দেবী, কানন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''দেবী | [[Image:DeviKanan.jpg|thumb|400px|right|কানন দেবী]] | ||
'''দেবী, কানন''' (আনু. ১৯১৪-১৯৯২) অভিনেত্রী, কণ্ঠশিল্পী। হাওড়ার এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম। তিনি সাধারণে ‘কাননবালা’ নামে পরিচিত ছিলেন। নয় বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যায়। অসহায় মাতা দুই কন্যাকে নিয়ে এক দূর সম্পর্কের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর মা-মেয়েতে মিলে ঝিয়ের কাজ করেন। তাঁর আত্মজীবনী সবারে আমি নমি (১৯৭৩) গ্রন্থে তাঁর বড় হয়ে ওঠার এসব কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। | |||
কানন দেবী অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। ১৯২৬ সালে, তখন তাঁর বয়স বারো/তেরো, তিনি একদিন কলকাতার ম্যাডান চলচ্চিত্র স্টুডিওতে হাজির হন। সৌন্দর্যের জন্য তাঁর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান এবং প্রথম চলচ্চিত্র ‘জয়দেব’-এ অভিনয় করে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ টাকা উপার্জন করেন। পরের বছর অভিনয় করেন অপর একটি ছবিতে। তবে তাঁর পুরোমাত্রার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালে। তাঁর প্রথম সবাকচিত্র ‘জোর বরাত’ (১৯৩১)। ১৯৩৫ সালে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’-এ নায়িকার অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি কাননবালা থেকে কানন দেবীতে পরিণত হন। অপরূপা কানন এতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন যে, রাস্তার ধারে তাঁর আলোকচিত্র বিক্রি হতে শুরু করে এবং তাঁর পোশাক, অলঙ্কার, চলাফেরা ইত্যাদি নারীদের জন্যে ফ্যাশনে পরিণত হয়। | কানন দেবী অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। ১৯২৬ সালে, তখন তাঁর বয়স বারো/তেরো, তিনি একদিন কলকাতার ম্যাডান চলচ্চিত্র স্টুডিওতে হাজির হন। সৌন্দর্যের জন্য তাঁর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান এবং প্রথম চলচ্চিত্র ‘জয়দেব’-এ অভিনয় করে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ টাকা উপার্জন করেন। পরের বছর অভিনয় করেন অপর একটি ছবিতে। তবে তাঁর পুরোমাত্রার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালে। তাঁর প্রথম সবাকচিত্র ‘জোর বরাত’ (১৯৩১)। ১৯৩৫ সালে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’-এ নায়িকার অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি কাননবালা থেকে কানন দেবীতে পরিণত হন। অপরূপা কানন এতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন যে, রাস্তার ধারে তাঁর আলোকচিত্র বিক্রি হতে শুরু করে এবং তাঁর পোশাক, অলঙ্কার, চলাফেরা ইত্যাদি নারীদের জন্যে ফ্যাশনে পরিণত হয়। | ||
পরে সেকালের প্রখ্যাত নায়ক প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে ‘মুক্তি’ (১৯৩৭) এবং আরও কয়েকটি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সীপ্রশংসা লাভ করেন। তাঁর জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে আছে ''বিদ্যাপতি'', ''সাথী'', ''পরিচয়'', ''শেষ উত্তর'', এবং ''মেজদিদি''। ১৯৪৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বিশেষত মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। | |||
পরে সেকালের প্রখ্যাত নায়ক প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে ‘মুক্তি’ (১৯৩৭) এবং আরও কয়েকটি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সীপ্রশংসা লাভ করেন। তাঁর জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে আছে বিদ্যাপতি, সাথী'','' পরিচয়'','' শেষ উত্তর'','' | |||
অভিনয় ছাড়া, তিন দশক ব্যাপী তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা সঙ্গীতজগতে অসাধারণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি এবং আধুনিক বাংলা গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় এবং নজরুল ইসলামের কাছে গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া, সেকালের বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার রাইচাঁদ বড়াল, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, ওস্তাদ আল্লারাখা, পঙ্কজ মল্লিক, অনাদিকুমার দস্তিদার, ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র প্রমুখের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখেছিলেন। | অভিনয় ছাড়া, তিন দশক ব্যাপী তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা সঙ্গীতজগতে অসাধারণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি এবং আধুনিক বাংলা গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় এবং নজরুল ইসলামের কাছে গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া, সেকালের বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার রাইচাঁদ বড়াল, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, ওস্তাদ আল্লারাখা, পঙ্কজ মল্লিক, অনাদিকুমার দস্তিদার, ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র প্রমুখের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখেছিলেন। | ||
১৫ নং লাইন: | ১২ নং লাইন: | ||
অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নায়িকা এবং দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। [গোলাম মুরশিদ] | অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নায়িকা এবং দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। [গোলাম মুরশিদ] | ||
[[en:Devi, Kanan]] | [[en:Devi, Kanan]] |
০৯:১৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
দেবী, কানন (আনু. ১৯১৪-১৯৯২) অভিনেত্রী, কণ্ঠশিল্পী। হাওড়ার এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম। তিনি সাধারণে ‘কাননবালা’ নামে পরিচিত ছিলেন। নয় বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যায়। অসহায় মাতা দুই কন্যাকে নিয়ে এক দূর সম্পর্কের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর মা-মেয়েতে মিলে ঝিয়ের কাজ করেন। তাঁর আত্মজীবনী সবারে আমি নমি (১৯৭৩) গ্রন্থে তাঁর বড় হয়ে ওঠার এসব কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
কানন দেবী অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। ১৯২৬ সালে, তখন তাঁর বয়স বারো/তেরো, তিনি একদিন কলকাতার ম্যাডান চলচ্চিত্র স্টুডিওতে হাজির হন। সৌন্দর্যের জন্য তাঁর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান এবং প্রথম চলচ্চিত্র ‘জয়দেব’-এ অভিনয় করে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ টাকা উপার্জন করেন। পরের বছর অভিনয় করেন অপর একটি ছবিতে। তবে তাঁর পুরোমাত্রার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালে। তাঁর প্রথম সবাকচিত্র ‘জোর বরাত’ (১৯৩১)। ১৯৩৫ সালে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’-এ নায়িকার অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি কাননবালা থেকে কানন দেবীতে পরিণত হন। অপরূপা কানন এতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন যে, রাস্তার ধারে তাঁর আলোকচিত্র বিক্রি হতে শুরু করে এবং তাঁর পোশাক, অলঙ্কার, চলাফেরা ইত্যাদি নারীদের জন্যে ফ্যাশনে পরিণত হয়।
পরে সেকালের প্রখ্যাত নায়ক প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে ‘মুক্তি’ (১৯৩৭) এবং আরও কয়েকটি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সীপ্রশংসা লাভ করেন। তাঁর জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে আছে বিদ্যাপতি, সাথী, পরিচয়, শেষ উত্তর, এবং মেজদিদি। ১৯৪৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বিশেষত মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
অভিনয় ছাড়া, তিন দশক ব্যাপী তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা সঙ্গীতজগতে অসাধারণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি এবং আধুনিক বাংলা গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় এবং নজরুল ইসলামের কাছে গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া, সেকালের বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার রাইচাঁদ বড়াল, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, ওস্তাদ আল্লারাখা, পঙ্কজ মল্লিক, অনাদিকুমার দস্তিদার, ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র প্রমুখের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখেছিলেন।
কানন দেবীর বিয়ে হয় ভিক্টোরীয় শুচিতার প্রতীক হেরম্ব মৈত্রের পুত্রের সঙ্গে। অভিনয়জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি সমাজ কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন।
অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নায়িকা এবং দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। [গোলাম মুরশিদ]