কঠিন চীবর দান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''কঠিন চীবর দান''' বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠানবিশেষ। এদিন ভিক্ষুসংঘকে চীবর অর্থাৎ বস্ত্র দান করা হয়। বৌদ্ধদের বিশ্বাসমতে সমস্ত দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এ চীবর দান। | '''কঠিন চীবর দান''' বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠানবিশেষ। এদিন ভিক্ষুসংঘকে চীবর অর্থাৎ বস্ত্র দান করা হয়। বৌদ্ধদের বিশ্বাসমতে সমস্ত দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এ চীবর দান। | ||
[[Image:KathinChiborDan.jpg|thumb|400px|right|কঠিন চীবর দান উৎসব]] | |||
‘চীবর’ শব্দের অর্থ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র। গাছের শেকড়, গুঁড়ি, ছাল, শুকনো পাতা, ফুল ও ফলের রঙ অনুসারে এর ছয়টি রঙ নির্দিষ্ট। তবে ভিক্ষুসংঘ সাধারণত লাল ফুলের রঙের বস্ত্রই বেশি ব্যবহার করে, যা সাধারণ গৃহীদের পরিধেয় বস্ত্র থেকে পৃথক ও বৈচিত্র্যহীন। | ‘চীবর’ শব্দের অর্থ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র। গাছের শেকড়, গুঁড়ি, ছাল, শুকনো পাতা, ফুল ও ফলের রঙ অনুসারে এর ছয়টি রঙ নির্দিষ্ট। তবে ভিক্ষুসংঘ সাধারণত লাল ফুলের রঙের বস্ত্রই বেশি ব্যবহার করে, যা সাধারণ গৃহীদের পরিধেয় বস্ত্র থেকে পৃথক ও বৈচিত্র্যহীন। | ||
কঠিন চীবর দান প্রচলনের পূর্বে ভিক্ষুসংঘ পাংসুকুলিক চীবর (শ্মশানে বা অন্য কোথাও পড়ে থাকা ময়লা ছিন্নবস্ত্র) পরিধান করত। এতে ভিক্ষুদের রোগাক্রান্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্যহানি ঘটার সম্ভাবনা থাকত প্রচুর। তাদের সুস্বাস্থ্য ও নীরোগ দেহের কথা চিন্তা করে রাজগৃহে বর্ষাবাসকালে বুদ্ধদেব চীবর অর্থাৎ পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করার অনুমতি দেন। গৃহীরা তাদের এ বস্ত্র দান করে। তবে সকল ভিক্ষুই চীবর পরিধান করতে পারে না; যারা ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সমাপ্ত করেছে কেবল তারাই চীবর ব্যবহার করতে পারে। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার পূর্ব পর্যন্ত একমাস ব্যাপী এ চীবর দান অনুষ্ঠান পালিত হয়। | কঠিন চীবর দান প্রচলনের পূর্বে ভিক্ষুসংঘ পাংসুকুলিক চীবর (শ্মশানে বা অন্য কোথাও পড়ে থাকা ময়লা ছিন্নবস্ত্র) পরিধান করত। এতে ভিক্ষুদের রোগাক্রান্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্যহানি ঘটার সম্ভাবনা থাকত প্রচুর। তাদের সুস্বাস্থ্য ও নীরোগ দেহের কথা চিন্তা করে রাজগৃহে বর্ষাবাসকালে বুদ্ধদেব চীবর অর্থাৎ পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করার অনুমতি দেন। গৃহীরা তাদের এ বস্ত্র দান করে। তবে সকল ভিক্ষুই চীবর পরিধান করতে পারে না; যারা ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সমাপ্ত করেছে কেবল তারাই চীবর ব্যবহার করতে পারে। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার পূর্ব পর্যন্ত একমাস ব্যাপী এ চীবর দান অনুষ্ঠান পালিত হয়। | ||
‘চীবর দান’ কথাটির সঙ্গে ‘কঠিন’ শব্দটি যুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে [[মহাবগ্গ|মহাবগ্গ]] গ্রন্থে বলা হয়েছে: যেদিন চীবর দান করা হবে সেদিনের সূর্যোদয় থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সুতাকাটা, কাপড় বোনা, কাপড় কাটা, সেলাই ও রঙ করা, ধৌত করা ও শুকানো এ কাজগুলি সম্পন্ন করে উক্ত সময়ের মধ্যেই এ চীবর ভিক্ষুসংঘকে দান করতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু নিয়ম-কানুন আছে, যা দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের জন্যই পালন করা বেশ কঠিন। তাই এ অনুষ্ঠানের নাম হয়েছে কঠিন চীবর দান। | ‘চীবর দান’ কথাটির সঙ্গে ‘কঠিন’ শব্দটি যুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে [[মহাবগ্গ|মহাবগ্গ]] গ্রন্থে বলা হয়েছে: যেদিন চীবর দান করা হবে সেদিনের সূর্যোদয় থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সুতাকাটা, কাপড় বোনা, কাপড় কাটা, সেলাই ও রঙ করা, ধৌত করা ও শুকানো এ কাজগুলি সম্পন্ন করে উক্ত সময়ের মধ্যেই এ চীবর ভিক্ষুসংঘকে দান করতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু নিয়ম-কানুন আছে, যা দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের জন্যই পালন করা বেশ কঠিন। তাই এ অনুষ্ঠানের নাম হয়েছে কঠিন চীবর দান। |
০৪:২৭, ২১ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কঠিন চীবর দান বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠানবিশেষ। এদিন ভিক্ষুসংঘকে চীবর অর্থাৎ বস্ত্র দান করা হয়। বৌদ্ধদের বিশ্বাসমতে সমস্ত দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এ চীবর দান।
‘চীবর’ শব্দের অর্থ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র। গাছের শেকড়, গুঁড়ি, ছাল, শুকনো পাতা, ফুল ও ফলের রঙ অনুসারে এর ছয়টি রঙ নির্দিষ্ট। তবে ভিক্ষুসংঘ সাধারণত লাল ফুলের রঙের বস্ত্রই বেশি ব্যবহার করে, যা সাধারণ গৃহীদের পরিধেয় বস্ত্র থেকে পৃথক ও বৈচিত্র্যহীন।
কঠিন চীবর দান প্রচলনের পূর্বে ভিক্ষুসংঘ পাংসুকুলিক চীবর (শ্মশানে বা অন্য কোথাও পড়ে থাকা ময়লা ছিন্নবস্ত্র) পরিধান করত। এতে ভিক্ষুদের রোগাক্রান্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্যহানি ঘটার সম্ভাবনা থাকত প্রচুর। তাদের সুস্বাস্থ্য ও নীরোগ দেহের কথা চিন্তা করে রাজগৃহে বর্ষাবাসকালে বুদ্ধদেব চীবর অর্থাৎ পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করার অনুমতি দেন। গৃহীরা তাদের এ বস্ত্র দান করে। তবে সকল ভিক্ষুই চীবর পরিধান করতে পারে না; যারা ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সমাপ্ত করেছে কেবল তারাই চীবর ব্যবহার করতে পারে। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার পূর্ব পর্যন্ত একমাস ব্যাপী এ চীবর দান অনুষ্ঠান পালিত হয়।
‘চীবর দান’ কথাটির সঙ্গে ‘কঠিন’ শব্দটি যুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে মহাবগ্গ গ্রন্থে বলা হয়েছে: যেদিন চীবর দান করা হবে সেদিনের সূর্যোদয় থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সুতাকাটা, কাপড় বোনা, কাপড় কাটা, সেলাই ও রঙ করা, ধৌত করা ও শুকানো এ কাজগুলি সম্পন্ন করে উক্ত সময়ের মধ্যেই এ চীবর ভিক্ষুসংঘকে দান করতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু নিয়ম-কানুন আছে, যা দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের জন্যই পালন করা বেশ কঠিন। তাই এ অনুষ্ঠানের নাম হয়েছে কঠিন চীবর দান।
চীবর দানের ফল সম্পর্কে শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, শতবর্ষের দান কিংবা পৃথিবীর সকল প্রকার দান একত্র করলে তার যে ফল তা একখানি চীবর দানের ফলের ষোলো ভাগের এক ভাগও নয়। সুতরাং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৌদ্ধদের জন্য চীবর দানের গুরুত্ব অপরিসীম। এ দান জন্মজন্মান্তরে সুফলপ্রদায়ী।
প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে বছরে একবার মাত্র এ চীবর দান করা হয়। এদিন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ গৃহীরা ভিক্ষুসংঘকে চীবর দান করে। ভিক্ষুসংঘও তাদের বিনয়-বিধানের সকল নিয়ম অক্ষুণ্ণ রেখে পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে এ চীবর গ্রহণ ও ব্যবহার করে। কঠিন চীবর দানের বহুধা গুণের কথা স্মরণে রেখে প্রত্যেক বৌদ্ধ জীবনে অন্তত একবার হলেও চীবর দান করার মানসিকতা পোষণ করে। [সুকোমল বড়ুয়া]