তিল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''তিল''' (Sesame) Pedaliaceae গোত্রের তেল উৎপাদক এক প্রকার উদ্ভিদ ''Sesamum indicum''। ভারতবর্ষ ও চীনে প্রাচীনকাল থেকেই তিলের চাষ হয়। এ উদ্ভিদ প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং সাধারাণত চারদিকে ছোট ছোট শাখায় বিস্তার লাভ করে। এর কান্ড শক্ত ও সোজা। পাতা লম্বা খাঁজকাটা ও ঘন সবুজ। পাতার গোড়ায় সাদা বা গোলাপি ফুল হয়। ফলগুলি চার অথবা অধিক প্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট ক্যাপসুলের মতো। পাকলে সেগুলি ফেটে বহু ক্ষুদ্র বীজ বের হয়। বীজগুলির আবরণ কালো। সাধারণভাবে বীজ থেকে স্বাদহীন, বর্ণহীন ও খাদ্যোপযোগী তেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকায় এখনও দেশিয় তেলকল বা ঘানির মাধ্যমে বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়। | '''তিল''' (Sesame) Pedaliaceae গোত্রের তেল উৎপাদক এক প্রকার উদ্ভিদ ''Sesamum indicum''। ভারতবর্ষ ও চীনে প্রাচীনকাল থেকেই তিলের চাষ হয়। এ উদ্ভিদ প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং সাধারাণত চারদিকে ছোট ছোট শাখায় বিস্তার লাভ করে। এর কান্ড শক্ত ও সোজা। পাতা লম্বা খাঁজকাটা ও ঘন সবুজ। পাতার গোড়ায় সাদা বা গোলাপি ফুল হয়। ফলগুলি চার অথবা অধিক প্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট ক্যাপসুলের মতো। পাকলে সেগুলি ফেটে বহু ক্ষুদ্র বীজ বের হয়। বীজগুলির আবরণ কালো। সাধারণভাবে বীজ থেকে স্বাদহীন, বর্ণহীন ও খাদ্যোপযোগী তেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকায় এখনও দেশিয় তেলকল বা ঘানির মাধ্যমে বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়। | ||
[[Image:Sesame1.jpg|thumb|400px|right|তিল গাছ]] | |||
তিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান তৈলবীজ ফসল। তেলের জন্যই প্রধানত তিলের চাষ হয়। রবি ও খরিফ মৌসুমে একক কিংবা মিশ্রচাষ হয়। তবে খরিফ মৌসুমে চাষ বেশি। সাধারণত ২৫º থেকে ২৭º সে. তাপমাত্রায় বেলে দো-অাঁশ মাটিতে ফলন ভাল হয়। তিল দেশের সর্বত্র জন্মালেও খুলনা, ফরিদপুর, পাবনা, বরিশাল, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, ঢাকা, রংপুর, সিলেট এবং ময়মনসিংহ প্রধান উৎপাদনকারী এলাকা। বর্তমানে তিলচাষাধীন জমি প্রায় ৩৮,৯২৩ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩৭,২৬০ মে টন। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ৯৫৭ কেজি। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৫ ভাগ যা রান্না, কেশতেল ও প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহূত হয়। তিলের বীজ থেকে বিভিন্ন ধরনের মোয়া, খাজা, পিঠা, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এর শুকনো গাছ ও পাতা জ্বালানি এবং খৈল গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। | তিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান তৈলবীজ ফসল। তেলের জন্যই প্রধানত তিলের চাষ হয়। রবি ও খরিফ মৌসুমে একক কিংবা মিশ্রচাষ হয়। তবে খরিফ মৌসুমে চাষ বেশি। সাধারণত ২৫º থেকে ২৭º সে. তাপমাত্রায় বেলে দো-অাঁশ মাটিতে ফলন ভাল হয়। তিল দেশের সর্বত্র জন্মালেও খুলনা, ফরিদপুর, পাবনা, বরিশাল, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, ঢাকা, রংপুর, সিলেট এবং ময়মনসিংহ প্রধান উৎপাদনকারী এলাকা। বর্তমানে তিলচাষাধীন জমি প্রায় ৩৮,৯২৩ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩৭,২৬০ মে টন। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ৯৫৭ কেজি। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৫ ভাগ যা রান্না, কেশতেল ও প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহূত হয়। তিলের বীজ থেকে বিভিন্ন ধরনের মোয়া, খাজা, পিঠা, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এর শুকনো গাছ ও পাতা জ্বালানি এবং খৈল গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। | ||
[[Image: | [[Image:Sesame2.jpg|thumb|400px|left|তিল হক-মথের লার্ভা [''ছবি: জি.সি দাস'']]] | ||
মাঠ পর্যায়ে তিল ফসল কয়েকটি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিল হক-মথ (''Acherontia styx'') এবং শুঁয়াপোকা (''Spilosoma obliqua'')। এছাড়া একটি মিরিড বাগ-ও (mirid bug, ''Cyrtopeltis'' sp) এ শস্যের ক্ষতি করে। | মাঠ পর্যায়ে তিল ফসল কয়েকটি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিল হক-মথ (''Acherontia styx'') এবং শুঁয়াপোকা (''Spilosoma obliqua'')। এছাড়া একটি মিরিড বাগ-ও (mirid bug, ''Cyrtopeltis'' sp) এ শস্যের ক্ষতি করে। | ||
০৯:৪৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
তিল (Sesame) Pedaliaceae গোত্রের তেল উৎপাদক এক প্রকার উদ্ভিদ Sesamum indicum। ভারতবর্ষ ও চীনে প্রাচীনকাল থেকেই তিলের চাষ হয়। এ উদ্ভিদ প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং সাধারাণত চারদিকে ছোট ছোট শাখায় বিস্তার লাভ করে। এর কান্ড শক্ত ও সোজা। পাতা লম্বা খাঁজকাটা ও ঘন সবুজ। পাতার গোড়ায় সাদা বা গোলাপি ফুল হয়। ফলগুলি চার অথবা অধিক প্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট ক্যাপসুলের মতো। পাকলে সেগুলি ফেটে বহু ক্ষুদ্র বীজ বের হয়। বীজগুলির আবরণ কালো। সাধারণভাবে বীজ থেকে স্বাদহীন, বর্ণহীন ও খাদ্যোপযোগী তেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকায় এখনও দেশিয় তেলকল বা ঘানির মাধ্যমে বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়।
তিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান তৈলবীজ ফসল। তেলের জন্যই প্রধানত তিলের চাষ হয়। রবি ও খরিফ মৌসুমে একক কিংবা মিশ্রচাষ হয়। তবে খরিফ মৌসুমে চাষ বেশি। সাধারণত ২৫º থেকে ২৭º সে. তাপমাত্রায় বেলে দো-অাঁশ মাটিতে ফলন ভাল হয়। তিল দেশের সর্বত্র জন্মালেও খুলনা, ফরিদপুর, পাবনা, বরিশাল, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, ঢাকা, রংপুর, সিলেট এবং ময়মনসিংহ প্রধান উৎপাদনকারী এলাকা। বর্তমানে তিলচাষাধীন জমি প্রায় ৩৮,৯২৩ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩৭,২৬০ মে টন। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ৯৫৭ কেজি। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৫ ভাগ যা রান্না, কেশতেল ও প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহূত হয়। তিলের বীজ থেকে বিভিন্ন ধরনের মোয়া, খাজা, পিঠা, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এর শুকনো গাছ ও পাতা জ্বালানি এবং খৈল গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়।
মাঠ পর্যায়ে তিল ফসল কয়েকটি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিল হক-মথ (Acherontia styx) এবং শুঁয়াপোকা (Spilosoma obliqua)। এছাড়া একটি মিরিড বাগ-ও (mirid bug, Cyrtopeltis sp) এ শস্যের ক্ষতি করে।
তিলের অনেক ভেষজগুণ রয়েছে। কবিরাজি শাস্ত্রে কেশতেল হিসেবে এর বেশ কদর রয়েছে। তিল পবিত্র ও মাঙ্গলিক পঞ্চশস্যের অন্যতম। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। ভারত ও চীন বিশ্বের প্রধান তিল উৎপাদনকারী দেশ। বর্তমানে আফ্রিকা ও আমেরিকার কোনো কোনো স্থানে এর চাষ হয়। [মোঃ মুকবিল হোসেন]
আরও দেখুন চীনাবাদাম; তিসি; তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ; সরিষা; সয়াবিন।