তাঁতীপাড়া মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: image tag)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''তাঁতীপাড়া মসজিদ ''' পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় মাটির দেয়াল ঘেরা নগরী গৌড়ের দক্ষিণে [[লট্টন মসজিদ|লট্টন মসজিদ]] এবং উত্তরে ছোট সাগরদিঘির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। [[শিলালিপি|শিলালিপি]] অনুযায়ী মসজিদটি ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ইউসুফ শাহের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মিরসাদ খান নির্মাণ করেন।  
'''তাঁতীপাড়া মসজিদ''' পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় মাটির দেয়াল ঘেরা নগরী গৌড়ের দক্ষিণে [[লট্টন মসজিদ|লট্টন মসজিদ]] এবং উত্তরে ছোট সাগরদিঘির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। [[শিলালিপি|শিলালিপি]] অনুযায়ী মসজিদটি ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ইউসুফ শাহের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মিরসাদ খান নির্মাণ করেন।  


[[Image:Tatipara%20Mosque.jpg|thumb|400px|right|তাঁতীপাড়া মসজিদ, মালদা]]
বিশাল আকৃতির এ মসজিদ বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাইরের দিকের কোণগুলিতে চারটি বৃহৎ অষ্টভুজাকৃতির বুরুজসহ বহির্ভাগে এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ২৮.৬৫ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৩.৪১ মিটার। মসজিদে প্রবেশ করতে পূর্বদিকের সম্মুখভাগে ৫টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ২টি করে খিলান নির্মিত প্রবেশপথ ছিলো। অভ্যন্তরস্থ পশ্চিম দেয়াল পূর্ব দেয়ালের প্রবেশপথের মুখোমুখি পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব কুলুঙ্গি দ্বারা সজ্জিত। মসজিদটির ২৩.৭৭ মিটার ও ৯.৪৫ মিটার আয়তনের অভ্যন্তরভাগ পাঁচটি ‘বে’ এবং চারটি প্রস্তরস্তম্ভের একটি সারি দ্বারা দুটি লম্বালম্বি ‘আইলে’ বিভক্ত। ফলে মসজিদের ভেতরে তৈরি হয়েছিলো দশটি স্বতন্ত্র বর্গক্ষেত্র। প্রতিটি ‘বে’র উপর একটি গম্বুজ নির্মাণ করে ছাদকে আবৃত করা হয়েছে। প্রস্তর স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত পরষ্পর ছেদকারী খিলান এবং মিহরাবের উপরের বদ্ধ খিলান গম্বুজগুলিকে ধারণ করে আছে। গম্বুজের উত্তরণ পর্যায় বাংলা পেন্ডেন্টিভ রীতিতে নির্মিত, যার প্রমাণ এখনও মসজিদের ভেতরে উপরের কোণে দেখা যায়।  
বিশাল আকৃতির এ মসজিদ বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাইরের দিকের কোণগুলিতে চারটি বৃহৎ অষ্টভুজাকৃতির বুরুজসহ বহির্ভাগে এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ২৮.৬৫ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৩.৪১ মিটার। মসজিদে প্রবেশ করতে পূর্বদিকের সম্মুখভাগে ৫টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ২টি করে খিলান নির্মিত প্রবেশপথ ছিলো। অভ্যন্তরস্থ পশ্চিম দেয়াল পূর্ব দেয়ালের প্রবেশপথের মুখোমুখি পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব কুলুঙ্গি দ্বারা সজ্জিত। মসজিদটির ২৩.৭৭ মিটার ও ৯.৪৫ মিটার আয়তনের অভ্যন্তরভাগ পাঁচটি ‘বে’ এবং চারটি প্রস্তরস্তম্ভের একটি সারি দ্বারা দুটি লম্বালম্বি ‘আইলে’ বিভক্ত। ফলে মসজিদের ভেতরে তৈরি হয়েছিলো দশটি স্বতন্ত্র বর্গক্ষেত্র। প্রতিটি ‘বে’র উপর একটি গম্বুজ নির্মাণ করে ছাদকে আবৃত করা হয়েছে। প্রস্তর স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত পরষ্পর ছেদকারী খিলান এবং মিহরাবের উপরের বদ্ধ খিলান গম্বুজগুলিকে ধারণ করে আছে। গম্বুজের উত্তরণ পর্যায় বাংলা পেন্ডেন্টিভ রীতিতে নির্মিত, যার প্রমাণ এখনও মসজিদের ভেতরে উপরের কোণে দেখা যায়।  
[[Image:তাঁতীপাড়া মসজিদ_html_88407781.png]]
[[Image:Tatipara%20Mosque.jpg|thumb|400px]]
তাঁতীপাড়া মসজিদ, মালদা


কেন্দ্রীয় মিহরাবটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। ব্যাটেলমেন্ট এবং কার্নিস ধীরে ধীরে বাঁকানো। ইমারতের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি উঁচু গ্যালারি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পশ্চিম দেয়ালের উপরিভাগে, সর্বউত্তরের মিহরাবের ঠিক উপরে একটি ছোট মিহরাব কুলুঙ্গির অস্তিত্ব দেখা যায়। উত্তর দেয়ালের পশ্চিম প্রান্তের উপরের অংশে একটি খিলানযুক্ত উন্মুক্ত পথ এখনও বিদ্যমান। এ উপরের খিলানপথ অবশ্যই বাইরের দিকে সিঁড়ির প্লাটফর্ম হতে উঁচু গ্যালারিতে প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহূত হতো। এস্থাপত্যিক কৌশল বাংলার বিভিন্ন মসজিদে, যেমন পান্ডুয়ার [[আদিনা মসজিদ|আদিনা মসজিদ]], নবাবগঞ্জের গৌড়ের [[দরসবাড়ি মসজিদ|দরসবাড়ি মসজিদ]] ও ছোট সোনা মসজিদে লক্ষ করা যায়।  
কেন্দ্রীয় মিহরাবটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। ব্যাটেলমেন্ট এবং কার্নিস ধীরে ধীরে বাঁকানো। ইমারতের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি উঁচু গ্যালারি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পশ্চিম দেয়ালের উপরিভাগে, সর্বউত্তরের মিহরাবের ঠিক উপরে একটি ছোট মিহরাব কুলুঙ্গির অস্তিত্ব দেখা যায়। উত্তর দেয়ালের পশ্চিম প্রান্তের উপরের অংশে একটি খিলানযুক্ত উন্মুক্ত পথ এখনও বিদ্যমান। এ উপরের খিলানপথ অবশ্যই বাইরের দিকে সিঁড়ির প্লাটফর্ম হতে উঁচু গ্যালারিতে প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহূত হতো। এস্থাপত্যিক কৌশল বাংলার বিভিন্ন মসজিদে, যেমন পান্ডুয়ার [[আদিনা মসজিদ|আদিনা মসজিদ]], নবাবগঞ্জের গৌড়ের [[দরসবাড়ি মসজিদ|দরসবাড়ি মসজিদ]] ও ছোট সোনা মসজিদে লক্ষ করা যায়।  
২০ নং লাইন: ১৫ নং লাইন:
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  Creighton, ''The Ruins of Gaur'', London, 1817; H Ravanshaw, ''Gaur Its Ruins and Inscriptions'', London, 1878; Abid Ali Khan, ''Memoirs of Gaur and Pandua'', Calcutta, 1931; G Mischell (ed), ''The Islamic Heritage of Bengal'', Paris, 1984.  
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  Creighton, ''The Ruins of Gaur'', London, 1817; H Ravanshaw, ''Gaur Its Ruins and Inscriptions'', London, 1878; Abid Ali Khan, ''Memoirs of Gaur and Pandua'', Calcutta, 1931; G Mischell (ed), ''The Islamic Heritage of Bengal'', Paris, 1984.  


Back to: [[Untitled Document]]
<!-- imported from file: তাঁতীপাড়া মসজিদ.html-->


[[en:Tantipada Mosque]]
[[en:Tantipada Mosque]]

০৬:০৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

তাঁতীপাড়া মসজিদ পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় মাটির দেয়াল ঘেরা নগরী গৌড়ের দক্ষিণে লট্টন মসজিদ এবং উত্তরে ছোট সাগরদিঘির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। শিলালিপি অনুযায়ী মসজিদটি ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ইউসুফ শাহের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মিরসাদ খান নির্মাণ করেন।

তাঁতীপাড়া মসজিদ, মালদা

বিশাল আকৃতির এ মসজিদ বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাইরের দিকের কোণগুলিতে চারটি বৃহৎ অষ্টভুজাকৃতির বুরুজসহ বহির্ভাগে এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ২৮.৬৫ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৩.৪১ মিটার। মসজিদে প্রবেশ করতে পূর্বদিকের সম্মুখভাগে ৫টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ২টি করে খিলান নির্মিত প্রবেশপথ ছিলো। অভ্যন্তরস্থ পশ্চিম দেয়াল পূর্ব দেয়ালের প্রবেশপথের মুখোমুখি পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব কুলুঙ্গি দ্বারা সজ্জিত। মসজিদটির ২৩.৭৭ মিটার ও ৯.৪৫ মিটার আয়তনের অভ্যন্তরভাগ পাঁচটি ‘বে’ এবং চারটি প্রস্তরস্তম্ভের একটি সারি দ্বারা দুটি লম্বালম্বি ‘আইলে’ বিভক্ত। ফলে মসজিদের ভেতরে তৈরি হয়েছিলো দশটি স্বতন্ত্র বর্গক্ষেত্র। প্রতিটি ‘বে’র উপর একটি গম্বুজ নির্মাণ করে ছাদকে আবৃত করা হয়েছে। প্রস্তর স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত পরষ্পর ছেদকারী খিলান এবং মিহরাবের উপরের বদ্ধ খিলান গম্বুজগুলিকে ধারণ করে আছে। গম্বুজের উত্তরণ পর্যায় বাংলা পেন্ডেন্টিভ রীতিতে নির্মিত, যার প্রমাণ এখনও মসজিদের ভেতরে উপরের কোণে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় মিহরাবটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। ব্যাটেলমেন্ট এবং কার্নিস ধীরে ধীরে বাঁকানো। ইমারতের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি উঁচু গ্যালারি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পশ্চিম দেয়ালের উপরিভাগে, সর্বউত্তরের মিহরাবের ঠিক উপরে একটি ছোট মিহরাব কুলুঙ্গির অস্তিত্ব দেখা যায়। উত্তর দেয়ালের পশ্চিম প্রান্তের উপরের অংশে একটি খিলানযুক্ত উন্মুক্ত পথ এখনও বিদ্যমান। এ উপরের খিলানপথ অবশ্যই বাইরের দিকে সিঁড়ির প্লাটফর্ম হতে উঁচু গ্যালারিতে প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহূত হতো। এস্থাপত্যিক কৌশল বাংলার বিভিন্ন মসজিদে, যেমন পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ, নবাবগঞ্জের গৌড়ের দরসবাড়ি মসজিদ ও ছোট সোনা মসজিদে লক্ষ করা যায়।

মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে অপূর্ব টেরাকোটা নকশা দ্বারা অলংকৃত; যার বেশিরভাগই ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। পূর্বদিকের সম্মুখভাগ প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। প্যানেলে রয়েছে উঁচু রিলিফে বিভিন্ন নকশা। একইরূপ নকশাকৃত প্যানেল দেখা যায় অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ববুরুজের গাত্রে। প্রবেশপথের খিলানের সফিট (soffit) ছোট ছোট গোলাপ নকশা দ্বারা অলংকৃত এবং স্প্যান্ড্রিলগুলি ফুলদানি থেকে উত্থিত আঙ্গুরলতাসহ গোলাপ নকশা দ্বারা অতি সুদৃশ্যভাবে অলংকৃত।

সবগুলি মিহরাবও সুচারুরূপে অলংকৃত এবং আয়তাকার ফ্রেমে আবদ্ধ। এ ফ্রেম বিভিন্ন নকশায় পূর্ণ এবং মোল্ডিং সারি দ্বারা অলংকৃত। খিলানের চূড়ায় বদ্ধ মারলোনের সারি। উচ্চভাগে এখন পর্যন্তও গভীরভাবে খোদিত সূর্যের মতো মেডালিয়ন নকশা রয়েছে। মিহরাব কুলুঙ্গির অভ্যন্তরভাগ প্যানেলে ভাগ করা; প্রতিটি প্যানেল খাঁজকাটা খিলান ও ঝুলন্ত নকশা দ্বারা অলংকৃত।

সুষমামন্ডিত অলংকরণ এবং স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্যের কারণে তাঁতীপাড়া মসজিদ গৌড়ের নিদর্শনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্যকর্ম বলে বিবেচিত হয়।  [এম.এ বারি]

গ্রন্থপঞ্জি  Creighton, The Ruins of Gaur, London, 1817; H Ravanshaw, Gaur Its Ruins and Inscriptions, London, 1878; Abid Ali Khan, Memoirs of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931; G Mischell (ed), The Islamic Heritage of Bengal, Paris, 1984.