খিয়াং: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''খিয়াং''' পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি নৃজাতি গোষ্ঠী। দক্ষিণের টেম চিন (Tame Chin) বা উত্তরের ওয়াইল্ড চিন (Wild Chin) নামে অভিহিত আরাকান-ইয়োমা উপত্যকার অববাহিকা অঞ্চলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠী থেকে খিয়াংদের আগমন। কবে খিয়াংরা এদেশে এসেছে তার স্পষ্ট প্রমাণ না থাকলেও কেউ কেউ মনে করে ১৬ ও ১৭ শতকে খিয়াংরা বাংলাদেশে আগমন করে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মুরারনজা পর্বতমালায় খিয়াংরা সর্ব প্রথম বসবাস শুরু করে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে জুম চাষ করার মাধ্যমে তাদের বসতি স্থানান্তর হতে থাকে। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় এ জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। বর্তমানে (২০১০) খিয়াংদের সংখ্যা ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে মনে করা হয়। | '''খিয়াং''' পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি নৃজাতি গোষ্ঠী। দক্ষিণের টেম চিন (Tame Chin) বা উত্তরের ওয়াইল্ড চিন (Wild Chin) নামে অভিহিত আরাকান-ইয়োমা উপত্যকার অববাহিকা অঞ্চলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠী থেকে খিয়াংদের আগমন। কবে খিয়াংরা এদেশে এসেছে তার স্পষ্ট প্রমাণ না থাকলেও কেউ কেউ মনে করে ১৬ ও ১৭ শতকে খিয়াংরা বাংলাদেশে আগমন করে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মুরারনজা পর্বতমালায় খিয়াংরা সর্ব প্রথম বসবাস শুরু করে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে জুম চাষ করার মাধ্যমে তাদের বসতি স্থানান্তর হতে থাকে। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় এ জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। বর্তমানে (২০১০) খিয়াংদের সংখ্যা ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে মনে করা হয়। | ||
[[Image:Kheyang1.jpg|thumb|400px|right|ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত খিয়াং রমণী]] | |||
খিয়াংরা চীনা-তিববতীয় ভাষাগোষ্ঠীর তিববতি-ব্রহ্ম শাখার কুকি-চীন দলভুক্ত। খিয়াংদের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। একটি শব্দ উচ্চারণভেদে একাধিক অর্থ বুঝায়। যেমন ‘চী’ অর্থ বড় বোন। আবার ‘চি’ অর্থ লবণ বা ছাঁকা। | খিয়াংরা চীনা-তিববতীয় ভাষাগোষ্ঠীর তিববতি-ব্রহ্ম শাখার কুকি-চীন দলভুক্ত। খিয়াংদের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। একটি শব্দ উচ্চারণভেদে একাধিক অর্থ বুঝায়। যেমন ‘চী’ অর্থ বড় বোন। আবার ‘চি’ অর্থ লবণ বা ছাঁকা। | ||
অতীতে খিয়াংরা ছিল প্রকৃতি পূজারি। তারা সৃষ্টিকর্তাকে বলত ‘হ্নাদাগা’। পরবর্তী সময়ে তারা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেয়। তবে তাদের আদি দেব-দেবীদের পূজা করতেও দেখা যায়। বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। খিয়াংদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ‘সাংলান’। গৌতম বুদ্ধকে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে এ উৎসব শুরু হয়। | অতীতে খিয়াংরা ছিল প্রকৃতি পূজারি। তারা সৃষ্টিকর্তাকে বলত ‘হ্নাদাগা’। পরবর্তী সময়ে তারা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেয়। তবে তাদের আদি দেব-দেবীদের পূজা করতেও দেখা যায়। বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। খিয়াংদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ‘সাংলান’। গৌতম বুদ্ধকে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে এ উৎসব শুরু হয়। | ||
[[Image:Kheyang2.jpg|thumb|400px| left|ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার পরিহিত খিয়াং রমণী]] | |||
খিয়াংদের মধ্যে সাধারণত একই গোত্রে বিবাহ হয় না। চাচাতো ভাইবোনদের বিবাহ নিষিদ্ধ। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ভালবাসা হলে উভয়ের অভিভাবক আলোচনার মাধ্যমে বিবাহের দিনক্ষণ ধার্য করে। অতীতে সামাজিকভাবে বিবাহ অনুষ্ঠিত হলে ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের মা-বাবাকে পণ দিতে হতো। এ পণকে তারা ‘দাফা’ বলে। পালিয়ে বিবাহ করার ক্ষেত্রে এ দাফার পরিমাণ বেড়ে যায়। দাফার টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে অভিভাবক মেয়েকে ফেরত নিয়ে যেত। যতদিন না ছেলের টাকা প্রদানে সমর্থ্য হয় ততদিন মেয়েকে নিজেদের কাছে রাখত। খিয়াংদের মধ্যে ঘরজামাইয়ের প্রথার প্রচলন আছে। এ ক্ষেত্রে ঘরজামাইকে দাফা দিতে হয় না। | খিয়াংদের মধ্যে সাধারণত একই গোত্রে বিবাহ হয় না। চাচাতো ভাইবোনদের বিবাহ নিষিদ্ধ। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ভালবাসা হলে উভয়ের অভিভাবক আলোচনার মাধ্যমে বিবাহের দিনক্ষণ ধার্য করে। অতীতে সামাজিকভাবে বিবাহ অনুষ্ঠিত হলে ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের মা-বাবাকে পণ দিতে হতো। এ পণকে তারা ‘দাফা’ বলে। পালিয়ে বিবাহ করার ক্ষেত্রে এ দাফার পরিমাণ বেড়ে যায়। দাফার টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে অভিভাবক মেয়েকে ফেরত নিয়ে যেত। যতদিন না ছেলের টাকা প্রদানে সমর্থ্য হয় ততদিন মেয়েকে নিজেদের কাছে রাখত। খিয়াংদের মধ্যে ঘরজামাইয়ের প্রথার প্রচলন আছে। এ ক্ষেত্রে ঘরজামাইকে দাফা দিতে হয় না। | ||
খিয়াংরা মাচান ঘর তৈরি করে বসাবাস করে। এরা খুবই শান্তি প্রিয়। পাহাড়ের উপর খোলা জায়গায় এবং ছোট খাল বা ঝর্ণাধারার কাছে এদের গ্রামগুলি গড়ে উঠে। এরা ঘরকে বলে ‘ইম’ এবং গ্রামকে বলে ‘নাম’। [[জুমচাষ|জুমচাষ]]ই তাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন। | খিয়াংরা মাচান ঘর তৈরি করে বসাবাস করে। এরা খুবই শান্তি প্রিয়। পাহাড়ের উপর খোলা জায়গায় এবং ছোট খাল বা ঝর্ণাধারার কাছে এদের গ্রামগুলি গড়ে উঠে। এরা ঘরকে বলে ‘ইম’ এবং গ্রামকে বলে ‘নাম’। [[জুমচাষ|জুমচাষ]]ই তাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন। | ||
[[Image:Kheyang3.jpg|thumb|400px| right|খিয়াং বসতবাড়ি]] | |||
খিয়াং পুরুষেরা লেংটি এবং নিজেদের হাতে সেলাই করা এক ধরনের জামা পরে। ছেলেদের হাতে থাকে রূপার চুড়ি ও কানে দুল। ছেলেরা মাথার চুল লম্বা রাখে এবং মেয়েদের মত খোঁপা বাঁধে। রমণীরা লুঙ্গি ও ব্লাউজ পরে। বিচিত্র ধরনের অলঙ্কারে নিজেদের আবৃত রাখে। তারা নিজেদের তৈরি কাপড় পরে। | খিয়াং পুরুষেরা লেংটি এবং নিজেদের হাতে সেলাই করা এক ধরনের জামা পরে। ছেলেদের হাতে থাকে রূপার চুড়ি ও কানে দুল। ছেলেরা মাথার চুল লম্বা রাখে এবং মেয়েদের মত খোঁপা বাঁধে। রমণীরা লুঙ্গি ও ব্লাউজ পরে। বিচিত্র ধরনের অলঙ্কারে নিজেদের আবৃত রাখে। তারা নিজেদের তৈরি কাপড় পরে। | ||
১০:৫৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
খিয়াং পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি নৃজাতি গোষ্ঠী। দক্ষিণের টেম চিন (Tame Chin) বা উত্তরের ওয়াইল্ড চিন (Wild Chin) নামে অভিহিত আরাকান-ইয়োমা উপত্যকার অববাহিকা অঞ্চলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠী থেকে খিয়াংদের আগমন। কবে খিয়াংরা এদেশে এসেছে তার স্পষ্ট প্রমাণ না থাকলেও কেউ কেউ মনে করে ১৬ ও ১৭ শতকে খিয়াংরা বাংলাদেশে আগমন করে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মুরারনজা পর্বতমালায় খিয়াংরা সর্ব প্রথম বসবাস শুরু করে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে জুম চাষ করার মাধ্যমে তাদের বসতি স্থানান্তর হতে থাকে। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় এ জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। বর্তমানে (২০১০) খিয়াংদের সংখ্যা ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে মনে করা হয়।
খিয়াংরা চীনা-তিববতীয় ভাষাগোষ্ঠীর তিববতি-ব্রহ্ম শাখার কুকি-চীন দলভুক্ত। খিয়াংদের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। একটি শব্দ উচ্চারণভেদে একাধিক অর্থ বুঝায়। যেমন ‘চী’ অর্থ বড় বোন। আবার ‘চি’ অর্থ লবণ বা ছাঁকা।
অতীতে খিয়াংরা ছিল প্রকৃতি পূজারি। তারা সৃষ্টিকর্তাকে বলত ‘হ্নাদাগা’। পরবর্তী সময়ে তারা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেয়। তবে তাদের আদি দেব-দেবীদের পূজা করতেও দেখা যায়। বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। খিয়াংদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ‘সাংলান’। গৌতম বুদ্ধকে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে এ উৎসব শুরু হয়।
খিয়াংদের মধ্যে সাধারণত একই গোত্রে বিবাহ হয় না। চাচাতো ভাইবোনদের বিবাহ নিষিদ্ধ। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ভালবাসা হলে উভয়ের অভিভাবক আলোচনার মাধ্যমে বিবাহের দিনক্ষণ ধার্য করে। অতীতে সামাজিকভাবে বিবাহ অনুষ্ঠিত হলে ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের মা-বাবাকে পণ দিতে হতো। এ পণকে তারা ‘দাফা’ বলে। পালিয়ে বিবাহ করার ক্ষেত্রে এ দাফার পরিমাণ বেড়ে যায়। দাফার টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে অভিভাবক মেয়েকে ফেরত নিয়ে যেত। যতদিন না ছেলের টাকা প্রদানে সমর্থ্য হয় ততদিন মেয়েকে নিজেদের কাছে রাখত। খিয়াংদের মধ্যে ঘরজামাইয়ের প্রথার প্রচলন আছে। এ ক্ষেত্রে ঘরজামাইকে দাফা দিতে হয় না।
খিয়াংরা মাচান ঘর তৈরি করে বসাবাস করে। এরা খুবই শান্তি প্রিয়। পাহাড়ের উপর খোলা জায়গায় এবং ছোট খাল বা ঝর্ণাধারার কাছে এদের গ্রামগুলি গড়ে উঠে। এরা ঘরকে বলে ‘ইম’ এবং গ্রামকে বলে ‘নাম’। জুমচাষই তাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন।
খিয়াং পুরুষেরা লেংটি এবং নিজেদের হাতে সেলাই করা এক ধরনের জামা পরে। ছেলেদের হাতে থাকে রূপার চুড়ি ও কানে দুল। ছেলেরা মাথার চুল লম্বা রাখে এবং মেয়েদের মত খোঁপা বাঁধে। রমণীরা লুঙ্গি ও ব্লাউজ পরে। বিচিত্র ধরনের অলঙ্কারে নিজেদের আবৃত রাখে। তারা নিজেদের তৈরি কাপড় পরে।
খিয়াংদের সমাজব্যবস্থায় একজন নেতা থাকে যাকে বলা হয় কার্বারী। খিয়াংদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। অন্যায় বা অপরাধের সাথে জড়িত কোনো লোকের বিচার গ্রামের কার্বারী তাদের নিজস্ব প্রথা অনুসারে করে থাকে। খিয়াং সমাজে মৃত ব্যক্তিকে দাহ করা হয়। [খন্দকার ফাতেমা জোহরা]