ময়মনসিংহ জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ময়মনসিংহ জেলা''' (ঢাকা বিভাগ)  আয়তন: ৪৩৬৩.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৪´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা।
'''ময়মনসিংহ জেলা''' ([[ঢাকা বিভাগ|ঢাকা বিভাগ]])  আয়তন: ৪৩৬৩.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৪´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা।


''জনসংখ্যা'' ৪৪৮৯৭২৬; পুরুষ ২২৯৭৩০২, মহিলা ২১৯২৪২৪। মুসলিম ৪২৮৯৭৮৯, হিন্দু ১৬৮১৩৫, বৌদ্ধ ২৭৯৯৯, খ্রিস্টান ৩৩০ এবং অন্যান্য ৩৪৭৩। এ জেলায় গারো, কোচ, ডালু, বর্মণ, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
''জনসংখ্যা'' ৪৪৮৯৭২৬; পুরুষ ২২৯৭৩০২, মহিলা ২১৯২৪২৪। মুসলিম ৪২৮৯৭৮৯, হিন্দু ১৬৮১৩৫, বৌদ্ধ ২৭৯৯৯, খ্রিস্টান ৩৩০ এবং অন্যান্য ৩৪৭৩। এ জেলায় গারো, কোচ, ডালু, বর্মণ, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
! colspan= "10" | জেলা
| colspan= "10" | জেলা
|-
|-
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
! colspan= "10" | জেলা
| colspan= "10" | জেলা
|-
|-
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
২৭ নং লাইন: ২৭ নং লাইন:
|-  
|-  
|  
|  
|-  
|-  
| ঈশ্বরগঞ্জ  || ২৮৬.১৯  || ১  || ১১  || ২৯৩  || ২৯১  || ৩৩৮০৮০  || ১১৮১  || ৩৫.২
| ঈশ্বরগঞ্জ  || ২৮৬.১৯  || ১  || ১১  || ২৯৩  || ২৯১  || ৩৩৮০৮০  || ১১৮১  || ৩৫.২
৬৬ নং লাইন: ৬৫ নং লাইন:
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চের পর ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া-লাঙ্গল শিমুল বাজারে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ২৭শে মার্চ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালি ও অবাঙালি সৈন্যদের মধ্যে লড়াই বাঁধে। ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর দুটি জঙ্গি বিমান গফরগাঁও উপজেলায় মেশিনগান দিয়ে গুলি করে ১৯ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং শতাধিক আহত হয়। ২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ২৩শে এপ্রিলের পর পাকবাহিনী ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শহর দখল করে নেয়। একই দিনে মুক্তাগাছা উপজেলায় পাকবাহিনীর প্রবেশপথে মুক্তিযোদ্ধারা জরছত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কমান্ডার রেফাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বটতলী, ভিটিবাড়ী ও মুক্তাগাছা থানা আক্রমণ করে। ৭ জুন ত্রিশাল উপজেলার কাটাখালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয়। ১৯শে জুলাই ধোবাউড়া উপজেলার জিগাতলা গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দিনব্যাপী যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ এগারো জন শহীদ হন। ৬ আগস্ট হালুয়াঘাট উপজেলার বান্দরকাটা ক্যাম্পে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে আব্দুল আজিজ ও পরিমল নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আগস্ট মাসে ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি বাজারে লড়াইয়ে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভাংনামারি চরে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আবদুর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩রা অক্টোবর পাকবাহিনী ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা বাজারে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গভীর রাতে অতর্কিত হামলা চালালে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরদিন পাকবাহিনী গোয়াতলা বাজার ও তারাইকান্দি ফেরিঘাটে গণহত্যা চালায়। এতে প্রায় ১২০ জন শহীদ হন। ৩ নভেম্বর হালুয়াঘাট উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা গভীর রাতে পাকসেনাদের সুরক্ষিত তেলীখালির ঘাঁটিতে করইতলা, বাঘাইতলা এবং রামচন্দ্রকুড়া এ তিনদিক থেকে আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে ১২১ জন পাকসেনা মারা যায় এবং ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ নভেম্বর নান্দাইল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে এক লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস উদ্দিন ভূঞা ও শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোক শহীদ হন। উক্ত দিনটি ’নান্দাইল শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ভালুকা উপজেলার ১১ নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার আফসার উদ্দিন আহমদ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে পাকবাহিনীর মোকাবিলা করেন। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়। এতে উভয় পক্ষের ৭০ জন নিহত হয়। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দিঘারকান্দা গ্রামে পাকবাহিনী রাতে আক্রমণ করলে গ্রামবাসিরা সড়কি, বলম, দা, লাঠি দিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এতে একজন পাক মেজর নিহত হয়। পরদিন ওই গ্রামে পাকবাহিনীর আক্রমণে অনেক গ্রামবাসি নিহত হন। ফুলপুর উপজেলার পয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ ৯ জন বাঙালিকে পাকসেনারা ফুরপুর ইউনিয়নের সরচাপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে গুলি করার পূর্বেই তিনি পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে আসেন। এছাড়া ছনধরা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ লড়াইয়ে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ত্রিশাল উপজেলার রায়ের গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া পাকসেনারা এ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্যাতন, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
[[Image:MymensinghDistrict.jpg|thumb|400px|right]]
''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি'' ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চের পর ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া-লাঙ্গল শিমুল বাজারে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ২৭শে মার্চ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালি ও অবাঙালি সৈন্যদের মধ্যে লড়াই বাঁধে। ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর দুটি জঙ্গি বিমান গফরগাঁও উপজেলায় মেশিনগান দিয়ে গুলি করে ১৯ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং শতাধিক আহত হয়। ২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ২৩শে এপ্রিলের পর পাকবাহিনী ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শহর দখল করে নেয়। একই দিনে মুক্তাগাছা উপজেলায় পাকবাহিনীর প্রবেশপথে মুক্তিযোদ্ধারা জরছত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কমান্ডার রেফাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বটতলী, ভিটিবাড়ী ও মুক্তাগাছা থানা আক্রমণ করে। ৭ জুন ত্রিশাল উপজেলার কাটাখালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয়। ১৯শে জুলাই ধোবাউড়া উপজেলার জিগাতলা গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দিনব্যাপী যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ এগারো জন শহীদ হন। ৬ আগস্ট হালুয়াঘাট উপজেলার বান্দরকাটা ক্যাম্পে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে আব্দুল আজিজ ও পরিমল নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আগস্ট মাসে ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি বাজারে লড়াইয়ে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভাংনামারি চরে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আবদুর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩রা অক্টোবর পাকবাহিনী ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা বাজারে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গভীর রাতে অতর্কিত হামলা চালালে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরদিন পাকবাহিনী গোয়াতলা বাজার ও তারাইকান্দি ফেরিঘাটে গণহত্যা চালায়। এতে প্রায় ১২০ জন শহীদ হন। ৩ নভেম্বর হালুয়াঘাট উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা গভীর রাতে পাকসেনাদের সুরক্ষিত তেলীখালির ঘাঁটিতে করইতলা, বাঘাইতলা এবং রামচন্দ্রকুড়া এ তিনদিক থেকে আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে ১২১ জন পাকসেনা মারা যায় এবং ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ নভেম্বর নান্দাইল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে এক লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস উদ্দিন ভূঞা ও শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোক শহীদ হন। উক্ত দিনটি ’নান্দাইল শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ভালুকা উপজেলার ১১ নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার আফসার উদ্দিন আহমদ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে পাকবাহিনীর মোকাবিলা করেন। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়। এতে উভয় পক্ষের ৭০ জন নিহত হয়। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দিঘারকান্দা গ্রামে পাকবাহিনী রাতে আক্রমণ করলে গ্রামবাসিরা সড়কি, বলম, দা, লাঠি দিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এতে একজন পাক মেজর নিহত হয়। পরদিন ওই গ্রামে পাকবাহিনীর আক্রমণে অনেক গ্রামবাসি নিহত হন। ফুলপুর উপজেলার পয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ ৯ জন বাঙালিকে পাকসেনারা ফুরপুর ইউনিয়নের সরচাপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে গুলি করার পূর্বেই তিনি পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে আসেন। এছাড়া ছনধরা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ লড়াইয়ে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ত্রিশাল উপজেলার রায়ের গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া পাকসেনারা এ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্যাতন, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৭ (ময়মনসিংহ সদরে ডাকবাংলোর চর, চকবাজার, জেলখানার চর, শম্ভুগঞ্জ নদীর তীর, বোরোর চর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মুক্তাগাছার রসুলপুর)।
''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৭ (ময়মনসিংহ সদরে ডাকবাংলোর চর, চকবাজার, জেলখানার চর, শম্ভুগঞ্জ নদীর তীর, বোরোর চর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মুক্তাগাছার রসুলপুর)।
[[Image:MymensinghDistrict.jpg]]


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৩৯.১%; পুরুষ ৪১.৭%, মহিলা ৩৬.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিশ্ববিদ্যালয় ২, মেডিকেল কলেজ ৩, কলেজ ৬৩, ক্যাডেট কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ৪, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ২, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৪৩, আর্ট স্কুল ১, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, স্যাটেলাইট স্কুল ২৪, এনজিও পরিচালিত স্কুল ১০৬৫, নার্সারী স্কুল ৫৯, মুক ও বধির বিদ্যালয় ১, সঙ্গীত বিদ্যালয় ৩, মৌলিক শিক্ষা একাডেমী ১, মাদ্রাসা ১২১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), সরকারি আনন্দমোহন কলেজ (১৯০৮), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১৯৬৮), মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৫৯), ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৪), মুকুল নিকেতন হাইস্কুল (১৯৫৯), বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), রামগোপালপুর পি.জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), মুক্তাগাছা রাম কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), কান্দিপাড়া আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), মহাকালী গার্লস স্কুল ও কলেজ (১৯০৭), বিরই তালতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), এড্ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০৩), রাধাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সেন্ট মেরিস নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৯), ময়মনসিংহ জেলা স্কুল (১৮৫৩), সিটি কলেজিয়েট স্কুল (১৮৮৩), মৃঁত্যুঞ্জয় স্কুল (১৯০১), নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল (১৯১১), নজরুল একাডেমী (১৯১৩), কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৯০), চরগোয়াডাংগা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৫), পাঁচবাগ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৭)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৩৯.১%; পুরুষ ৪১.৭%, মহিলা ৩৬.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিশ্ববিদ্যালয় ২, মেডিকেল কলেজ ৩, কলেজ ৬৩, ক্যাডেট কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ৪, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ২, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৪৩, আর্ট স্কুল ১, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, স্যাটেলাইট স্কুল ২৪, এনজিও পরিচালিত স্কুল ১০৬৫, নার্সারী স্কুল ৫৯, মুক ও বধির বিদ্যালয় ১, সঙ্গীত বিদ্যালয় ৩, মৌলিক শিক্ষা একাডেমী ১, মাদ্রাসা ১২১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), সরকারি আনন্দমোহন কলেজ (১৯০৮), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১৯৬৮), মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৫৯), ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৪), মুকুল নিকেতন হাইস্কুল (১৯৫৯), বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), রামগোপালপুর পি.জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), মুক্তাগাছা রাম কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), কান্দিপাড়া আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), মহাকালী গার্লস স্কুল ও কলেজ (১৯০৭), বিরই তালতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), এড্ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০৩), রাধাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সেন্ট মেরিস নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৯), ময়মনসিংহ জেলা স্কুল (১৮৫৩), সিটি কলেজিয়েট স্কুল (১৮৮৩), মৃঁত্যুঞ্জয় স্কুল (১৯০১), নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল (১৯১১), নজরুল একাডেমী (১৯১৩), কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৯০), চরগোয়াডাংগা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৫), পাঁচবাগ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৭)।
৮২ নং লাইন: ৮০ নং লাইন:
''গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা'' জাদুঘর, ময়মনসিংহ টাউন হল, বংলাদেম পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (ময়মনসিংহ সদর উপজেলা)।  [সমর পাল]
''গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা'' জাদুঘর, ময়মনসিংহ টাউন হল, বংলাদেম পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (ময়মনসিংহ সদর উপজেলা)।  [সমর পাল]


আরো দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''আরো দেখুন''  সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


'''তথ্যসূত্র'''   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ময়মনসিংহ জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ময়মনসিংহ জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।

০৪:২৭, ৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ময়মনসিংহ জেলা (ঢাকা বিভাগ)  আয়তন: ৪৩৬৩.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৪´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা।

জনসংখ্যা ৪৪৮৯৭২৬; পুরুষ ২২৯৭৩০২, মহিলা ২১৯২৪২৪। মুসলিম ৪২৮৯৭৮৯, হিন্দু ১৬৮১৩৫, বৌদ্ধ ২৭৯৯৯, খ্রিস্টান ৩৩০ এবং অন্যান্য ৩৪৭৩। এ জেলায় গারো, কোচ, ডালু, বর্মণ, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, ভোগাই, বাজুয়া এবং কংস নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় ১৭৮৭ সালে। ময়মনসিংহ শহরের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান প্রথম।

জেলা
আয়তন(বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৪৩৬৩.৪৮ ১২ ১৪৬ ২২০১ ২৭০০ ৬৬০৩৩১ ৩৮২৯৩৯৫ ১০২৯ ৩৯.১
জেলা
আয়তন(বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
ঈশ্বরগঞ্জ ২৮৬.১৯ ১১ ২৯৩ ২৯১ ৩৩৮০৮০ ১১৮১ ৩৫.২
গফরগাঁও ৪০১.১৬ ১৫ ২০২ ২১২ ৪১৩৪৮৮ ১০৩১ ৪৬.৪
গৌরীপুর ২৭৪.০৭ ১০ ১৪৫ ২৯০ ২৮২৯৪০ ১০৩২ ৩৬.৯
ত্রিশাল ৩৩৮.৯৮ ১২ ৯১ ১৫৯ ৩৭২৪৯৮ ১০৯৯ ৪০.২
ধোবাউড়া ২৫১.০৫ - ৯৬ ১৬২ ১৭২১৫২ ৬৮৬ ২৭.৯
নান্দাইল ৩২৬.১৩ ১২ ১৬৩ ২৬৫ ৩৭০৮৫০ ১১৩৭ ৩৬.০
ফুলপুর ৫৮০.২১ - ২০ ৩৭৭ ৪০৯ ৫২৪৭২০ ৯০৪ ৩৩.১
ফুলবাড়ীয়া ৪০২.৪১ - ১৩ ১০৪ ১৩৭ ৩৯৬০১৯ ৯৮৪ ৩৬.৬
ভালুকা ৪৪৪.০৫ ১১ ৮৭ ১১০ ৩০৮৭৫৮ ৬৯৫ ৪১.১
ময়মনসিংহ সদর ৩৮৮.৪৫ ১৩ ১৩৬ ১৭৪ ৬৭৪৪৫২ ১৭৩৬ ৪৯.৯
মুক্তাগাছা ৩১৪.৭১ ১০ ২৬১ ২৮৩ ৩৬৬৩৯৭ ১১৬৪ ৩৫.৩
হালুয়াঘাট ৩৫৬.০৭ - ১২ ১৪৬ ২০৮ ২৬৯৩৭২ ৭৫৭ ৩৪.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চের পর ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া-লাঙ্গল শিমুল বাজারে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ২৭শে মার্চ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালি ও অবাঙালি সৈন্যদের মধ্যে লড়াই বাঁধে। ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর দুটি জঙ্গি বিমান গফরগাঁও উপজেলায় মেশিনগান দিয়ে গুলি করে ১৯ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং শতাধিক আহত হয়। ২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ২৩শে এপ্রিলের পর পাকবাহিনী ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শহর দখল করে নেয়। একই দিনে মুক্তাগাছা উপজেলায় পাকবাহিনীর প্রবেশপথে মুক্তিযোদ্ধারা জরছত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কমান্ডার রেফাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বটতলী, ভিটিবাড়ী ও মুক্তাগাছা থানা আক্রমণ করে। ৭ জুন ত্রিশাল উপজেলার কাটাখালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয়। ১৯শে জুলাই ধোবাউড়া উপজেলার জিগাতলা গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দিনব্যাপী যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ এগারো জন শহীদ হন। ৬ আগস্ট হালুয়াঘাট উপজেলার বান্দরকাটা ক্যাম্পে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে আব্দুল আজিজ ও পরিমল নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আগস্ট মাসে ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি বাজারে লড়াইয়ে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভাংনামারি চরে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আবদুর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩রা অক্টোবর পাকবাহিনী ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা বাজারে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গভীর রাতে অতর্কিত হামলা চালালে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরদিন পাকবাহিনী গোয়াতলা বাজার ও তারাইকান্দি ফেরিঘাটে গণহত্যা চালায়। এতে প্রায় ১২০ জন শহীদ হন। ৩ নভেম্বর হালুয়াঘাট উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা গভীর রাতে পাকসেনাদের সুরক্ষিত তেলীখালির ঘাঁটিতে করইতলা, বাঘাইতলা এবং রামচন্দ্রকুড়া এ তিনদিক থেকে আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে ১২১ জন পাকসেনা মারা যায় এবং ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ নভেম্বর নান্দাইল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে এক লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস উদ্দিন ভূঞা ও শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোক শহীদ হন। উক্ত দিনটি ’নান্দাইল শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ভালুকা উপজেলার ১১ নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার আফসার উদ্দিন আহমদ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে পাকবাহিনীর মোকাবিলা করেন। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়। এতে উভয় পক্ষের ৭০ জন নিহত হয়। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দিঘারকান্দা গ্রামে পাকবাহিনী রাতে আক্রমণ করলে গ্রামবাসিরা সড়কি, বলম, দা, লাঠি দিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এতে একজন পাক মেজর নিহত হয়। পরদিন ওই গ্রামে পাকবাহিনীর আক্রমণে অনেক গ্রামবাসি নিহত হন। ফুলপুর উপজেলার পয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ ৯ জন বাঙালিকে পাকসেনারা ফুরপুর ইউনিয়নের সরচাপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে গুলি করার পূর্বেই তিনি পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে আসেন। এছাড়া ছনধরা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ লড়াইয়ে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ত্রিশাল উপজেলার রায়ের গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া পাকসেনারা এ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্যাতন, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ৭ (ময়মনসিংহ সদরে ডাকবাংলোর চর, চকবাজার, জেলখানার চর, শম্ভুগঞ্জ নদীর তীর, বোরোর চর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মুক্তাগাছার রসুলপুর)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.১%; পুরুষ ৪১.৭%, মহিলা ৩৬.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিশ্ববিদ্যালয় ২, মেডিকেল কলেজ ৩, কলেজ ৬৩, ক্যাডেট কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ৪, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ২, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৪৩, আর্ট স্কুল ১, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, স্যাটেলাইট স্কুল ২৪, এনজিও পরিচালিত স্কুল ১০৬৫, নার্সারী স্কুল ৫৯, মুক ও বধির বিদ্যালয় ১, সঙ্গীত বিদ্যালয় ৩, মৌলিক শিক্ষা একাডেমী ১, মাদ্রাসা ১২১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), সরকারি আনন্দমোহন কলেজ (১৯০৮), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১৯৬৮), মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৫৯), ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৪), মুকুল নিকেতন হাইস্কুল (১৯৫৯), বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), রামগোপালপুর পি.জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), মুক্তাগাছা রাম কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), কান্দিপাড়া আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), মহাকালী গার্লস স্কুল ও কলেজ (১৯০৭), বিরই তালতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), এড্ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০৩), রাধাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সেন্ট মেরিস নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৯), ময়মনসিংহ জেলা স্কুল (১৮৫৩), সিটি কলেজিয়েট স্কুল (১৮৮৩), মৃঁত্যুঞ্জয় স্কুল (১৯০১), নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল (১৯১১), নজরুল একাডেমী (১৯১৩), কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৯০), চরগোয়াডাংগা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৫), পাঁচবাগ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৭)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.১৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬৫%, শিল্প ০.৮২%, ব্যবসা ১১.৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৩%, নির্মাণ ১.৩৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, চাকরি ৬.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৬% এবং অন্যান্য ৮.২৫%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জাহান, বাংলার জমিন, ইনসাফ, আজকের স্মৃতি, শিপা, স্বদেশ সংবাদ; সাপ্তাহিক: ময়মনসিংহ বার্তা, আজকের মুক্তাগাছা। অবলুপ্ত: কুমার, বিজ্ঞাপনী (১৮৬৬), বাঙালী (১৮৭৪), সুহূদ (১৮৭৫), প্রমোদী (১৮৭৫), ভারত মিহির (১৮৭৫), সঞ্জীবনী (১৮৭৮), বাসনা (১৮৯৯), আবৃতি (১৯০১), স্বদেশ সম্পদ (১৯০৫), শিক্ষা সৌরভ (১৯১২), হাফেজ শক্তি (১৯২৪), গণঅভিযান (১৯৩৮), সাপ্তাহিক চারুমিহির (১৯৩৯), উত্তর আকাশ (১৯৫৯), অনির্বাণ (১৯৬৩), জাগ্রত বাংলা (১৯৭১)।

লোকসংস্কৃতি ময়মনসিংহ গীতিকা, ছড়া, বাউল সঙ্গীত, পালাগীত, গারো সম্প্রদায়ের প্রবাদ, হাজং সম্প্রদায়ের শ্লোক (হিলুক), ধাঁধাঁ (থাচিকথা), গান (গাহেন) উল্লেখযোগ্য।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জাদুঘর, ময়মনসিংহ টাউন হল, বংলাদেম পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (ময়মনসিংহ সদর উপজেলা)।  [সমর পাল]

আরো দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ময়মনসিংহ জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।