পর্ণমোচী বন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''পর্ণমোচী বন''' (Deciduous Forest) এক ধরনের বনাঞ্চল যেখানে শীতের শুরুতে বা শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরে যায়। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় (transpiration) উদ্ভিদদেহ থেকে পানি হারাবার মাত্রা কমানোই এ বৈশিষ্ট্যের কারণ। এ ধরনের বনে শাল গাছের (Shorea robusta) প্রাধান্য বেশি এবং অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় এর পরিমাণ শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ। শালগাছের উচ্চতা হয় ১০-২৫ মিটার এবং শীতকালে এর প্রায় সব পাতা ঝরে যায়। পর্ণমোচী বনে বাৎসরিক বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় ২০০ মিমি। | '''পর্ণমোচী বন''' (Deciduous Forest) এক ধরনের বনাঞ্চল যেখানে শীতের শুরুতে বা শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরে যায়। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় (transpiration) উদ্ভিদদেহ থেকে পানি হারাবার মাত্রা কমানোই এ বৈশিষ্ট্যের কারণ। এ ধরনের বনে শাল গাছের (Shorea robusta) প্রাধান্য বেশি এবং অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় এর পরিমাণ শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ। শালগাছের উচ্চতা হয় ১০-২৫ মিটার এবং শীতকালে এর প্রায় সব পাতা ঝরে যায়। পর্ণমোচী বনে বাৎসরিক বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় ২০০ মিমি। | ||
[[Image:SalbanForestGazipur.jpg|thumb|400px|right|গাজীপুরের পর্ণমোচী বনের একাংশ]] | |||
শালগাছের আধিক্যের কারণে বাংলাদেশের পর্ণমোচী বন সাধারণভাবে ‘শালবন’ নামে পরিচিত। দেশের ঢাকা, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর এবং কুমিল্লা জেলার কয়েকটি এলাকায় এ বন বিস্তৃত। এ বনাঞ্চল দৃশ্যত মোট প্রায় ১০৭,০০০ হেক্টর জায়গাব্যাপী দুটি স্পষ্ট এলাকায় বিভক্ত। এর বড় অংশ পড়ে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর মধ্যবর্তী এলাকায়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং চওড়া ৭-২০ কিলোমিটার। এ অঞ্চল মধুপুর গড় এবং ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত। অন্য ছোট এলাকাটি শেরপুর জেলায় অবস্থিত এবং গারো পাহাড়ের পাদদেশব্যাপী লম্বালম্বি বিস্তৃত। এ অঞ্চলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং চওড়া ১.৫-১০ কিলোমিটার | শালগাছের আধিক্যের কারণে বাংলাদেশের পর্ণমোচী বন সাধারণভাবে ‘শালবন’ নামে পরিচিত। দেশের ঢাকা, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর এবং কুমিল্লা জেলার কয়েকটি এলাকায় এ বন বিস্তৃত। এ বনাঞ্চল দৃশ্যত মোট প্রায় ১০৭,০০০ হেক্টর জায়গাব্যাপী দুটি স্পষ্ট এলাকায় বিভক্ত। এর বড় অংশ পড়ে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর মধ্যবর্তী এলাকায়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং চওড়া ৭-২০ কিলোমিটার। এ অঞ্চল মধুপুর গড় এবং ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত। অন্য ছোট এলাকাটি শেরপুর জেলায় অবস্থিত এবং গারো পাহাড়ের পাদদেশব্যাপী লম্বালম্বি বিস্তৃত। এ অঞ্চলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং চওড়া ১.৫-১০ কিলোমিটার | ||
দেশের উত্তর অঞ্চলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং নওগাঁ জেলায় মোট প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জায়গায় এ বন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। এছাড়াও কুমিল্লা জেলার শালবন বিহার, ময়নামতি এবং রাজেশপুরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শালবন (মোট প্রায় ২০০ হেক্টর) অতীতের সাক্ষ্য হয়ে এখনও টিকে আছে। | দেশের উত্তর অঞ্চলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং নওগাঁ জেলায় মোট প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জায়গায় এ বন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। এছাড়াও কুমিল্লা জেলার শালবন বিহার, ময়নামতি এবং রাজেশপুরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শালবন (মোট প্রায় ২০০ হেক্টর) অতীতের সাক্ষ্য হয়ে এখনও টিকে আছে। |
০৩:৫৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
পর্ণমোচী বন (Deciduous Forest) এক ধরনের বনাঞ্চল যেখানে শীতের শুরুতে বা শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরে যায়। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় (transpiration) উদ্ভিদদেহ থেকে পানি হারাবার মাত্রা কমানোই এ বৈশিষ্ট্যের কারণ। এ ধরনের বনে শাল গাছের (Shorea robusta) প্রাধান্য বেশি এবং অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় এর পরিমাণ শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ। শালগাছের উচ্চতা হয় ১০-২৫ মিটার এবং শীতকালে এর প্রায় সব পাতা ঝরে যায়। পর্ণমোচী বনে বাৎসরিক বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় ২০০ মিমি।
শালগাছের আধিক্যের কারণে বাংলাদেশের পর্ণমোচী বন সাধারণভাবে ‘শালবন’ নামে পরিচিত। দেশের ঢাকা, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর এবং কুমিল্লা জেলার কয়েকটি এলাকায় এ বন বিস্তৃত। এ বনাঞ্চল দৃশ্যত মোট প্রায় ১০৭,০০০ হেক্টর জায়গাব্যাপী দুটি স্পষ্ট এলাকায় বিভক্ত। এর বড় অংশ পড়ে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর মধ্যবর্তী এলাকায়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং চওড়া ৭-২০ কিলোমিটার। এ অঞ্চল মধুপুর গড় এবং ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত। অন্য ছোট এলাকাটি শেরপুর জেলায় অবস্থিত এবং গারো পাহাড়ের পাদদেশব্যাপী লম্বালম্বি বিস্তৃত। এ অঞ্চলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং চওড়া ১.৫-১০ কিলোমিটার
দেশের উত্তর অঞ্চলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং নওগাঁ জেলায় মোট প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জায়গায় এ বন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। এছাড়াও কুমিল্লা জেলার শালবন বিহার, ময়নামতি এবং রাজেশপুরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শালবন (মোট প্রায় ২০০ হেক্টর) অতীতের সাক্ষ্য হয়ে এখনও টিকে আছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এসব বন এক অখন্ড বনাঞ্চল হিসেবে কুমিল্লা থেকে ভারতের দার্জিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে বনের অধিকাংশ এলাকাই দখলকৃত। বাকি যেটুকু রয়েছে তার অবস্থা সন্তোষজনক নয়; গাছের সংখ্যা ও গুণগত মান উভয়েই নিম্নস্তরের। গোটা বনাঞ্চলের ভিতরে বিক্ষিপ্তভাবে স্থান পেয়েছে ধান ক্ষেত এবং অন্যান্য কৃষি ভূমি।
পর্ণমোচী বনের গাছপালা কমবেশি ১০-২০ মিটার উচ্চ আচ্ছাদন (canopy) তৈরি করে। শালগাছ (প্রায় ৯০%) ছাড়া এখানকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রধান গাছপালা: পলাশ (Butea monosperma), হলদু (Adina cordfolia), জারুল (Lagerstroemia parviflora), বাজনা, হারগোজা (Dillenia pentagyna) কুসুম, উদাল, ঢেপাজাম বহেড়া, কুর্চি, হরীতকী, পিতরাজ, সোনালু, আশার, আমলকি এবং আদাগাছ (Croton oblongifolius)। লতানো উদ্ভিদের মধ্যে কাঞ্চনলতা, কুমারিলতা, গজপিপল, পানিলতা, Dioscorea species, শতমূলী, গিলালতা এ বনাঞ্চলে জন্মে।
প্রায় ২০০ প্রজাতির ছোট গাছপালাও পর্ণমোচী বন থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে আসামলতা, ভাট, শালপানি, কাশ ইত্যাদি। এখানকার উল্লেখযোগ্য ঘাস ছন (sungrass)। এছাড়া কতক পরগাছাও জন্মে।
উল্লেখযোগ্য প্রাণী ৭-৮ প্রজাতির উভচর; তক্ষক (Gekko gecko), গুইসাপ (Varanus bengalensis), রক্তচোষা (Calotes versicolor), শঙ্খিনী (Bungarus fasciatus), গোখরা (Naja naja), এবং দাঁড়াশ সাপ (Coluber mucosus)-সহ কয়েক প্রজাতির সরীসৃপ; ২০০-২৫০ প্রজাতির পাখি এবং স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রেসাস বানর (Macaca mulatta), লালবুক হনুমান (Trachypithecus pileatus), গন্ধগোকুল (Viverra zibetha), কাঠবিড়ালী, বাদুর ইত্যাদি। জানা যায় এক সময় শালবনে হাতি, বাঘ ও হরিণ ছিল, কিন্তু সেসব এখন আর সেখানে নেই। অবৈধভাবে গাছপালা কাটা এবং মানুষের নানা ধরনের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের পর্ণমোচী বনাঞ্চলকে দ্রুত অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। [এস.এম হুমায়ুন কবির]