দানী, আহমদ হাসান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''দানী | '''দানী, আহমদ হাসান''' (১৯২০-২০০৯) প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসকার, বহুভাষাবিদ। জন্ম ২০ জুন ১৯২০ সালে কাশ্মীরে। দানী বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে স্নাতক এবং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রখ্যাত ভারততাত্ত্বিক এ এস অল্টেকারের ছাত্র ছিলেন। | ||
১৯৪৫ সালে আহমদ হাসান দানী ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্যার মর্টিমার হুইলারের নেতৃত্বে তক্ষশিলা এবং মহেঞ্জোদারোতে খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে দানী পাকিস্তানে চলে আসেন এবং রাজশাহীর [[ | [[Image:DaniAhmadHasan.jpg|Thumb|400px|right|আহমদ হাসান দানী]] | ||
১৯৪৫ সালে আহমদ হাসান দানী ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্যার মর্টিমার হুইলারের নেতৃত্বে তক্ষশিলা এবং মহেঞ্জোদারোতে খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে দানী পাকিস্তানে চলে আসেন এবং রাজশাহীর [[বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর|বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর]] এর কিউরেটর পদে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের লেকচারার পদে যোগ দেন এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। | |||
দানীর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। প্রতিষ্ঠাতা কিউরেটর [[ | দানীর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। প্রতিষ্ঠাতা কিউরেটর [[ভট্টশালী, নলিনীকান্ত|নলিনীকান্ত ভট্টশালী]] এর পর তিনি ঢাকা জাদুঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৫০ সাল থেকে তিনি ঢাকা জাদুঘরের খন্ডকালীন কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা জাদুঘর পরে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে পরিণত হয়। | ||
দানী কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির আদলে ঢাকায় বিদ্বৎসমাজের সহায়তায় ১৯৫২ সালে পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬২ সালে পেশোয়ারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে এশিয়াটিক সোসাইটি অধ্যাপক আহমদ হাসান দানীকে ফেলোশিপ (১৯৬৯) এবং স্বর্ণপদক (১৯৮৬) দিয়ে সম্মানিত করে। | দানী কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির আদলে ঢাকায় বিদ্বৎসমাজের সহায়তায় ১৯৫২ সালে পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬২ সালে পেশোয়ারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে এশিয়াটিক সোসাইটি অধ্যাপক আহমদ হাসান দানীকে ফেলোশিপ (১৯৬৯) এবং স্বর্ণপদক (১৯৮৬) দিয়ে সম্মানিত করে। | ||
আহমদ হাসান দানী ১৯৫৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে প্রত্নতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভ | আহমদ হাসান দানী ১৯৫৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে প্রত্নতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভ 'Prehistory and Proto-history of Eastern India' ১৯৬০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। | ||
১৯৫৮-৫৯ সালে দানী ভারতীয় প্যালিওগ্রাফীর ওপর গবেষণা করেন যা ১৯৬৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি স্থানীয় ইতিহাস, শিল্প, স্থাপত্য এবং শিলালিপির ওপর গভীর অধ্যয়ন করেন। | ১৯৫৮-৫৯ সালে দানী ভারতীয় প্যালিওগ্রাফীর ওপর গবেষণা করেন যা ১৯৬৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি স্থানীয় ইতিহাস, শিল্প, স্থাপত্য এবং শিলালিপির ওপর গভীর অধ্যয়ন করেন। | ||
পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে [[ | পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে [[প্রত্নতত্ত্ব|প্রত্নতত্ত্ব]] বিভাগ চালু হলে আহমদ হাসান দানী ১৯৬২ সালে সেখানে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। পরে ইসলামাবাদে কায়দে আযম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিযুক্ত হন। | ||
পেশোয়ারে থাকার সময় তিনি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক প্রত্নস্থল আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেহমান দেহরিতে সিন্ধু সভ্যতা পূর্ববর্তী প্রত্নস্থল, দীর অঞ্চলে ইন্দো-গ্রিক প্রত্নস্থল, পেশোয়ারে ও সোয়াত উপত্যকার নিকটবর্তী গান্ধার সংস্কৃতির প্রত্নস্থল। ১৯৮০-র দশকে দানী পাকিস্তানের উত্তর সীমান্তের পার্বত্যাঞ্চলে নবোপলীয় চিত্রকলা আবিষ্কার করেন। দানী ১৯৯০ সালে চীনের মরু অঞ্চল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সিল্ক পথ অভিযানে ইউনেস্কো দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি মধ্য এশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটলে দানী এ অঞ্চলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বহু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। | পেশোয়ারে থাকার সময় তিনি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক প্রত্নস্থল আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেহমান দেহরিতে সিন্ধু সভ্যতা পূর্ববর্তী প্রত্নস্থল, দীর অঞ্চলে ইন্দো-গ্রিক প্রত্নস্থল, পেশোয়ারে ও সোয়াত উপত্যকার নিকটবর্তী গান্ধার সংস্কৃতির প্রত্নস্থল। ১৯৮০-র দশকে দানী পাকিস্তানের উত্তর সীমান্তের পার্বত্যাঞ্চলে নবোপলীয় চিত্রকলা আবিষ্কার করেন। দানী ১৯৯০ সালে চীনের মরু অঞ্চল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সিল্ক পথ অভিযানে ইউনেস্কো দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি মধ্য এশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটলে দানী এ অঞ্চলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বহু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। | ||
২২ নং লাইন: | ১৯ নং লাইন: | ||
আহমদ হাসান দানীর গবেষণা এবং প্রকাশনা বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ও ফেলো ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৮-৫৯), অস্ট্রেলিয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানবেরা (১৯৬৯), পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৪) এবং উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিসন (১৯৭৭)। পাকিস্তান সরকার ২০০৪ সালে অধ্যাপক দানীকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। তিনি বেশ কিছু বিদেশি সম্মাননাও লাভ করেন যার মধ্যে রয়েছে- অর্ডার অব দি মেরিট, জার্মানি (১৯৯৬), অ্যারিস্টোটল রৌপ্যপদক, ইউনেস্কো (১৯৯৭), লিজিওন অব অনার, ফ্রান্স (১৯৯৮) এবং ইতালির নাইট কমান্ডার পদক। | আহমদ হাসান দানীর গবেষণা এবং প্রকাশনা বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ও ফেলো ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৮-৫৯), অস্ট্রেলিয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানবেরা (১৯৬৯), পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৪) এবং উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিসন (১৯৭৭)। পাকিস্তান সরকার ২০০৪ সালে অধ্যাপক দানীকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। তিনি বেশ কিছু বিদেশি সম্মাননাও লাভ করেন যার মধ্যে রয়েছে- অর্ডার অব দি মেরিট, জার্মানি (১৯৯৬), অ্যারিস্টোটল রৌপ্যপদক, ইউনেস্কো (১৯৯৭), লিজিওন অব অনার, ফ্রান্স (১৯৯৮) এবং ইতালির নাইট কমান্ডার পদক। | ||
অধ্যাপক দানী অনেকগুলি গবেষণামূলক প্রবন্ধ এবং গ্রন্থের রচয়িতা। ১৯৬৬ সালে তিনি জে পি মহেন-এর সঙ্গে যৌথভাবে ইউনেস্কোর ''History of Humanity'' -র তৃতীয় খন্ড সম্পাদনা করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বি এ লিৎভিঙ্কসির সহলেখক হিসেবে ''The Kushano-Sassanian Kingdom'' নামে মধ্য এশিয়ার সভ্যতার ইতিহাস সিরিজ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। | অধ্যাপক দানী অনেকগুলি গবেষণামূলক প্রবন্ধ এবং গ্রন্থের রচয়িতা। ১৯৬৬ সালে তিনি জে পি মহেন-এর সঙ্গে যৌথভাবে ইউনেস্কোর ''History of Humanity''-র তৃতীয় খন্ড সম্পাদনা করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বি এ লিৎভিঙ্কসির সহলেখক হিসেবে ''The Kushano-Sassanian Kingdom'' নামে মধ্য এশিয়ার সভ্যতার ইতিহাস সিরিজ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। | ||
অধ্যাপক দানী একাধারে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, শিল্প ও স্থাপত্য, প্যালিওগ্রাফী এবং বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ''Dacca: A Record of Its Changing Fortunes'' (1956), ''Muslim Architecture in Bengal'' (1961), ''Indus Civilization: New Perspectives'' (1981), ''Thatta: Islamic Architecture'' (1982), ''Human Records on Karakorum Highway'' (1995), ''Peshawar: Historic City of the Frontier'' (1995), ''New Light on Central Asia | অধ্যাপক দানী একাধারে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, শিল্প ও স্থাপত্য, প্যালিওগ্রাফী এবং বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ''Dacca: A Record of Its Changing Fortunes'' (1956), ''Muslim Architecture in Bengal'' (1961), ''Indus Civilization: New Perspectives'' (1981), ''Thatta: Islamic Architecture'' (1982), ''Human Records on Karakorum Highway'' (1995), ''Peshawar: Historic City of the Frontier'' (1995), ''New Light on Central Asia'', (1996), ''Central Asia Today'' (1996), ''Romance of the Khyber Pass'' (1997), ''History of Northern Areas of Pakistan up to 2000 AD'' (2001) এবং ''Historic City of Taxila'' (2001). | ||
আহমদ হাসান দানী ছিলেন বহুভাষাবিদ পন্ডিত। তিনি বহুবিধ প্রাচ্য ভাষা- সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফার্সি, কাশ্মিরী, মারাঠি, পশতু, পাঞ্জাবি, সেরাইকি, সিন্ধি এবং তামিল ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন ভাষা, তুর্কি, ফরাসি, স্পেনিয়, জার্মান এবং ইংরেজিতেও সমান দক্ষ ছিলেন। | আহমদ হাসান দানী ছিলেন বহুভাষাবিদ পন্ডিত। তিনি বহুবিধ প্রাচ্য ভাষা-সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফার্সি, কাশ্মিরী, মারাঠি, পশতু, পাঞ্জাবি, সেরাইকি, সিন্ধি এবং তামিল ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন ভাষা, তুর্কি, ফরাসি, স্পেনিয়, জার্মান এবং ইংরেজিতেও সমান দক্ষ ছিলেন। | ||
অধ্যাপক দানী জীবনের শেষ পর্যন্ত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কাজে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর অসামান্য পান্ডিত্য এ অঞ্চলের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে তাঁর মৃত্যু হয়। [আবদুল মমিন চৌধুরী] | অধ্যাপক দানী জীবনের শেষ পর্যন্ত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কাজে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর অসামান্য পান্ডিত্য এ অঞ্চলের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে তাঁর মৃত্যু হয়। [আবদুল মমিন চৌধুরী] | ||
[[en:Dani, Ahmad Hasan]] | [[en:Dani, Ahmad Hasan]] |
১০:১৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
দানী, আহমদ হাসান (১৯২০-২০০৯) প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসকার, বহুভাষাবিদ। জন্ম ২০ জুন ১৯২০ সালে কাশ্মীরে। দানী বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে স্নাতক এবং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রখ্যাত ভারততাত্ত্বিক এ এস অল্টেকারের ছাত্র ছিলেন।
১৯৪৫ সালে আহমদ হাসান দানী ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্যার মর্টিমার হুইলারের নেতৃত্বে তক্ষশিলা এবং মহেঞ্জোদারোতে খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে দানী পাকিস্তানে চলে আসেন এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর এর কিউরেটর পদে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের লেকচারার পদে যোগ দেন এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
দানীর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। প্রতিষ্ঠাতা কিউরেটর নলিনীকান্ত ভট্টশালী এর পর তিনি ঢাকা জাদুঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৫০ সাল থেকে তিনি ঢাকা জাদুঘরের খন্ডকালীন কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা জাদুঘর পরে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে পরিণত হয়।
দানী কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির আদলে ঢাকায় বিদ্বৎসমাজের সহায়তায় ১৯৫২ সালে পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬২ সালে পেশোয়ারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে এশিয়াটিক সোসাইটি অধ্যাপক আহমদ হাসান দানীকে ফেলোশিপ (১৯৬৯) এবং স্বর্ণপদক (১৯৮৬) দিয়ে সম্মানিত করে।
আহমদ হাসান দানী ১৯৫৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে প্রত্নতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভ 'Prehistory and Proto-history of Eastern India' ১৯৬০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৫৮-৫৯ সালে দানী ভারতীয় প্যালিওগ্রাফীর ওপর গবেষণা করেন যা ১৯৬৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি স্থানীয় ইতিহাস, শিল্প, স্থাপত্য এবং শিলালিপির ওপর গভীর অধ্যয়ন করেন।
পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালু হলে আহমদ হাসান দানী ১৯৬২ সালে সেখানে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। পরে ইসলামাবাদে কায়দে আযম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
পেশোয়ারে থাকার সময় তিনি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক প্রত্নস্থল আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেহমান দেহরিতে সিন্ধু সভ্যতা পূর্ববর্তী প্রত্নস্থল, দীর অঞ্চলে ইন্দো-গ্রিক প্রত্নস্থল, পেশোয়ারে ও সোয়াত উপত্যকার নিকটবর্তী গান্ধার সংস্কৃতির প্রত্নস্থল। ১৯৮০-র দশকে দানী পাকিস্তানের উত্তর সীমান্তের পার্বত্যাঞ্চলে নবোপলীয় চিত্রকলা আবিষ্কার করেন। দানী ১৯৯০ সালে চীনের মরু অঞ্চল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সিল্ক পথ অভিযানে ইউনেস্কো দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি মধ্য এশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটলে দানী এ অঞ্চলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বহু নিবন্ধ প্রকাশ করেন।
আহমদ হাসান দানীর গবেষণা এবং প্রকাশনা বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ও ফেলো ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৮-৫৯), অস্ট্রেলিয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানবেরা (১৯৬৯), পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৪) এবং উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিসন (১৯৭৭)। পাকিস্তান সরকার ২০০৪ সালে অধ্যাপক দানীকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। তিনি বেশ কিছু বিদেশি সম্মাননাও লাভ করেন যার মধ্যে রয়েছে- অর্ডার অব দি মেরিট, জার্মানি (১৯৯৬), অ্যারিস্টোটল রৌপ্যপদক, ইউনেস্কো (১৯৯৭), লিজিওন অব অনার, ফ্রান্স (১৯৯৮) এবং ইতালির নাইট কমান্ডার পদক।
অধ্যাপক দানী অনেকগুলি গবেষণামূলক প্রবন্ধ এবং গ্রন্থের রচয়িতা। ১৯৬৬ সালে তিনি জে পি মহেন-এর সঙ্গে যৌথভাবে ইউনেস্কোর History of Humanity-র তৃতীয় খন্ড সম্পাদনা করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বি এ লিৎভিঙ্কসির সহলেখক হিসেবে The Kushano-Sassanian Kingdom নামে মধ্য এশিয়ার সভ্যতার ইতিহাস সিরিজ গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক দানী একাধারে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, শিল্প ও স্থাপত্য, প্যালিওগ্রাফী এবং বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- Dacca: A Record of Its Changing Fortunes (1956), Muslim Architecture in Bengal (1961), Indus Civilization: New Perspectives (1981), Thatta: Islamic Architecture (1982), Human Records on Karakorum Highway (1995), Peshawar: Historic City of the Frontier (1995), New Light on Central Asia, (1996), Central Asia Today (1996), Romance of the Khyber Pass (1997), History of Northern Areas of Pakistan up to 2000 AD (2001) এবং Historic City of Taxila (2001).
আহমদ হাসান দানী ছিলেন বহুভাষাবিদ পন্ডিত। তিনি বহুবিধ প্রাচ্য ভাষা-সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফার্সি, কাশ্মিরী, মারাঠি, পশতু, পাঞ্জাবি, সেরাইকি, সিন্ধি এবং তামিল ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন ভাষা, তুর্কি, ফরাসি, স্পেনিয়, জার্মান এবং ইংরেজিতেও সমান দক্ষ ছিলেন।
অধ্যাপক দানী জীবনের শেষ পর্যন্ত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কাজে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর অসামান্য পান্ডিত্য এ অঞ্চলের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে তাঁর মৃত্যু হয়। [আবদুল মমিন চৌধুরী]