দরিয়াপুর মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দরিয়াপুর মসজিদ'''  রংপুর জেলার [[পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর)|পীরগল্ক উপএজলা]] সদর থেকে প্রায় ৩ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে দরিয়াপুর গ্রামে অবস্থিত। একটি বিরাট দিঘির পশ্চিম তীরে অবস্থিত এ মসজিদটি জনৈক বিশিষ্ট ব্যক্তি ১৭১৭-১৭১৮ সালে নির্মাণ করেন। পূর্ব দিকে একটি প্রবেশপথসহ পুরো মসজিদটি বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় চার কোণের বুরুজগুলি ধসে যায় এবং গম্বুজেও ফাটল ধরে। পরবর্তীকালে স্থানীয় অধিবাসীগণ মসজিদটি মেরামত করে। এসময় বুরুজগুলি বাদ দেওয়া হয়। অল্প কিছুদিন পূর্বে মসজিদটিতে ব্যাপক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। ফলে মসজিদটির আদি বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছুই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।
'''দরিয়াপুর মসজিদ'''  রংপুর জেলার [[পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর)|পীরগঞ্জ উপজেলা]] সদর থেকে প্রায় ৩ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে দরিয়াপুর গ্রামে অবস্থিত। একটি বিরাট দিঘির পশ্চিম তীরে অবস্থিত এ মসজিদটি জনৈক বিশিষ্ট ব্যক্তি ১৭১৭-১৭১৮ সালে নির্মাণ করেন। পূর্ব দিকে একটি প্রবেশপথসহ পুরো মসজিদটি বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় চার কোণের বুরুজগুলি ধসে যায় এবং গম্বুজেও ফাটল ধরে। পরবর্তীকালে স্থানীয় অধিবাসীগণ মসজিদটি মেরামত করে। এসময় বুরুজগুলি বাদ দেওয়া হয়। অল্প কিছুদিন পূর্বে মসজিদটিতে ব্যাপক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। ফলে মসজিদটির আদি বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছুই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।


[[Image:DariyapurMosque.jpg|thumb|400px|right|দরিয়াপুর মসজিদ]]
মুগলযুগের শেষার্ধের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মসজদটির পরিকল্পনা আয়তাকার এবং এর পূর্ব দেওয়ালে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি বৃহত্তর এবং দেওয়াল থেকে খানিকটা প্রক্ষিপ্ত। উত্তর ও দক্ষিণের দেওয়াল দুটিতে রয়েছে খিলানযুক্ত দুটি জানালা। কিবলা দেওয়ালে তিনটি অর্ধ-অষ্টভুজ মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে। এগুলি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত এবং ফ্রেমের উপরে রয়েছে বদ্ধ মেরলোনের কারুকার্যময় ফলক। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের মতো কেন্দ্রীয় মিহরাবটিও আদিতে বাইরের দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিল। এখনও তা দেখা যায়। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ ও কেন্দ্রীয় মিহরাব উভয়েরই প্রক্ষিপ্ত অংশের পার্শ্বদেশে আদিতে অলঙ্কৃত মিনার ছিল। এটি ছিল সে যুগের সাধারণ স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য।  
মুগলযুগের শেষার্ধের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মসজদটির পরিকল্পনা আয়তাকার এবং এর পূর্ব দেওয়ালে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি বৃহত্তর এবং দেওয়াল থেকে খানিকটা প্রক্ষিপ্ত। উত্তর ও দক্ষিণের দেওয়াল দুটিতে রয়েছে খিলানযুক্ত দুটি জানালা। কিবলা দেওয়ালে তিনটি অর্ধ-অষ্টভুজ মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে। এগুলি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত এবং ফ্রেমের উপরে রয়েছে বদ্ধ মেরলোনের কারুকার্যময় ফলক। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের মতো কেন্দ্রীয় মিহরাবটিও আদিতে বাইরের দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিল। এখনও তা দেখা যায়। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ ও কেন্দ্রীয় মিহরাব উভয়েরই প্রক্ষিপ্ত অংশের পার্শ্বদেশে আদিতে অলঙ্কৃত মিনার ছিল। এটি ছিল সে যুগের সাধারণ স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য।  
<nowiki>#</nowiki>[[Image:দরিয়াপুর মসজিদ_html_88407781.png]]
[[Image:DariyapurMosque.jpg]]
#দরিয়াপুর মসজিদ 


ইটের স্তম্ভ থেকে উদ্ভূত পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত দুটি প্রশস্ত খিলানের সাহায্যে মসজিদের অভ্যন্তর ভাগকে তিনটি সমান বর্গাকার ‘বে’তে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘বে’গুলির প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৩.৭৩ মিটার এবং এগুলির প্রতিটির উপরে রয়েছে অষ্টকোণাকৃতির ড্রামের উপরে স্থাপিত একটি করে গোলাকার গম্বুজ। গম্বুজের ড্রামের ঠিক নিচে কৌণিক অংশগুলি দৃষ্টিনন্দন বাংলা পেন্ডেন্টিভ দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির ভেতরে এবং বাইরে সব দিকেই রয়েছে আধুনিক সিমেন্ট প্লাস্টার। গম্বুজগুলির উপরে রয়েছে পদ্ম ও কলস শোভিত শীর্ষচূড়া। মসজিদের অনুভূমিক বপ্রের (Parapet) বাইরের অংশে রয়েছে বদ্ধ মেরলোনের একটি সারি। মিহরাবগুলির ডান এবং বাম পার্শ্বে রয়েছে পুষ্পিত বৃক্ষের মোটিফ দিয়ে অলঙ্কৃত আয়তাকার খোপ নকশা (Panel) কেন্দ্রীয় মিহরাবের আয়তাকার ফ্রেমের উপরে রয়েছে একটি অগভীর আয়তাকার খোপ যার দুপাশে রয়েছে দুটি গোলাপ নক্শা। এ সমস্ত অলংকরণই স্টাকো (Stucco) করা এবং এগুলি সম্ভবত মসজিদের আদি বৈশিষ্ট্য।  [এম.এ বারি]
ইটের স্তম্ভ থেকে উদ্ভূত পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত দুটি প্রশস্ত খিলানের সাহায্যে মসজিদের অভ্যন্তর ভাগকে তিনটি সমান বর্গাকার ‘বে’তে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘বে’গুলির প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৩.৭৩ মিটার এবং এগুলির প্রতিটির উপরে রয়েছে অষ্টকোণাকৃতির ড্রামের উপরে স্থাপিত একটি করে গোলাকার গম্বুজ। গম্বুজের ড্রামের ঠিক নিচে কৌণিক অংশগুলি দৃষ্টিনন্দন বাংলা পেন্ডেন্টিভ দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির ভেতরে এবং বাইরে সব দিকেই রয়েছে আধুনিক সিমেন্ট প্লাস্টার। গম্বুজগুলির উপরে রয়েছে পদ্ম ও কলস শোভিত শীর্ষচূড়া। মসজিদের অনুভূমিক বপ্রের (Parapet) বাইরের অংশে রয়েছে বদ্ধ মেরলোনের একটি সারি। মিহরাবগুলির ডান এবং বাম পার্শ্বে রয়েছে পুষ্পিত বৃক্ষের মোটিফ দিয়ে অলঙ্কৃত আয়তাকার খোপ নকশা (Panel) কেন্দ্রীয় মিহরাবের আয়তাকার ফ্রেমের উপরে রয়েছে একটি অগভীর আয়তাকার খোপ যার দুপাশে রয়েছে দুটি গোলাপ নক্শা। এ সমস্ত অলংকরণই স্টাকো (Stucco) করা এবং এগুলি সম্ভবত মসজিদের আদি বৈশিষ্ট্য।  [এম.এ বারি]
<!-- imported from file: দরিয়াপুর মসজিদ.html-->


[[en:Dariyapur Mosque]]
[[en:Dariyapur Mosque]]

০৭:১২, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দরিয়াপুর মসজিদ  রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে দরিয়াপুর গ্রামে অবস্থিত। একটি বিরাট দিঘির পশ্চিম তীরে অবস্থিত এ মসজিদটি জনৈক বিশিষ্ট ব্যক্তি ১৭১৭-১৭১৮ সালে নির্মাণ করেন। পূর্ব দিকে একটি প্রবেশপথসহ পুরো মসজিদটি বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় চার কোণের বুরুজগুলি ধসে যায় এবং গম্বুজেও ফাটল ধরে। পরবর্তীকালে স্থানীয় অধিবাসীগণ মসজিদটি মেরামত করে। এসময় বুরুজগুলি বাদ দেওয়া হয়। অল্প কিছুদিন পূর্বে মসজিদটিতে ব্যাপক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। ফলে মসজিদটির আদি বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছুই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।

দরিয়াপুর মসজিদ

মুগলযুগের শেষার্ধের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মসজদটির পরিকল্পনা আয়তাকার এবং এর পূর্ব দেওয়ালে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি বৃহত্তর এবং দেওয়াল থেকে খানিকটা প্রক্ষিপ্ত। উত্তর ও দক্ষিণের দেওয়াল দুটিতে রয়েছে খিলানযুক্ত দুটি জানালা। কিবলা দেওয়ালে তিনটি অর্ধ-অষ্টভুজ মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে। এগুলি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত এবং ফ্রেমের উপরে রয়েছে বদ্ধ মেরলোনের কারুকার্যময় ফলক। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের মতো কেন্দ্রীয় মিহরাবটিও আদিতে বাইরের দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিল। এখনও তা দেখা যায়। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ ও কেন্দ্রীয় মিহরাব উভয়েরই প্রক্ষিপ্ত অংশের পার্শ্বদেশে আদিতে অলঙ্কৃত মিনার ছিল। এটি ছিল সে যুগের সাধারণ স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য।

ইটের স্তম্ভ থেকে উদ্ভূত পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত দুটি প্রশস্ত খিলানের সাহায্যে মসজিদের অভ্যন্তর ভাগকে তিনটি সমান বর্গাকার ‘বে’তে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘বে’গুলির প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৩.৭৩ মিটার এবং এগুলির প্রতিটির উপরে রয়েছে অষ্টকোণাকৃতির ড্রামের উপরে স্থাপিত একটি করে গোলাকার গম্বুজ। গম্বুজের ড্রামের ঠিক নিচে কৌণিক অংশগুলি দৃষ্টিনন্দন বাংলা পেন্ডেন্টিভ দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির ভেতরে এবং বাইরে সব দিকেই রয়েছে আধুনিক সিমেন্ট প্লাস্টার। গম্বুজগুলির উপরে রয়েছে পদ্ম ও কলস শোভিত শীর্ষচূড়া। মসজিদের অনুভূমিক বপ্রের (Parapet) বাইরের অংশে রয়েছে বদ্ধ মেরলোনের একটি সারি। মিহরাবগুলির ডান এবং বাম পার্শ্বে রয়েছে পুষ্পিত বৃক্ষের মোটিফ দিয়ে অলঙ্কৃত আয়তাকার খোপ নকশা (Panel) কেন্দ্রীয় মিহরাবের আয়তাকার ফ্রেমের উপরে রয়েছে একটি অগভীর আয়তাকার খোপ যার দুপাশে রয়েছে দুটি গোলাপ নক্শা। এ সমস্ত অলংকরণই স্টাকো (Stucco) করা এবং এগুলি সম্ভবত মসজিদের আদি বৈশিষ্ট্য।  [এম.এ বারি]