জাতীয়তাবাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (fix: </u>]]) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
তুর্ক-আফগান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার বিকাশের পাশাপাশি আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলা ভাষার উন্নয়ন ছাড়াও তাদের অপর বিরাট অবদান ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ। মুগল আমলে এ প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আঠারো শতকের নবাবী শাসনের মধ্যে রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা জাতি-রাষ্ট্রের সকল লক্ষণ পরিস্ফুট ছিল। | তুর্ক-আফগান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার বিকাশের পাশাপাশি আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলা ভাষার উন্নয়ন ছাড়াও তাদের অপর বিরাট অবদান ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ। মুগল আমলে এ প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আঠারো শতকের নবাবী শাসনের মধ্যে রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা জাতি-রাষ্ট্রের সকল লক্ষণ পরিস্ফুট ছিল। | ||
জাতি হিসেবে বাংলার নিজস্ব সত্তার অব্যাহত বিকাশের পথে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রবল বাধা হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক শতকে এ অঞ্চলে কারুশিল্প, নির্মাণ ও শিল্প কারখানা, শিক্ষা ও প্রশাসন ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জন ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষা, প্রশাসন ও অর্থনৈতিক নানা নীতির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন দেশে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চালু করে। ঔপনিবেশিক পরিবর্তনগুলো বিগত কয়েক শতকে গড়া-ওঠা সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করছিল, এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে ধ্বংসও করে দিয়েছিল। উনিশ শতকের ঘটনাবলি এক ধরনের বাঙালি জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলে। কিন্তু তা ছিল খন্ডিত ধরনের জাতীয়তাবাদ। এ জাতীয়তাবাদে মুসলমানদের সহানুভূতি বা অংশীদারিত্ব ছিল না; তারা ছিল মোটামুটি ধর্ম, প্রথা ও আচার ভিত্তিক সনাতন জাতীয়তাবাদে সম্পৃক্ত। উনিশ শতকের শেষের দিকে হিন্দু ভদ্রলোক এবং আশরাফ শ্রেণীর মুসলমানরা ধরে নিয়েছিলেন যে বাঙালি বলতে হিন্দু এবং বাংলা বলতে হিন্দুর ভাষাই বোঝায়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির এ অনৈতিহাসিক বিস্তার ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ ফল। বঙ্গভঙ্গের সময় (১৯০৫) হিন্দু ভদ্রলোক এবং মুসলিম আশরাফ শ্রেণীর মধ্যে এক মারমুখী পরিস্থিতি দেখা দেয়। হিন্দু ভদ্রলোকেরা বাংলার অখন্ড সত্তার নামে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে, আর মুসলিম আশরাফ শ্রেণী মুসলমানের কল্যাণের দোহাই দিয়ে | জাতি হিসেবে বাংলার নিজস্ব সত্তার অব্যাহত বিকাশের পথে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রবল বাধা হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক শতকে এ অঞ্চলে কারুশিল্প, নির্মাণ ও শিল্প কারখানা, শিক্ষা ও প্রশাসন ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জন ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষা, প্রশাসন ও অর্থনৈতিক নানা নীতির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন দেশে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চালু করে। ঔপনিবেশিক পরিবর্তনগুলো বিগত কয়েক শতকে গড়া-ওঠা সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করছিল, এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে ধ্বংসও করে দিয়েছিল। উনিশ শতকের ঘটনাবলি এক ধরনের বাঙালি জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলে। কিন্তু তা ছিল খন্ডিত ধরনের জাতীয়তাবাদ। এ জাতীয়তাবাদে মুসলমানদের সহানুভূতি বা অংশীদারিত্ব ছিল না; তারা ছিল মোটামুটি ধর্ম, প্রথা ও আচার ভিত্তিক সনাতন জাতীয়তাবাদে সম্পৃক্ত। উনিশ শতকের শেষের দিকে হিন্দু ভদ্রলোক এবং আশরাফ শ্রেণীর মুসলমানরা ধরে নিয়েছিলেন যে বাঙালি বলতে হিন্দু এবং বাংলা বলতে হিন্দুর ভাষাই বোঝায়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির এ অনৈতিহাসিক বিস্তার ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ ফল। বঙ্গভঙ্গের সময় (১৯০৫) হিন্দু ভদ্রলোক এবং মুসলিম আশরাফ শ্রেণীর মধ্যে এক মারমুখী পরিস্থিতি দেখা দেয়। হিন্দু ভদ্রলোকেরা বাংলার অখন্ড সত্তার নামে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে, আর মুসলিম আশরাফ শ্রেণী মুসলমানের কল্যাণের দোহাই দিয়ে বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা আর কখনোই প্রশমিত হয় নি। ১৯৩৫ ও ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলমানরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের পক্ষে ভোট দেয়, ভারতীয় বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে নয়। বাংলা বিভাগের (১৯৪৭) ফলে অন্তত আঞ্চলিক অর্থে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সকল সম্ভাবনাই তিরোহিত হয়। | ||
মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানের কাঠামোর আওতায় বাংলা বিভক্ত ও পূর্ববঙ্গ প্রদেশ সৃষ্টির ফলে আপাতদৃষ্টিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। কিন্তু অচিরেই পূর্ববাংলার মানুষ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদ আত্মপরিচয়ের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা ও সংসক্তি আহরণ করে যা ইতিহাস, ভূগোল, জাতিসত্তা, ধর্ম, ভাষা ও কৃষ্টির অভিজ্ঞতার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। দুর্ভাগ্যবশত, ধর্ম ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) অভিজ্ঞতার কোনো অংশীদারিত্ব ছিল না। অন্যান্য সমন্বয়কারী উপাদান না থাকলে কিন্তু খোদ ধর্ম জাতিগঠনে বিশেষ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। তা সত্ত্বেও একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানে পূর্ববঙ্গের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল, যদি দুই অঞ্চলের জনগণের বন্ধন আরও শক্তিশালী করার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ থাকত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সংহতি উন্নয়ন ও জাতীয়তাবাদের উপাদান সৃষ্টিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি বাঙালিদের পশ্চিম পাকিস্তানের সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব, দুই অংশের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্পদ ও চাকরির সুযোগ বন্টনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পূর্ববাংলার জনগণের তীব্র মতানৈক্য দেখা দেয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে প্রমাণিত হয় যে পূর্ব পাকিস্তান বস্ত্তত অরক্ষিত ছিল। রাষ্ট্রের সকল খাতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল খুবই কম। পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু বাসিন্দার প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য বাঙালিদের মনঃকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে, কেননা তারা জাতিগত আধিপত্য অবলুপ্তির জন্যই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিল। | মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানের কাঠামোর আওতায় বাংলা বিভক্ত ও পূর্ববঙ্গ প্রদেশ সৃষ্টির ফলে আপাতদৃষ্টিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। কিন্তু অচিরেই পূর্ববাংলার মানুষ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদ আত্মপরিচয়ের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা ও সংসক্তি আহরণ করে যা ইতিহাস, ভূগোল, জাতিসত্তা, ধর্ম, ভাষা ও কৃষ্টির অভিজ্ঞতার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। দুর্ভাগ্যবশত, ধর্ম ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) অভিজ্ঞতার কোনো অংশীদারিত্ব ছিল না। অন্যান্য সমন্বয়কারী উপাদান না থাকলে কিন্তু খোদ ধর্ম জাতিগঠনে বিশেষ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। তা সত্ত্বেও একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানে পূর্ববঙ্গের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল, যদি দুই অঞ্চলের জনগণের বন্ধন আরও শক্তিশালী করার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ থাকত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সংহতি উন্নয়ন ও জাতীয়তাবাদের উপাদান সৃষ্টিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি বাঙালিদের পশ্চিম পাকিস্তানের সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব, দুই অংশের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্পদ ও চাকরির সুযোগ বন্টনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পূর্ববাংলার জনগণের তীব্র মতানৈক্য দেখা দেয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে প্রমাণিত হয় যে পূর্ব পাকিস্তান বস্ত্তত অরক্ষিত ছিল। রাষ্ট্রের সকল খাতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল খুবই কম। পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু বাসিন্দার প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য বাঙালিদের মনঃকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে, কেননা তারা জাতিগত আধিপত্য অবলুপ্তির জন্যই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিল। | ||
পূর্ববাংলার লোকদের মধ্যে বঞ্চনা ও অবদমনের বোধ থেকে একটি নতুন সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষত [[ | পূর্ববাংলার লোকদের মধ্যে বঞ্চনা ও অবদমনের বোধ থেকে একটি নতুন সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষত [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগ]] ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। ষাটের দশক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্কের কথা ভাবতে শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বা এমনকি ফেডারেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হলেও পূর্ব পাকিস্তানে একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ষাটের দশকের শেষদিকে এ চেতনা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের রূপ পরিগ্রহ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণ তাদের নতুন চেতনা ও সংহতির পরিচয় ব্যক্ত করে। বঙ্গবন্ধু [[রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর|শেখ মুজিবুর রহমান]] ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ এ নতুন জাতীয়তাবাদের মুখ্য প্রবক্তা হয়ে ওঠে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ফেডারেল ধারণার সঙ্গে কেন্দ্র একমত হতে পারে নি এবং এরই ফলে সংঘটিত হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক [[মুক্তিযুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধ]]। | ||
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর [[ | মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর [[গণহত্যা, ১৯৭১|গণহত্যা]] ও নির্যাতন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করে। মুক্তিযুদ্ধকালে ও পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা নিশ্চিতই বাঙালি জাতিসত্তার আদর্শিক কাঠামোকে প্রভাবিত করেছিল। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে বাঙালি রাষ্ট্রসত্তা ও জাতীয়তাবাদের দুটি উপাদান ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ধারণা যুদ্ধকালীন দুই মিত্রদেশ ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই এসেছিল। | ||
সাধারণ বাঙালির কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র এ দুটি ধারণাই ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অগ্রহণযোগ্য। এমনকি সত্তরের দশকের শেষদিক থেকে নববইয়ের দশক পর্যন্ত সময়ে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার কঠোরভাবে সমালোচিত হতে থাকে যখন সরকার ও এর সমর্থকরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলাই সঙ্গত বিবেচনা করেন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। মতবাদের দিক থেকে প্রথমটিকে বিদেশি প্রভাবিত এবং দ্বিতীয়টিকে ইসলাম প্রভাবিত মনে করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর সোচ্চার নয়। ধর্ম কখনো কখনো একটি দেশে জাতীয়তাবাদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলমান এবং হাজার বছরের পুরনো ইসলামী ঐতিহ্যের কারণে ধর্ম হিসেবে ইসলামকে অবহেলা করা যায় না। তাই আশির দশক থেকে রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও জাতীয়তাবাদী বক্তব্যে ইসলামের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে। সমালোচকরা আরও বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশী বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ বলায় সুবিধা হলো এ যে, এতে একদিকে যেমন দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, আবার অন্যদিকে ভারতের অন্তত একটি রাজ্যের বাঙালি নাগরিকদের এর আওতার বাইরে রাখা যায়। কিন্তু সাধারণ লোকের কাছে তর্কটি শুধুই একটি তত্ত্বীয় ব্যাপার, কেননা জাতীয়তাবাদের নাম বাঙালি বা বাংলাদেশী যাই হোক, তারা বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্য বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্যের আদর্শবাহী একটি জনগোষ্ঠী, একটি জাতি ও একটি জাতীয়তা নিয়ে বসবাস করতে চায়। [আশা ইসলাম] | সাধারণ বাঙালির কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র এ দুটি ধারণাই ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অগ্রহণযোগ্য। এমনকি সত্তরের দশকের শেষদিক থেকে নববইয়ের দশক পর্যন্ত সময়ে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার কঠোরভাবে সমালোচিত হতে থাকে যখন সরকার ও এর সমর্থকরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলাই সঙ্গত বিবেচনা করেন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। মতবাদের দিক থেকে প্রথমটিকে বিদেশি প্রভাবিত এবং দ্বিতীয়টিকে ইসলাম প্রভাবিত মনে করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর সোচ্চার নয়। ধর্ম কখনো কখনো একটি দেশে জাতীয়তাবাদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলমান এবং হাজার বছরের পুরনো ইসলামী ঐতিহ্যের কারণে ধর্ম হিসেবে ইসলামকে অবহেলা করা যায় না। তাই আশির দশক থেকে রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও জাতীয়তাবাদী বক্তব্যে ইসলামের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে। সমালোচকরা আরও বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশী বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ বলায় সুবিধা হলো এ যে, এতে একদিকে যেমন দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, আবার অন্যদিকে ভারতের অন্তত একটি রাজ্যের বাঙালি নাগরিকদের এর আওতার বাইরে রাখা যায়। কিন্তু সাধারণ লোকের কাছে তর্কটি শুধুই একটি তত্ত্বীয় ব্যাপার, কেননা জাতীয়তাবাদের নাম বাঙালি বা বাংলাদেশী যাই হোক, তারা বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্য বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্যের আদর্শবাহী একটি জনগোষ্ঠী, একটি জাতি ও একটি জাতীয়তা নিয়ে বসবাস করতে চায়। [আশা ইসলাম] | ||
[[en:Nationalism]] | [[en:Nationalism]] |
০৬:২১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
জাতীয়তাবাদ সুপ্রাচীন কাল থেকেই বঙ্গীয় বদ্বীপে ক্রমাগত জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং এভাবে পূর্ব ভারতে উদ্ভব ঘটেছে একটি ঘনবিন্যস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীর। ত্রয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রবর্তন জাতি গঠনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তুর্ক-আফগান শাসনে এ অঞ্চলে অসংখ্য ছোট ছোট রাজ্য এক ‘শাহ-ই-বাঙ্গালা’য় একীভূত হয়। এ বদ্বীপের আঞ্চলিক অখন্ডতা এবং ‘বাঙ্গালা’ নামকরণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদে উত্তরণের এক দীর্ঘ পথযাত্রার ইতিবাচক নিদর্শন।
তুর্ক-আফগান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার বিকাশের পাশাপাশি আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলা ভাষার উন্নয়ন ছাড়াও তাদের অপর বিরাট অবদান ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ। মুগল আমলে এ প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আঠারো শতকের নবাবী শাসনের মধ্যে রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা জাতি-রাষ্ট্রের সকল লক্ষণ পরিস্ফুট ছিল।
জাতি হিসেবে বাংলার নিজস্ব সত্তার অব্যাহত বিকাশের পথে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রবল বাধা হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক শতকে এ অঞ্চলে কারুশিল্প, নির্মাণ ও শিল্প কারখানা, শিক্ষা ও প্রশাসন ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জন ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষা, প্রশাসন ও অর্থনৈতিক নানা নীতির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন দেশে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চালু করে। ঔপনিবেশিক পরিবর্তনগুলো বিগত কয়েক শতকে গড়া-ওঠা সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করছিল, এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে ধ্বংসও করে দিয়েছিল। উনিশ শতকের ঘটনাবলি এক ধরনের বাঙালি জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলে। কিন্তু তা ছিল খন্ডিত ধরনের জাতীয়তাবাদ। এ জাতীয়তাবাদে মুসলমানদের সহানুভূতি বা অংশীদারিত্ব ছিল না; তারা ছিল মোটামুটি ধর্ম, প্রথা ও আচার ভিত্তিক সনাতন জাতীয়তাবাদে সম্পৃক্ত। উনিশ শতকের শেষের দিকে হিন্দু ভদ্রলোক এবং আশরাফ শ্রেণীর মুসলমানরা ধরে নিয়েছিলেন যে বাঙালি বলতে হিন্দু এবং বাংলা বলতে হিন্দুর ভাষাই বোঝায়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির এ অনৈতিহাসিক বিস্তার ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ ফল। বঙ্গভঙ্গের সময় (১৯০৫) হিন্দু ভদ্রলোক এবং মুসলিম আশরাফ শ্রেণীর মধ্যে এক মারমুখী পরিস্থিতি দেখা দেয়। হিন্দু ভদ্রলোকেরা বাংলার অখন্ড সত্তার নামে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে, আর মুসলিম আশরাফ শ্রেণী মুসলমানের কল্যাণের দোহাই দিয়ে বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা আর কখনোই প্রশমিত হয় নি। ১৯৩৫ ও ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলমানরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের পক্ষে ভোট দেয়, ভারতীয় বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে নয়। বাংলা বিভাগের (১৯৪৭) ফলে অন্তত আঞ্চলিক অর্থে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সকল সম্ভাবনাই তিরোহিত হয়।
মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানের কাঠামোর আওতায় বাংলা বিভক্ত ও পূর্ববঙ্গ প্রদেশ সৃষ্টির ফলে আপাতদৃষ্টিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। কিন্তু অচিরেই পূর্ববাংলার মানুষ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদ আত্মপরিচয়ের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা ও সংসক্তি আহরণ করে যা ইতিহাস, ভূগোল, জাতিসত্তা, ধর্ম, ভাষা ও কৃষ্টির অভিজ্ঞতার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। দুর্ভাগ্যবশত, ধর্ম ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) অভিজ্ঞতার কোনো অংশীদারিত্ব ছিল না। অন্যান্য সমন্বয়কারী উপাদান না থাকলে কিন্তু খোদ ধর্ম জাতিগঠনে বিশেষ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। তা সত্ত্বেও একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানে পূর্ববঙ্গের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল, যদি দুই অঞ্চলের জনগণের বন্ধন আরও শক্তিশালী করার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ থাকত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সংহতি উন্নয়ন ও জাতীয়তাবাদের উপাদান সৃষ্টিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি বাঙালিদের পশ্চিম পাকিস্তানের সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব, দুই অংশের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্পদ ও চাকরির সুযোগ বন্টনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পূর্ববাংলার জনগণের তীব্র মতানৈক্য দেখা দেয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে প্রমাণিত হয় যে পূর্ব পাকিস্তান বস্ত্তত অরক্ষিত ছিল। রাষ্ট্রের সকল খাতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল খুবই কম। পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু বাসিন্দার প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য বাঙালিদের মনঃকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে, কেননা তারা জাতিগত আধিপত্য অবলুপ্তির জন্যই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিল।
পূর্ববাংলার লোকদের মধ্যে বঞ্চনা ও অবদমনের বোধ থেকে একটি নতুন সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষত আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। ষাটের দশক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্কের কথা ভাবতে শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বা এমনকি ফেডারেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হলেও পূর্ব পাকিস্তানে একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ষাটের দশকের শেষদিকে এ চেতনা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের রূপ পরিগ্রহ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণ তাদের নতুন চেতনা ও সংহতির পরিচয় ব্যক্ত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ এ নতুন জাতীয়তাবাদের মুখ্য প্রবক্তা হয়ে ওঠে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ফেডারেল ধারণার সঙ্গে কেন্দ্র একমত হতে পারে নি এবং এরই ফলে সংঘটিত হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করে। মুক্তিযুদ্ধকালে ও পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা নিশ্চিতই বাঙালি জাতিসত্তার আদর্শিক কাঠামোকে প্রভাবিত করেছিল। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে বাঙালি রাষ্ট্রসত্তা ও জাতীয়তাবাদের দুটি উপাদান ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ধারণা যুদ্ধকালীন দুই মিত্রদেশ ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই এসেছিল।
সাধারণ বাঙালির কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র এ দুটি ধারণাই ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অগ্রহণযোগ্য। এমনকি সত্তরের দশকের শেষদিক থেকে নববইয়ের দশক পর্যন্ত সময়ে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার কঠোরভাবে সমালোচিত হতে থাকে যখন সরকার ও এর সমর্থকরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলাই সঙ্গত বিবেচনা করেন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। মতবাদের দিক থেকে প্রথমটিকে বিদেশি প্রভাবিত এবং দ্বিতীয়টিকে ইসলাম প্রভাবিত মনে করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর সোচ্চার নয়। ধর্ম কখনো কখনো একটি দেশে জাতীয়তাবাদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলমান এবং হাজার বছরের পুরনো ইসলামী ঐতিহ্যের কারণে ধর্ম হিসেবে ইসলামকে অবহেলা করা যায় না। তাই আশির দশক থেকে রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও জাতীয়তাবাদী বক্তব্যে ইসলামের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে। সমালোচকরা আরও বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশী বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ বলায় সুবিধা হলো এ যে, এতে একদিকে যেমন দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, আবার অন্যদিকে ভারতের অন্তত একটি রাজ্যের বাঙালি নাগরিকদের এর আওতার বাইরে রাখা যায়। কিন্তু সাধারণ লোকের কাছে তর্কটি শুধুই একটি তত্ত্বীয় ব্যাপার, কেননা জাতীয়তাবাদের নাম বাঙালি বা বাংলাদেশী যাই হোক, তারা বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্য বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্যের আদর্শবাহী একটি জনগোষ্ঠী, একটি জাতি ও একটি জাতীয়তা নিয়ে বসবাস করতে চায়। [আশা ইসলাম]