শিকদার, সিরাজ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''শিকদার, সিরাজ''' (১৯৪৪-১৯৭৫) বিপ্লবী রাজনীতিক। ১৯৪৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আবদুর রাজ্জাক শিকদার ছিলেন সার্কেল অফিসার। সিরাজ শিকদার বরিশাল জেলাস্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে আই.এসসি এবং ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। | '''শিকদার, সিরাজ''' (১৯৪৪-১৯৭৫) বিপ্লবী রাজনীতিক। ১৯৪৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আবদুর রাজ্জাক শিকদার ছিলেন সার্কেল অফিসার। সিরাজ শিকদার বরিশাল জেলাস্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে আই.এসসি এবং ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। | ||
[[Image:SikderSiraj.jpg|thumb|right|400px|সিরাজ শিকদার]] | |||
সিরাজ শিকদার ১৯৬৭ সালে সরকারের সি অ্যান্ড বি বিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই সরকারি চাকরি ছেড়ে টেকনাফে ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে মাও-সে-তুং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মৌলবাদীদের চাপের মুখে অচিরেই আইউব সরকার গবেষণা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরাজ শিকদার ঢাকার টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন। | সিরাজ শিকদার ১৯৬৭ সালে সরকারের সি অ্যান্ড বি বিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই সরকারি চাকরি ছেড়ে টেকনাফে ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে মাও-সে-তুং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মৌলবাদীদের চাপের মুখে অচিরেই আইউব সরকার গবেষণা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরাজ শিকদার ঢাকার টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন। | ||
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিরাজ শিকদার গ্রামাঞ্চলে সর্বহারা রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠিতে পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী নামে একটি ক্যাডার বাহিনী গঠন করেন (৩০ এপ্রিল)। ওই বছর ৩ জুন তাঁর নেতৃত্বে স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগে শ্রমিক কৃষকদের রাজনৈতিক সংগঠন পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর দলের সশস্ত্র ক্যাডারগণ যুগপৎ পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে। | ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিরাজ শিকদার গ্রামাঞ্চলে সর্বহারা রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠিতে পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী নামে একটি ক্যাডার বাহিনী গঠন করেন (৩০ এপ্রিল)। ওই বছর ৩ জুন তাঁর নেতৃত্বে স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগে শ্রমিক কৃষকদের রাজনৈতিক সংগঠন পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর দলের সশস্ত্র ক্যাডারগণ যুগপৎ পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে। | ||
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেসে সিরাজ শিকদার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর নেতৃত্বে দেশের এগারোটি গণসংগঠন সমন্বয়ে পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রণ্ট গঠিত হয়। | স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেসে সিরাজ শিকদার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর নেতৃত্বে দেশের এগারোটি গণসংগঠন সমন্বয়ে পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রণ্ট গঠিত হয়। | ||
তিনি এই ফ্রণ্টের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর সিরাজ শিকদার দেশে সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামের হালি শহরে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পর তাঁকে বিমানযোগে ঢাকায় আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনী ক্যাম্পে আসার পথে ২ জানুয়ারি তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান] | তিনি এই ফ্রণ্টের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর সিরাজ শিকদার দেশে সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামের হালি শহরে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পর তাঁকে বিমানযোগে ঢাকায় আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনী ক্যাম্পে আসার পথে ২ জানুয়ারি তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান] | ||
০৬:৪৪, ১৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
শিকদার, সিরাজ (১৯৪৪-১৯৭৫) বিপ্লবী রাজনীতিক। ১৯৪৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আবদুর রাজ্জাক শিকদার ছিলেন সার্কেল অফিসার। সিরাজ শিকদার বরিশাল জেলাস্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে আই.এসসি এবং ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন।
সিরাজ শিকদার ১৯৬৭ সালে সরকারের সি অ্যান্ড বি বিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই সরকারি চাকরি ছেড়ে টেকনাফে ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে মাও-সে-তুং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মৌলবাদীদের চাপের মুখে অচিরেই আইউব সরকার গবেষণা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরাজ শিকদার ঢাকার টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিরাজ শিকদার গ্রামাঞ্চলে সর্বহারা রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠিতে পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী নামে একটি ক্যাডার বাহিনী গঠন করেন (৩০ এপ্রিল)। ওই বছর ৩ জুন তাঁর নেতৃত্বে স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগে শ্রমিক কৃষকদের রাজনৈতিক সংগঠন পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর দলের সশস্ত্র ক্যাডারগণ যুগপৎ পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেসে সিরাজ শিকদার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর নেতৃত্বে দেশের এগারোটি গণসংগঠন সমন্বয়ে পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রণ্ট গঠিত হয়। তিনি এই ফ্রণ্টের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর সিরাজ শিকদার দেশে সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামের হালি শহরে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পর তাঁকে বিমানযোগে ঢাকায় আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনী ক্যাম্পে আসার পথে ২ জানুয়ারি তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]