জাহাজভাঙ্গা শিল্প: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: image tag)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
বিশ্বের জাহাজভাঙ্গা শিল্প ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মত দরিদ্র, জনবহুল, জোয়ারভাটার বড় পার্থক্যসম্পন্ন সমুদ্র উপকূলীয় দেশেই গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফৌজদার হাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙ্গা শিল্পে প্রায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত। জাহাজভাঙ্গা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অনেক উপরে।    
বিশ্বের জাহাজভাঙ্গা শিল্প ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মত দরিদ্র, জনবহুল, জোয়ারভাটার বড় পার্থক্যসম্পন্ন সমুদ্র উপকূলীয় দেশেই গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফৌজদার হাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙ্গা শিল্পে প্রায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত। জাহাজভাঙ্গা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অনেক উপরে।    


সারণি   ১ বিশ্বের জাহাজভাঙ্গা শিল্পের কার্যক্রম ১৯৭৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত (১০০০ LDT বা টন)
''সারণি''  ১ বিশ্বের জাহাজভাঙ্গা শিল্পের কার্যক্রম ১৯৭৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত (১০০০ LDT বা টন)
 
{| class="table table-bordered table-hover"
দেশ #১৯৭৭ #১৯৮০ #১৯৮৫ #১৯৯০ #১৯৯৫ #২০০০ #২০০৫ #২০০৮  
|-
 
| দেশ || ১৯৭৭ || ১৯৮০ || ১৯৮৫ || ১৯৯০ || ১৯৯৫ || ২০০০ || ২০০৫ || ২০০৮  
তাইওয়ান #৩৩৯১ #৪৪০৯ #৭৮২২ ##- #১৪ #- #-  
|-
 
| তাইওয়ান || ৩৩৯১ || ৪৪০৯ || ৭৮২২ || || - || ১৪ || - || -  
স্পেন #৮৭৩ #২৭৯ #৬০৩ #১৩ #৪০ #২৬ ##৬  
|-
 
| স্পেন || ৮৭৩ || ২৭৯ || ৬০৩ || ১৩ || ৪০ || ২৬ || || ৬  
দক্ষিণ কোরিয়া #২২১ #১৬৮ #২৫৫১ ####- #-  
|-
 
| দক্ষিণ কোরিয়া || ২২১ || ১৬৮ || ২৫৫১ || || || || - || -  
ইটালি #২২৯ #১০১ #১৯৮ ####- #-  
|-
 
| ইটালি || ২২৯ || ১০১ || ১৯৮ || || || || - || -  
ক্রোয়ে©র্শয়া #১৫১ #৬২ #১৩০ ##- #- ##-  
|-
 
| ক্রোয়ে©র্শয়া || ১৫১ || ৬২ || ১৩০ || || - || - || || -  
জাপান #১৯৩ #১২৯ #৯৭৩ #৮১ #১৪৬ #২২ #- #-  
|-
 
| জাপান || ১৯৩ || ১২৯ || ৯৭৩ || ৮১ || ১৪৬ || ২২ || - || -  
চীন #১৭ #০৭ #৫০১৯ #৮১ #৭৫৪ #২৬৩৭ #১৫১ #৯২৮  
|-
 
| চীন || ১৭ || ০৭ || ৫০১৯ || ৮১ || ৭৫৪ || ২৬৩৭ || ১৫১ || ৯২৮  
ভারত #৬৬ #১৩৬ #১৩০৩ #১০৯২ #২৮১০ #৫৯৮৭ #১১২৩ #২৪৫৮  
|-
 
| ভারত || ৬৬ || ১৩৬ || ১৩০৩ || ১০৯২ || ২৮১০ || ৫৯৮৭ || ১১২৩ || ২৪৫৮  
বাংলাদেশ #- #- #৮১৮ #২১৭ #২৫৩৯ #২৪০৭ #২১১৪ #৪১৭৬  
|-
 
| বাংলাদেশ || - || - || ৮১৮ || ২১৭ || ২৫৩৯ || ২৪০৭ || ২১১৪ || ৪১৭৬  
পাকিস্তান #২৯৯ #৩০০ #১১৪৩ ##১৬৭০ #৭৮৯ #৪৮ #২৭৪  
|-
 
| পাকিস্তান || ২৯৯ || ৩০০ || ১১৪৩ || || ১৬৭০ || ৭৮৯ || ৪৮ || ২৭৪  
দক্ষিণ এশিয়া #৩৬৫ #৪৩৬ #৩২৬৪ #১৩১১ #৭০১৯ #৯১৮৩ #৩২৮৫ #৬৯০৮  
|-
 
| দক্ষিণ এশিয়া || ৩৬৫ || ৪৩৬ || ৩২৬৪ || ১৩১১ || ৭০১৯ || ৯১৮৩ || ৩২৮৫ || ৬৯০৮  
অন্যান্য #৬৫৩ #৪৩১ #১৬৬৯ #৩১৫ #৫৬০ #১২৭১ #৩৩০ #৪৩৭  
|-
 
| অন্যান্য || ৬৫৩ || ৪৩১ || ১৬৬৯ || ৩১৫ || ৫৬০ || ১২৭১ || ৩৩০ || ৪৩৭  
সর্বমোট #৬০৯৩ #৬০২২ #২২২২৯ #১৬৪৫ #৯৪৩৫ #১৩৫৫২ #৪০২১ #৮২৮০  
|-
| সর্বমোট || ৬০৯৩ || ৬০২২ || ২২২২৯ || ১৬৪৫ || ৯৪৩৫ || ১৩৫৫২ || ৪০২১ || ৮২৮০
|}


''সূত্র'' বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের পরিসংখ্যান এবং জাপানের জাহাজ নির্মাণ এসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান।
''সূত্র'' বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের পরিসংখ্যান এবং জাপানের জাহাজ নির্মাণ এসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান।


সারণি ২ বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজের পরিসংখ্যান এবং বাৎসরিক জাহাজ ভাঙ্গার পরিসংখ্যানের তুলনা তথা বাংলাদেশের অবস্থান।  
''সারণি'' ২ বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজের পরিসংখ্যান এবং বাৎসরিক জাহাজ ভাঙ্গার পরিসংখ্যানের তুলনা তথা বাংলাদেশের অবস্থান।  
 
{| class="table table-bordered table-hover"
সাল #বিশ্বের মোট জাহাজ ভাঙ্গার সংখ্যা #বাংলাদেশের এককভাবে জাহাজ ভাঙ্গার সংখ্যা  
|-
 
| সাল || বিশ্বের মোট জাহাজ ভাঙ্গার সংখ্যা || বাংলাদেশের এককভাবে জাহাজ ভাঙ্গার সংখ্যা  
২০০১ #৭৭২ #-  
|-
 
| ২০০১ || ৭৭২ || -  
২০০২ #৭৪০ #-  
|-
 
| ২০০২ || ৭৪০ || -  
২০০৩ #৮৭৪ #-  
|-
 
| ২০০৩ || ৮৭৪ || -  
২০০৪ #৬১৫ #-  
|-
 
| ২০০৪ || ৬১৫ || -  
২০০৫ #৩৬১ #-  
|-
 
| ২০০৫ || ৩৬১ || -  
২০০৬ #৩৮৬ #১৮২  
|-
 
| ২০০৬ || ৩৮৬ || ১৮২  
২০০৭ #- #১০২  
|-
 
| ২০০৭ || - || ১০২  
২০০৮ #- #২২৬  
|-
 
| ২০০৮ || - || ২২৬  
২০০৯ #- #১৯৩  
|-
| ২০০৯ || - || ১৯৩  
|}


''সূত্র'' লয়েড’স জাহাজের পরিসংখ্যান।
''সূত্র'' লয়েড’স জাহাজের পরিসংখ্যান।


'''জাহাজভাঙ্গা শিল্প উন্নয়নশীল দেশে প্রসারের কারণ'''  অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উন্নত দেশগুলি জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে বেরিয়ে এসে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রসর হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডকইয়ার্ডে সর্বশেষ জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছিল পঞ্চাশ বছর পূর্বে। গত শতকের নববই দশকের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বের অধিকাংশ পরিত্যক্ত জাহাজ ভাঙ্গা হতো চীনে। কিন্তু বর্তমানে তারা জাহাজ নির্মাণ শিল্পের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। ফলে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মত উন্নয়নশীল, জনবহুল দেশ, যেখানে উপযোগী সমুদ্রোপকূল এবং পুরাতন জাহাজসামগ্রীর চাহিদা আছে সে সব দেশে জাহাজভাঙ্গা শিল্প প্রসারিত হচ্ছে।    
'''''জাহাজভাঙ্গা শিল্প উন্নয়নশীল দেশে প্রসারের কারণ'''''  অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উন্নত দেশগুলি জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে বেরিয়ে এসে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রসর হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডকইয়ার্ডে সর্বশেষ জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছিল পঞ্চাশ বছর পূর্বে। গত শতকের নববই দশকের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বের অধিকাংশ পরিত্যক্ত জাহাজ ভাঙ্গা হতো চীনে। কিন্তু বর্তমানে তারা জাহাজ নির্মাণ শিল্পের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। ফলে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মত উন্নয়নশীল, জনবহুল দেশ, যেখানে উপযোগী সমুদ্রোপকূল এবং পুরাতন জাহাজসামগ্রীর চাহিদা আছে সে সব দেশে জাহাজভাঙ্গা শিল্প প্রসারিত হচ্ছে।    


'''বাংলাদেশে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের ইতিহাস এবং উন্নতির কারণ ''' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ শিল্পের প্রসার পাকিস্তান আমলে খুবই সীমিত ছিল। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে স্থানীয় একটি স্টিল হাউজ গ্রিস থেকে আনা একটি জাহাজকে সফলভাবে ভাঙ্গা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেশকিছু জাহাজ এ বন্দরের কাছে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের পোতাশ্রয় এবং তাঁর নিকটবর্তী জলভাগে বহুসংখ্যক ডুবন্ত জাহাজ জমা হয়েছিল। তাই যুদ্ধের পরেই নিরাপদ নোঙর ও চলাচলের স্বার্থে বন্দরটি পরিষ্কার করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।  # #[[Image:জাহাজভাঙ্গা শিল্প_html_88407781.png]]
[[Image:Shipbreaking.jpg|thumb|400px|right|জাহাজভাঙ্গা শিল্প]]
 
'''''বাংলাদেশে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের ইতিহাস এবং উন্নতির কারণ'''''  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ শিল্পের প্রসার পাকিস্তান আমলে খুবই সীমিত ছিল। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে স্থানীয় একটি স্টিল হাউজ গ্রিস থেকে আনা একটি জাহাজকে সফলভাবে ভাঙ্গা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেশকিছু জাহাজ এ বন্দরের কাছে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের পোতাশ্রয় এবং তাঁর নিকটবর্তী জলভাগে বহুসংখ্যক ডুবন্ত জাহাজ জমা হয়েছিল। তাই যুদ্ধের পরেই নিরাপদ নোঙর ও চলাচলের স্বার্থে বন্দরটি পরিষ্কার করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
[[Image:Shipbreaking.jpg|thumb|400px]]
 
" border=1>
 
# #জাহাজভাঙ্গা শিল্প


১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর সমুদ্রোপকূলে আল-আববাস নামের পাকিস্তানি নৌ-বাহিনীর একটি জাহাজ (যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কর্ণফুলি নদীতে ডুবে যায়) ভাঙ্গা হয়। তবে বিদেশ থেকে পরিত্যক্ত জাহাজ কিনে এনে বাণিজ্যিকভাবে ভাঙ্গার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ১৯৮০র দশকে। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এ শিল্পের প্রসার হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাহাজভাঙ্গা শিল্পে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। যেসব কারণে বাংলাদেশে এ শিল্পে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে তা হলো:  
১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর সমুদ্রোপকূলে আল-আববাস নামের পাকিস্তানি নৌ-বাহিনীর একটি জাহাজ (যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কর্ণফুলি নদীতে ডুবে যায়) ভাঙ্গা হয়। তবে বিদেশ থেকে পরিত্যক্ত জাহাজ কিনে এনে বাণিজ্যিকভাবে ভাঙ্গার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ১৯৮০র দশকে। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এ শিল্পের প্রসার হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাহাজভাঙ্গা শিল্পে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। যেসব কারণে বাংলাদেশে এ শিল্পে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে তা হলো:  
৮০ নং লাইন: ৭৯ নং লাইন:
ঘ.  এ শিল্প এলাকাটির সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এবং সংগৃহীত সামগ্রী স্বল্পসময়ে ও কমখরচে পরিবহণ সম্ভব।  
ঘ.  এ শিল্প এলাকাটির সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এবং সংগৃহীত সামগ্রী স্বল্পসময়ে ও কমখরচে পরিবহণ সম্ভব।  


'''জাতীয় আর্থ''-''সামাজিক উন্নয়নে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের অবদান'''  জাহাজভাঙ্গা শিল্প দেশের লোহার মূল চাহিদা পূরণ করে। নির্মাণশিল্পসহ অর্থনৈতিকভাবে এ শিল্পের অবদান অনেক। দশ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে দুই লক্ষ শ্রমিক সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত। জাহাজ নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ, রি-রোলিং কারখানা, স্টিল ও রডের কারখানার মূল কাঁচামাল জাহাজভাঙ্গার কাঁচামাল থেকে সংগৃহীত হয়। এছাড়া এ শিল্প থেকে অক্সিজেন কারখানা, ক্যাবল, পিভিসি, সিরামিক ও আসবাবপত্র তৈরির উপকরণও সংগৃহীত হয়। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের স্টিলপ্লেট থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর যোগান আসে জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প (অভ্যন্তরীণ জাহাজ নির্মাণে) ও লৌহ শিল্প সরাসরিভাবে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বাৎসরিক ৩৫ হাজার টনের বেশি সিজন করা কাঠ এবং আসবাবপত্রের যোগান আসে এ শিল্প থেকে, যা বনজ সম্পদ ও গাছপালা রক্ষার্থে পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকার সংরক্ষণ এবং সঠিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার ভাঙ্গন রোধসহ মানুষের আবাসিক ব্যবহার উপযোগী অঞ্চল তৈরিতে এ শিল্প ব্যাপক ভুমিকা রাখছে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের আয় আসছে এ শিল্প থেকে।  
'''''জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের অবদান'''''  জাহাজভাঙ্গা শিল্প দেশের লোহার মূল চাহিদা পূরণ করে। নির্মাণশিল্পসহ অর্থনৈতিকভাবে এ শিল্পের অবদান অনেক। দশ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে দুই লক্ষ শ্রমিক সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত। জাহাজ নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ, রি-রোলিং কারখানা, স্টিল ও রডের কারখানার মূল কাঁচামাল জাহাজভাঙ্গার কাঁচামাল থেকে সংগৃহীত হয়। এছাড়া এ শিল্প থেকে অক্সিজেন কারখানা, ক্যাবল, পিভিসি, সিরামিক ও আসবাবপত্র তৈরির উপকরণও সংগৃহীত হয়। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের স্টিলপ্লেট থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর যোগান আসে জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প (অভ্যন্তরীণ জাহাজ নির্মাণে) ও লৌহ শিল্প সরাসরিভাবে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বাৎসরিক ৩৫ হাজার টনের বেশি সিজন করা কাঠ এবং আসবাবপত্রের যোগান আসে এ শিল্প থেকে, যা বনজ সম্পদ ও গাছপালা রক্ষার্থে পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকার সংরক্ষণ এবং সঠিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার ভাঙ্গন রোধসহ মানুষের আবাসিক ব্যবহার উপযোগী অঞ্চল তৈরিতে এ শিল্প ব্যাপক ভুমিকা রাখছে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের আয় আসছে এ শিল্প থেকে।  
 
'''এ শিল্পোন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা''' জাহাজভাঙ্গা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প হওয়ায় দুর্ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, নিরাপত্তার জন্য হেলমেট, পোশাক, বুট, গ্লাভস, চশমা ইত্যাদির স্বল্পতা ও অসচেতনতা এবং অসতর্কতা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০৯-২০১০ সালে জাহাজভাঙ্গা শিল্পে ২০ জন নিহত হয়েছে। জাহাজভাঙ্গা শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা পরিবেশ দূষণ। পরিত্যক্ত জাহাজে অনেক বিষাক্ত তরল পদার্থ থাকে যা সমুদ্রের পানিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সামুদ্রিক বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণি এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জাহাজভাঙ্গা স্থানের মাটির বৈশিষ্ট্য ও গঠনের উপর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় এই দূষণে আশপাশে বসবাসকারী মানুষ এবং প্রাণিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।  [খন্দকার আক্তার হোসেন]


<!-- imported from file: জাহাজভাঙ্গা শিল্প.html-->
'''''এ শিল্পোন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা''''' জাহাজভাঙ্গা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প হওয়ায় দুর্ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, নিরাপত্তার জন্য হেলমেট, পোশাক, বুট, গ্লাভস, চশমা ইত্যাদির স্বল্পতা ও অসচেতনতা এবং অসতর্কতা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০৯-২০১০ সালে জাহাজভাঙ্গা শিল্পে ২০ জন নিহত হয়েছে। জাহাজভাঙ্গা শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা পরিবেশ দূষণ। পরিত্যক্ত জাহাজে অনেক বিষাক্ত তরল পদার্থ থাকে যা সমুদ্রের পানিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সামুদ্রিক বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণি এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জাহাজভাঙ্গা স্থানের মাটির বৈশিষ্ট্য ও গঠনের উপর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় এই দূষণে আশপাশে বসবাসকারী মানুষ এবং প্রাণিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।  [খন্দকার আক্তার হোসেন]


[[en:Ship Breaking Industry]]
[[en:Ship Breaking Industry]]

০৭:৪৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

জাহাজভাঙ্গা শিল্প  পুরাতন ও বাতিল, ডুবন্ত বা পরিত্যক্ত জাহাজ কারখানা বা কোনো সুবিধাজনক স্থানে কেটে ইস্পাত, তামার তৈরি ধাতব পদার্থ, ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি, সংযোজিত সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পদার্থ আলাদা, সংরক্ষণ এবং বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার কাজকর্ম-সংক্রান্ত শিল্প। এটি একটি শ্রমমুখী শিল্প। সাধারণত একটি জাহাজের ৯৫ শতাংশই মাইল্ড স্টিল দিয়ে তৈরি হয়। ২ শতাংশ স্টেনলেস স্টিল এবং বাকি ৩ শতাংশ থাকে বিভিন্ন ধাতবের মিশ্রণ। একটি ইস্পাত নির্মিত জাহাজের ব্যবহার যোগ্যতা ২০ বছরের বেশি নয়।

বিশ্বের জাহাজভাঙ্গা শিল্প ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মত দরিদ্র, জনবহুল, জোয়ারভাটার বড় পার্থক্যসম্পন্ন সমুদ্র উপকূলীয় দেশেই গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফৌজদার হাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙ্গা শিল্পে প্রায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত। জাহাজভাঙ্গা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অনেক উপরে।  

সারণি  ১ বিশ্বের জাহাজভাঙ্গা শিল্পের কার্যক্রম ১৯৭৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত (১০০০ LDT বা টন)

দেশ ১৯৭৭ ১৯৮০ ১৯৮৫ ১৯৯০ ১৯৯৫ ২০০০ ২০০৫ ২০০৮
তাইওয়ান ৩৩৯১ ৪৪০৯ ৭৮২২ - ১৪ - -
স্পেন ৮৭৩ ২৭৯ ৬০৩ ১৩ ৪০ ২৬
দক্ষিণ কোরিয়া ২২১ ১৬৮ ২৫৫১ - -
ইটালি ২২৯ ১০১ ১৯৮ - -
ক্রোয়ে©র্শয়া ১৫১ ৬২ ১৩০ - - -
জাপান ১৯৩ ১২৯ ৯৭৩ ৮১ ১৪৬ ২২ - -
চীন ১৭ ০৭ ৫০১৯ ৮১ ৭৫৪ ২৬৩৭ ১৫১ ৯২৮
ভারত ৬৬ ১৩৬ ১৩০৩ ১০৯২ ২৮১০ ৫৯৮৭ ১১২৩ ২৪৫৮
বাংলাদেশ - - ৮১৮ ২১৭ ২৫৩৯ ২৪০৭ ২১১৪ ৪১৭৬
পাকিস্তান ২৯৯ ৩০০ ১১৪৩ ১৬৭০ ৭৮৯ ৪৮ ২৭৪
দক্ষিণ এশিয়া ৩৬৫ ৪৩৬ ৩২৬৪ ১৩১১ ৭০১৯ ৯১৮৩ ৩২৮৫ ৬৯০৮
অন্যান্য ৬৫৩ ৪৩১ ১৬৬৯ ৩১৫ ৫৬০ ১২৭১ ৩৩০ ৪৩৭
সর্বমোট ৬০৯৩ ৬০২২ ২২২২৯ ১৬৪৫ ৯৪৩৫ ১৩৫৫২ ৪০২১ ৮২৮০

সূত্র বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের পরিসংখ্যান এবং জাপানের জাহাজ নির্মাণ এসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান।

সারণি ২ বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজের পরিসংখ্যান এবং বাৎসরিক জাহাজ ভাঙ্গার পরিসংখ্যানের তুলনা তথা বাংলাদেশের অবস্থান।

সাল বিশ্বের মোট জাহাজ ভাঙ্গার সংখ্যা বাংলাদেশের এককভাবে জাহাজ ভাঙ্গার সংখ্যা
২০০১ ৭৭২ -
২০০২ ৭৪০ -
২০০৩ ৮৭৪ -
২০০৪ ৬১৫ -
২০০৫ ৩৬১ -
২০০৬ ৩৮৬ ১৮২
২০০৭ - ১০২
২০০৮ - ২২৬
২০০৯ - ১৯৩

সূত্র লয়েড’স জাহাজের পরিসংখ্যান।

জাহাজভাঙ্গা শিল্প উন্নয়নশীল দেশে প্রসারের কারণ  অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উন্নত দেশগুলি জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে বেরিয়ে এসে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রসর হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডকইয়ার্ডে সর্বশেষ জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছিল পঞ্চাশ বছর পূর্বে। গত শতকের নববই দশকের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বের অধিকাংশ পরিত্যক্ত জাহাজ ভাঙ্গা হতো চীনে। কিন্তু বর্তমানে তারা জাহাজ নির্মাণ শিল্পের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। ফলে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মত উন্নয়নশীল, জনবহুল দেশ, যেখানে উপযোগী সমুদ্রোপকূল এবং পুরাতন জাহাজসামগ্রীর চাহিদা আছে সে সব দেশে জাহাজভাঙ্গা শিল্প প্রসারিত হচ্ছে।  

জাহাজভাঙ্গা শিল্প

বাংলাদেশে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের ইতিহাস এবং উন্নতির কারণ  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ শিল্পের প্রসার পাকিস্তান আমলে খুবই সীমিত ছিল। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে স্থানীয় একটি স্টিল হাউজ গ্রিস থেকে আনা একটি জাহাজকে সফলভাবে ভাঙ্গা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেশকিছু জাহাজ এ বন্দরের কাছে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের পোতাশ্রয় এবং তাঁর নিকটবর্তী জলভাগে বহুসংখ্যক ডুবন্ত জাহাজ জমা হয়েছিল। তাই যুদ্ধের পরেই নিরাপদ নোঙর ও চলাচলের স্বার্থে বন্দরটি পরিষ্কার করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর সমুদ্রোপকূলে আল-আববাস নামের পাকিস্তানি নৌ-বাহিনীর একটি জাহাজ (যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কর্ণফুলি নদীতে ডুবে যায়) ভাঙ্গা হয়। তবে বিদেশ থেকে পরিত্যক্ত জাহাজ কিনে এনে বাণিজ্যিকভাবে ভাঙ্গার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ১৯৮০র দশকে। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এ শিল্পের প্রসার হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাহাজভাঙ্গা শিল্পে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। যেসব কারণে বাংলাদেশে এ শিল্পে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে তা হলো:

ক. এ শিল্প বিকাশের জন্য চট্টগ্রামের (ফৌজদারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত) এ অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবে বেশ অনুকূল। এখানে রয়েছে তুলনামূলকভাবে কম গভীর ও দীর্ঘ ঢালু সমুদ্র উপকূল, সঙ্গে জোয়ারভাটার বিশাল (১০-১৫ ফুট) পার্থক্যের কারণে সেখানে খুব সহজেই পরিত্যক্ত জাহাজকে নোঙর করে আটকানো যায়;

খ.  স্বল্প মজুরিতে শ্রমিক প্রাপ্তি;

গ. স্থানীয় স্টিল কারখানা, জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে সংগৃহীত স্টিলপ্লেট, লোহা, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা; এবং

ঘ.  এ শিল্প এলাকাটির সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এবং সংগৃহীত সামগ্রী স্বল্পসময়ে ও কমখরচে পরিবহণ সম্ভব।

জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের অবদান  জাহাজভাঙ্গা শিল্প দেশের লোহার মূল চাহিদা পূরণ করে। নির্মাণশিল্পসহ অর্থনৈতিকভাবে এ শিল্পের অবদান অনেক। দশ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে দুই লক্ষ শ্রমিক সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত। জাহাজ নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ, রি-রোলিং কারখানা, স্টিল ও রডের কারখানার মূল কাঁচামাল জাহাজভাঙ্গার কাঁচামাল থেকে সংগৃহীত হয়। এছাড়া এ শিল্প থেকে অক্সিজেন কারখানা, ক্যাবল, পিভিসি, সিরামিক ও আসবাবপত্র তৈরির উপকরণও সংগৃহীত হয়। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের স্টিলপ্লেট থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর যোগান আসে জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প (অভ্যন্তরীণ জাহাজ নির্মাণে) ও লৌহ শিল্প সরাসরিভাবে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বাৎসরিক ৩৫ হাজার টনের বেশি সিজন করা কাঠ এবং আসবাবপত্রের যোগান আসে এ শিল্প থেকে, যা বনজ সম্পদ ও গাছপালা রক্ষার্থে পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকার সংরক্ষণ এবং সঠিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার ভাঙ্গন রোধসহ মানুষের আবাসিক ব্যবহার উপযোগী অঞ্চল তৈরিতে এ শিল্প ব্যাপক ভুমিকা রাখছে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের আয় আসছে এ শিল্প থেকে।

এ শিল্পোন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা জাহাজভাঙ্গা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প হওয়ায় দুর্ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, নিরাপত্তার জন্য হেলমেট, পোশাক, বুট, গ্লাভস, চশমা ইত্যাদির স্বল্পতা ও অসচেতনতা এবং অসতর্কতা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০৯-২০১০ সালে জাহাজভাঙ্গা শিল্পে ২০ জন নিহত হয়েছে। জাহাজভাঙ্গা শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা পরিবেশ দূষণ। পরিত্যক্ত জাহাজে অনেক বিষাক্ত তরল পদার্থ থাকে যা সমুদ্রের পানিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সামুদ্রিক বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণি এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জাহাজভাঙ্গা স্থানের মাটির বৈশিষ্ট্য ও গঠনের উপর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় এই দূষণে আশপাশে বসবাসকারী মানুষ এবং প্রাণিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।  [খন্দকার আক্তার হোসেন]