গায়ে হলুদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:GayeHalud.jpg|thumb|400px|right|গায়ে হলুদ]]
'''গায়ে হলুদ'''  [[বিবাহ|বিবাহ]] অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। বিবাহের মূল অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আনুষঙ্গিক নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়, যাকে ফোকলোরের ভাষায় বলে: Many rites within one ritual। বর-কনের দাম্পত্য  জীবনকে যেকোনো ধরনের অকল্যাণ বা অপশক্তির অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখার কামনা থেকেই এসব লোকাচার পালন করা হয়। গায়ে হলুদ এ সবেরই একটি এবং এটি মূলত একটি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, যা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। হিন্দুসমাজে এ লোকাচার গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস নামে অভিহিত। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানের মুসলমানেরা অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন নামে পালন করে থাকে, যেমন: গায়ে হলুদ, হলদি কোটা, তেলই, কুড় দেওয়া প্রভৃতি।
'''গায়ে হলুদ'''  [[বিবাহ|বিবাহ]] অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। বিবাহের মূল অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আনুষঙ্গিক নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়, যাকে ফোকলোরের ভাষায় বলে: Many rites within one ritual। বর-কনের দাম্পত্য  জীবনকে যেকোনো ধরনের অকল্যাণ বা অপশক্তির অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখার কামনা থেকেই এসব লোকাচার পালন করা হয়। গায়ে হলুদ এ সবেরই একটি এবং এটি মূলত একটি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, যা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। হিন্দুসমাজে এ লোকাচার গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস নামে অভিহিত। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানের মুসলমানেরা অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন নামে পালন করে থাকে, যেমন: গায়ে হলুদ, হলদি কোটা, তেলই, কুড় দেওয়া প্রভৃতি।


বৈদিক যুগ থেকে ভারতীয় হিন্দুসমাজে গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস বিয়ের অনুষ্ঠানের অবশ্য পালনীয় শাস্ত্রাচার ও লোকাচার হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে। ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের পর তারাও আচার-অনুষ্ঠানে দেশিয় রীতিপদ্ধতি অনুসরণ করে। বিয়ের এ রীতিগুলি মূলত মঙ্গোলীয় এবং অন্যান্য আদিবাসী উপজাতির নিকট থেকে গৃহীত। তবে বৈদিক আর্যদের আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাবও এতে পরিলক্ষিত হয়। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিয়ের তিনদিন, পাঁচদিন অথবা সাতদিন আগে বর ও কনের গায়ে হলুদ এবং অন্যান্য মাঙ্গলিক দ্রব্য মাখানো। হলুদ একদিকে পবিত্রতার প্রতীক, অন্যদিকে প্রসাধনী হিসেবেও উৎকৃষ্ট। আধিভৌতিক ও অপশক্তির প্রভাব দূর করতে হলুদ অত্যন্ত কার্যকর বলে একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এসব কারণেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে হলুদ ছাড়াও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহূত হয়, যার মধ্যে রয়েছে ধান, দুর্বা, তিল, যব, সরিষা, মাষকলাই, সোন্দা, মেথি, গিলা, সুঁট, চন্দন, সিঁদুর, মেহেদি, মিষ্টি, মাছ, পঞ্চপ্রদীপ প্রভৃতি। এগুলির সবই সৌভাগ্য ও প্রজননের প্রতীক। দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার ও নবদম্পতির সুখশান্তি কামনাই এ অনুষ্ঠানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।
বৈদিক যুগ থেকে ভারতীয় হিন্দুসমাজে গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস বিয়ের অনুষ্ঠানের অবশ্য পালনীয় শাস্ত্রাচার ও লোকাচার হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে। ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের পর তারাও আচার-অনুষ্ঠানে দেশিয় রীতিপদ্ধতি অনুসরণ করে। বিয়ের এ রীতিগুলি মূলত মঙ্গোলীয় এবং অন্যান্য আদিবাসী উপজাতির নিকট থেকে গৃহীত। তবে বৈদিক আর্যদের আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাবও এতে পরিলক্ষিত হয়। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিয়ের তিনদিন, পাঁচদিন অথবা সাতদিন আগে বর ও কনের গায়ে হলুদ এবং অন্যান্য মাঙ্গলিক দ্রব্য মাখানো। হলুদ একদিকে পবিত্রতার প্রতীক, অন্যদিকে প্রসাধনী হিসেবেও উৎকৃষ্ট। আধিভৌতিক ও অপশক্তির প্রভাব দূর করতে হলুদ অত্যন্ত কার্যকর বলে একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এসব কারণেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে হলুদ ছাড়াও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহূত হয়, যার মধ্যে রয়েছে ধান, দুর্বা, তিল, যব, সরিষা, মাষকলাই, সোন্দা, মেথি, গিলা, সুঁট, চন্দন, সিঁদুর, মেহেদি, মিষ্টি, মাছ, পঞ্চপ্রদীপ প্রভৃতি। এগুলির সবই সৌভাগ্য ও প্রজননের প্রতীক। দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার ও নবদম্পতির সুখশান্তি কামনাই এ অনুষ্ঠানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।
[[Image:GayeHalud.jpg|thumb|right|গায়ে হলুদ]]


গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি বর ও কনের বাড়িতে পৃথক পৃথকভাবে পালন করা হয়। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে আড়ম্বর করে গায়ে হলুদের উপকরণ নিয়ে যাওয়া হয়। দু বাড়িতেই বর ও কনেকে বসানোর জন্য তৈরি করা হয় সুসজ্জিত মঞ্চ। আনুষ্ঠানিক আচার পালনের জন্য গায়ে হলুদের উপকরণগুলি ডালা-কুলায় রাখা হয়। মা, দাদী, নানী এবং অন্যান্য মুরুবিব স্থানীয় আত্মীয়-স্বজন প্রথমে বর-কনের কপালে হলুদ মাখান। এ সময় তাদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়। অতিথিদের বিশেষ খাবার ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। পরে বর-কনের সারা শরীরে হলুদ মাখানো হয়। সঙ্গীত পরিবেশন এ অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ গানগুলি সাধারণত মেয়েরা রচনা করে এবং তারাই পরিবেশন করে; তাই এগুলি  [[মেয়েলী গীত|মেয়েলী গীত]] নামে পরিচিত। এসব গীতের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে লোকাচারের তাৎপর্য এবং একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের ছবি। শহরে আধুনিক গান ও ব্যান্ড-সঙ্গীত মেয়েলি গীতের স্থান দখল করে নিয়েছে।  [শাহীদা আখতার]
গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি বর ও কনের বাড়িতে পৃথক পৃথকভাবে পালন করা হয়। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে আড়ম্বর করে গায়ে হলুদের উপকরণ নিয়ে যাওয়া হয়। দু বাড়িতেই বর ও কনেকে বসানোর জন্য তৈরি করা হয় সুসজ্জিত মঞ্চ। আনুষ্ঠানিক আচার পালনের জন্য গায়ে হলুদের উপকরণগুলি ডালা-কুলায় রাখা হয়। মা, দাদী, নানী এবং অন্যান্য মুরুবিব স্থানীয় আত্মীয়-স্বজন প্রথমে বর-কনের কপালে হলুদ মাখান। এ সময় তাদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়। অতিথিদের বিশেষ খাবার ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। পরে বর-কনের সারা শরীরে হলুদ মাখানো হয়। সঙ্গীত পরিবেশন এ অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ গানগুলি সাধারণত মেয়েরা রচনা করে এবং তারাই পরিবেশন করে; তাই এগুলি  [[মেয়েলী গীত|মেয়েলী গীত]] নামে পরিচিত। এসব গীতের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে লোকাচারের তাৎপর্য এবং একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের ছবি। শহরে আধুনিক গান ও ব্যান্ড-সঙ্গীত মেয়েলি গীতের স্থান দখল করে নিয়েছে।  [শাহীদা আখতার]


[[en:Gaye Halud]]
[[en:Gaye Halud]]

০৯:৪৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

গায়ে হলুদ

গায়ে হলুদ  বিবাহ অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। বিবাহের মূল অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আনুষঙ্গিক নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়, যাকে ফোকলোরের ভাষায় বলে: Many rites within one ritual। বর-কনের দাম্পত্য  জীবনকে যেকোনো ধরনের অকল্যাণ বা অপশক্তির অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখার কামনা থেকেই এসব লোকাচার পালন করা হয়। গায়ে হলুদ এ সবেরই একটি এবং এটি মূলত একটি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, যা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। হিন্দুসমাজে এ লোকাচার গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস নামে অভিহিত। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানের মুসলমানেরা অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন নামে পালন করে থাকে, যেমন: গায়ে হলুদ, হলদি কোটা, তেলই, কুড় দেওয়া প্রভৃতি।

বৈদিক যুগ থেকে ভারতীয় হিন্দুসমাজে গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস বিয়ের অনুষ্ঠানের অবশ্য পালনীয় শাস্ত্রাচার ও লোকাচার হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে। ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের পর তারাও আচার-অনুষ্ঠানে দেশিয় রীতিপদ্ধতি অনুসরণ করে। বিয়ের এ রীতিগুলি মূলত মঙ্গোলীয় এবং অন্যান্য আদিবাসী উপজাতির নিকট থেকে গৃহীত। তবে বৈদিক আর্যদের আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাবও এতে পরিলক্ষিত হয়। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিয়ের তিনদিন, পাঁচদিন অথবা সাতদিন আগে বর ও কনের গায়ে হলুদ এবং অন্যান্য মাঙ্গলিক দ্রব্য মাখানো। হলুদ একদিকে পবিত্রতার প্রতীক, অন্যদিকে প্রসাধনী হিসেবেও উৎকৃষ্ট। আধিভৌতিক ও অপশক্তির প্রভাব দূর করতে হলুদ অত্যন্ত কার্যকর বলে একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এসব কারণেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে হলুদ ছাড়াও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহূত হয়, যার মধ্যে রয়েছে ধান, দুর্বা, তিল, যব, সরিষা, মাষকলাই, সোন্দা, মেথি, গিলা, সুঁট, চন্দন, সিঁদুর, মেহেদি, মিষ্টি, মাছ, পঞ্চপ্রদীপ প্রভৃতি। এগুলির সবই সৌভাগ্য ও প্রজননের প্রতীক। দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার ও নবদম্পতির সুখশান্তি কামনাই এ অনুষ্ঠানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি বর ও কনের বাড়িতে পৃথক পৃথকভাবে পালন করা হয়। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে আড়ম্বর করে গায়ে হলুদের উপকরণ নিয়ে যাওয়া হয়। দু বাড়িতেই বর ও কনেকে বসানোর জন্য তৈরি করা হয় সুসজ্জিত মঞ্চ। আনুষ্ঠানিক আচার পালনের জন্য গায়ে হলুদের উপকরণগুলি ডালা-কুলায় রাখা হয়। মা, দাদী, নানী এবং অন্যান্য মুরুবিব স্থানীয় আত্মীয়-স্বজন প্রথমে বর-কনের কপালে হলুদ মাখান। এ সময় তাদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়। অতিথিদের বিশেষ খাবার ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। পরে বর-কনের সারা শরীরে হলুদ মাখানো হয়। সঙ্গীত পরিবেশন এ অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ গানগুলি সাধারণত মেয়েরা রচনা করে এবং তারাই পরিবেশন করে; তাই এগুলি  মেয়েলী গীত নামে পরিচিত। এসব গীতের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে লোকাচারের তাৎপর্য এবং একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের ছবি। শহরে আধুনিক গান ও ব্যান্ড-সঙ্গীত মেয়েলি গীতের স্থান দখল করে নিয়েছে।  [শাহীদা আখতার]