তাহের, কর্নেল আবু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: image tag)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''তাহের'''''', ''''''কর্নেল আবু '''(১৯৩৮-১৯৭৬)  সামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। তিনি ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এম.এ প্রথম পর্বে অধ্যয়ন করেন। কিছুকাল (১৯৫৯) তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দূর্গাপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।
[[Image:TaherColonelAbu.jpg|thumb|400px|right|কর্নেল আবু তাহের]]
'''তাহের, কর্নেল আবু''' (১৯৩৮-১৯৭৬)  সামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। তিনি ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এম.এ প্রথম পর্বে অধ্যয়ন করেন। কিছুকাল (১৯৫৯) তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দূর্গাপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।


আবু তাহের ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে (কম্যান্ডো বাহিনী) বদলি করা হয়। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে প্রথমে কাশ্মীর ও পরে শিয়ালকোট রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের জন্য তিনি খেতাব লাভ করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি আমেরিকার ফোর্ট ব্রাগ ও ফোর্ট বেনিং-এ গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং উচ্চতর সমরবিদ্যায় অনার্স গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে সিনিয়র ট্যাকটিক্যাল কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে স্টাফ কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি মেজর এম এ মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন পাটোয়ারীসহ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। আবু তাহের ময়মনসিংহ এবং রংপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োজিত হন। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত কামালপুর শত্রু ঘাটিতে আক্রমণ পরিচালনাকালে তিনি আহত হন এবং তাঁর হাঁটুর ওপর পর্যন্ত বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  
আবু তাহের ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে (কম্যান্ডো বাহিনী) বদলি করা হয়। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে প্রথমে কাশ্মীর ও পরে শিয়ালকোট রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের জন্য তিনি খেতাব লাভ করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি আমেরিকার ফোর্ট ব্রাগ ও ফোর্ট বেনিং-এ গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং উচ্চতর সমরবিদ্যায় অনার্স গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে সিনিয়র ট্যাকটিক্যাল কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে স্টাফ কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি মেজর এম এ মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন পাটোয়ারীসহ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। আবু তাহের ময়মনসিংহ এবং রংপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োজিত হন। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত কামালপুর শত্রু ঘাটিতে আক্রমণ পরিচালনাকালে তিনি আহত হন এবং তাঁর হাঁটুর ওপর পর্যন্ত বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  
<nowiki>#</nowiki> #[[Image:তাহের, কর্নেল আবু_html_88407781.png]]
[[Image:TaherColonelAbu.jpg|thumb|400px]]
" border=1&gt;
# #কর্নেল আবু তাহের


ভারতে চিকিৎসা শেষে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আবু তাহেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ঐ বছর জুন মাসে তিনি ৪৪তম ব্রিগেডের অধিনায়ক ও কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। জাতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।  
ভারতে চিকিৎসা শেষে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আবু তাহেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ঐ বছর জুন মাসে তিনি ৪৪তম ব্রিগেডের অধিনায়ক ও কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। জাতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।  
১৭ নং লাইন: ১০ নং লাইন:


কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘বীরউত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।  [মোঃ আনোয়ার হোসেন]
কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘বীরউত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।  [মোঃ আনোয়ার হোসেন]
<!-- imported from file: তাহের, কর্নেল আবু.html-->


[[en:Taher, Colonel Abu]]
[[en:Taher, Colonel Abu]]

০৯:২৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কর্নেল আবু তাহের

তাহের, কর্নেল আবু (১৯৩৮-১৯৭৬)  সামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। তিনি ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এম.এ প্রথম পর্বে অধ্যয়ন করেন। কিছুকাল (১৯৫৯) তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দূর্গাপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।

আবু তাহের ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে (কম্যান্ডো বাহিনী) বদলি করা হয়। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে প্রথমে কাশ্মীর ও পরে শিয়ালকোট রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের জন্য তিনি খেতাব লাভ করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি আমেরিকার ফোর্ট ব্রাগ ও ফোর্ট বেনিং-এ গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং উচ্চতর সমরবিদ্যায় অনার্স গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে সিনিয়র ট্যাকটিক্যাল কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে স্টাফ কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি মেজর এম এ মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন পাটোয়ারীসহ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। আবু তাহের ময়মনসিংহ এবং রংপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োজিত হন। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত কামালপুর শত্রু ঘাটিতে আক্রমণ পরিচালনাকালে তিনি আহত হন এবং তাঁর হাঁটুর ওপর পর্যন্ত বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ভারতে চিকিৎসা শেষে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আবু তাহেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ঐ বছর জুন মাসে তিনি ৪৪তম ব্রিগেডের অধিনায়ক ও কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। জাতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।

কর্নেল তাহের ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের কারণে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বর (১৯৭৫) আবু তাহের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহযোগিতায় সিপাহি-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহের গ্রেফতার হন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় কারাগারের অভ্যন্তরে তাহেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার হয় এবং বিচারে তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘বীরউত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।  [মোঃ আনোয়ার হোসেন]