স্বাস্থ্যবিষয়ক রূপরেখা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''স্বাস্থ্যবিষয়ক রূপরেখা''' (Health Profile)  বাংলাদেশে ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২.৯% লোকের বয়স ছিল ১৫ বছরের কম, ৬৩.৬% লোকের বয়স ১৫-৬৪ বছর ও ৩.৫% লোকের বয়স ৬৫ বা ততোধিক। ২০০১ সালে গর্ভধারণক্ষম বিবাহিত মেয়েদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.১ কোটি। শিশুদের মধ্যে (১০০০ নবজাতকের ৮২ জন), পাঁচ বছরের শিশু (১০০০ জনের মধ্যে ১১৬ জন) এবং মায়েদের (১০০০ প্রসবের মধ্যে প্রায় ৫ জন) মৃত্যুহার কমে এলেও এখনও সেগুলি উচ্চ রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে ৫০% শিশুর জন্মকালীন ওজন (low birth weight/LBW) কম থাকে। নবজাতকের মধ্যে ৩০% শিশুকে দুই মাস বয়স থেকেই অনুপূরক খাদ্য খাওয়ানো হয়। শিশুরা সচরাচর উদরাময়, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ ও কয়েক রকমের জ্বরে বেশি ভোগে। পাঁচ বছরের কমবয়সী প্রায় ৫০% শিশুর ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বা বিকাশের অভাব দেখা যায়। দেশে স্কুলে যাওয়ার বয়স হয় নি এমন শিশুদের মধ্যে ৭৩ শতাংশের রক্তশূন্যতা আছে। কিশোরদের ক্ষেত্রেও রক্তশূন্যতা ব্যাপক (৪০-৭৪%)। বেশির ভাগ মা (৭৫%) গর্ভকালে সেবাযত্ন পান না এবং প্রসবকালে ৫৭% ক্ষেত্রেই অশিক্ষিত ধাত্রীরা সাহায্য করে। শিশুদের মতো অপুষ্টি বাংলাদেশের মায়েদেরও একটি অন্যতম সমস্যা। পাঁচ বছরের কমবয়সী বাচ্চা আছে এমন মায়েদের প্রায় ১৭ শতাংশের উচ্চতা ১৪৫ সেমি-এর কম যা পুষ্টিহীনতার লক্ষণ। এদের অনেকেই গুরুতর রকমের পুষ্টিহীন। সন্তান ধারণক্ষম মেয়েদের মধ্যে (৫২-৬০%) রক্তশূন্যতার প্রকোপ অত্যধিক। বাংলাদেশের গ্রামীণ মেয়েদের অন্তত ২২% যৌনাঙ্গের সংক্রমণজনিত (reproductive tract infection/RTI) রোগে ভোগে। এই সমস্যাগুলির সঙ্গে রয়েছে ১০ শতাংশের অন্ধত্ব, বধিরত্ব, মানসিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য শারীরিক অক্ষমতা। কমবয়সী এসব অক্ষম মানুষ নিষ্ফলতা, বিষণ্ণতা ও আত্মমর্যাদাহীনতায় ভোগে এবং ফলে নিঃসঙ্গ অবমাননাকর জীবন কাটায়।
'''স্বাস্থ্যবিষয়ক রূপরেখা''' (Health Profile)  বাংলাদেশে ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২.৯% লোকের বয়স ছিল ১৫ বছরের কম, ৬৩.৬% লোকের বয়স ১৫-৬৪ বছর ও ৩.৫% লোকের বয়স ৬৫ বা ততোধিক। ২০০১ সালে গর্ভধারণক্ষম বিবাহিত মেয়েদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.১ কোটি। শিশুদের মধ্যে (১০০০ নবজাতকের ৮২ জন), পাঁচ বছরের শিশু (১০০০ জনের মধ্যে ১১৬ জন) এবং মায়েদের (১০০০ প্রসবের মধ্যে প্রায় ৫ জন) মৃত্যুহার কমে এলেও এখনও সেগুলি উচ্চ রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে ৫০% শিশুর জন্মকালীন ওজন (low birth weight/LBW) কম থাকে। নবজাতকের মধ্যে ৩০% শিশুকে দুই মাস বয়স থেকেই অনুপূরক খাদ্য খাওয়ানো হয়। শিশুরা সচরাচর উদরাময়, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ ও কয়েক রকমের জ্বরে বেশি ভোগে। পাঁচ বছরের কমবয়সী প্রায় ৫০% শিশুর ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বা বিকাশের অভাব দেখা যায়। দেশে স্কুলে যাওয়ার বয়স হয় নি এমন শিশুদের মধ্যে ৭৩ শতাংশের রক্তশূন্যতা আছে। কিশোরদের ক্ষেত্রেও রক্তশূন্যতা ব্যাপক (৪০-৭৪%)। বেশির ভাগ মা (৭৫%) গর্ভকালে সেবাযত্ন পান না এবং প্রসবকালে ৫৭% ক্ষেত্রেই অশিক্ষিত ধাত্রীরা সাহায্য করে। শিশুদের মতো অপুষ্টি বাংলাদেশের মায়েদেরও একটি অন্যতম সমস্যা। পাঁচ বছরের কমবয়সী বাচ্চা আছে এমন মায়েদের প্রায় ১৭ শতাংশের উচ্চতা ১৪৫ সেমি-এর কম যা পুষ্টিহীনতার লক্ষণ। এদের অনেকেই গুরুতর রকমের পুষ্টিহীন। সন্তান ধারণক্ষম মেয়েদের মধ্যে (৫২-৬০%) রক্তশূন্যতার প্রকোপ অত্যধিক। বাংলাদেশের গ্রামীণ মেয়েদের অন্তত ২২% যৌনাঙ্গের সংক্রমণজনিত (reproductive tract infection/RTI) রোগে ভোগে। এই সমস্যাগুলির সঙ্গে রয়েছে ১০ শতাংশের অন্ধত্ব, বধিরত্ব, মানসিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য শারীরিক অক্ষমতা। কমবয়সী এসব অক্ষম মানুষ নিষ্ফলতা, বিষণ্ণতা ও আত্মমর্যাদাহীনতায় ভোগে এবং ফলে নিঃসঙ্গ অবমাননাকর জীবন কাটায়।


'''সারণি ''' স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সূচক।
''সারণি'' স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সূচক।
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা খাত || ২০০৮-২০০৯
| স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা খাত || ২০০৮-২০০৯
|-
|-
| সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা  || ৫৮৯
| সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা  || ৫৮৯
|-
|-
| বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা (উএঐঝ রেজিস্ট্রিকৃত) || ২২৭১
| বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা (উএঐঝ রেজিস্ট্রিকৃত) || ২২৭১
|-
|-
| স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বেডের সংখ্যা || ৩৮১৭১
| স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বেডের সংখ্যা || ৩৮১৭১
|-
|-
| বেসরকারি হাসপাতালের বেড (উএঐঝ রেজিস্ট্রিকৃত) || ৩৬২৪৪
| বেসরকারি হাসপাতালের বেড (উএঐঝ রেজিস্ট্রিকৃত) || ৩৬২৪৪
|-
|-
| নিবন্ধনকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) || ৪৯৯৯৪
| নিবন্ধনকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) || ৪৯৯৯৪
|-
|-
| নিবন্ধনকৃত ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) || ৩৪৮১
| নিবন্ধনকৃত ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) || ৩৪৮১
|-
|-
| সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা  || ১৮
| সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা  || ১৮
|-
|-
| বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা || ৪১
| বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা || ৪১
|-
|-
| বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা || ১১
| বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা || ১১
|-
|-
| বেসরকারি স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সংখ্যা || ৩৯
| বেসরকারি স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সংখ্যা || ৩৯
|-
|-
| উঐঐঝ এ কর্মরত মোট কর্মচারীর সংখ্যা (ঝধহব-১১০১৪৪) || ৭৯৮৯৬
| উঐঐঝ এ কর্মরত মোট কর্মচারীর সংখ্যা (ঝধহব-১১০১৪৪) || ৭৯৮৯৬
|-
|-
| স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত মোট ডাক্তারের সংখ্যা (ঝধহব-১৯২৪৩) || ১২৩৮২
| স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত মোট ডাক্তারের সংখ্যা (ঝধহব-১৯২৪৩) || ১২৩৮২
|-
|-
| নিবন্ধনকৃত.সেবিকার সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) || ২৩৭২৯
| নিবন্ধনকৃত.সেবিকার সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) || ২৩৭২৯
|-
|-
| সরকারিখাতে নিয়োজিত সেবিকার সংখ্যা || ১৪৩৭৭
| সরকারিখাতে নিয়োজিত সেবিকার সংখ্যা || ১৪৩৭৭
|-
|-
| নিবন্ধনকৃত ধাত্রীর সংখ্যা  || ২২২৫৩
| নিবন্ধনকৃত ধাত্রীর সংখ্যা  || ২২২৫৩
|-
|-
| দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সংখ্যা  || ৫০০০
| দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সংখ্যা  || ৫০০০
|-
|-
| চিকিৎসক প্রতি জনসংখ্যা  || ২৮৬০
| চিকিৎসক প্রতি জনসংখ্যা  || ২৮৬০
|-
|-
| প্রতি বেডে জনসংখ্যা (স্বাস্থ্যখাতে বেডের সংখ্যা + নিবন্ধনকৃত বেসরকারি হাসপাতাল) || ১৮৬০
| প্রতি বেডে জনসংখ্যা (স্বাস্থ্যখাতে বেডের সংখ্যা + নিবন্ধনকৃত বেসরকারি হাসপাতাল) || ১৮৬০
|-
|-
| চিকিৎসক ও সেবিকার অনুপাত  || ২.১
| চিকিৎসক ও সেবিকার অনুপাত  || ২.১
|-
|-
| সেবিকা প্রতি জনসংখ্যা  || ৫৭২০
| সেবিকা প্রতি জনসংখ্যা  || ৫৭২০
|-
|-
| গড় আয়ু উভয় লিঙ্গের (২০০৭-০৮) || ৬৬.৯
| গড় আয়ু উভয় লিঙ্গের (২০০৭-০৮) || ৬৬.৯
|}
|}
উৎস  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সংকলন, ২০০৯।
 
''উৎস''  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সংকলন, ২০০৯।


সরকার একটি নতুন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত উন্নয়ন কর্মকৌশল (Health and Population Sector Strategy/HPSS) গ্রহণ করেছে এবং ১৯৯৮ সালের জুলাই মাস থেকে একটি পঞ্চবার্ষিকী স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি চালু করেছে। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি হলো মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের একটি খাতওয়ারি উন্নয়ন পদক্ষেপ। এই কর্মকৌশলের ফলেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠন এবং একটি আলাদা একীভূত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীগোষ্ঠী গঠনের সূচনা হয়েছে, যাতে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায় ও সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক সক্ষমতা অর্জন করা এবং স্বাস্থ্যসুবিধা ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়। এই মৌলিক সেবা প্যাকেজের লক্ষ্য রূপরেখা উন্নয়ন, অভীষ্ট জনগোষ্ঠী, বিশেষত বঞ্চিতদের সেবার অধীনে আনা এবং জনস্বাস্থ্য সুবিধার মান বৃদ্ধি এবং শিশুস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের উন্নত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
সরকার একটি নতুন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত উন্নয়ন কর্মকৌশল (Health and Population Sector Strategy/HPSS) গ্রহণ করেছে এবং ১৯৯৮ সালের জুলাই মাস থেকে একটি পঞ্চবার্ষিকী স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি চালু করেছে। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি হলো মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের একটি খাতওয়ারি উন্নয়ন পদক্ষেপ। এই কর্মকৌশলের ফলেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠন এবং একটি আলাদা একীভূত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীগোষ্ঠী গঠনের সূচনা হয়েছে, যাতে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায় ও সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক সক্ষমতা অর্জন করা এবং স্বাস্থ্যসুবিধা ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়। এই মৌলিক সেবা প্যাকেজের লক্ষ্য রূপরেখা উন্নয়ন, অভীষ্ট জনগোষ্ঠী, বিশেষত বঞ্চিতদের সেবার অধীনে আনা এবং জনস্বাস্থ্য সুবিধার মান বৃদ্ধি এবং শিশুস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের উন্নত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।

০৬:৫৮, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

স্বাস্থ্যবিষয়ক রূপরেখা (Health Profile)  বাংলাদেশে ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২.৯% লোকের বয়স ছিল ১৫ বছরের কম, ৬৩.৬% লোকের বয়স ১৫-৬৪ বছর ও ৩.৫% লোকের বয়স ৬৫ বা ততোধিক। ২০০১ সালে গর্ভধারণক্ষম বিবাহিত মেয়েদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.১ কোটি। শিশুদের মধ্যে (১০০০ নবজাতকের ৮২ জন), পাঁচ বছরের শিশু (১০০০ জনের মধ্যে ১১৬ জন) এবং মায়েদের (১০০০ প্রসবের মধ্যে প্রায় ৫ জন) মৃত্যুহার কমে এলেও এখনও সেগুলি উচ্চ রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে ৫০% শিশুর জন্মকালীন ওজন (low birth weight/LBW) কম থাকে। নবজাতকের মধ্যে ৩০% শিশুকে দুই মাস বয়স থেকেই অনুপূরক খাদ্য খাওয়ানো হয়। শিশুরা সচরাচর উদরাময়, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ ও কয়েক রকমের জ্বরে বেশি ভোগে। পাঁচ বছরের কমবয়সী প্রায় ৫০% শিশুর ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বা বিকাশের অভাব দেখা যায়। দেশে স্কুলে যাওয়ার বয়স হয় নি এমন শিশুদের মধ্যে ৭৩ শতাংশের রক্তশূন্যতা আছে। কিশোরদের ক্ষেত্রেও রক্তশূন্যতা ব্যাপক (৪০-৭৪%)। বেশির ভাগ মা (৭৫%) গর্ভকালে সেবাযত্ন পান না এবং প্রসবকালে ৫৭% ক্ষেত্রেই অশিক্ষিত ধাত্রীরা সাহায্য করে। শিশুদের মতো অপুষ্টি বাংলাদেশের মায়েদেরও একটি অন্যতম সমস্যা। পাঁচ বছরের কমবয়সী বাচ্চা আছে এমন মায়েদের প্রায় ১৭ শতাংশের উচ্চতা ১৪৫ সেমি-এর কম যা পুষ্টিহীনতার লক্ষণ। এদের অনেকেই গুরুতর রকমের পুষ্টিহীন। সন্তান ধারণক্ষম মেয়েদের মধ্যে (৫২-৬০%) রক্তশূন্যতার প্রকোপ অত্যধিক। বাংলাদেশের গ্রামীণ মেয়েদের অন্তত ২২% যৌনাঙ্গের সংক্রমণজনিত (reproductive tract infection/RTI) রোগে ভোগে। এই সমস্যাগুলির সঙ্গে রয়েছে ১০ শতাংশের অন্ধত্ব, বধিরত্ব, মানসিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য শারীরিক অক্ষমতা। কমবয়সী এসব অক্ষম মানুষ নিষ্ফলতা, বিষণ্ণতা ও আত্মমর্যাদাহীনতায় ভোগে এবং ফলে নিঃসঙ্গ অবমাননাকর জীবন কাটায়।

সারণি স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সূচক।

স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা খাত ২০০৮-২০০৯
সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা  ৫৮৯
বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা (উএঐঝ রেজিস্ট্রিকৃত) ২২৭১
স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বেডের সংখ্যা ৩৮১৭১
বেসরকারি হাসপাতালের বেড (উএঐঝ রেজিস্ট্রিকৃত) ৩৬২৪৪
নিবন্ধনকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) ৪৯৯৯৪
নিবন্ধনকৃত ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) ৩৪৮১
সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা  ১৮
বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৪১
বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ১১
বেসরকারি স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৩৯
উঐঐঝ এ কর্মরত মোট কর্মচারীর সংখ্যা (ঝধহব-১১০১৪৪) ৭৯৮৯৬
স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত মোট ডাক্তারের সংখ্যা (ঝধহব-১৯২৪৩) ১২৩৮২
নিবন্ধনকৃত.সেবিকার সংখ্যা (এপ্রিল ২০০৯) ২৩৭২৯
সরকারিখাতে নিয়োজিত সেবিকার সংখ্যা ১৪৩৭৭
নিবন্ধনকৃত ধাত্রীর সংখ্যা ২২২৫৩
দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সংখ্যা ৫০০০
চিকিৎসক প্রতি জনসংখ্যা ২৮৬০
প্রতি বেডে জনসংখ্যা (স্বাস্থ্যখাতে বেডের সংখ্যা + নিবন্ধনকৃত বেসরকারি হাসপাতাল) ১৮৬০
চিকিৎসক ও সেবিকার অনুপাত ২.১
সেবিকা প্রতি জনসংখ্যা ৫৭২০
গড় আয়ু উভয় লিঙ্গের (২০০৭-০৮) ৬৬.৯

উৎস  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সংকলন, ২০০৯।

সরকার একটি নতুন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত উন্নয়ন কর্মকৌশল (Health and Population Sector Strategy/HPSS) গ্রহণ করেছে এবং ১৯৯৮ সালের জুলাই মাস থেকে একটি পঞ্চবার্ষিকী স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি চালু করেছে। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি হলো মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের একটি খাতওয়ারি উন্নয়ন পদক্ষেপ। এই কর্মকৌশলের ফলেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠন এবং একটি আলাদা একীভূত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীগোষ্ঠী গঠনের সূচনা হয়েছে, যাতে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায় ও সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক সক্ষমতা অর্জন করা এবং স্বাস্থ্যসুবিধা ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়। এই মৌলিক সেবা প্যাকেজের লক্ষ্য রূপরেখা উন্নয়ন, অভীষ্ট জনগোষ্ঠী, বিশেষত বঞ্চিতদের সেবার অধীনে আনা এবং জনস্বাস্থ্য সুবিধার মান বৃদ্ধি এবং শিশুস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের উন্নত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।

১৯৯৮ সালে প্রণীত জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি এখনও অনুমোদিত ও গৃহীত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। গৃহীত পাঁচ বছর মেয়াদি স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কর্মসূচি প্রস্তাবিত এই স্বাস্থ্যনীতির আলোকেই তৈরি হয়েছে।  [মাসুদুর রহমান প্রিন্স]