ক্যালকাটা রিভিউ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ক্যালকাটা রিভিউ''' ত্রৈমাসিক পত্রিকা এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৪৪ সালের ১৫ মে। প্রথম সংখ্যার ভূমিকায় বলা হয় যে, ক্যালকাটা রিভিউর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জনতার মাঝে ভারতীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের মনের গভীরে এমন ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটানো, যা ‘প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জনগণের অবস্থার উন্নতিবিধানে কিয়দংশ সহায়ক হয়।’
'''ক্যালকাটা রিভিউ''' ত্রৈমাসিক পত্রিকা এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৪৪ সালের ১৫ মে। প্রথম সংখ্যার ভূমিকায় বলা হয় যে, ক্যালকাটা রিভিউর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জনতার মাঝে ভারতীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের মনের গভীরে এমন ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটানো, যা ‘প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জনগণের অবস্থার উন্নতিবিধানে কিয়দংশ সহায়ক হয়।’


সামাজিক কল্যাণে পত্রিকার সদিচ্ছার কারণে প্রথম দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার স্বল্পকালের মধ্যেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তী প্রত্যেক সংখ্যায় পাঠক সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। অবশেষে রিভিউটি জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরে তিন মাস অন্তর নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮৫৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশক নাগাদ ক্যালকাটা রিভিউ এর কাটতি প্রত্যেক সংখ্যার জন্য ১৫০০ কপিতে পৌঁছে। রিভিউ এর এ বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে বিরাট কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবে ক্যালকাটা ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডভোকেট ও সিটিজেন এর তৎকালীন সম্পাদকবৃন্দ পত্রিকাটির খাঁটি প্রাচ্যদেশীয় চরিত্রের কথা বলেছেন এবং মর্নিং ক্রনিকল এর সম্পাদক উল্লেখ করেছেন, বিচিত্র বিষয়াবলি নিয়ে এর লেখালেখি ও সে সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ রিপোটিং-এর কথা।
সামাজিক কল্যাণে পত্রিকার সদিচ্ছার কারণে প্রথম দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার স্বল্পকালের মধ্যেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তী প্রত্যেক সংখ্যায় পাঠক সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। অবশেষে রিভিউটি জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরে তিন মাস অন্তর নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮৫৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশক নাগাদ ক্যালকাটা রিভিউ এর কাটতি প্রত্যেক সংখ্যার জন্য ১৫০০ কপিতে পৌঁছে। রিভিউ এর এ বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে বিরাট কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবে ক্যালকাটা ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডভোকেট ও সিটিজেন এর তৎকালীন সম্পাদকবৃন্দ পত্রিকাটির খাঁটি প্রাচ্যদেশীয় চরিত্রের কথা বলেছেন এবং মর্নিং ক্রনিকল এর সম্পাদক উল্লেখ করেছেন, বিচিত্র বিষয়াবলি নিয়ে এর লেখালেখি ও সে সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ রিপোটিং-এর কথা।
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
তবে ক্যালকাটা রিভিউর এ সাফল্য ছিল ক্ষণস্থায়ী, এবং ১৮৫৫ সালের পর পত্রিকাটিকে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে কার্যত সংগ্রাম করতে হয়। ক্যালকাটা রিভিউর দ্রুত অবনতির কারণসমূহকে মর্নিং ক্রনিকলের সম্পাদক প্রধানত ব্যবস্থাপনায় চরম নিয়মলঙ্ঘন ও একইসঙ্গে এর কার্যনির্বাহে অ-পেশাদারিত্বের ওপর আরোপ করেছেন। লেখকদের এক টাকাও  প্রদান না করে লাভের সম্পূর্ণ অংশ মালিক নিজেই রেখে দিতেন। যদিও প্রারম্ভিক পর্যায়ে নিয়মলঙ্ঘন হয় নি ও প্রকাশনায় বিলম্ব ঘটে নি, তবুও বিনা পারিশ্রমিকে খাঁটানোর পরিণামস্বরূপ সম্পদকবৃন্দ ও লেখকদের সকল কর্মোদ্যম ও উৎসাহ বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলে লেখকবৃন্দ তাদের লেখা সময়মতো পাঠাতে ব্যর্থ হন। অত্যধিক বিলম্বের কারণে প্রকাশনা প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
তবে ক্যালকাটা রিভিউর এ সাফল্য ছিল ক্ষণস্থায়ী, এবং ১৮৫৫ সালের পর পত্রিকাটিকে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে কার্যত সংগ্রাম করতে হয়। ক্যালকাটা রিভিউর দ্রুত অবনতির কারণসমূহকে মর্নিং ক্রনিকলের সম্পাদক প্রধানত ব্যবস্থাপনায় চরম নিয়মলঙ্ঘন ও একইসঙ্গে এর কার্যনির্বাহে অ-পেশাদারিত্বের ওপর আরোপ করেছেন। লেখকদের এক টাকাও  প্রদান না করে লাভের সম্পূর্ণ অংশ মালিক নিজেই রেখে দিতেন। যদিও প্রারম্ভিক পর্যায়ে নিয়মলঙ্ঘন হয় নি ও প্রকাশনায় বিলম্ব ঘটে নি, তবুও বিনা পারিশ্রমিকে খাঁটানোর পরিণামস্বরূপ সম্পদকবৃন্দ ও লেখকদের সকল কর্মোদ্যম ও উৎসাহ বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলে লেখকবৃন্দ তাদের লেখা সময়মতো পাঠাতে ব্যর্থ হন। অত্যধিক বিলম্বের কারণে প্রকাশনা প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।


পরিশেষে, ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদক ক্যালকাটা রিভিউর মালিকানা কিনে নেন। তখন পর্যন্ত জে.ডাব্লিউ. কেই, রেভ. [[ডাফ, রেভারেন্ড আলেকজান্ডার|AvGjKRv´£vi  ]][[ডাফ, রেভারেন্ড আলেকজান্ডার|Wvd]], রেভ. ডব্লিউ. এস ম্যাকে ও রেভ. জর্জ স্মিথের মতো বিখ্যাত সম্পাদকবৃন্দ রিভিউর অফিসকে অলঙ্কৃত করেছেন, অন্যদিকে রেভ. জন ম্যাকডোনাল্ড কিছুদিনের জন্য এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
পরিশেষে, ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদক ক্যালকাটা রিভিউর মালিকানা কিনে নেন। তখন পর্যন্ত জে.ডাব্লিউ. কেই, রেভ. [[ডাফ, রেভারেন্ড আলেকজান্ডার|আলেকজান্ডার ডাফ]], রেভ. ডব্লিউ. এস ম্যাকে ও রেভ. জর্জ স্মিথের মতো বিখ্যাত সম্পাদকবৃন্দ রিভিউর অফিসকে অলঙ্কৃত করেছেন, অন্যদিকে রেভ. জন ম্যাকডোনাল্ড কিছুদিনের জন্য এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।


ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে ক্যালকাটা রিভিউকে দীর্ঘদিন থাকতে হয় নি। যদিও এর নতুন নির্বাহি সম্পাদক সকল লেখককে পারিশ্রমিক প্রদানের নীতি অবলম্বন করেছিলেন, তবুও রিভিউ নিয়মিতভাবে এবং সময়মত লেখা পেত না।
ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে ক্যালকাটা রিভিউকে দীর্ঘদিন থাকতে হয় নি। যদিও এর নতুন নির্বাহি সম্পাদক সকল লেখককে পারিশ্রমিক প্রদানের নীতি অবলম্বন করেছিলেন, তবুও রিভিউ নিয়মিতভাবে এবং সময়মত লেখা পেত না।

০৮:৫৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ক্যালকাটা রিভিউ ত্রৈমাসিক পত্রিকা এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৪৪ সালের ১৫ মে। প্রথম সংখ্যার ভূমিকায় বলা হয় যে, ক্যালকাটা রিভিউর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জনতার মাঝে ভারতীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের মনের গভীরে এমন ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটানো, যা ‘প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জনগণের অবস্থার উন্নতিবিধানে কিয়দংশ সহায়ক হয়।’

সামাজিক কল্যাণে পত্রিকার সদিচ্ছার কারণে প্রথম দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার স্বল্পকালের মধ্যেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তী প্রত্যেক সংখ্যায় পাঠক সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। অবশেষে রিভিউটি জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরে তিন মাস অন্তর নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮৫৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশক নাগাদ ক্যালকাটা রিভিউ এর কাটতি প্রত্যেক সংখ্যার জন্য ১৫০০ কপিতে পৌঁছে। রিভিউ এর এ বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে বিরাট কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবে ক্যালকাটা ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডভোকেট ও সিটিজেন এর তৎকালীন সম্পাদকবৃন্দ পত্রিকাটির খাঁটি প্রাচ্যদেশীয় চরিত্রের কথা বলেছেন এবং মর্নিং ক্রনিকল এর সম্পাদক উল্লেখ করেছেন, বিচিত্র বিষয়াবলি নিয়ে এর লেখালেখি ও সে সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ রিপোটিং-এর কথা।

তবে ক্যালকাটা রিভিউর এ সাফল্য ছিল ক্ষণস্থায়ী, এবং ১৮৫৫ সালের পর পত্রিকাটিকে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে কার্যত সংগ্রাম করতে হয়। ক্যালকাটা রিভিউর দ্রুত অবনতির কারণসমূহকে মর্নিং ক্রনিকলের সম্পাদক প্রধানত ব্যবস্থাপনায় চরম নিয়মলঙ্ঘন ও একইসঙ্গে এর কার্যনির্বাহে অ-পেশাদারিত্বের ওপর আরোপ করেছেন। লেখকদের এক টাকাও  প্রদান না করে লাভের সম্পূর্ণ অংশ মালিক নিজেই রেখে দিতেন। যদিও প্রারম্ভিক পর্যায়ে নিয়মলঙ্ঘন হয় নি ও প্রকাশনায় বিলম্ব ঘটে নি, তবুও বিনা পারিশ্রমিকে খাঁটানোর পরিণামস্বরূপ সম্পদকবৃন্দ ও লেখকদের সকল কর্মোদ্যম ও উৎসাহ বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলে লেখকবৃন্দ তাদের লেখা সময়মতো পাঠাতে ব্যর্থ হন। অত্যধিক বিলম্বের কারণে প্রকাশনা প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

পরিশেষে, ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদক ক্যালকাটা রিভিউর মালিকানা কিনে নেন। তখন পর্যন্ত জে.ডাব্লিউ. কেই, রেভ. আলেকজান্ডার ডাফ, রেভ. ডব্লিউ. এস ম্যাকে ও রেভ. জর্জ স্মিথের মতো বিখ্যাত সম্পাদকবৃন্দ রিভিউর অফিসকে অলঙ্কৃত করেছেন, অন্যদিকে রেভ. জন ম্যাকডোনাল্ড কিছুদিনের জন্য এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে ক্যালকাটা রিভিউকে দীর্ঘদিন থাকতে হয় নি। যদিও এর নতুন নির্বাহি সম্পাদক সকল লেখককে পারিশ্রমিক প্রদানের নীতি অবলম্বন করেছিলেন, তবুও রিভিউ নিয়মিতভাবে এবং সময়মত লেখা পেত না।

ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকের নিকট থেকে ১৮৫৭ সালে ক্যালকাটা রিভিউ এর মালিকানা যে ব্যক্তি গ্রহণ করেন, তিনি সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হলে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। এর প্রধান কারণ ছিল, সিপাহিরা বেশ কয়েকজন লেখককে মেরে ফেলে যা পরবর্তী সময়ে, বিশেষত উত্তর ভারতে, এর পাঠকদের উৎসাহ হ্রাস করে দেয়।  [অভিজিৎ দত্ত]