কড়ি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''কড়ি''' মালদ্বীপের একটি সামুদ্রিক শামুকের খোল। এটি দেখতে ক্ষুদ্র ও উজ্জ্বল। এককালে বাংলায় বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে কড়ি ব্যবহূত হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগেও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় এর ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি। সীমিত আকারে হলেও চীন ও ইউরোপেও কড়ি বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হতো। এটি সর্বত্র কড়ি নামে প্রচলিত থাকলেও এর আঞ্চলিক নামও ছিল, যেমন, সংস্কৃত ভাষায় কড়ির নাম ছিল কপর্দক। | |||
'''কড়ি''' মালদ্বীপের একটি সামুদ্রিক শামুকের খোল। এটি দেখতে ক্ষুদ্র ও উজ্জ্বল। এককালে বাংলায় বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে কড়ি ব্যবহূত হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগেও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় এর ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি। সীমিত আকারে হলেও চীন ও ইউরোপেও কড়ি বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হতো। এটি সর্বত্র কড়ি নামে প্রচলিত থাকলেও এর আঞ্চলিক নামও ছিল, যেমন, সংস্কৃত ভাষায় কড়ির নাম ছিল কপর্দক। | |||
[[Image:Cowrie.jpg|thumb|right|কড়ি]] | [[Image:Cowrie.jpg|thumb|right|কড়ি]] |
০৪:৪৩, ২১ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কড়ি মালদ্বীপের একটি সামুদ্রিক শামুকের খোল। এটি দেখতে ক্ষুদ্র ও উজ্জ্বল। এককালে বাংলায় বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে কড়ি ব্যবহূত হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগেও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় এর ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি। সীমিত আকারে হলেও চীন ও ইউরোপেও কড়ি বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হতো। এটি সর্বত্র কড়ি নামে প্রচলিত থাকলেও এর আঞ্চলিক নামও ছিল, যেমন, সংস্কৃত ভাষায় কড়ির নাম ছিল কপর্দক।
মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য আখ্যানে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে কড়ি বা কপর্দকের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তৃত উল্লেখ রয়েছে। এখনও কড়ি ও কপর্দক শব্দদ্বয় বাংলা ভাষায় চালু আছে, তবে ঠিক মুদ্রা অর্থে নয়, আর্থিক পরিস্থিতি বুঝায় এমন অর্থে। সে যুগে রৌপ্যমুদ্রা প্রচলিত থাকলেও এর ব্যবহার শহর ও বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামাঞ্চলে কড়িই ছিল ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান মাধ্যম। মধ্যযুগীয় ঐতিহাসিক আল মাসুদী ও আবুল ফজল রচিত বিবরণীতে বাজারমূল্য ধরা হয়েছে কড়ির মানদন্ডে। বস্ত্তত, ভূমিরাজস্ব সংগ্রহে শস্যকর থেকে মুদ্রাকর ধাপে উত্তরণের প্রথম পর্বে কড়ি মুদ্রা হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে।
এর প্রমাণ পাওয়া যায় মুগল আমলের রাজস্ব বন্দোবস্ত থেকে। সুলতানি আমলেও কড়ি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। মুগল আমলে রায়তরা শস্য বা কড়ি যেকোন মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করতে পারত। বাংলার সীমান্ত এলাকার রংপুর ও সিলেট জেলায় উনিশ শতকের শেষনাগাদও কড়ির প্রাধান্য ছিল। কড়ি মুদ্রার সবচেয়ে অভিনব দিক হলো এর গণনা-রীতি। এ রীতি কড়ির ব্যবহারের শেষযুগ পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। কড়ির গণনাবিধি ছিল: ৪ কড়ি = ১ গন্ডা; ৫ গন্ডা = ১ বড়ি; ৪ বড়ি = ১ পণ; ১৬ পণ = ১ কাহন; এবং দশ কাহন = ১ টাকা (প্রায় ৩৪০ রতি ওজনের রৌপ্যমুদ্রা)।
কড়ির আরেকটি হিসাব-রীতি হচ্ছে: ৪ কড়ি = ১ গণ্ডা; ২০ গণ্ডা = ১ পণ; ৪ পণ = ১ আনা; ৪ আনা = ১ কাহন; ৪ কাহন = ১ টাকা (২৮,৮৮০ কড়ি)।
ভৌগোলিক আবিষ্কার-উত্তর যুগে ইউরোপীয় দেশগুলি প্রচুর কড়ি আমদানি করত। তবে তা দেশের অভ্যন্তরে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো না। এসব কড়ি দিয়ে আফ্রিকার বাজার থেকে দাস ক্রয় করা হতো। তখন আফ্রিকার একমাত্র বিনিময় মাধ্যম ছিল কড়ি। [সিরাজুল ইসলাম]