ওয়াসিউদ্দিন, লে. জেনারেল খাজা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ওয়াসিউদ্দিন, লে''''''. ''''''জেনারেল খাজা''' (১৯২০-১৯৯২)  সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক। জন্ম ১৯২০ সালের ২০ মার্চ ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে। পিতা খাজা শাহাবুদ্দিন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। মাতা ফারহাত বানু ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য (১৯৩৭)।
[[Image:WasiuddinGeneralKhawaja.jpg|thumb|right|ওয়াসিউদ্দিন, লে. জেনারেল খাজা]]
'''ওয়াসিউদ্দিন, লে. জেনারেল খাজা''' (১৯২০-১৯৯২)  সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক। জন্ম ১৯২০ সালের ২০ মার্চ ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে। পিতা খাজা শাহাবুদ্দিন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। মাতা ফারহাত বানু ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য (১৯৩৭)।


খাজা ওয়াসিউদ্দিন ঢাকা মুসলিম হাইস্কুল ও সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রিন্স অব ওয়েলস রয়্যাল মিলিটারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাসে রয়্যাল ইন্ডিয়ান আর্মির আর্টিলারি কোর-এ অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। মাউন্টেন আর্টিলারি অফিসার হিসেবে তিনি সৈনিক জীবন শুরু করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা অভিযানে অংশ নেন। ১৯৪৩ সালে তিনি মেজর হিসেবে একটি মাউন্টেন ব্যাটারির দায়িত্ব পান। ১৯৪৫ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের (আইএসএসবি) এডিশনাল ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
খাজা ওয়াসিউদ্দিন ঢাকা মুসলিম হাইস্কুল ও সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রিন্স অব ওয়েলস রয়্যাল মিলিটারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাসে রয়্যাল ইন্ডিয়ান আর্মির আর্টিলারি কোর-এ অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। মাউন্টেন আর্টিলারি অফিসার হিসেবে তিনি সৈনিক জীবন শুরু করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা অভিযানে অংশ নেন। ১৯৪৩ সালে তিনি মেজর হিসেবে একটি মাউন্টেন ব্যাটারির দায়িত্ব পান। ১৯৪৫ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের (আইএসএসবি) এডিশনাল ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।


১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর খাজা ওয়াসিউদ্দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৮ সালে আইএসএসবি-এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামবার্লি স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। পরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর অব আর্টিলারি নিযুক্ত হন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর খাজা ওয়াসিউদ্দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৮ সালে আইএসএসবি-এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামবার্লি স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। পরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর অব আর্টিলারি নিযুক্ত হন।
[[Image:WasiuddinGeneralKhawaja.jpg|thumb|right|ওয়াসিউদ্দিন, লে. জেনারেল খাজা]]


তিনি ১৯৬০ সালে ১৪শ ডিভিশনের (পূর্ব পাকিস্তান) জিওসি এবং ১৯৬৩ সালে ১০ম ডিভিশনের (লাহোরে) কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অব অর্ডিন্যান্স পদে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পাকিস্তানের বৃহত্তম সেনা-কোর সেকেন্ড কোরের কমান্ডার হন।
তিনি ১৯৬০ সালে ১৪শ ডিভিশনের (পূর্ব পাকিস্তান) জিওসি এবং ১৯৬৩ সালে ১০ম ডিভিশনের (লাহোরে) কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অব অর্ডিন্যান্স পদে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পাকিস্তানের বৃহত্তম সেনা-কোর সেকেন্ড কোরের কমান্ডার হন।
১২ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
খাজা ওয়াসিউদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে প্রথমে কুয়েতে এবং পরে ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে। ১৯৭৭ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন জেনারেল ওসমানী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা মহানগর সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
খাজা ওয়াসিউদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে প্রথমে কুয়েতে এবং পরে ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে। ১৯৭৭ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন জেনারেল ওসমানী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা মহানগর সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।


১৯৯২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
১৯৯২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [মোঃ আলমগীর]
 
[মোঃ আলমগীর]


[[en:Wasiuddin, Lt General Khwaja]]
[[en:Wasiuddin, Lt General Khwaja]]

০৬:৫৯, ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ওয়াসিউদ্দিন, লে. জেনারেল খাজা

ওয়াসিউদ্দিন, লে. জেনারেল খাজা (১৯২০-১৯৯২)  সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক। জন্ম ১৯২০ সালের ২০ মার্চ ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে। পিতা খাজা শাহাবুদ্দিন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। মাতা ফারহাত বানু ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য (১৯৩৭)।

খাজা ওয়াসিউদ্দিন ঢাকা মুসলিম হাইস্কুল ও সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রিন্স অব ওয়েলস রয়্যাল মিলিটারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাসে রয়্যাল ইন্ডিয়ান আর্মির আর্টিলারি কোর-এ অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। মাউন্টেন আর্টিলারি অফিসার হিসেবে তিনি সৈনিক জীবন শুরু করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা অভিযানে অংশ নেন। ১৯৪৩ সালে তিনি মেজর হিসেবে একটি মাউন্টেন ব্যাটারির দায়িত্ব পান। ১৯৪৫ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের (আইএসএসবি) এডিশনাল ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর খাজা ওয়াসিউদ্দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৮ সালে আইএসএসবি-এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামবার্লি স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। পরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর অব আর্টিলারি নিযুক্ত হন।

তিনি ১৯৬০ সালে ১৪শ ডিভিশনের (পূর্ব পাকিস্তান) জিওসি এবং ১৯৬৩ সালে ১০ম ডিভিশনের (লাহোরে) কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অব অর্ডিন্যান্স পদে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পাকিস্তানের বৃহত্তম সেনা-কোর সেকেন্ড কোরের কমান্ডার হন।

খাজা ওয়াসিউদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে প্রথমে কুয়েতে এবং পরে ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে। ১৯৭৭ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন জেনারেল ওসমানী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা মহানগর সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

১৯৯২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [মোঃ আলমগীর]