হক, জহুরুল২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''হক, জহুরুল২''' (১৯৩৫-১৯৬৯) পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। তাঁকে বিচারাধীন অবস্থায় জেলে হত্যা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য মামলা’ নামক আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জহুরুল হক ১৯৫৩ সালে [[নোয়াখালী জিলা স্কুল|নোয়াখালী জিলা স্কুল]] থেকে ম্যাট্রিক এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.কম পাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে সার্জেন্ট পদে উন্নীত হন। | '''হক, জহুরুল২''' (১৯৩৫-১৯৬৯) পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। তাঁকে বিচারাধীন অবস্থায় জেলে হত্যা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য মামলা’ নামক আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জহুরুল হক ১৯৫৩ সালে [[নোয়াখালী জিলা স্কুল|নোয়াখালী জিলা স্কুল]] থেকে ম্যাট্রিক এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.কম পাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে সার্জেন্ট পদে উন্নীত হন। | ||
[[Image:HaqueSurgentZahurul.jpg|thumb|400px|জহুরুল হক]] | |||
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন ১৭তম। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে আরও কয়েকজন আসামিসহ তাঁকে ঢাকা (কুর্মিটোলা) ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা এ মামলাকে জনসাধারণ পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলারূপে বিবেচনা করে। তাঁরা আন্দোলন সঙ্ঘবদ্ধ করেন এবং অবিলম্বে এ মামলা রদ করে কয়েদীদের মুক্তি দাবি করেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচারের শেষ তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে সরকার এ তারিখ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা একজন পাকিস্তানি হাবিলদার জেলের একটি সেলের দরজায় দাঁড়ানো জহুরুল হককে সামনাসামনি গুলি করে আহত করে। তাঁকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এ হত্যার খবর ছড়িয়ে পরলে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি অতিথিভবন ও অন্যান্য সরকারি অট্টালিকায় অগ্নি সংযোগ করে। গণ-আন্দোলনের চাপে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রদ করতে বাধ্য হয়। | আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন ১৭তম। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে আরও কয়েকজন আসামিসহ তাঁকে ঢাকা (কুর্মিটোলা) ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা এ মামলাকে জনসাধারণ পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলারূপে বিবেচনা করে। তাঁরা আন্দোলন সঙ্ঘবদ্ধ করেন এবং অবিলম্বে এ মামলা রদ করে কয়েদীদের মুক্তি দাবি করেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচারের শেষ তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে সরকার এ তারিখ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা একজন পাকিস্তানি হাবিলদার জেলের একটি সেলের দরজায় দাঁড়ানো জহুরুল হককে সামনাসামনি গুলি করে আহত করে। তাঁকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এ হত্যার খবর ছড়িয়ে পরলে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি অতিথিভবন ও অন্যান্য সরকারি অট্টালিকায় অগ্নি সংযোগ করে। গণ-আন্দোলনের চাপে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রদ করতে বাধ্য হয়। | ||
সার্জেন্ট জহুরুল হকের সহকর্মীরা তাঁকে একজন অনমনীয় ও সৎ সৈনিক হিসেবে জানতেন। তাঁরা অনেক সময় তাঁকে ‘মার্শাল’ বলে সম্বোধন করতেন। জহুরুল হক একজন ভালো চিত্রশিল্পী ও খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি কাঠের শিল্পকর্মেও পারদর্শী ছিলেন। তাঁর কিছু চিত্রকর্ম বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নাম জহুরুল হক হল রাখা হয়। [এস.এম মাহফুজুর রহমান] | সার্জেন্ট জহুরুল হকের সহকর্মীরা তাঁকে একজন অনমনীয় ও সৎ সৈনিক হিসেবে জানতেন। তাঁরা অনেক সময় তাঁকে ‘মার্শাল’ বলে সম্বোধন করতেন। জহুরুল হক একজন ভালো চিত্রশিল্পী ও খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি কাঠের শিল্পকর্মেও পারদর্শী ছিলেন। তাঁর কিছু চিত্রকর্ম বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নাম জহুরুল হক হল রাখা হয়। [এস.এম মাহফুজুর রহমান] | ||
[[en:Haq, Zahurul]] | [[en:Haq, Zahurul]] |
০৮:৪৯, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হক, জহুরুল২ (১৯৩৫-১৯৬৯) পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। তাঁকে বিচারাধীন অবস্থায় জেলে হত্যা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য মামলা’ নামক আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জহুরুল হক ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.কম পাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে সার্জেন্ট পদে উন্নীত হন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন ১৭তম। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে আরও কয়েকজন আসামিসহ তাঁকে ঢাকা (কুর্মিটোলা) ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা এ মামলাকে জনসাধারণ পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলারূপে বিবেচনা করে। তাঁরা আন্দোলন সঙ্ঘবদ্ধ করেন এবং অবিলম্বে এ মামলা রদ করে কয়েদীদের মুক্তি দাবি করেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচারের শেষ তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে সরকার এ তারিখ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা একজন পাকিস্তানি হাবিলদার জেলের একটি সেলের দরজায় দাঁড়ানো জহুরুল হককে সামনাসামনি গুলি করে আহত করে। তাঁকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এ হত্যার খবর ছড়িয়ে পরলে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি অতিথিভবন ও অন্যান্য সরকারি অট্টালিকায় অগ্নি সংযোগ করে। গণ-আন্দোলনের চাপে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রদ করতে বাধ্য হয়।
সার্জেন্ট জহুরুল হকের সহকর্মীরা তাঁকে একজন অনমনীয় ও সৎ সৈনিক হিসেবে জানতেন। তাঁরা অনেক সময় তাঁকে ‘মার্শাল’ বলে সম্বোধন করতেন। জহুরুল হক একজন ভালো চিত্রশিল্পী ও খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি কাঠের শিল্পকর্মেও পারদর্শী ছিলেন। তাঁর কিছু চিত্রকর্ম বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নাম জহুরুল হক হল রাখা হয়। [এস.এম মাহফুজুর রহমান]