দাশগুপ্ত, কমল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''দাশগুপ্ত | '''দাশগুপ্ত কমল''' (১৯১২-১৯৭৪) কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই নড়াইল জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা তারাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত ছিলেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুরাগী। পুরো নাম কমলপ্রসন্ন দাশগুপ্ত হলেও তিনি কমল দাশগুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিত। ১৯৫৭ সালে [[ইসলাম|ইসলাম]] ধর্ম এবং কামালউদ্দীন আহমদ নাম গ্রহণ করে তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত [[নজরুলসঙ্গীত|নজরুলসঙ্গীত]] শিল্পী ফিরোজা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। | ||
কমল দাশগুপ্তের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। ১৯২৮ সালে তিনি ক্যালকাটা একাডেমী থেকে ম্যাট্রিক এবং পরে [[ | কমল দাশগুপ্তের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। ১৯২৮ সালে তিনি ক্যালকাটা একাডেমী থেকে ম্যাট্রিক এবং পরে [[কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ|কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ]] থেকে বিকম পাস করেন। মীরার ভজনে সুরের প্রয়োগ বিষয়ে গবেষণা করে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব মিউজিক ডিগ্রি (১৯৪৩) লাভ করেন। | ||
কমল দাশগুপ্তের সঙ্গীতে [[ | কমল দাশগুপ্তের সঙ্গীতে [[হাতেখড়ি|হাতেখড়ি]] হয় সহোদর বিমল দাশগুপ্তের নিকট। পরে [[রায়, দিলীপকুমার|দিলীপকুমার রায়]], কানা কেষ্ট, ওস্তাদ [[খাঁ, জমিরউদ্দিন খাঁ|জমিরউদ্দিন খাঁ]] প্রমুখের নিকট তিনি সঙ্গীত শিক্ষা করেন। তিনি আধুনিক বাংলা, উর্দু, হিন্দি, [[ঠুংরি|ঠুংরি]] এবং ছায়াছবির সঙ্গীতে কণ্ঠদান ও সুরারোপ করেন। সুরের রাজ্যে কমল দাশগুপ্ত ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর সুরের ভিত্তি ছিল [[রাগ|রাগ]] এবং ঠুংরি ছিল তাঁর সুর রচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এর সঙ্গে বাংলা গানের নানা ধারাকে তিনি ভেঙ্গে-গড়ে মিশিয়ে দিয়েছেন। | ||
বাংলা চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবেও কমল দাশগুপ্ত খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুর দেওয়া ও গাওয়া ‘তুফান মেল’, ‘শ্যামলের প্রেম’, ‘এই কি গো শেষ দান’ চলচ্চিত্রের এ গানগুলি এককালে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। অনেক হিন্দি ছায়াছবিতেও তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তিনি প্রায় ৮০টি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকার ওয়ার প্রপাগান্ডা ছবির নেপথ্য সঙ্গীতেও তিনি কাজ করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর শেষ ছবি বধূবরণ। | বাংলা চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবেও কমল দাশগুপ্ত খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুর দেওয়া ও গাওয়া ‘তুফান মেল’, ‘শ্যামলের প্রেম’, ‘এই কি গো শেষ দান’ চলচ্চিত্রের এ গানগুলি এককালে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। অনেক হিন্দি ছায়াছবিতেও তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তিনি প্রায় ৮০টি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকার ওয়ার প্রপাগান্ডা ছবির নেপথ্য সঙ্গীতেও তিনি কাজ করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর শেষ ছবি বধূবরণ। | ||
কমল দাশগুপ্ত নজরুলের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন এবং প্রায় চারশ নজরুলসঙ্গীতে সুরারোপ তাঁর শিল্পীজীবনের এক বিরাট কৃতিত্ব। তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিক অবদান স্বরলিপির শর্টহ্যান্ড পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং আকারমাত্রিক পদ্ধতি ও স্টাফ নোটেশন পদ্ধতির [[ | কমল দাশগুপ্ত নজরুলের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন এবং প্রায় চারশ নজরুলসঙ্গীতে সুরারোপ তাঁর শিল্পীজীবনের এক বিরাট কৃতিত্ব। তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিক অবদান স্বরলিপির শর্টহ্যান্ড পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং আকারমাত্রিক পদ্ধতি ও স্টাফ নোটেশন পদ্ধতির [[স্বরলিপি|স্বরলিপি]] স্থাপন। | ||
কমল দাশগুপ্ত গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে [[ | কমল দাশগুপ্ত গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে [[গ্রামোফোন|গ্রামোফোন]] ডিস্কে তাঁর সুরে গাওয়া বহু গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। সেসবের মধ্যে ‘সাঁঝের তারকা আমি’, ‘আমি ভোরের যূথিকা’ প্রভৃতি গান আজও জনপ্রিয়। [মহসিন হোসাইন] | ||
[[en:Dasgupta, Kamal]] | [[en:Dasgupta, Kamal]] |
০৪:৪১, ১২ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
দাশগুপ্ত কমল (১৯১২-১৯৭৪) কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই নড়াইল জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা তারাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত ছিলেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুরাগী। পুরো নাম কমলপ্রসন্ন দাশগুপ্ত হলেও তিনি কমল দাশগুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিত। ১৯৫৭ সালে ইসলাম ধর্ম এবং কামালউদ্দীন আহমদ নাম গ্রহণ করে তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
কমল দাশগুপ্তের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। ১৯২৮ সালে তিনি ক্যালকাটা একাডেমী থেকে ম্যাট্রিক এবং পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিকম পাস করেন। মীরার ভজনে সুরের প্রয়োগ বিষয়ে গবেষণা করে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব মিউজিক ডিগ্রি (১৯৪৩) লাভ করেন।
কমল দাশগুপ্তের সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় সহোদর বিমল দাশগুপ্তের নিকট। পরে দিলীপকুমার রায়, কানা কেষ্ট, ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁ প্রমুখের নিকট তিনি সঙ্গীত শিক্ষা করেন। তিনি আধুনিক বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ঠুংরি এবং ছায়াছবির সঙ্গীতে কণ্ঠদান ও সুরারোপ করেন। সুরের রাজ্যে কমল দাশগুপ্ত ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর সুরের ভিত্তি ছিল রাগ এবং ঠুংরি ছিল তাঁর সুর রচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এর সঙ্গে বাংলা গানের নানা ধারাকে তিনি ভেঙ্গে-গড়ে মিশিয়ে দিয়েছেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবেও কমল দাশগুপ্ত খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুর দেওয়া ও গাওয়া ‘তুফান মেল’, ‘শ্যামলের প্রেম’, ‘এই কি গো শেষ দান’ চলচ্চিত্রের এ গানগুলি এককালে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। অনেক হিন্দি ছায়াছবিতেও তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তিনি প্রায় ৮০টি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকার ওয়ার প্রপাগান্ডা ছবির নেপথ্য সঙ্গীতেও তিনি কাজ করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর শেষ ছবি বধূবরণ।
কমল দাশগুপ্ত নজরুলের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন এবং প্রায় চারশ নজরুলসঙ্গীতে সুরারোপ তাঁর শিল্পীজীবনের এক বিরাট কৃতিত্ব। তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিক অবদান স্বরলিপির শর্টহ্যান্ড পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং আকারমাত্রিক পদ্ধতি ও স্টাফ নোটেশন পদ্ধতির স্বরলিপি স্থাপন।
কমল দাশগুপ্ত গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে গ্রামোফোন ডিস্কে তাঁর সুরে গাওয়া বহু গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। সেসবের মধ্যে ‘সাঁঝের তারকা আমি’, ‘আমি ভোরের যূথিকা’ প্রভৃতি গান আজও জনপ্রিয়। [মহসিন হোসাইন]