চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:ChoudhuryAbdulQuayyum.jpg|thumb|right|আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী]] | |||
'''চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম''' (১৯১৫-১৯৮৩) ভাষাচিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, গ্রন্থাগারিক, লেখক। ১৯১৫ সালে [[সুনামগঞ্জ জেলা|সুনামগঞ্জ]] জেলার [[জগন্নাথপুর উপজেলা|জগন্নাথপুর]] উপজেলার আশারকানিদ গ্রামে তাঁর জনম। পিতা আবু সুলতান চৌধুরী এবং মাতা জেবুন্নেছা চৌধুরী। পূর্বপুরুষ হানিফ খান আফগান, [[উসমান খান আফগান|উসমান খান আফগান]] এর সঙ্গে ১৬১১ সালে ময়মনসিংহের বোকাইনগর থেকে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। তিনি বাড়ি সংলগ্ন মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয়ে পাঠশেষে বৃত্তিসহ আসামের শিলচর নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন এবং শেষ পরীক্ষায় (১৯৪০) প্রথম স্থান অধিকারী প্রথম মুসলিম ছাত্রের সুবাদে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাইস্কুলে দেশিয় ভাষার শিক্ষক (vernacular teacher) পদে নিয়োগ লাভ করেন। পরে প্রাইভেট পরিক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট এবং [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশববিদ্যালয়]] হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন দশকেরও বেশি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে উক্ত স্কুলে আলাদা ভবনে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। সরকারি চাকরি হতে অবসরের পর নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত নয়াবন্দর হাইস্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। | '''চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম''' (১৯১৫-১৯৮৩) ভাষাচিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, গ্রন্থাগারিক, লেখক। ১৯১৫ সালে [[সুনামগঞ্জ জেলা|সুনামগঞ্জ]] জেলার [[জগন্নাথপুর উপজেলা|জগন্নাথপুর]] উপজেলার আশারকানিদ গ্রামে তাঁর জনম। পিতা আবু সুলতান চৌধুরী এবং মাতা জেবুন্নেছা চৌধুরী। পূর্বপুরুষ হানিফ খান আফগান, [[উসমান খান আফগান|উসমান খান আফগান]] এর সঙ্গে ১৬১১ সালে ময়মনসিংহের বোকাইনগর থেকে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। তিনি বাড়ি সংলগ্ন মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয়ে পাঠশেষে বৃত্তিসহ আসামের শিলচর নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন এবং শেষ পরীক্ষায় (১৯৪০) প্রথম স্থান অধিকারী প্রথম মুসলিম ছাত্রের সুবাদে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাইস্কুলে দেশিয় ভাষার শিক্ষক (vernacular teacher) পদে নিয়োগ লাভ করেন। পরে প্রাইভেট পরিক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট এবং [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশববিদ্যালয়]] হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন দশকেরও বেশি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে উক্ত স্কুলে আলাদা ভবনে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। সরকারি চাকরি হতে অবসরের পর নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত নয়াবন্দর হাইস্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। | ||
নর্মাল স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তাঁর ধারণা হয়, প্রাচীনকাল থেকেই শিক্ষাকে শুধু উচ্চবর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য জটিল বাংলা বর্ণমালা ও বানানরীতি চালু রয়েছে। পাঠশালা হতে শিশু ঝরে যাওয়া বা সাধারণ মানুষ অতিমাত্রায় নিরক্ষর থাকার জন্য এটি কম দায়ী নয়। এ সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি উপলব্ধি করে তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা যেমন ভাষা শেখা ও লেখা সহজতর, বাংলা টাইপ রাইটার চালু, সুবিন্যাসের (compose) গতি বৃদ্ধি, এমনকি ভিন্নভাষীদেরও বাংলা ভাষা আয়ত্তীকরণ সহজসাধ্য করার উদ্দেশ্যে ৩৪টি বর্ণদ্বারা সংস্কারের প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবিত বর্ণমালার সাহায্যে ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ বাংলা পয়লা বই। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে বর্ণের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫টি। প্রস্তাবিত ২৫টি বর্ণের মাধ্যমে মুদ্রিত ও প্রকাশিত এটিই প্রথম ও একমাত্র গ্রন্থ যেখানে বাংলা গণনারও যুক্তিপূর্ণ সহজীকরণের সুপারিশ ছিল। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ইছলাম কী। এছাড়াও তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। | নর্মাল স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তাঁর ধারণা হয়, প্রাচীনকাল থেকেই শিক্ষাকে শুধু উচ্চবর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য জটিল বাংলা বর্ণমালা ও বানানরীতি চালু রয়েছে। পাঠশালা হতে শিশু ঝরে যাওয়া বা সাধারণ মানুষ অতিমাত্রায় নিরক্ষর থাকার জন্য এটি কম দায়ী নয়। এ সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি উপলব্ধি করে তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা যেমন ভাষা শেখা ও লেখা সহজতর, বাংলা টাইপ রাইটার চালু, সুবিন্যাসের (compose) গতি বৃদ্ধি, এমনকি ভিন্নভাষীদেরও বাংলা ভাষা আয়ত্তীকরণ সহজসাধ্য করার উদ্দেশ্যে ৩৪টি বর্ণদ্বারা সংস্কারের প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবিত বর্ণমালার সাহায্যে ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ বাংলা পয়লা বই। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে বর্ণের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫টি। প্রস্তাবিত ২৫টি বর্ণের মাধ্যমে মুদ্রিত ও প্রকাশিত এটিই প্রথম ও একমাত্র গ্রন্থ যেখানে বাংলা গণনারও যুক্তিপূর্ণ সহজীকরণের সুপারিশ ছিল। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ইছলাম কী। এছাড়াও তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। | ||
বাংলা একাডেমীর [[আঞ্চলিক ভাষার অভিধান|আঞ্চলিক ভাষার অভিধান]] রচনায় [[সিলেট জেলা|সিলেট]] অঞ্চলের অন্যতম সংগ্রাহক এবং ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সাহিত্য মজলিসের তিনি প্রথম সভাপতি ছিলেন। | বাংলা একাডেমীর [[আঞ্চলিক ভাষার অভিধান|আঞ্চলিক ভাষার অভিধান]] রচনায় [[সিলেট জেলা|সিলেট]] অঞ্চলের অন্যতম সংগ্রাহক এবং ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সাহিত্য মজলিসের তিনি প্রথম সভাপতি ছিলেন। |
০৬:২৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম (১৯১৫-১৯৮৩) ভাষাচিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, গ্রন্থাগারিক, লেখক। ১৯১৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকানিদ গ্রামে তাঁর জনম। পিতা আবু সুলতান চৌধুরী এবং মাতা জেবুন্নেছা চৌধুরী। পূর্বপুরুষ হানিফ খান আফগান, উসমান খান আফগান এর সঙ্গে ১৬১১ সালে ময়মনসিংহের বোকাইনগর থেকে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। তিনি বাড়ি সংলগ্ন মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয়ে পাঠশেষে বৃত্তিসহ আসামের শিলচর নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন এবং শেষ পরীক্ষায় (১৯৪০) প্রথম স্থান অধিকারী প্রথম মুসলিম ছাত্রের সুবাদে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাইস্কুলে দেশিয় ভাষার শিক্ষক (vernacular teacher) পদে নিয়োগ লাভ করেন। পরে প্রাইভেট পরিক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন দশকেরও বেশি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে উক্ত স্কুলে আলাদা ভবনে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। সরকারি চাকরি হতে অবসরের পর নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত নয়াবন্দর হাইস্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন।
নর্মাল স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তাঁর ধারণা হয়, প্রাচীনকাল থেকেই শিক্ষাকে শুধু উচ্চবর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য জটিল বাংলা বর্ণমালা ও বানানরীতি চালু রয়েছে। পাঠশালা হতে শিশু ঝরে যাওয়া বা সাধারণ মানুষ অতিমাত্রায় নিরক্ষর থাকার জন্য এটি কম দায়ী নয়। এ সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি উপলব্ধি করে তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা যেমন ভাষা শেখা ও লেখা সহজতর, বাংলা টাইপ রাইটার চালু, সুবিন্যাসের (compose) গতি বৃদ্ধি, এমনকি ভিন্নভাষীদেরও বাংলা ভাষা আয়ত্তীকরণ সহজসাধ্য করার উদ্দেশ্যে ৩৪টি বর্ণদ্বারা সংস্কারের প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবিত বর্ণমালার সাহায্যে ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ বাংলা পয়লা বই। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে বর্ণের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫টি। প্রস্তাবিত ২৫টি বর্ণের মাধ্যমে মুদ্রিত ও প্রকাশিত এটিই প্রথম ও একমাত্র গ্রন্থ যেখানে বাংলা গণনারও যুক্তিপূর্ণ সহজীকরণের সুপারিশ ছিল। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ইছলাম কী। এছাড়াও তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
বাংলা একাডেমীর আঞ্চলিক ভাষার অভিধান রচনায় সিলেট অঞ্চলের অন্যতম সংগ্রাহক এবং ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সাহিত্য মজলিসের তিনি প্রথম সভাপতি ছিলেন।
গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাট দশকে বাংলা লিপি ও বানান সরলায়ণের লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ-র নেতৃত্বাধীন পূর্ববঙ্গ সরকারের East Bengal Language Committee, ১৯৬৩ সালের বাংলা একাডেমীর তদানীন্তন পরিচালক সৈয়দ আলী আহসান-এর নেতৃত্বাধীন কমিটি এবং বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ঢাকা বিশববিদ্যালয় শিক্ষা পর্ষদীয় কমিটির সুপারিশ ছিল ত্রিশ বছর পূর্বের আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সংস্কার প্রস্তাবের প্রায় অনুরুপ। ১৯৮৩ সালের ২৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরী]