তবকাত-ই-আকবরী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''তবকাত-ই-আকবরী''' নিজামউদ্দীন আহমদ রচিত মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের এক মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ। নিজামউদ্দীনের পিতার নাম''' মুকিম''' হারভী। তিনি [[আকবর|আকবর]]-এর রাজত্বকালে প্রথম বখশীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবকাত''-''''-''আকবরী  গ্রন্থটি তারিখ''-''''-''নিজামী নামেও পরিচিত। রচনার বছর পর্যন্ত গ্রন্থটি ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সাধারণ ইতিহাস। মুখবন্ধের বর্ণনামতে বইটির রচনার তারিখ ১০০১ হিজরি বা ১৫৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দ, কিন্তু গ্রন্থে বর্ণনা ১০০২ হিজরি বা ১৫৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। নিজামউদ্দীন ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে লাহোরে মারা যান।  
'''তবকাত-ই-আকবরী''' নিজামউদ্দীন আহমদ রচিত মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের এক মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ। নিজামউদ্দীনের পিতার নাম মুকিম হারভী। তিনি [[আকবর|আকবর]]-এর রাজত্বকালে প্রথম বখশীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবকাত-ই-আকবরী  গ্রন্থটি তারিখ-ই-নিজামী নামেও পরিচিত। রচনার বছর পর্যন্ত গ্রন্থটি ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সাধারণ ইতিহাস। মুখবন্ধের বর্ণনামতে বইটির রচনার তারিখ ১০০১ হিজরি বা ১৫৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দ, কিন্তু গ্রন্থে বর্ণনা ১০০২ হিজরি বা ১৫৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। নিজামউদ্দীন ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে লাহোরে মারা যান।  


সহজ ভাষায় লিখিত তবকাত''-''''-''আকবরী একটি নিরস প্রতিবেদন। সমসাময়িক কালের পূর্ববর্তী ইতিহাসের জন্য তিনি পুরানো কাহিনীকারদের রচনার সাহায্য নেন, আর আকবরের সমসাময়িক হওয়ায় তিনি ঐ সময়ের সংঘটিত ঘটনাবলির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি একজন সফল ও বিশ্বস্ত সভাসদ ছিলেন। তাই তাঁর প্রণীত গ্রন্থ, বিশেষ করে আকবরের রাজত্বকালের বর্ণনাসম্বলিত অংশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। মাঝে মাঝে গ্রন্থকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু বাদ দিয়েছেন। আকবরের ধর্মীয় খেয়ালিপনা বিষয়ে নিজামউদ্দীন কিছু উল্লেখ করেন নি এবং কখনও এবিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া, সমালোচনা, বিরুদ্ধ মতবাদ নথিবদ্ধ করতে আগ্রহী হন নি।
সহজ ভাষায় লিখিত তবকাত-ই-আকবরী একটি নিরস প্রতিবেদন। সমসাময়িক কালের পূর্ববর্তী ইতিহাসের জন্য তিনি পুরানো কাহিনীকারদের রচনার সাহায্য নেন, আর আকবরের সমসাময়িক হওয়ায় তিনি ঐ সময়ের সংঘটিত ঘটনাবলির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি একজন সফল ও বিশ্বস্ত সভাসদ ছিলেন। তাই তাঁর প্রণীত গ্রন্থ, বিশেষ করে আকবরের রাজত্বকালের বর্ণনাসম্বলিত অংশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। মাঝে মাঝে গ্রন্থকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু বাদ দিয়েছেন। আকবরের ধর্মীয় খেয়ালিপনা বিষয়ে নিজামউদ্দীন কিছু উল্লেখ করেন নি এবং কখনও এবিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া, সমালোচনা, বিরুদ্ধ মতবাদ নথিবদ্ধ করতে আগ্রহী হন নি।


বাংলার সুলতানি আমলের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য তবকাত''-''''-''আকবরী খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। প্রাক্-মুগল আমলে বাংলার উপর কোনো ইতিহাস রচিত হয় নি। সমসাময়িক কালে বাংলা মুলুকে রচিত বা বাংলার সুলতানদের নিয়ে লিখিত কোনো ইতিহাস গ্রন্থ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তাই প্রাক্-মুগল যুগের উপর পরবর্তীকালের লেখা বেশ সহায়ক ও গ্রহণীয়। দুটি ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে তবকাতই প্রথম যেখানে [[বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খলজী]] থেকে শুরু করে মুগল যুগের পূর্বপর্যন্ত ঘটনাবলি একটা সম্পূর্ণ পৃথক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে। অন্য গ্রন্থটি হলো [[তারিখ-ই-ফিরিশতা|তারিখ]][[তারিখ-ই-ফিরিশতা|''-''ই]][[তারিখ-ই-ফিরিশতা|''-''ফিরিশতা]]।  
বাংলার সুলতানি আমলের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য তবকাত-ই-আকবরী খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। প্রাক্-মুগল আমলে বাংলার উপর কোনো ইতিহাস রচিত হয় নি। সমসাময়িক কালে বাংলা মুলুকে রচিত বা বাংলার সুলতানদের নিয়ে লিখিত কোনো ইতিহাস গ্রন্থ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তাই প্রাক্-মুগল যুগের উপর পরবর্তীকালের লেখা বেশ সহায়ক ও গ্রহণীয়। দুটি ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে তবকাতই প্রথম যেখানে [[বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খলজী]] থেকে শুরু করে মুগল যুগের পূর্বপর্যন্ত ঘটনাবলি একটা সম্পূর্ণ পৃথক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে। অন্য গ্রন্থটি হলো [[তারিখ-ই-ফিরিশতা|তারিখ-ই-ফিরিশতা]]।  


পরবর্তীকালে লিখিত বলে বাংলার ঘটনা তবকাতে সংক্ষিপ্তভাবে দেওয়া আছে, সময়ের উল্লেখেও প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পাওয়া যায় এবং এমনকি এর বর্ণনায় অনেক সুলতানের নামও বাদ পড়েছে। কিন্তু শত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও তবকাত''-''''-''আকবরী প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ যেখানে মোটামুটিভাবে বাংলার নৃপতিদের নাম ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায়।  [আবদুল করিম]
পরবর্তীকালে লিখিত বলে বাংলার ঘটনা তবকাতে সংক্ষিপ্তভাবে দেওয়া আছে, সময়ের উল্লেখেও প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পাওয়া যায় এবং এমনকি এর বর্ণনায় অনেক সুলতানের নামও বাদ পড়েছে। কিন্তু শত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও তবকাত-ই-আকবরী প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ যেখানে মোটামুটিভাবে বাংলার নৃপতিদের নাম ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায়।  [আবদুল করিম]


[[en:Tabaqat-i-Akbari]]
[[en:Tabaqat-i-Akbari]]

০৫:৩৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

তবকাত-ই-আকবরী নিজামউদ্দীন আহমদ রচিত মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের এক মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ। নিজামউদ্দীনের পিতার নাম মুকিম হারভী। তিনি আকবর-এর রাজত্বকালে প্রথম বখশীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবকাত-ই-আকবরী  গ্রন্থটি তারিখ-ই-নিজামী নামেও পরিচিত। রচনার বছর পর্যন্ত গ্রন্থটি ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সাধারণ ইতিহাস। মুখবন্ধের বর্ণনামতে বইটির রচনার তারিখ ১০০১ হিজরি বা ১৫৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দ, কিন্তু গ্রন্থে বর্ণনা ১০০২ হিজরি বা ১৫৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। নিজামউদ্দীন ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে লাহোরে মারা যান।

সহজ ভাষায় লিখিত তবকাত-ই-আকবরী একটি নিরস প্রতিবেদন। সমসাময়িক কালের পূর্ববর্তী ইতিহাসের জন্য তিনি পুরানো কাহিনীকারদের রচনার সাহায্য নেন, আর আকবরের সমসাময়িক হওয়ায় তিনি ঐ সময়ের সংঘটিত ঘটনাবলির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি একজন সফল ও বিশ্বস্ত সভাসদ ছিলেন। তাই তাঁর প্রণীত গ্রন্থ, বিশেষ করে আকবরের রাজত্বকালের বর্ণনাসম্বলিত অংশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। মাঝে মাঝে গ্রন্থকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু বাদ দিয়েছেন। আকবরের ধর্মীয় খেয়ালিপনা বিষয়ে নিজামউদ্দীন কিছু উল্লেখ করেন নি এবং কখনও এবিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া, সমালোচনা, বিরুদ্ধ মতবাদ নথিবদ্ধ করতে আগ্রহী হন নি।

বাংলার সুলতানি আমলের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য তবকাত-ই-আকবরী খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। প্রাক্-মুগল আমলে বাংলার উপর কোনো ইতিহাস রচিত হয় নি। সমসাময়িক কালে বাংলা মুলুকে রচিত বা বাংলার সুলতানদের নিয়ে লিখিত কোনো ইতিহাস গ্রন্থ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তাই প্রাক্-মুগল যুগের উপর পরবর্তীকালের লেখা বেশ সহায়ক ও গ্রহণীয়। দুটি ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে তবকাতই প্রথম যেখানে বখতিয়ার খলজী থেকে শুরু করে মুগল যুগের পূর্বপর্যন্ত ঘটনাবলি একটা সম্পূর্ণ পৃথক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে। অন্য গ্রন্থটি হলো তারিখ-ই-ফিরিশতা

পরবর্তীকালে লিখিত বলে বাংলার ঘটনা তবকাতে সংক্ষিপ্তভাবে দেওয়া আছে, সময়ের উল্লেখেও প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পাওয়া যায় এবং এমনকি এর বর্ণনায় অনেক সুলতানের নামও বাদ পড়েছে। কিন্তু শত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও তবকাত-ই-আকবরী প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ যেখানে মোটামুটিভাবে বাংলার নৃপতিদের নাম ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায়।  [আবদুল করিম]