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন, জাতিসংঘের কারিগরি সহায়তা মিশন, ১৯৫৭ (ক্রুগ মিশন প্রতিবেদন); ২. পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টার প্ল্যান ১৯৬৪; ৩. মাস্টার প্ল্যান ১৯৬৪ পর্যালোচনার পর বিশ্বব্যাংক প্রণীত ১৯৬৬ সালের প্রতিবেদন; ৪. বিশ্বব্যাংক প্রণীত ভূমি ও পানি সম্পদ খাত সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৭২; ৫. পানি সম্পদ পরিকল্পনা (১ম পর্যায়) ১৯৮৬; ৬. জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা (২য় পর্যায়) ১৯৯১; ৭. ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান ১৯৮৯-৯৫; এবং ৮. বাংলাদেশ পানি সম্পদ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রতিবেদন ১৯৯৫। | |||
১৯৫৭ সালে প্রণীত ক্রুগ মিশন প্রতিবেদনটি ১৯৫৪, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৬ সালের উপর্যুপরি ভয়াবহ বন্যার পর পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর পরিচালিত ব্যাপক সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল একটি সরকারি কর্পোরেশন গঠন করা যার কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়নের সমস্যাসমূহকে সমন্বিতভাবে একত্রিত করে দায়িত্ব ও ক্ষমতা সহকারে সেগুলির সমাধান করা। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (East Pakistan Water and Power Development Board-EPWAPDA) - ইপিওয়াপদা গঠিত হয়। | ১৯৫৭ সালে প্রণীত ক্রুগ মিশন প্রতিবেদনটি ১৯৫৪, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৬ সালের উপর্যুপরি ভয়াবহ বন্যার পর পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর পরিচালিত ব্যাপক সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল একটি সরকারি কর্পোরেশন গঠন করা যার কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়নের সমস্যাসমূহকে সমন্বিতভাবে একত্রিত করে দায়িত্ব ও ক্ষমতা সহকারে সেগুলির সমাধান করা। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (East Pakistan Water and Power Development Board-EPWAPDA) - ইপিওয়াপদা গঠিত হয়। | ||
২৪ নং লাইন: | ২৪ নং লাইন: | ||
ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানের ফলাবর্তন হিসেবে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের পানি সম্পদ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রণীত হয়। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের পানি সম্পদ খাতের জন্য নীতি নির্ধারণ ও পানি খাতের উন্নয়ন ও এই খাতে গৃহীত কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়নের একটি কাঠামো উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি কার্যক্রমের সুপারিশ করা হয় যাতে ছিল (ক) একটি জাতীয় পানি সম্পদ নীতি প্রণয়ন; (খ) জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন; (গ) পরিকল্পনা, নির্মাণ, কার্যচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত পানিখাত সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ শক্তিশালীকরণ; এবং (ঘ) উচ্চ অগ্রাধিকার সম্বলিত প্রকল্পমালা বাস্তবায়ন। | ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানের ফলাবর্তন হিসেবে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের পানি সম্পদ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রণীত হয়। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের পানি সম্পদ খাতের জন্য নীতি নির্ধারণ ও পানি খাতের উন্নয়ন ও এই খাতে গৃহীত কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়নের একটি কাঠামো উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি কার্যক্রমের সুপারিশ করা হয় যাতে ছিল (ক) একটি জাতীয় পানি সম্পদ নীতি প্রণয়ন; (খ) জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন; (গ) পরিকল্পনা, নির্মাণ, কার্যচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত পানিখাত সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ শক্তিশালীকরণ; এবং (ঘ) উচ্চ অগ্রাধিকার সম্বলিত প্রকল্পমালা বাস্তবায়ন। | ||
''পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশলগত কাঠামোবিষয়ক নীতি'' বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি সম্পদ নীতি ঘোষণা করে। এই নীতির ছয়টি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সামগ্রিক পরিবেশ প্রতিরক্ষা। পানি সম্পদ খাতের উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে এমন অন্যান্য সরকারি নীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতীয় পরিবেশ নীতি ১৯৯২, জাতীয় বন নীতি ১৯৯৪, জাতীয় জ্বালানি নীতি ১৯৯৬, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ১৯৯৮, জাতীয় মৎস্যচাষ নীতি ১৯৯৮, জাতীয় কৃষিনীতি ১৯৯৯ এবং শিল্পনীতি ১৯৯৯। | |||
''পানি সম্পদের উপর অধিকার ও পানি সম্পদ আইন'' ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের এবং ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত। বাংলাদেশে পানি সম্পদ খাত বিষয়ে প্রচুর আইন বিদ্যমান। এগুলির কোন কোনটি একশ বছরেরও আগে প্রণীত। বর্তমানে কার্যকর এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আইন হচ্ছে সেচ আইন ১৮৭৬, বাঁধ ও পয়ঃপ্রণালী আইন ১৯৫২, বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদেশ ১৯৭২, সেচের পানির মূল্যহার অধ্যাদেশ ১৯৮৩, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ১৯৮৫, পানি সম্পদ পরিকল্পনা আইন ১৯৯২, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭, পরিবেশ আদালত আইন ১৯৯৯, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০০০ এবং পৌর এলাকার জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০১। | |||
''আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রটোকল'' ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন বিষয়ক ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশে প্রবাহিত ৫৪টি সাধারণ নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত এটিই একমাত্র চুক্তি। বাংলাদেশ পানি সম্পদ ও পরিবেশ বিষয়ক বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছে। এগুলির মধ্যে আছে জৈব বৈচিত্র্য বিষয়ক ১৯৯২-এ রিও কনভেনশনের ২১ ধারা; সুন্দরবন ও হাওর জলাঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য জলাভূমি বিষয়ক ১৯৭১-এর রামসার কনভেনশন; বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও গাছপালার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক ১৯৭৩-এর কনভেনশন; বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ক ১৯৭২-এর কনভেনশন; জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ১৯৯২-এর জাতিসংঘ কনভেনশন; তৈলদূষণ থেকে সমুদ্র প্রতিরক্ষাবিষয়ক ১৯৫৪-এর আন্তর্জাতিক কনভেনশন; সামুদ্রিক দূষণ বিষয়ক বিভিন্ন কনভেনশন; এবং ক্ষতিকর বর্জ্যবিষয়ক বাসেল কনভেনশন। | |||
''প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো'' বর্তমানে পানি সম্পদ খাতে কার্যক্রম পরিচালনায় চার ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত। এগুলি হচ্ছে সরকারি সংস্থা, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন অংশীদারদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। সরকারি সংস্থার মধ্যে আছে ১৩টি মন্ত্রণালয় এবং ৩৫টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, যৌথ নদী কমিশন; নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান; ভূতলের উপরিভাগের পানি মডেলিং কেন্দ্র; বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড; কৃষি মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর; ঢাকা পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়; পরিবেশ অধিদপ্তর; বন্দর, শিপিং ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ; মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়; মৎস্য অধিদপ্তর; এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো। স্থানীয় সরকারের প্রধান প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ। অন্যান্য ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে পড়ে কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সমবায় সমিতি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউএনডিপি এবং নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জাপান, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। | |||
''অংশীদারিত্বমূলক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা'' জাতীয় পানি সম্পদ নীতিতে বলা হয়েছে যে, প্রকল্পচক্রে সকল পর্যায়ে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ অর্থাৎ পানি সম্পদ ব্যবহারকারীদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পয়োনিষ্কাশন এলাকায় ব্লক বা চকভিত্তিক বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পও বিভিন্ন নামে পানি সম্পদ ব্যবহারকারীদের প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে। এ জাতীয় সংস্থার সাধারণ নাম হচ্ছে পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থা, যেগুলিতে অন্তর্ভুক্ত আছে পানি ব্যবস্থাপনা গ্রুপ, পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি এবং পানি ব্যবস্থাপনা সঙ্ঘ। পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলি সমবায় সমিতি আইন ১৯৮৬-র আওতায় নিবন্ধিত। | |||
''পানি খাতের প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ'' বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথাগত ধরন ছিল মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচের জন্য নানাবিধ কাঠামো নির্মাণ। সম্প্রতি বন্যা সতর্কীকরণ ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার উপায় সম্বলিত বিকল্প ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনায় যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে আছে: | |||
ক. গ্রামীণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন- দেশের অভ্যন্তরে এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহে বাঁধ নির্মাণ ও পোল্ডার নিক্ষেপ; পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রক পয়েন্ট স্থাপন; নদী শাসন, নদীতীর প্রতিরক্ষা ও নদী খনন। | ক. গ্রামীণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন- দেশের অভ্যন্তরে এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহে বাঁধ নির্মাণ ও পোল্ডার নিক্ষেপ; পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রক পয়েন্ট স্থাপন; নদী শাসন, নদীতীর প্রতিরক্ষা ও নদী খনন। | ||
৫৬ নং লাইন: | ৫৬ নং লাইন: | ||
ঞ. পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন- বাঁধ নির্মাণ, আড়বাঁধ নির্মাণ, নদীশাসন; বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। | ঞ. পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন- বাঁধ নির্মাণ, আড়বাঁধ নির্মাণ, নদীশাসন; বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। | ||
''জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা'' পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) ২০০১ সালে একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর পরিকল্পনাটি নবায়ন করার কথা। পরিকল্পনায় ৮৪টি কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলিকে ৮টি উপখাতে বিভক্ত ও ৮টি পরিকল্পনা এলাকার আওতাভুক্ত করা হয়। চিহ্নিত ৮টি উপখাত হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, সহায়ক পরিবেশ বিনির্মাণ, প্রধান নদনদী, নগর ও পল্লী এলাকা, প্রধান প্রধান নগর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, এবং পরিবেশ ও জলাশয়। ৮টি পরিকল্পনা এলাকা হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব, কেন্দ্রীয় উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, কেন্দ্রীয় দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্যভূমি এবং নদী ও জলাশয় এলাকা। পরিকল্পনায় প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, পরিবেশ বিনির্মাণ এবং পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনায় ২৫ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য মোট কার্যক্রমের বিনিয়োগ ব্যয় হিসাব করা হয় ৯১,৪৫৭ কোটি টাকা। [এইচ. এস মোজাদ্দাদ ফারুক] | |||
'''গ্রন্থপঞ্জি ''' পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯; EGIS, Guidebook for Integrated Water Resources Management: Concepts and Tools (Draft), Dhaka 2001; WARPO, Draft Final National Water Management Plan, Vol 1 & | '''গ্রন্থপঞ্জি''' পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯; EGIS, Guidebook for Integrated Water Resources Management: Concepts and Tools (Draft), Dhaka 2001; WARPO, Draft Final National Water Management Plan, Vol 1 & 2, Dhaka 2001. | ||
[[en:Water Resources Management]] | [[en:Water Resources Management]] |
১০:২৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Water Resources Management) ব্যবহারযোগ্য পানি আহরণ ও পানি থেকে সমাজের জন্য আবশ্যকীয় পণ্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন ব্যবস্থা। এজন্য পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে ভৌত-কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, এতদ্সংক্রান্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং আইন ও নানারকম বিধিবিধান।
বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক কাঠামো এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার নির্মিত অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ বা উৎপাদন এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এসবের লভ্যতা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়ে গঠিত। কৃষি বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত এবং পানি সম্পদের প্রধান ব্যবহারকারী। কৃষিখাত ছাড়া পানির আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারও ব্যাপক। নদী-নালা এবং পুকুর-বিল-হাওর ইত্যাদি, মৎস্য, বন ও নৌ-পরিবহণ ইত্যাদি খাত ছাড়াও পানি সম্পদ পরিবেশ দূষণ রোধ, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বিনোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের পানি সম্পদের প্রাকৃতিক উৎসমূহ হচ্ছে: (ক) নদী-নালা ও খাল-বিল; (খ) প্লাবনভূমি; (গ) জলাভূমি; (ঘ) হাওর, বাঁওড় ও হ্রদ; (ঙ) পুকুর; (চ) জোয়ার প্লাবিত জমি এবং (ছ) ভূগর্ভস্থ জলস্তর।
পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার জটিল ক্ষেত্রসমূহ বাংলাদেশে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার কতকগুলি জটিল ও দুরূহ ক্ষেত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও শুষ্ক মৌসুমে খরার সমস্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমবর্ধমান পানি চাহিদার মোকাবিলা, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, আর্সেনিক, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং নদীভাঙন। এছাড়া পানি সম্পদকেন্দ্রিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা বিশেষ করে, মৎস্য সম্পদের এলাকাসমূহ এবং জলাভূমি এলাকার পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিভিন্ন বিষয় যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, বহির্দেশীয় নদী বা নদী-অববাহিকায় পরিবর্তন ইত্যাদি বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাজকে খুবই জটিল করে তুলছে। সর্বোপরি, পানির বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাহিদার বিষয়টি তো রয়েছেই।
পানি সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত সমীক্ষা সরকারের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমীক্ষা প্রতিবেদন হচ্ছে: ১. তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন, জাতিসংঘের কারিগরি সহায়তা মিশন, ১৯৫৭ (ক্রুগ মিশন প্রতিবেদন); ২. পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টার প্ল্যান ১৯৬৪; ৩. মাস্টার প্ল্যান ১৯৬৪ পর্যালোচনার পর বিশ্বব্যাংক প্রণীত ১৯৬৬ সালের প্রতিবেদন; ৪. বিশ্বব্যাংক প্রণীত ভূমি ও পানি সম্পদ খাত সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৭২; ৫. পানি সম্পদ পরিকল্পনা (১ম পর্যায়) ১৯৮৬; ৬. জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা (২য় পর্যায়) ১৯৯১; ৭. ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান ১৯৮৯-৯৫; এবং ৮. বাংলাদেশ পানি সম্পদ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রতিবেদন ১৯৯৫।
১৯৫৭ সালে প্রণীত ক্রুগ মিশন প্রতিবেদনটি ১৯৫৪, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৬ সালের উপর্যুপরি ভয়াবহ বন্যার পর পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর পরিচালিত ব্যাপক সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল একটি সরকারি কর্পোরেশন গঠন করা যার কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়নের সমস্যাসমূহকে সমন্বিতভাবে একত্রিত করে দায়িত্ব ও ক্ষমতা সহকারে সেগুলির সমাধান করা। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (East Pakistan Water and Power Development Board-EPWAPDA) - ইপিওয়াপদা গঠিত হয়।
ইপিওয়াপদা-র ১৯৬৪ সালের মাস্টার প্ল্যানটি মূলত কৃষির জন্য পানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রণীত হয়। এই লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান বেশ কিছু বড় আকারের সরকারি উদ্যোগ শুকনা ও বর্ষা উভয় মৌসুমেই পানি ব্যবস্থাপনার কর্মসূচি চিহ্নিত করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল ভৌগোলিক অঞ্চল অনুযায়ী গ্রুপবদ্ধ মোট ৬৩টি পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প। মাস্টার প্ল্যানের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল জাতীয় পর্যায়ে পানি সম্পদ খাতের পরিকল্পনার সূচনা করা এবং এর সূত্র ধরে, জলোচ্ছ্বাসজনিত বন্যা থেকে অধিকাংশ উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রতিরক্ষাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন (Flood Control and Drainage-FCD) এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ (Flood Control, Drainage and Irrigation-FCDI) কর্মসূচির অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন।
বিশ্বব্যাংক মিশন ১৯৬৬ সালে ইপিওয়াপদা মাস্টার প্ল্যান ১৯৬৪ পর্যালোচনা করে। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ বিষয়ে মাস্টার প্ল্যানের মৌলিক নীতিসমূহকে যথার্থ বলে মত প্রকাশ করা হয়। তবে প্রতিবেদনটি মাস্টার প্ল্যানে বর্ণিত কৌশল ও বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে। বিশ্ব ব্যাংকের এই প্রতিবেদনটি অনেক দাতা সংস্থাকে বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সংক্রান্ত বৃহৎ, তুলনামূলকভাবে জটিল ও বিনিয়োগ উশুলে দীর্ঘ সময় নিতে পারে এজাতীয় প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে।
বিশ্বব্যাংক ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ভূমি ও পানি সম্পদের ওপর যে প্রতিবেদন প্রণয়ন করে তাতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশে পানি সম্পদ উন্নয়নের উদ্যোগসমূহ থেকে দ্রুত সুফল অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়তন, প্রযুক্তিগতভাবে সহজ এবং স্বল্প ব্যয়ের ও শ্রমঘন প্রকল্পসমূহকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বলে। এ জাতীয় প্রকল্প হিসেবে স্বল্প উচ্চতার বাঁধ এবং সাধারণ পানি নিষ্কাশন খালকে চিহ্নিত করা হয়। অগভীর পাম্প ও টিউবওয়েলের সাহায্যে সেচ প্রকল্পকে এ জাতীয় প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেদনটি সামগ্রিকভাবে গ্রহণ না করলেও এটির গবেষণা ফলাফল ও সুপারিশসমূহ সরকারের পানি সম্পদ উন্নয়নের কৌশলকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।
১৯৮৩ সালে গঠিত মাস্টার প্ল্যান সংস্থা ১৯৮৬ সালে জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে পানি সম্পদ উন্নয়নের ১৫টি সুনির্দিষ্ট ধরন চিহ্নিত করা হয় এবং ক. বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন; খ. সেচ; গ. বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ; এবং ঘ. বিবিধ বিষয়- এই চার ধরনের কর্মসূচি বিশ্লেষণ করা হয়। পরিকল্পনায় বিনিয়োগের জন্য যেসব ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় সেগুলি ছিল: ক. অগভীর নলকূপের সাহায্যে ক্ষুদ্রসেচ, খ. বড় ধরনের সেচ, গ. গভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ, এবং ঘ. বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন।
মাস্টার প্ল্যান সংস্থা পানি সম্পদ পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায় প্রণয়ন করে ১৯৯১ সালে। এতে প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম হালনাগাদ করে বিস্তারিত বিনিয়োগ কর্মসূচিসহ নতুন প্রকল্পসমূহের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে ১৯৯১-২০১০ সালের জন্য একটি ২০ বৎসর মেয়াদি সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনাও তৈরি করা হয় এবং তাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের উপর জোর দেওয়া হয়। সরকার অবশ্য মাস্টার প্ল্যান সংস্থার পরিকল্পনাকে অনুমোদন দেয় নি। তবে দুই পর্যায়ের কার্যক্রমগুলি এবং প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিশ্লেষণ বাংলাদেশের পানি সম্পদ সম্পর্কে স্বচ্ছতর জ্ঞান ও ধারণা দিতে যথেষ্ট সাহায্য করে। এছাড়া, এসব পরিকল্পনায় ব্যবহূত তথ্যও পরবর্তীকালে পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়নে খুবই সহায়ক হয়।
১৯৮৭ এবং ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর বাংলাদেশ সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী বিদেশি সংস্থা ও সরকারসমূহ পুনর্বার বাংলাদেশের, বিশেষ করে এখানকার শহরাঞ্চলের বন্যা নিয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়। ১৯৮৯ সালে বন্যা পরিকল্পনা সমন্বয় সংস্থা গঠিত হয় এবং তা ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান নামে একটি কার্যক্রমের আওতায় ২৬টি সমীক্ষা কাজে হাত দেয়। ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল: ক. অবকাঠামো ছাড়া অন্যবিধ উপায়ে বন্যা মোকাবিলার উপায় নির্ধারণ; খ. আঞ্চলিক পরিকল্পনায় কৃষিখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া; এবং গ. সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাবকে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া, বিশেষত মৎস্য চাষ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় জনগণের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া।
ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানের ফলাবর্তন হিসেবে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের পানি সম্পদ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রণীত হয়। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের পানি সম্পদ খাতের জন্য নীতি নির্ধারণ ও পানি খাতের উন্নয়ন ও এই খাতে গৃহীত কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়নের একটি কাঠামো উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি কার্যক্রমের সুপারিশ করা হয় যাতে ছিল (ক) একটি জাতীয় পানি সম্পদ নীতি প্রণয়ন; (খ) জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন; (গ) পরিকল্পনা, নির্মাণ, কার্যচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত পানিখাত সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ শক্তিশালীকরণ; এবং (ঘ) উচ্চ অগ্রাধিকার সম্বলিত প্রকল্পমালা বাস্তবায়ন।
পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশলগত কাঠামোবিষয়ক নীতি বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি সম্পদ নীতি ঘোষণা করে। এই নীতির ছয়টি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সামগ্রিক পরিবেশ প্রতিরক্ষা। পানি সম্পদ খাতের উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে এমন অন্যান্য সরকারি নীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতীয় পরিবেশ নীতি ১৯৯২, জাতীয় বন নীতি ১৯৯৪, জাতীয় জ্বালানি নীতি ১৯৯৬, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ১৯৯৮, জাতীয় মৎস্যচাষ নীতি ১৯৯৮, জাতীয় কৃষিনীতি ১৯৯৯ এবং শিল্পনীতি ১৯৯৯।
পানি সম্পদের উপর অধিকার ও পানি সম্পদ আইন ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের এবং ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত। বাংলাদেশে পানি সম্পদ খাত বিষয়ে প্রচুর আইন বিদ্যমান। এগুলির কোন কোনটি একশ বছরেরও আগে প্রণীত। বর্তমানে কার্যকর এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আইন হচ্ছে সেচ আইন ১৮৭৬, বাঁধ ও পয়ঃপ্রণালী আইন ১৯৫২, বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদেশ ১৯৭২, সেচের পানির মূল্যহার অধ্যাদেশ ১৯৮৩, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ১৯৮৫, পানি সম্পদ পরিকল্পনা আইন ১৯৯২, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭, পরিবেশ আদালত আইন ১৯৯৯, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০০০ এবং পৌর এলাকার জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০১।
আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রটোকল ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন বিষয়ক ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশে প্রবাহিত ৫৪টি সাধারণ নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত এটিই একমাত্র চুক্তি। বাংলাদেশ পানি সম্পদ ও পরিবেশ বিষয়ক বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছে। এগুলির মধ্যে আছে জৈব বৈচিত্র্য বিষয়ক ১৯৯২-এ রিও কনভেনশনের ২১ ধারা; সুন্দরবন ও হাওর জলাঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য জলাভূমি বিষয়ক ১৯৭১-এর রামসার কনভেনশন; বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও গাছপালার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক ১৯৭৩-এর কনভেনশন; বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ক ১৯৭২-এর কনভেনশন; জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ১৯৯২-এর জাতিসংঘ কনভেনশন; তৈলদূষণ থেকে সমুদ্র প্রতিরক্ষাবিষয়ক ১৯৫৪-এর আন্তর্জাতিক কনভেনশন; সামুদ্রিক দূষণ বিষয়ক বিভিন্ন কনভেনশন; এবং ক্ষতিকর বর্জ্যবিষয়ক বাসেল কনভেনশন।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বর্তমানে পানি সম্পদ খাতে কার্যক্রম পরিচালনায় চার ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত। এগুলি হচ্ছে সরকারি সংস্থা, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন অংশীদারদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। সরকারি সংস্থার মধ্যে আছে ১৩টি মন্ত্রণালয় এবং ৩৫টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, যৌথ নদী কমিশন; নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান; ভূতলের উপরিভাগের পানি মডেলিং কেন্দ্র; বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড; কৃষি মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর; ঢাকা পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়; পরিবেশ অধিদপ্তর; বন্দর, শিপিং ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ; মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়; মৎস্য অধিদপ্তর; এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো। স্থানীয় সরকারের প্রধান প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ। অন্যান্য ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে পড়ে কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সমবায় সমিতি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউএনডিপি এবং নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জাপান, যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
অংশীদারিত্বমূলক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা জাতীয় পানি সম্পদ নীতিতে বলা হয়েছে যে, প্রকল্পচক্রে সকল পর্যায়ে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ অর্থাৎ পানি সম্পদ ব্যবহারকারীদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পয়োনিষ্কাশন এলাকায় ব্লক বা চকভিত্তিক বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পও বিভিন্ন নামে পানি সম্পদ ব্যবহারকারীদের প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে। এ জাতীয় সংস্থার সাধারণ নাম হচ্ছে পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থা, যেগুলিতে অন্তর্ভুক্ত আছে পানি ব্যবস্থাপনা গ্রুপ, পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি এবং পানি ব্যবস্থাপনা সঙ্ঘ। পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলি সমবায় সমিতি আইন ১৯৮৬-র আওতায় নিবন্ধিত।
পানি খাতের প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথাগত ধরন ছিল মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচের জন্য নানাবিধ কাঠামো নির্মাণ। সম্প্রতি বন্যা সতর্কীকরণ ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার উপায় সম্বলিত বিকল্প ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনায় যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে আছে:
ক. গ্রামীণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন- দেশের অভ্যন্তরে এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহে বাঁধ নির্মাণ ও পোল্ডার নিক্ষেপ; পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রক পয়েন্ট স্থাপন; নদী শাসন, নদীতীর প্রতিরক্ষা ও নদী খনন।
খ. শহর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন- শহর রক্ষাবাঁধ; শহর এলাকা প্রতিরক্ষা স্থাপনা; রেগুলেটর, পাম্প ইত্যাদি।
গ. ক্ষুদ্র সেচ- গভীর ও অগভীর নলকূপ; রাবার বাঁধ; খাল পুনঃখনন।
ঘ. বৃহৎ সেচ- পাম্প; সেচখাল নেটওয়ার্ক; পানি নিষ্কাশন খাল নেটওয়ার্ক; ব্যারেজ ইত্যাদি।
ঙ. বন্যা থেকে প্রতিরক্ষা- বাস্তভিটা উঁচুকরণ এবং আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ।
চ. বন্যা সতর্কীকরণ- বন্যা/দুর্যোগ সম্পর্কে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ, দূর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্ত্ততি এবং ব্যবস্থাপনা।
ছ. পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন- ভুপৃষ্ঠের উপরিস্থ এবং ভূগর্ভস্থ উভয় প্রকার উৎস থেকে সংগৃহীত পানি পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ; পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা; টিউবওয়েলের সাহায্যে খাবার পানি সরবরাহ।
জ. ড্রেজিং - নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও নৌচলাচল সুগমকরণ।
ঝ. ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্ত্ততি- ভেড়িবাঁধ; ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রভৃতি নির্মাণ।
ঞ. পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন- বাঁধ নির্মাণ, আড়বাঁধ নির্মাণ, নদীশাসন; বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি।
জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) ২০০১ সালে একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর পরিকল্পনাটি নবায়ন করার কথা। পরিকল্পনায় ৮৪টি কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলিকে ৮টি উপখাতে বিভক্ত ও ৮টি পরিকল্পনা এলাকার আওতাভুক্ত করা হয়। চিহ্নিত ৮টি উপখাত হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, সহায়ক পরিবেশ বিনির্মাণ, প্রধান নদনদী, নগর ও পল্লী এলাকা, প্রধান প্রধান নগর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, এবং পরিবেশ ও জলাশয়। ৮টি পরিকল্পনা এলাকা হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব, কেন্দ্রীয় উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, কেন্দ্রীয় দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্যভূমি এবং নদী ও জলাশয় এলাকা। পরিকল্পনায় প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, পরিবেশ বিনির্মাণ এবং পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনায় ২৫ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য মোট কার্যক্রমের বিনিয়োগ ব্যয় হিসাব করা হয় ৯১,৪৫৭ কোটি টাকা। [এইচ. এস মোজাদ্দাদ ফারুক]
গ্রন্থপঞ্জি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯; EGIS, Guidebook for Integrated Water Resources Management: Concepts and Tools (Draft), Dhaka 2001; WARPO, Draft Final National Water Management Plan, Vol 1 & 2, Dhaka 2001.